গুমের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁরা বেঁচে ফিরেছেন, তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছেন আট বছর গুম থাকা আহমদ বিন কাসেম (আরমান)। এই দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেছেন, এই ব্যক্তিরা ঠিকমতো চাকরি পাচ্ছেন না, ব্যাংক তাঁদের ঋণ দিতে ভয় পায়, বাড়ির মালিকেরাও বাড়িভাড়া দিতে ভয় পান।

বৃহস্পতিবার ‘ট্রুথ অ্যান্ড হিলিং ইনিশিয়েটিভ ইন পোস্ট কনফ্লিক্ট অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় আহমদ বিন কাসেম এ কথা বলেন। ইন্টারন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল অ্যান্ড ডিপ্লোমেসি (আইআইএলডি) এবং বাংলাদেশ ২.

০ ইনিশিয়েটিভ যৌথভাবে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।

আলোচনায় আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমাদের ভেতর এখন কী কাজ করছে, তা যদি আমি একটি শব্দে বলতে চাই, সেটা হলো আমরা ভীতসন্ত্রস্ত।’

গুমের শিকার সুপ্রিম কোর্টের এই আইনজীবীর মতে, গুমের শিকার ব্যক্তি ও পরিবারের ভয় এখন সমাজেও ছড়িয়ে পড়ছে। তিনি বলেন, ‘ভীতি শুধু আমাদের ঘিরে নেই। যাঁরা আমাদের সংস্পর্শে আসেন, তাঁদের মধ্যেও ভীতি সঞ্চারিত হয়। একটা লোক অনেক মেধাবী। কিন্তু যখন কোনো উদ্যোক্তা জানতে পারেন, এই লোকটা একটা সময় গুম ছিলেন, তাঁকে তিনি চাকরি দিতে ভয় পাচ্ছেন।’

আহমদ বিন কাসেম বলেন, ‘আমার তো অন্তত একটা ল ডিগ্রি আছে, তাই দাঁড়াতে পারছি। কিন্তু অধিকাংশ ব্যক্তি এই মাসের ভাড়াটা কীভাবে দেবেন, তা জানেন না।’

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান জানিয়ে এই আইনজীবী বলেন, ‘গুমের শিকার ভুক্তভোগীদের জন্য একটি তহবিল গঠন করুন। আপনি যদি কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেন, আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, আমাদের ট্যাক্সের (কর) একটি টাকাও খরচ করতে হবে না। সারা দুনিয়া এগিয়ে আসবে এই ভুক্তভোগীদের পুনর্বাসনের জন্য। ভুক্তভোগীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করুন। যাতে অন্তত অর্থনৈতিক বিষয়ে তাঁদের আর চিন্তা করতে না হয়।’

গুমের শিকার হয়ে আহমদ বিন কাসেম আট বছর নিখোঁজ ছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর তিনি মুক্ত হয়ে ফিরে আসেন। তাঁর পরিবারের অভিযোগ, ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট আহমদ বিন কাসেমকে মিরপুর ডিওএইচএস থেকে গুম করা হয়। আট বছর বন্দিশালায় থাকার পর ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট মুক্ত হন তিনি।

সভায় আয়োজকদের পক্ষ থেকে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে গুম নিয়ে সত্যতা স্বীকার, দোষীদের ন্যায়বিচার, আর্থিক ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ গুমের শিকার ব্যক্তি ও ভুক্তভোগীদের জন্য কিছু সুপারিশ উঠে আসে।

আলোচনা সভায় সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ মানবাধিকার উপদেষ্টা হুমা খান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, কর্নেল (অব.) হাসিনুর রহমান, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাহদী আমিন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

শর্মিলা নওশিন ও তাজরিয়ান আকরামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন আইআইএলডির নির্বাহী পরিচালক শফিউল আলম।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আহমদ ব ন ক স ম র জন য আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলে সর্বোচ্চ আদালতের সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অসংগতি রয়েছে দাবি করে ১৪ বছর আগে দেওয়া সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল মঞ্জুরের আরজি জানিয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।

বিএনপির মহাসচিবের করা এ-সংক্রান্ত আপিল শুনানিতে জয়নুল আবেদীন বলেছেন, সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায়ের মধ্যে অসংগতি রয়েছে। সংক্ষিপ্ত আদেশের ১৬ মাস পর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠের এ রায় আইনের দৃষ্টিতে রায় নয়। আইনগতভাবে তা রিভিউর অপেক্ষা রাখে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বেঞ্চে আজ মঙ্গলবার শুনানিতে এ কথা বলেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি জয়নুল আবেদীন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের ওপর আজ সপ্তম দিনের মতো শুনানি হয়। আগামীকাল বুধবার আবার শুনানি হবে। গত ২১ অক্টোবর এই শুনানি শুরু হয়।

১৯৯৬ সালে সংবিধানে যোগ হওয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বাদ পড়ে। তার জন্য সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধন আনা হয়েছিল। ওই সংশোধনের ঠিক আগে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অবৈধ বলে রায় দিয়েছিলেন। সর্বোচ্চ আদালতের ওই রায় হয়েছিল সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে।

গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর ওই রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন পৃথক আবেদন (রিভিউ) করেন। সেই আবেদনগুলোর ওপর শুনানি শেষে গত ২৭ আগস্ট লিভ মঞ্জুর (আপিলের অনুমতি) করে আদেশ দেন আপিল বিভাগ।

‘ভোটাধিকার হরণ সংকটের কারণ’

বিএনপির মহাসচিবের পক্ষে আপিলের পক্ষে শুনানিতে আজ জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. রুহুল কুদ্দুসও অংশ নেন। বিচারপতি খায়রুল হক দেওয়া রায় ‘ব্যক্তিগত ইচ্ছার প্রতিফলন’ দাবি করে তিনি বলেন, রায়ে বলা হয়েছে যে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার মাধ্যমে যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়, তাঁরা জনগণের প্রতিনিধি নন এবং তাঁদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই। আবার নির্বাচনের ৪২ দিন আগে সংসদ ভেঙে দেওয়ার কথা বলেছেন। অর্থাৎ এই সময়ে অনির্বাচিত সরকার থাকতে পারে। এই রায় স্ববিরোধী। বিচারপতি খায়রুল হক শুধু আদালতের প্রতি নয়, বরং পুরো জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে—ওই রায়ের এই পর্যবেক্ষণের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে এই আইনজীবী বলেন, দেশের মানুষ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা চালু হওয়ার পর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে নির্বাচনে ভোট দিতে পেরেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে বিদ্যমান যে রাজনৈতিক সংকট, তার অন্যতম কারণ হচ্ছে জনগণকে তার ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

রুহুল কুদ্দুস বলেন, যখন কোনো রায় হয়, তা পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়। আপিল বিভাগ যে রায়ই দেন না কেন, তা পরবর্তী সময় থেকে কার্যকর হয়। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের যে সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, তাতে এই আপিল বিভাগের রায়ের প্রভাব পড়বে না। বরং নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল হলে তা তার পরবর্তী নির্বাচন থেকে কার্যকর হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইনজীবীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, মেজবাহউদ্দীন ফরহাদকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান
  • পদে থেকেও নির্বাচন করা যায়: অ্যাটর্নি জেনারেল আসাদুজ্জামান
  • সিলেট চেম্বারের নির্বাচন দাবিতে ব্যবসায়ীদের মানববন্ধন
  • বাংলালিংক পরিদর্শনে ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব
  • তিন দশক পর শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় অ্যালামনাইয়ের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি
  • ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী: কে কেন কীভাবে
  • ভালো কাজের বিনিময়ে কারামুক্তি, কেমন আছেন তাঁরা
  • অনলাইন জুয়ায় জড়িতদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার চিন্তা
  • সংবিধানের ৫৩ বছর: বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি বদলের আহ্বান
  • তত্ত্বাবধায়কব্যবস্থা বাতিল: সংক্ষিপ্ত ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে অসংগতি তুলে ধরে আপিল মঞ্জুরের আরজি