অভ্যুত্থানের পর যে রূপ নেয় গণভবনের অন্দরমহল
Published: 8th, August 2025 GMT
ভবনের নিচতলায় হল ঘরে ঢোকার আগেই চোখে পড়ে মেকআপের ছোট একটি ব্রাশ মেঝেতে পড়ে আছে। হল রুমের বড় টেবিল, চেয়ার প্রায় সবই ভাঙা। লোকজন যেসব জিনিস সঙ্গে করে নিতে পারেনি, সেগুলো ভেঙে রেখে গেছে। এর ফলে ভবনের বিভিন্ন কক্ষের মেঝেতে পড়ে রয়েছে বড় বড় কাচের টুকরা। পা ফেলতে গেলেই মনে হয় জুতা ভেদ করে এখনই পায়ে এসব কাচের টুকরা ঢুকে যাবে। বিভিন্ন কক্ষ এমনকি সিঁড়িতে কাগজের স্তূপ ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবের পরের পরিস্থিতিকেই যেন মনে করিয়ে দেয়।
গত ২ জুন গণভবনের একটি কক্ষের এই চিত্র দেখা যায়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
১৬ বছরের দুঃশাসনের চিত্র থাকবে জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে
পিলখানা হত্যাকাণ্ড, গুম-খুন-আয়নাঘর, শাপলা ম্যাসাকার, ভোট ডাকাতিসহ শেখ হাসিনার ১৬ বছরের দুঃশাসনের সব গল্পই ঐতিহাসিক তথ্য আকারে জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে উপস্থাপন করা হবে।
আজ শনিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এক বৈঠকে জাদুঘর নির্মাণ কর্তৃপক্ষ প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে এ তথ্য জানায়।
প্রধান উপদেষ্টা জাদুঘর নির্মাণসংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং আশা প্রকাশ করেন, এ জাদুঘরে যাঁরা আসবেন, তাঁরা ৫ আগস্ট গণভবনে জনতার ঢলকে অনুভব করবেন। তিনি বলেন, ‘মানুষের মধ্যে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার এই অনুভব নিয়ে আসাটাই এই জাদুঘরের একটা বড় কাজ।’
সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, আগামী ৩১ অক্টোবরের (২০২৫) মধ্যে জাদুঘরের নির্মাণকাজ শেষ হবে এবং নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে উদ্বোধন সম্ভব হবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা হাসিনার দুঃশাসনের চিত্রগুলো এই জাদুঘরে প্রদর্শনের জন্য কিউরেট করছি, যাতে ১৬ বছরের ফ্যাসিজমের ইতিহাস জীবন্ত থাকে। জীবন্ত থাকে সরাসরি গণভবন থেকে আসা নির্দেশনা অনুযায়ী পরিচালিত সব অত্যাচারের এবং নৃশংসতার ইতিহাস।’
জাদুঘর নির্মাণে আইসিটি প্রসিকিউশন টিম ও গুমবিষয়ক তদন্ত কমিশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে বলে জানান জাদুঘরের চিফ কিউরেটর তানজীম ওয়াহাব। তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এটি একটি ইউনিক জাদুঘর হবে। ১৬ বছরের দুঃশাসনের গল্পগুলো এই জাদুঘরে সিকোয়েন্স আকারে থাকবে। দর্শনার্থীরা জানতে পারবেন শেখ হাসিনা কীভাবে দেশ চালাতেন।’
সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, ‘গুম-খুনের নির্দেশ দেওয়া অনেক অডিও ইতিমধ্যে জাদুঘর কর্তৃপক্ষের হাতে এসেছে। এই অডিওগুলো জাদুঘরে রাখা হচ্ছে। শেখ হাসিনা কীভাবে গুমের শিকার পরিবারগুলোকে ডেকে এনে মিথ্যা সান্ত্বনা দিতেন, সে চিত্রও উঠে আসবে।’
এ ছাড়া জাদুঘরে একটা স্ক্রিনিং সেন্টার থাকবে, যেখানে জুলাই ও ১৬ বছরের দুঃশাসন নিয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শনের ব্যবস্থা থাকবে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, গুমসংক্রান্ত কমিশন অব ইনকোয়ারির সদস্য ড. নাবিলা ইদ্রিস, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের গভর্নিং বডির চেয়ারপারসন মেরিনা তাবাশ্যুম।
জুলাই স্মৃতি জাদুঘরের গবেষকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ড্যানিয়েল আফজালুর রহমান, কবি হাসান রোবায়েত, মালিহা নামলাহা, জাদুঘরের শিল্পী তেজশ হালদার জশ, মোসফিকুর রহমান জোহান, জাদুঘরের স্থপতি সালাউদ্দিন আহমেদ এবং সমন্বয়কারী হাসান এনাম।