সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ডাকাতি মামলায় যুবদল নেতাসহ ১০ জনকে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে তাদের প্রত্যেককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- সিদ্ধিরগঞ্জের মৃত আ. রাজ্জাকের ছেলে নুরুদ্দিন ওরফে বাছির (৫৪), শামসু মিয়ার ছেলে সুমন (৪১), কামরুল ইসলাম ছেলে ও মহানগর যুবদলের বর্তমান যুগ্ম আহ্বায়ক মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার (৪৫), ফতুল্লা তল্লা এলাকার করিম মুন্সীর মনির হোসেন ওরফে তল্লা মনির (৬৩), সিদ্ধিরগঞ্জের মৃত বাদশা মিয়ার ছেলে আবুল কালাম (৫৪), ফতুল্লা হাজীগঞ্জ এলাকার ওসমান প্রধানের ছেলে আসলাম (৫৪) ও কানা ইসলাম (৪৯) সিদ্ধিরগঞ্জের আজিম উদ্দিনের ছেলে মামুন (৪৯), মো.

ছিদ্দিকের ছেলে বিল্লাল (৪৯) ও ফজলুর রহমানের মাসুম ওরফে নোয়াখাইল্লা মাসুম (৪৪)।

তাদের মধ্যে নুরুদ্দিন, সুমন, যুবদল নেতা মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ার, আসলাম ও মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং বাকীরা পলাতক ছিলেন।

রোববার (১০ আগস্ট) বিকেলে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ১ম আদালতের বিচারক মো. মোমিনুল ইসলাম এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময়ে ৫ জন আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং বাকীরা অনুপস্থিত ছিলেন। 

নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. কাইউম খান এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

মামলার নথিসূত্রে জানা যায়, ২০০৬ সালের ৩১ জুলাই রাতে সিদ্ধিরগঞ্জের এনায়েতনগর গোদনাইল এলাকার অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলামের ভাড়াটিয়া বাসায় ডাকাতির ঘটনা ঘটে।

এই ঘটনায় অ্যাডভোকেট মফিজুল ইসলাম অজ্ঞাতনামা আসামী করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত করে দণ্ডপ্রাপ্তদের সনাক্ত করে এবং জবানবন্দী গ্রহণ করে। সেই মামলায় আদালত এই রায় ঘোষণা করেছেন।

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি ওমর ফারুক বলেন, তদন্ত শেষে পুলিশ ১২ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। তাদের মধ্যে রায়ে দশজনকে সাত বছরের কারাদণ্ড এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে ২ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর যুবদলের আহ্বায়ক মনিরুল ইসলাম সজল বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। মোফাজ্জল হোসেন আনোয়ারের বিরুদ্ধে পূর্বে যে মামলা ছিল তা আমরা জানতাম না। বিষয়টি আমরা কেন্দ্রে জানিয়েছি। আমরা এখন কেন্দ্রীয় যুবদলের পরবর্তী সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছি।  
 

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ র ল ইসল ম য বদল

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে লালদিয়া টার্মিনাল নির্মাণ করে ৩০ বছর চালাবে ডেনমার্কের এপিএম টার্মিনালস

চট্টগ্রাম বন্দরের লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণ এবং ৩০ বছরের জন্য এটি পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে ডেনমার্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস। এ প্রতিষ্ঠানটি এপি মোলার মার্সক গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় এ টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ৫৫ কোটি ডলার বা প্রায় ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে কোম্পানিটি।

এ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও এপিএম টার্মিনালসের মধ্যে আগামী সপ্তাহে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হবে। চুক্তি স্বাক্ষরের পরপরই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশকে ২৫০ কোটি টাকা ‘সাইনিং মানি’ হিসেবে দেবে। ঢাকায় এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন এপিএম টার্মিনালসের গ্লোবাল চেয়ারম্যান ও ডেনমার্কের একজন মন্ত্রী।

আজ বুধবার অর্থনৈতিক বিষয়–সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটিতে এ চুক্তির বিষয়ে অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানান বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী)।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সৈয়দ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য কমোডর আহমেদ আমিন আবদুল্লাহ।

আশিক চৌধুরী জানান, আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু হতে পারে। তিন বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ করে ২০২৯ সালে টার্মিনালটি চালু করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার। এরপর ৩০ বছর টার্মিনালটি পরিচালনা করবে এপিএম টার্মিনালস। পরে উভয় পক্ষ চাইলে আরও ১৫ বছর চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে পারে।

একই সভায় ঢাকার পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার টার্মিনালটি চালু করার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে জানিয়ে বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, ‘আগামী সপ্তাহে এ–সংক্রান্ত আরেকটি চুক্তি স্বাক্ষর হবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আশিক চৌধুরী বলেন, ‘লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনাল প্রকল্পটি হবে বাংলাদেশের ইতিহাসে ইউরোপ থেকে আসা সবচেয়ে বড় প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ বা এফডিআই। এতে বাংলাদেশ সরকারের এক টাকাও বিনিয়োগ করতে হবে না। প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৫৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পুরোপুরি বহন করবে এপিএম টার্মিনালস। আগামী তিন বছরে এই অর্থ বাংলাদেশে আসবে। এই পুরো অঙ্কটাই এফডিআই হিসেবে গণ্য হবে।’

৮-১০ লাখ কনটেইনার ধারণক্ষমতা

আশিক চৌধুরী জানান, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালটি বছরে ৮ থেকে ১০ লাখ টিইইউ (কনটেইনার টার্মিনাল পরিচালনার আন্তর্জাতিক একক) পর্যন্ত কনটেইনার পরিচালনা করতে সক্ষম হবে। বর্তমান চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতার তুলনায় এটি প্রায় ৪০ শতাংশ বেশি হবে। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের সার্বিক কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, লালদিয়া কনটেইনার টার্মিনালের অবস্থান হবে পতেঙ্গার চট্টগ্রাম বোট ক্লাব–সংলগ্ন কর্ণফুলী নদী তীরের পাশে। সমুদ্রের কাছাকাছি হওয়ায় লালদিয়া টার্মিনালে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের তুলনায় দ্বিগুণ আকারের জাহাজ ভিড়তে পারবে। এর ফলে সিঙ্গাপুর বা শ্রীলঙ্কায় ট্রান্সশিপমেন্টের প্রয়োজন হবে না, টার্ন অ্যারাউন্ড সময় কমবে, রপ্তানির গতি বাড়বে এবং সরাসরি ইউরোপে যাতায়াতের সুযোগ তৈরি করবে। টার্মিনালটি ২৪ ঘণ্টা পরিচালিত হবে। এ ছাড়া নতুন টার্মিনালটি চালু হলে সরাসরি ৫০০ থেকে ৭০০ লোকের কর্মসংস্থান হবে।

ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালস বিশ্বে প্রায় ৬০টি টার্মিনাল পরিচালনা করছে। বৈশ্বিক শীর্ষ ২০টি টার্মিনালের মধ্যে ১০টি পরিচালনা করছে এপিএম টার্মিনালস।

পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও আশিক চৌধুরী জানান, ডেনমার্কের প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করলেও লালদিয়া টার্মিনালের মালিকানা থাকবে বাংলাদেশ সরকারের অধীনে। তিনি বলেন, ‘এপিএম টার্মিনালস আমাদের জমির ওপর একটি নতুন (গ্রিনফিল্ড) প্রকল্প হিসেবে টার্মিনাল নির্মাণ করবে এবং ৩০ বছর মেয়াদে এটি পরিচালনা করবে। এরপর সম্পূর্ণ সম্পত্তি সরকারের কাছে হস্তান্তর করবে।’

এপিএম টার্মিনালস টার্মিনালটি পরিচালনা করলেও বন্দর ব্যবহারকারীদের জন্য চার্জ নির্ধারণে সরকারের নিয়ন্ত্রণ বজায় থাকবে বলে জানান বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ একটি নির্দিষ্ট সীমা নির্ধারণ করে দেবে, যাতে অতিরিক্ত মাশুল আরোপ করা না যায়। অপারেটর চাইলে মানসম্মত সেবা দিয়ে কিছুটা বেশি মূল্য নিতে পারে, তবে তা নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যেই থাকবে। সবগুলো টার্মিনাল চালু হলে কয়েক বছর পরে একপর্যায়ে এই সীমা তুলে দেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ