যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থী আন্দোলন অ্যান্টিফাকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা ট্রাম্পের
Published: 23rd, September 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের বামপন্থী আন্দোলন অ্যান্টিফাকে দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে এ–সংক্রান্ত এক নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন তিনি।
নির্বাহী আদেশে অ্যান্টিফাকে ‘সামরিক, অরাজকতাবাদী গোষ্ঠী’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার উৎখাতের লক্ষ্যে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটাচ্ছে সংগঠনটি।
১০ সেপ্টেম্বর ইউটাহর একটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক কর্মী ও ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ মিত্র চার্লি কার্ক খুন হওয়ার পর থেকেই অ্যান্টিফার বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার হুমকি দিয়ে আসছিলেন ট্রাম্প। সন্দেহভাজন বন্দুকধারী ২২ বছর বয়সী টাইলার রবিনসনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেছে কর্তৃপক্ষ। তদন্তকারীদের বরাতে বলা হয়েছে, কার্ক ‘বিদ্বেষ’ ছড়াচ্ছিলেন—এমন যুক্তিতেই হামলাকে ন্যায্যতা দিয়েছেন রবিনসন।
নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ‘আইনসম্মত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দমনের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক সহিংসতার আশ্রয় নেওয়ায় অ্যান্টিফাকে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।’নির্বাহী আদেশে বলা হয়েছে, ‘আইনসম্মত রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দমনের উদ্দেশ্যে রাজনৈতিক সহিংসতার আশ্রয় নেওয়ায় অ্যান্টিফাকে অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হলো।’
কিন্তু অ্যান্টিফাকে কীভাবে সংজ্ঞায়িত করা হবে—সে বিষয়ে ওঠা প্রশ্নগুলোর প্রতি একধরনের ইঙ্গিত দিয়ে আদেশে অভিযোগ করা হয়েছে, সংগঠনটি তাদের কর্মীদের পরিচয় গোপন রাখতে নানা পদ্ধতি ও কৌশল ব্যবহার করে থাকে। আদেশে বলা হয়, ‘অ্যান্টিফার পক্ষে বা তাদের সহায়তায় কাজ করা যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’
২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের প্রথম শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের সময় কালো পোশাক ও মুখোশ পরা অ্যান্টিফা সদস্যসহ অনেক প্রতিবাদকারী ওয়াশিংটনে কাচ ভাঙচুর করেন ও একটি গাড়ি পুড়িয়ে দেন। ট্রাম্প দাবি করেন, পুলিশবিরোধী সহিংসতা থেকে শুরু করে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হামলার পেছনেও অ্যান্টিফার হাত আছে।
রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের সমালোচকেরা সতর্ক করেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ (সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা) ভিন্নমত দমনের অজুহাত ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে টার্গেট করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্টের সমালোচকেরা সতর্ক করেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ (সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা) ভিন্নমত দমনের অজুহাত ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে টার্গেট করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে।
‘অ্যান্টি-ফ্যাসিস্ট’ বা ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী’ বোঝাতে ব্যবহৃত ‘অ্যান্টিফা’ শব্দের উৎপত্তি ১৯৩০-এর দশকে জার্মানিতে হিটলারবিরোধী সমাজতান্ত্রিক গোষ্ঠীগুলো থেকে।
অ্যান্টিফা সমর্থকদের প্রায়ই পুরোপুরি কালো পোশাকে দেখা যায়। বর্ণবাদ, অতি দক্ষিণপন্থী মূল্যবোধ তথা ফ্যাসিবাদী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেন তাঁরা। আত্মরক্ষায় কখনো কখনো সহিংস পন্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন হতে পারে বলেও তাঁরা দাবি করে থাকেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক সন ত র স ব যবহ স গঠন দমন র
এছাড়াও পড়ুন:
সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় উচ্চ ঝুঁকিতে ৫ জেলা: সম্প্রীতি যাত্রা
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঝুঁকিতে আছে ২৯টি জেলা। এর মধ্যে ৫টি জেলা আছে উচ্চ ঝুঁকিতে। সেগুলো হলো—ঢাকা, চাঁদপুর, নোয়াখালী, রংপুর ও যশোর। মাঝারি ঝুঁকিতে আছে ২৪ জেলা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনী মিলনায়তনে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ আয়োজিত ‘মসজিদ, মন্দির, মাজার, আখড়া ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় সম্প্রীতি যাত্রার ডাক এবং আসন্ন দুর্গাপূজায় ঝুঁকি পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন লিখিত বক্তব্যে এসব তথ্য জানিয়েছেন লেখক ও গবেষক মীর হুযাইফা আল-মামদূহ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক ফেরদৌস আরা রুমী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাহা মির্জা, বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জামসেদ আনোয়ার তপন, সংগীতশিল্পী অরূপ রাহী এবং সাংস্কৃতিক কর্মী বীথি ঘোষ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দশ বছর (২০১৪ থেকে ২০২৫) ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পূজামণ্ডপ, শোভাযাত্রার রুট এবং সংখ্যালঘুদের বাড়ি-ঘরে যেসব হামলা হয়েছে, তা বিশ্লেষণ করে ২৯টি জেলাকে ঝুঁকিপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫টি জেলা উচ্চ ঝুঁকিতে। ২৪টি জেলা মাঝারি ঝুঁকিতে আছে।
লিখিত বক্তব্যে সম্প্রীতি যাত্রার পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাস ও রাষ্ট্রচেতনার ভিত্তি গড়ে উঠেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, সহাবস্থান এবং আধ্যাত্মিক-সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর। আখড়া, বাউল আসর, দরগাহ ও সুফি মাজার যুগে যুগে মানুষের মন ও সমাজকে আলোকিত করেছে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেখা যাচ্ছে, এই ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্রগুলো ক্রমাগত সহিংসতার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। এসব হামলা কোনো একক সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নয়, বরং বাংলাদেশের সামাজিক সংহতি ও সাংবিধানিক শৃঙ্খলার ওপর সরাসরি আঘাত।
সম্প্রীতি যাত্রা জানায়, পূজার প্রস্তুতির মধ্যেই মণিপুরে প্রতিমা ভাঙচুর এবং কুমিল্লায় চারটি মাজারে হামলা হয়েছে। রাজবাড়ীতে এক ব্যক্তির লাশ কবর থেকে তুলে পুড়িয়ে ফেলার মতো পৈশাচিক ঘটনা ঘটেছে।
একটি জাতীয় পত্রিকার বরাত দিয়ে জানানো হয়, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ছয় মাসেই ৮০টি মাজার ও দরগায় হামলা হয়েছে। সংখ্যালঘু, সুফি, বাউল এবং আদিবাসীসহ সব ধরনের প্রান্তিক গোষ্ঠী আজ ঝুঁকির মুখে।
সংগঠনটি জানায়, আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় ৬ হাজার ৬০০টি সাম্প্রদায়িক নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে। এর কোনোটির বিচার হয়নি। ফ্যাসিবাদ বিদায় নিলেও তাদের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলো খুবই উদাসীন।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বাড়তি শঙ্কার কথা তুলে ধরে সংগঠনটি জানায়, নির্বাচনের আগমুহূর্তে সহিংসতার ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, ভোটের আগে-পরে সংখ্যালঘুদের আবাসিক এলাকা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ও দরবারগুলো সহজে হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়।
সম্প্রীতি রক্ষায় সংগঠনটি বেশকিছু পদক্ষেপ নেবে বলে জানায়। সেগুলোর মধ্যে স্থানীয় সম্প্রীতি কমিটি গঠন, মনিটরিং ও নথিভুক্তি, গুজব প্রতিরোধে তথ্য প্রবাহ, দ্রুত সহায়তা কাঠামো, প্রতিবেদন ও নীতি প্রস্তাব।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সম্প্রীতি রক্ষায় সবচেয়ে বড় শক্তি হলো জনগণ। তাই, আপনার এলাকায় কোনো হুমকি, উসকানি বা গুজব বা আক্রমনের আশঙ্কা দেখা দিলে অবিলম্বে নির্ধারিত চ্যানেলে রিপোর্ট করুন, প্রমাণ সংরক্ষণ করুন, কমিটিতে সক্রিয় হোন, গুজব প্রতিরোধ করুন।
নাগরিকদের জীবন, সম্পদ, ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংস্কৃতিক অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সম্প্রীতি যাত্রা।
ঢাকা/নাজমুল/রফিক