নেত্রকোনায় কৃষক নূর মোহাম্মদ হত্যা মামলার বাদী ও তাঁর পরিবারকে আসামি ও তাঁদের স্বজনেরা মামলা তুলে নিতে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছে বাদীর পরিবার। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাদী জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। একই সঙ্গে আসামিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি দিয়েছেন।

নূর মোহাম্মদ (৩৫) সদর উপজেলার জামাটি গ্রামের বাসিন্দা। গত ৩০ আগস্ট আধিপত্য বিস্তার ও পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিপক্ষের হামলায় তাঁর মৃত্যু হয়।

মামলার এজাহার, লিখিত অভিযোগ ও বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মৌগাতি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য বিএনপিকর্মী দোজাহান মিয়ার (৫২) সঙ্গে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বেশ কয়েকজনের বিরোধ চলছিল। গত ৩০ আগস্ট রাতে জেলা বিএনপির সম্মেলন থেকে বাড়ি ফেরার পথে মৌগাতি বাজারের কাছে দোজাহান মিয়াকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর দোজাহানের প্রতিবেশী মাতু মিয়া (৫৫) লোকজন নিয়ে জামাটি গ্রামের রফিক মিয়ার বাড়িতে হামলা চালান। এ সময় রফিকের ভাতিজা নূর মোহাম্মদ ও তাঁর পরিবার বাধা দিলে হামলাকারীদের আঘাতে নূর মোহাম্মদ, রফিক মিয়াসহ কয়েকজন আহত হন। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক নূর মোহাম্মদকে মৃত ঘোষণা করেন।

দোজাহান মিয়ার স্ত্রী জসোমা আক্তার ৩ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে ২১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পরদিন নূর মোহাম্মদ হত্যার ঘটনায় তাঁর বাবা মোফাজ্জল মাতু মিয়াকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পুলিশ এ পর্যন্ত দুই মামলায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

নূর মোহাম্মদের বাবার দাবি, মামলা তুলে নিতে আসামিপক্ষের লোকজন তাঁর পরিবারকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। তাঁরা এখন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ নিয়ে আজ জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হয়। শেষে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন তাঁরা।

অভিযোগের বিষয়ে মামলার দুই আসামি দাবি করেন, তাঁরা ঘটনাস্থলে ছিলেন না এবং মামলা তুলে নিতে বাদীপক্ষকে কোনো হুমকিও দেননি।

নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, নূর মোহাম্মদ হত্যা মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে। মামলা তুলে নিতে বাদীকে হুমকির বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ম হ ম মদ র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

রাকসু নির্বাচন পেছানোয় ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা

পোষ্য কোটা ইস্যুতে অচলাবস্থার কারণে বাড়িমুখী হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ইতোমধ্যে গত দুই দিনে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। বাকি যারা ক্যাম্পাসে ছিলেন, রাকসু নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা আসার পর তারাও মঙ্গলবার সকাল থেকে ধীরে ধীরে ক্যাম্পাস ছাড়তে শুরু করেছেন।

এদিকে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের পূর্বঘোষিত কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছেন।

আরো পড়ুন:

রাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি

জাবিতে হলের ছাদে মদ ও গাঁজা সেবন করছিলেন ছাত্রদল নেতাসহ ১৫ শিক্ষার্থী

গত দুইদিন কর্মবিরতি থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির রিডিং রুম খোলা ছিল। তবে মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) নির্ধারিত সময় সকাল ৮টায় রিডিং রুম বন্ধ ছিল। ফলে শিক্ষার্থীরা রিডিং রুম খোলার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রিডিং রুম শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে কর্মবিরতি শুরু হয়। বন্ধ আছে সকল বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা এবং প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম। প্রশাসন ভবনের সামনে ও বুদ্ধিজীবী চত্বরে বসে সময় কাটাচ্ছেন কর্মবিরতিতে অংশগ্রহণকারীরা। বিভিন্ন ভবনের তালা খোলা হয়। তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি খুবই কম। খাবার দোকানগুলোতে আসন ফাঁকা।

সরেজমিনে ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা গেছে, পরিবহন মার্কেট, আমতলা, টুকিটাকি চত্বরসহ জনবহুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের আনাগোনা কম। ক্যাম্পাস সংলগ্ন বিনোদপুর গেইট ও কাজলা গেইটে গিয়ে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ব্যাগপত্র নিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন।‌

বাড়ি যাচ্ছিলেন ঐশ্বর্য বিশ্বাস নামে এক রাবি শিক্ষার্থী। বিনোদপুর গেইটে তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, “রাজশাহীতে কিছু কাজ ছিল, তাই ক্যাম্পাসে ছিলাম। যেহেতু নির্বাচন পেছানোর ঘোষণা এসেছে, আর পোষ্য কোটার বিষয় সমাধান হয়নি, তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি‌। পূজার ছুটি শেষে ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্যাম্পাসে ফিরব।”

ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী নাজমুল বলেন, “ক্লাস-পরীক্ষা কিছু হচ্ছে না, আর হবে বলেও মনে হচ্ছে না। এখানে থেকে এখন আর লাভ নেই। ভাবছিলাম রাকসুতে ভোট দিয়ে বাসায় যাব। কিন্তু রাকসুও পেছাল। সবাই চলে যাচ্ছে আমিও কাল চলে যাব।”

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তন্ময় বলেন, “ক্যাম্পাসের যে অবস্থা মেস থেকে অলরেডি সবাই চলে যাচ্ছে। ক্লাসও হচ্ছে না, এখন আর রাজশাহী থেকে কি করি। আমার বন্ধুরা প্রায় সবাই চলে গেছে। তাই আমিও আজ বাসায় চলে যাচ্ছি।”

ক্যাম্পাসের দোকানদার সুরুজ আলী বলেন, “আজ ক্যাম্পাস খোলার দিন। কিন্তু তারপরও শিক্ষার্থীরা নেই। তেমন ব্যবসা হচ্ছে না।”

গত রবিবার (২১ সেপ্টেম্বর) পোষ্য কোটা নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে জরুরি সিন্ডিকেট মিটিং শেষে পোষ্য কোটা স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। সেই সঙ্গে গত শনিবারের শিক্ষক লাঞ্ছনার অভিযোগ খতিয়ে দেখতে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে কর্তৃপক্ষ।

তবে কোটা স্থগিতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার ও শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচারের দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা দেন শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) নানা উত্তেজনার পর রাতে নির্বাচন কমিশনের সভায় নির্বাচন ২১ দিন পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর ধার্য করা হয়। কমিশন জানায়, উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে নির্বাচন পরিচালনা সম্ভব নয়। 

এদিন রাতে বিএনপিপন্থি শিক্ষকদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, চলমান কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।‌

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ