কেউ কেউ শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে যায়, আবার কেউ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ছুটে চলে অদম্য সাহসে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বি এম সুজা উদ্দিন সেই অদম্য সাহসী মানুষদের একজন।

পরিবারে অভাব ছিল না, কারণ বাবা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সুজার মনে বাসা বেঁধেছিল ভিন্ন এক তৃষ্ণা; স্বপ্ন নিজের কিছু গড়ে তোলার, উদ্যোক্তা হওয়ার। তাই তো ২০২০ সালে অনার্স চতুর্থ বর্ষে থাকা অবস্থায় মাত্র ৩ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।

আরো পড়ুন:

১০ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে অকৃতকার্য ইবি উপাচার্য

চাকসু নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে যা জানা গেল

একজন বন্ধুর কাছে দেড় হাজার এবং এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া দেড় হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু হয় অনলাইনে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে, আজ অরগানিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের বিশ্বস্ত মাধ্যমে রূপ নিয়েছে।

গত ৪ বছর ধরে শুধু অনলাইনেই চলেছে এই পথচলা। এরপর একদিন সাহস করে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি টেবিলে কয়েকটি পণ্য সাজিয়ে বসেন তিনি। সেই টেবিলই হয়ে উঠল তার স্বপ্নের অফলাইন রূপ। আজ সেটা সবার কাছে পরিচিত ‘সুজাস ফুড হেভেন’ নামে।

শুরুতে তার পড়াশোনা আর ব্যবসা সামলানো ছিল অনেক কঠিন। অর্ডার হাতে পেলে ক্লাস বা পরীক্ষা না থাকলে নিজেই ডেলিভারি দিতেন যশোর শহর ও ক্যাম্পাসে। অন্য জেলায় পাঠাতেন কুরিয়ারে। ধীরে ধীরে দোকানে অংশীদার ও কর্মচারী যুক্ত হয়, তাতে কিছুটা স্বস্তি আসে তার। তবে স্বপ্ন পূরণের টানে পড়াশোনার প্রতি আগের মতো সিরিয়াস হ‌ওয়া সম্ভব না হলেও নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন। কারণ তিনি জানতেন, ফলাফলে কিছুটা ঘাটতি হলেও স্বপ্ন পূরণের পথে অভিজ্ঞতা অর্জনই বড় সম্পদ।

বন্ধুদের সহযোগিতা তার পথচলায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও পেয়েছেন প্রেরণা। ক্যাম্পাসে স্টল বসানোর সুযোগ কিংবা উদ্যোক্তা মেলায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে করেছে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করে আজ তিনি নিজের খরচ মেটাচ্ছেন, কর্মচারীর বেতন দিচ্ছেন এবং নতুন করে বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়। যদিও এখনো অর্থনৈতিক চাপ পুরোপুরি কাটেনি, তবে সুজা উদ্দিন দৃঢ় বিশ্বাসী- এই চাপই তাকে আরো শক্ত করবে এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সুজা বলেন, “আমার পথচলা একেবারে সহজ ছিল না। প্রথম দিকে আমার দোকানে বসতে লজ্জা লাগত, কখনো কখনো বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখিও হয়েছি। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সবকিছু জয় করে এখন আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি- আলহামদুলিল্লাহ, আমি আমার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। গ্রাহকদের ভালোবাসা ও সম্মান আমার আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।”

তার স্বপ্ন নিরাপদ খাদ্যের আউটলেট গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতে আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ইতোমধ্যে একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরে তিনি মনে করেন, এটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্যের সূচনা।

অন্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, “যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকে, তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করুন। এমন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করুন, যা সম্পর্কে আপনি জানেন, ভালো সোর্স রয়েছে এবং যেটা নিয়ে কাজ করতে আপনি আনন্দ পান। এতে সময় সঠিকভাবে কাজে লাগবে, অভিজ্ঞতাও বাড়বে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর সহজেই বড় পরিসরে শুরু করতে পারবেন।”

সুজা উদ্দিন হয়তো বড় ব্যবসায়ী নন, কিন্তু তার গল্প বড়। তিনি প্রমাণ করেছেন শুধু চাকরির স্বপ্ন দেখলেই জীবন বদলায় না। স্বপ্ন দেখতে হয় ভিন্নভাবে, সাহস করে শুরু করতে হয় ছোট থেকে। এটি তার সাহসের গল্প, স্বপ্নের গল্প, নিজেকে গড়ে তোলার গল্প।

‘সুজাস ফুড হেভেন’ শুধু একটি খাবারের দোকান নয়, এটি একটি প্রমাণ। চাইলে স্বপ্ন সত্যি হয়, যদি লড়াই করার সাহস থাকে।

ঢাকা/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উদ য ক ত র গল প ব যবস

এছাড়াও পড়ুন:

১২টি পাম্পের ৬টি অচল, পানি সরবরাহ কমায় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ

তিন দিন ধরে নোয়াখালী পৌরসভার সরবরাহ করা সুপেয় পানি পাচ্ছেন না শহরের সার্কিট হাউস এলাকার বাসিন্দা ফরহাদ কিসলু। পানি না পেয়ে রান্নাসহ গৃহস্থালির নানা কাজ করতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। বোতলজাত পানি কিনে পান করতে হচ্ছে তাঁদের।

শুধু ফরহাদ কিসলুই নন, তাঁর মতো একই ভোগান্তিতে রয়েছেন নোয়াখালী পৌরসভার অনেক বাসিন্দা। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পানির সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় তাঁদের এই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে।

নোয়াখালী পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সরবরাহ করা পানির গ্রাহকসংখ্যা প্রায় সাত হাজার। বিভিন্ন স্থানে বসানো ১২টি বৈদ্যুতিক পাম্পের সাহায্যে ভূগর্ভ থেকে পানি তোলার পর তা পরিশোধন করে গ্রাহকদের সরবরাহ করা হয়। প্রতিদিন এক কোটি লিটার পানি সরবরাহ করতে পারে পৌর কর্তৃপক্ষ। তবে গত কয়েক দিনে ১২টি পাম্পের ৬টি বিকল হয়ে পড়ায় পানি সরবরাহও অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতিদিন ৫০ লাখ লিটারের মতো পানি সরবরাহ করতে পারছেন।

পৌর শহরের সার্কিট হাউস এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. মোস্তফা জানান, বাসিন্দাদের নিজেদের বসানো পাম্পে যে পানি ওঠে, তাতে মাত্রাতিরিক্ত আয়রন, যে কারণে এই পানি দিয়ে রান্না করা সম্ভব হয় না। পানও করা যায় না। তিন দিন ধরে পৌরসভার পানি না পেয়ে অনেক বাসিন্দা দূরদূরান্তের পুকুর থেকে পানি সংগ্রহ করে এনে রান্না করছেন। পান করার জন্য বোতলজাত পানি কিনতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘এমনিতে প্রায় সময় পৌরসভার পানিতে দুর্গন্ধসহ নানা সমস্যা থাকে। এর মধ্যে এখন পানি সরবরাহই বন্ধ। মানুষের ভোগান্তির কোনো শেষ নেই।’

পৌর শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা নুরুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, গত দুই দিনে তাঁর এলাকায় পানি সরবরাহ কমেছে। পানি পাচ্ছেন খুবই কম, তা দিয়ে পরিবারের পানির চাহিদা মিটছে না।

পানি সরবরাহ কমার বিষয়টি স্বীকার করেছেন পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মো. সোহেল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে পানি তোলার ১২টি পাম্পের মধ্যে ৬টিই বর্তমানে বিকল। এ কারণে গত তিন দিনে দৈনিক এক কোটি লিটারের পরিবর্তে ৫০ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করা যাচ্ছে। বিকল পাম্পগুলো সচলের চেষ্টার পাশাপাশি নতুন পাম্প সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। তবে পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হতে কয়েক দিন লাগতে পারে।

পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মুহাম্মদ ইসমাঈল প্রথম আলোকে বলেন, পানি সরবরাহে সমস্যার বিষয়টি সম্পর্কে তিনি অবগত রয়েছেন। বিদ্যুৎ লাইনের সমস্যার কারণে ঠিকমতো পানি ওঠানো যাচ্ছে না। আবার পাম্পের সমস্যাও রয়েছে। সমস্যাগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিশালতাই এখানে দুঃখের অনুমোদন
  • স্টারলিংকের সব অনুষঙ্গ পাওয়া যাবে গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারে
  • শাঁখারীবাজারে পূজার বাজারে যা পাওয়া যাচ্ছে
  • হামিদ ফেব্রিক্সের উৎপাদন বন্ধ ঘোষণা
  • ১৮ জালে ধরা পড়ল মাত্র সাড়ে ৪ কেজি, সন্দ্বীপ চ্যানেলে যে কারণে কমছে ইলিশ
  • রাজশাহীর খাদ্যগুদামে চাল নিয়ে ‘চালবাজি’, কোটি টাকার কারসাজি
  • মির্জাপুরে তিতাসের পাইপ ফেটে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ, ২ দিনেও হয়নি মেরা
  • মির্জাপুরে গ্যাসের লাইনের পাইপ ফেটে সরবরাহ বন্ধ, ৩৯ ঘণ্টা পরও হয়নি মেরামত
  • ১২টি পাম্পের ৬টি অচল, পানি সরবরাহ কমায় বাসিন্দাদের দুর্ভোগ