বরগুনার তালতলী উপজেলায় মো. মোকলেছ মোল্লা (৫৯) নামে এক বৃদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবেশী দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় একই দিনে তালতলী থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী শিশুদের পরিবার।

বুধবার (২২ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে তালতলী উপজেলার বাসিন্দা ১০ বছর এবং ৯ বছর বয়সী দুই কন্যা শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ভুক্তভোগী দুই শিশুর বাবা এবং মা বাদী হয়ে এ মামলা দুটি করেন।

আরো পড়ুন:

দেশে প্রথম ‘কার্বন-নিউট্রাল শিশু’ হিসেবে স্বীকৃতি পেল সাতক্ষীরার রুহাব

কালীগঞ্জে মা ও শিশু সহায়তা তহবিল কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রশিক্ষণ

আসামি মো.

মোকলেছ মোল্লা উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ছকিনা এলাকার মৃত আব্দুল মোল্লার ছেলে।

১০ বছর বয়সী শিশুটির বাবার দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত আসামি মোকলেছ মোল্লা একই এলাকার বাসিন্দা এবং প্রতিবেশী। তিনি ওই এলাকার ছোট-ছোট মেয়েদের বিভিন্ন সময় টাকা ও খাবারের প্রলোভন দেখিয়ে কুপ্রস্তাব দিতেন। 

গত ৪ অক্টোবর দুপুরের দিকে ভুক্তভোগী শিশুকে বাড়ির সামনে দেখে খাবারের লোভ দেখিয়ে মোকলেছ মোল্লা তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে যায়। পরে নিজ ঘরের বারান্দায় ওই শিশুটিকে ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। 

৯ বছর বয়সী ভুক্তভোগী অপর আরেক শিশুর মায়ের দায়ের করা মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত আসামি মোকলেছ মোল্লা বিভিন্ন সময় ভুক্তভোগী শিশুটিকে কুপ্রস্তাব দিতেন। গত ৬ অক্টোবর বিকেলে ভুক্তভোগী শিশুটির মা তাকে বাড়িতে রেখে স্বামীর সঙ্গে স্থানীয় একটি বাজারে ঔষধ কিনতে যান। এ সময় ওই বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগে মোকলেছ মোল্লা ঘরে প্রবেশ করে বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।

পরে ভুক্তভোগী ওই দুই শিশুর পরিবারের সদস্যরা ধর্ষণের বিষয় জানতে পেরে প্রতিবেশী মোকলেছ মোল্লাকে অভিযুক্ত করে তালতলী থানায় পৃথক দুটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন।

এ বিষয়ে তালতলী থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শরিফুল ইসলাম বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে ভুক্তভোগী দুই শিশুকে ধর্ষণ সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও আদালতের মাধ্যমে তাদের জবানবন্দি নেওয়া হবে। পাশাপাশি এ ঘটনায় অভিযুক্ত আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।”

ঢাকা/ইমরান/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম মল ম কল ছ ম ল ল ত লতল

এছাড়াও পড়ুন:

বুয়েটের ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে চাকসু নেতার পোস্ট, সমালোচনার পর মুছে দিয়ে দুঃখ প্রকাশ

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পোস্ট করেছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (চাকসু) এক নেতা। এতে তিনি ভুক্তভোগী নারীকেও দায়ী করেন। তবে সমালোচনার মুখে এক ঘণ্টার মধ্যে পোস্ট ডিলিট করেন ওই নেতা। এরপর দুঃখ প্রকাশ করে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন ঘটনা সম্পর্কে তিনি জানতেন না।

পোস্ট দেওয়া ওই চাকসুর নেতার নাম আকাশ দাস। তিনি চাকসু নির্বাচনে শিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেলে নির্বাহী সদস্য প্রার্থী ছিলেন। এ পদে তিনি জয়ীও হয়েছেন। পোস্টের কয়েকটি মন্তব্য নিয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে। এ পোস্টে তিনি ধর্ষণ-কাণ্ডের ঘটনায় ভুক্তভোগীকেও দায়ী করেন। এ ছাড়া তদন্ত করলে ভুক্তভোগীর দোষ বেশি পাওয়া যাবে বলেও উল্লেখ করেন।

জানতে চাইলে আকাশ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি পোস্টে বলেছি, অপরাধী ছেলে বা মেয়ে যেই হোক, তাঁর ফাঁসি হওয়া উচিত। অনেক আইনজীবীও বলেছেন, “অনেক ধর্ষণ মামলা ভুয়া।” আমি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী, তাই সবার মন্তব্যের উত্তর দিতে পারি না। আমি নারী-পুরুষের সমান অধিকারেই বিশ্বাসী।’

তাঁর পোস্টের ব্যাখ্যা দিয়ে আকাশ দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কেউ কাউকে জোর করে ধর্ষণ করতে পারে না। তাদের আগে থেকে পরিচয় থাকায় এমন ঘটনা ঘটে। আমি অপরাধীর শাস্তির কথাও বলেছি। তবে আমি একটি সংগঠনের প্যানেলে নির্বাচিত। তাই পোস্টটি ডিলিট করতে হয়েছে। কারণ, অনেকে আমার বক্তব্য বিকৃতভাবে তুলে ধরে শিবিরকে ছোট করার চেষ্টা করছে। আমি ইতিমধ্যেই দুঃখ প্রকাশ করেছি।’

বুয়েটের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নারীদের কটূক্তি করার অভিযোগ উঠেছে। শ্রীশান্ত রায় নামের ওই শিক্ষার্থীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

ফেসবুকে সমালোচনা

আকাশ দাসের পোস্টের স্ক্রিনশট ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে অনেকেই ইসলামী ছাত্রশিবির ও আকাশ দাসের সমালোচনা করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, ছাত্রদলসহ অনেক রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এ পোস্টের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট করেছেন। শাখা শিবিরের নেতা-কর্মীরাও সমালোচনা করেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চাকসুতে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের ভিপি প্রার্থী সাজ্জাদ হোসেন তাঁর ফেসবুক আইডিতে লেখেন, ‘আকাশ দাস বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ধর্ষণকে কীভাবে স্বাভাবিকীকরণ করেছে দেখেন! এরাই নাকি নারীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়বে!’

এ ছাড়া ছাত্রদল মনোনীত প্যানেলের জিএস প্রার্থী শাফায়েত হোসেন, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রশিদ দিনার, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব আশরাফ চৌধুরীসহ অনেকে আকাশ দাসের পোস্টের নিন্দা জানিয়েছেন।

ছাত্রশিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হওয়া চাকসুর ভিপি মো. ইব্রাহীম তাঁর ফেসবুকে লেখেন, ‘চাকসুর নবনির্বাচিত সদস্য আকাশ দাস বুয়েটের ধর্ষণ ঘটনাকে ঘিরে যে নিন্দনীয় মন্তব্য করেছেন, আমি তার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। তিনি যেন অবিলম্বে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।’ একই মন্তব্য করেন শাখা ছাত্রশিবিরের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক নবনির্বাচিত চাকসুর সাধারণ সম্পাদক সাঈদ বিন হাবিবও। এ ছাড়া চাকসুর অন্য নেতারাও এ পোস্টের নিন্দা জানিয়েছেন।

বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ

চাকসুর শিবির–সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত নির্বাহী সদস্য আকাশ দাস বুয়েটের ধর্ষণের ঘটনায় নেতিবাচক পোস্ট দেওয়ায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

আজ রাত সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ শুরু হয়। তারপর কাটা পাহাড়ের রাস্তা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে সমাবেশ হয়। এতে বক্তারা আকাশ দাসের পোস্টে করা বক্তব্যকে ‘নারীবিদ্বেষী’ ও ‘ধর্ষণকে স্বাভাবিকীকরণ’ হিসেবে অভিহিত করে এর নিন্দা জানান। পাশাপাশি তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন শাখা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্যসচিব আল মাসনূন, ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেলের জিএস প্রার্থী মো. শাফায়েত হোসেন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের সভাপতি সাকিব মাহমুদ, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর সহসাধারণ সম্পাদক উম্মেহ সাবাহ্ তাবাসসুম, নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলের ভিপি পারমিতা চাকমা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক ও শাখা নারী অঙ্গনের সংগঠক সুমাইয়া শিকদারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ