কক্সবাজারে চাকরি মেলায় তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানে নতুন উদ্যোগ
Published: 22nd, October 2025 GMT
কক্সবাজার শহরের লাবণী পয়েন্ট মোড়ে অবস্থিত কক্স–কার্নিভ্যাল হলে আজ বুধবার দিনব্যাপী চাকরি মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার ৯টি উপজেলা থেকে শত শত তরুণ–তরুণী এ মেলায় অংশ নেন।
আজ সকাল ১০টায় মেলার উদ্বোধন করেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান। বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত চলা এই আয়োজনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন হোটেল, রিসোর্ট ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির আবেদন জমা দেন ৮২৭ জন। তাঁদের মধ্যে ১১৯ জনকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়, আর ৯ জনের চাকরি নিশ্চিত করা হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রি স্কিলস কাউন্সিলের যৌথ উদ্যোগে মেলাটির আয়োজন করা হয়। আতিথেয়তা, আইটি, নির্মাণ, তৈরি পোশাক, কেয়ারগিভিংসহ বিভিন্ন খাতের ৩০টির বেশি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। আয়োজকেরা বলেন, এই মেলা দক্ষ তরুণ–তরুণীদের সঙ্গে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরাসরি যোগাযোগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে—যা স্থানীয়ভাবে কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড.
বিশেষ অতিথি ছিলেন যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের যুগ্ম সচিব কাজী মোখলেসুর রহমান, পরিচালক (প্রশাসন) এম এ খায়ের, বাংলাদেশ ট্যুরিজম করপোরেশনের পরিচালক মহিউদ্দিন হেলাল, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ফিরোজা আক্তার, জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, আইএলও কর্মকর্তা নাবিদ আকবর ও হোটেল–রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান।
স্বাগত বক্তব্যে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) প্রকল্প ব্যবস্থাপক সিরাজুল ইসলাম বলেন, এই মেলা চাকরির পাশাপাশি দক্ষতা ও সুযোগের মধ্যে একটি কার্যকর সেতুবন্ধ তৈরি করেছে। বিশেষ করে নারীদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, ‘চাকরি মেলা আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন—দক্ষতাকে টেকসই জীবিকায় রূপান্তরিত করার পথে এটি এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। আমাদের লক্ষ্য কক্সবাজারের তরুণসমাজকে কর্মমুখী ও উদ্যোক্তায় পরিণত করা।’ তিনি জানান, চেম্বারের প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ৭৮০ জন তরুণ–তরুণী প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেছেন; তাঁদের মধ্যে প্রায় ৪০০ জন ইতিমধ্যে কর্মসংস্থান পেয়েছেন।
গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার অর্থায়নে এবং যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের সহযোগিতায় আইএলও পরিচালিত আইজেক প্রকল্পের আওতায় এই চাকরি মেলার আয়োজন করা হয়। প্রকল্পটির মাধ্যমে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারের বেশি তরুণ–তরুণী দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, যাঁদের মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ ইতিমধ্যে কর্মসংস্থানে যুক্ত হয়েছেন।
মেলায় অংশ নেয় হোটেল সি পার্ল, বে–ওয়াচ, সিগাল হোটেল লিমিটেড, সায়মান হেরিটেজ, দ্য কক্স টুডে, রামাদা বাই উইন্ডহ্যাম, ওশান প্যারাডাইস, লং বিচ হোটেল, বেস্ট ওয়েস্টার্ন হেরিটেজ, মারমেইড ইকো রিসোর্ট, গ্রেস কক্স স্মার্ট হোটেল, গ্রিন নেচার, উইন্ডি টেরেস, স্যাফায়ার, ব্র্যাক ক্যারিয়ার হাব, বাংলাদেশ কনস্ট্রাকশন লেবার ফেডারেশন, ইউনিয়ন হাসপাতাল, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইনিটা ইনস্টিটিউট অব কম্পিউটার অ্যান্ড টেকনোলজি, হ্যালো আইটি, ক্রিয়েটিভ কমিউনিকেশন, ভিভো মোবাইল, ইলেক্ট্রো মার্ট লিমিটেড ও ডিমোর রিয়েল এস্টেট লিমিটেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
দিনব্যাপী আয়োজনে চাকরিদাতারা প্রার্থীদের তাৎক্ষণিক সাক্ষাৎকার নেন, জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করেন এবং ক্যারিয়ারবিষয়ক পরামর্শ দেন। অংশগ্রহণকারীরা শ্রমবাজারের চাহিদা, নতুন কর্মক্ষেত্রের প্রবণতা এবং পেশাগত উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা লাভের সুযোগ পান।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: তর ণ তর ণ প রকল প পর চ ল
এছাড়াও পড়ুন:
আইএলওর ৩টি কনভেনশন একসঙ্গে অনুসমর্থন ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত: উপদেষ্টা
শ্রমিকদের অধিকার ও কর্মস্থলের নিরাপত্তা জোরদার করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিনটি কনভেনশন অনুসমর্থন এক ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত বলে অভিহিত করেছেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) তিনটি কনভেনশন একসঙ্গে অনুসমর্থন আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন করল শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইএলও বাংলাদেশ।
অনুসমর্থনের এ ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে স্মরণীয় করে রাখতে বৃহস্পতিবার এক উদযাপন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং আইএলও বাংলাদেশের যৌথ আয়োজনে ঢাকার ফরেন সার্ভিস একাডেমি, স্টেট গেস্ট হাউস ‘সুগন্ধা’-তে এ উদযাপন হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান এবং নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, “এ অর্জন কেবল একটি আইনি মাইলফলক নয়-এটি বিশ্বের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা যে আমাদের শ্রমিকদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।”
তিনি আরো বলেন, “বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণের প্রস্তুতির সময়ে এই সিদ্ধান্তটি কৌশলগত ও দূরদর্শী, যা বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের নৈতিক ও টেকসই উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি প্রকাশ করে।”
উপদেষ্টা জানান, তিনটি কনভেনশনের মধ্যে কনভেনশন নম্বর ১৫৫ (পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য) ও কনভেনশন নম্বর ১৮৭ (পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সংক্রান্ত প্রচারমূলক কাঠামো) আইএলও’র মৌলিক কনভেনশন। এর সঙ্গে কনভেনশন নম্বর ১৯০ (কর্মক্ষেত্রে সহিংসতা ও হয়রানি প্রতিরোধ) অনুসমর্থনের মাধ্যমে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র দেশ হিসেবে আইএলও’র ১০টি মৌলিক কনভেনশন অনুস্বাক্ষরকারী দেশে পরিণত হয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. সানোয়ার জাহান ভূঁইয়া কনভেনশন বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, “কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের কার্যক্রম আরো জোরদার করা হবে, যাতে শ্রমিকদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।”
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর মাইকেল মিলার বলেন, “বাংলাদেশের তিনটি আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুসমর্থন এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বৃহৎ বাজার তৈরির উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়।”
তিনি আশা প্রকাশ করেন, “এলডিসি থেকে উত্তরণের পরবর্তী সময়েও বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাজারে তার সুনাম অক্ষুণ্ন রাখতে সক্ষম হবে।”
তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও সহযোগিতার ক্ষেত্রকে সুদৃঢ় করতে বাংলাদেশের সক্রিয় ভূমিকা ইউরোপীয় ইউনিয়ন অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে।”
তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে উভয়পক্ষের সম্মিলিত উদ্যোগ অব্যাহত রাখার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশে আইএলও’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ম্যাক্স টুনোন এই অনুসমর্থনকে ‘একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত’ আখ্যায়িত করেন।
গত ২২ অক্টোবর যমুনা স্টেট গেস্ট হাউসে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের উপস্থিতিতে শ্রম উপদেষ্টা তিনটি কনভেনশনের অনুসমর্থনপত্রে স্বাক্ষর করেন।
পরবর্তীতে ২১ নভেম্বর আইএলও’র জেনেভাস্থ সদর দপ্তরে ৩৫৫তম গভর্নিং বডি অধিবেশনে আনুষ্ঠানিকভাবে আইএলও মহাপরিচালকের কাছে অনুস্বাক্ষরের এ দলিল হস্তান্তর করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শ্রম বিষয়ক অ্যাটাসে লিনা খান, টিসিসির সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, সচিব ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ