বাবাকে হত্যার দায়ে মায়ের ফাঁসি দাবি মেয়ের
Published: 5th, May 2025 GMT
ফরিদপুরের মধুখালীতে মাদ্রাসা শিক্ষক বাবাকে হত্যার দায়ে মায়ের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন মেয়ে। রোববার (৪ মে) বিকেলে উপজেলার বামুন্দী নতুন বাজারে (বিল আড়োলিয়া) শোকসভা অনুষ্ঠান থেকে এ দাবি জানান তিনি।
স্থানীয় চরবামুন্দী ইয়াসিন আলী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক শেখ আল কালাম আজাদ হত্যার ঘটনায় এ শোকসভার আয়োজন করে শেখ পরিবার ও স্থানীয় জনতা।
ওই শোকসভায় নিহত শেখ আল কালাম আজাদের নবম শ্রেণি পডুয়া মেয়ে তাহসিন আহমেদ ঝিলিক বাবার হত্যার দায়ে তার মায়ের ফাঁসিতে ঝুলানো প্ল্যাকার্ড হাতে মায়ের ফাঁসি দাবি করেন।
হাতে ‘খুনি তিথীর ফাঁসি চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড ও মায়ের ছবি উঁচিয়ে ধরে তিনি বলেন, আমি আমার বাবার হত্যাকারী, আমার মায়ের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই! তার এ দাবিতে পুরো সভাজুড়ে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
শোকসভায় নিহত শিক্ষক আল কালাম আজাদকে স্মৃতিচারণ ও তার খুনিদের ফাঁসির দাবি করে বক্তব্য রাখেন মধুখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি রাকিব হোসেন চৌধুরী ইরান, মধুখালী উপজেলা জামায়াতে ইসলামের আমির ও নিহতের সহকর্মী মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আলিমুজ্জামান, বিএনপির সহ-সভাপতি আ.
স্থানীয় বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপদ সরকারের সভাপতিত্বে এবং শেখ পরিবারের সদস্য ও ইয়াসিন আলী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. হাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এই সভায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
নিহত শেখ আল কালাম আজাদ বিল আড়োলিয়া বাজারের বাজার কমিটির সভাপতি ও চরবামুন্দি ইয়াছিন আলি দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
গত ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় শিক্ষক আল কালাম আজাদ নিখোঁজ হন। ২৮ এপ্রিল তার ছেলে তানভীর আহম্মেদ শিমুল মধুখালী খানায় একটি জিডি করেন এবং ২৯ এপ্রিল মধুখালী থানা পুলিশ উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের কুঠরাকান্দি এলাকা হতে ওই শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় মো. রাসেল শেখ (২৯), নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী মানিরা মাকসুরা তিথী (৩০) ও শাশুড়ি রাফেজাকে (৫৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর মধ্যে মো. রাসেল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নাক চেপে ধরে ঢুকতে হয় শহরে
টাঙ্গাইল শহরের দুই প্রবেশপথ বাইপাস রাবনা ও কাগমারী। দুই এলাকায় এলেই কটু দুর্গন্ধ নাকে আসে। কারণ দুই জায়গায়ই রয়েছে ময়লার ভাগাড়। ফলে এ এলাকা দিয়ে শহরে ঢুকতে হলে নাকে রুমাল চেপে ধরতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে খোলা স্থানে শহরের ময়লা-আবর্জনা ফেলায় এলাকার পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য হুমকিতে রয়েছে। দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা।
১৮৮৭ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় টাঙ্গাইল পৌরসভা। এর পর পার হয়েছে ১৩৮ বছর। আজও গড়ে তোলা হয়নি ময়লা-আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান। নেই আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও। ফলে মহাসড়কের পাশে যত্রতত্রভাবে ফেলা হচ্ছে আবর্জনা। পৌরসভার বাসিন্দাদের দীর্ঘদিনের দাবি, এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। কিন্তু আজও তাদের সে দাবি পূরণ হয়নি।
বাইপাস রাবনা ও কাগমারী এলাকায় যেভাবে বর্জ্য ডাম্পিং করা হয়, তাতে পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন পরিবেশবাদী সংগঠন বেলার বিভাগীয় সমন্বয়কারী গৌতম চন্দ্র চন্দ। তিনি বলেন, পৌরসভার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। শহরের প্রবেশপথে ময়লা ফেলার কারণে জীববৈচিত্র্যসহ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। পৌরসভার নিজস্ব জায়গায় ডাম্পিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষায় আইনের প্রয়োগও দরকার। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন করে স্বাস্থ্যবান্ধব করতে পৌরসভাকে মূল ভূমিকা নিতে হবে।
রাবনা বাইপাস এলাকার আসিফ হোসেন নামে স্কুলছাত্রের ভাষ্য, ‘এখান দিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় দুর্গন্ধে পেট ফুলে যায়। বাতাসের সঙ্গে আসা দুর্গন্ধ বাড়িতেও পাওয়া যায়।’ জায়গাটিতে ময়লা না ফেলতে সবার প্রতি অনুরোধ তার। একই এলাকার দোকানি সরোয়ার হোসেন বলছিলেন, ময়লার জন্য দোকানে গ্রাহক আসতে চান না। খাবারে মাছি বসে। ব্যবসা করা কষ্টকর হয়ে গেছে। তবুও পেটের দায়ে দুর্গন্ধের সঙ্গে থাকতে হচ্ছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাবনা বাইপাস এলাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। শহর থেকে পৌরসভার ভ্যানে করে খোলা স্থানে এসব ফেলা হচ্ছে। জেলার উত্তরের ছয় উপজেলার মানুষ শহরে এ সড়ক দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন। যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের দুর্গন্ধে নাকে রুমাল চেপে থাকতে দেখা যায়। পথচারীরা দ্রুত জায়গাটি পার হচ্ছিলেন। ময়লার মধ্যে পশুর মরদেহও পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এর মধ্যেই টোকাইরা বিক্রির উপযোগী সামগ্রী খুঁজছিলেন মনোযোগ দিয়ে। কাগমারী শ্মশানঘাটের উত্তর দিকে ফেলা হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা। নাগরপুরসহ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ এ সড়কে যাতায়াত করেন। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি এমএম আলী কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের পথও এটি। দুর্গন্ধে তারাসহ স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা দেলোয়ার হোসেনের ভাষ্য, ‘আমাদের কি যে খারাপ লাগে, সেটি বলে বোঝোতে পারব না। ঘরে থাকা, রান্না ও খাওয়া কিছুই তৃপ্তি সহকারে করতে পারি না। আমরা অনেকবার বলেছি, কোনো লাভ হয়নি।’ এ সড়কে অটোরিকশা চালান সাহেব আলী। তিনি বলেন, ‘দুর্গন্ধে অবস্থা ভয়াবহ। যাত্রীরা উঠতে চান না।’ লেবু মিয়া নামে এক যাত্রী বলছিলেন, শহরে প্রবেশের মূল সড়কে এমন ভাগাড় অশোভনীয়।’ আর আফজাল হোসেন জানান, এ সড়কে চলাচলের সময় তাঁর শ্বাসকষ্ট হয়।
ময়লার ভাগাড় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এবং রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ বলেন, উন্মুক্ত স্থানে বর্জ্য ফেলার কারণে দুর্গন্ধ ও রোগ-জীবাণু ছড়ায়। এখানকার মাটি উর্বরতা হারাচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য নালায় ঢুকে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করছে।
খোলা স্থানের ময়লা-আবর্জনা থেকে শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ফুসফুসের জটিল রোগ হতে পারে। বায়ুদূষণের কারণে এলার্জি এবং অ্যাজমার সমস্যা প্রকট হচ্ছে। ফুসফুসের কার্যক্ষমতা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে। এসব তথ্য জানিয়ে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) নজরুল ইসলাম কনক বলেন, এসব স্থান থেকে রোগ-জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে মানুষ ও পাখ-পাখালির মধ্যে ছড়ায়। বাতাসে ভারী ধাতু ছড়িয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দেহে প্রবেশ করছে। ফলে লিভার-কিডনির রোগ, ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যাচ্ছে।
বিষয়টি নজরে এসেছে বলে জানান পৌরসভার দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক শিহাব রায়হান। তিনি বলেন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারের কাছে জায়গা চাওয়া হয়েছে। আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রকল্পও হাতে নেওয়া হয়েছে। আগামী ডিসেম্বরে কাজ শুরু হবে। দ্রুত ভোগান্তি লাঘবের পাশাপাশি শহরের বাসিন্দারা আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা পাবেন বলে আশা তাঁর।