ফরিদপুরের মধুখালীতে মাদ্রাসা শিক্ষক বাবাকে হত্যার দায়ে মায়ের ফাঁসির দাবি জানিয়েছেন মেয়ে। রোববার (৪ মে) বিকেলে উপজেলার বামুন্দী নতুন বাজারে (বিল আড়োলিয়া) শোকসভা অনুষ্ঠান থেকে এ দাবি জানান তিনি।

স্থানীয় চরবামুন্দী ইয়াসিন আলী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক শেখ আল কালাম আজাদ হত্যার ঘটনায় এ শোকসভার আয়োজন করে শেখ পরিবার ও স্থানীয় জনতা।

ওই শোকসভায় নিহত শেখ আল কালাম আজাদের নবম শ্রেণি পডুয়া মেয়ে তাহসিন আহমেদ ঝিলিক বাবার হত্যার দায়ে তার মায়ের ফাঁসিতে ঝুলানো প্ল্যাকার্ড‌ হাতে মায়ের ফাঁসি দাবি করেন।

হাতে ‘খুনি তিথীর ফাঁসি চাই’ লেখা প্ল্যাকার্ড ও মায়ের ছবি উঁচিয়ে ধরে তিনি বলেন, আমি আমার বাবার হত্যাকারী, আমার মায়ের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই, ফাঁসি চাই! তার এ দাবিতে পুরো সভাজুড়ে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

শোকসভায় নিহত শিক্ষক আল কালাম আজাদকে স্মৃতিচারণ ও তার খুনিদের ফাঁসির দাবি করে বক্তব্য রাখেন মধুখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি রাকিব হোসেন চৌধুরী ইরান, মধুখালী উপজেলা জামায়াতে ইসলামের আমির ও নিহতের সহকর্মী মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আলিমুজ্জামান, বিএনপির সহ-সভাপতি আ.

রহিম ফকির, মাওলানা রফিকুল ইসলাম, নিহতের চাচা তোফায়েল আহমেদ টিক্কা, নিহতের ছেলে মধুখালী উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ শিমুল, মেগচামী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাব্বির উদ্দিন শেখ, ফরিদপুর চিনিকল শ্রমজীবী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মো. সাহিন মিয়া, সাংবাদিক মতিয়ার রহমান মিয়া, ব্যবসায়ী হরিপদ দাসসহ আরও অনেকে।

স্থানীয় বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণপদ সরকারের সভাপতিত্বে এবং শেখ পরিবারের সদস্য ও ইয়াসিন আলী দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মো. হাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় এই সভায় নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

নিহত শেখ আল কালাম আজাদ বিল আড়োলিয়া বাজারের বাজার কমিটির সভাপতি ও চরবামুন্দি ইয়াছিন আলি দাখিল মাদ্রাসার ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

গত ২৭ এপ্রিল সন্ধ্যায় শিক্ষক আল কালাম আজাদ নিখোঁজ হন। ২৮ এপ্রিল তার ছেলে তানভীর আহম্মেদ শিমুল মধুখালী খানায় একটি  জিডি করেন এবং ২৯ এপ্রিল মধুখালী থানা পুলিশ উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের কুঠরাকান্দি এলাকা হতে ওই শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় মো. রাসেল শেখ (২৯), নিহতের দ্বিতীয় স্ত্রী মানিরা মাকসুরা তিথী (৩০) ও শাশুড়ি রাফেজাকে (৫৫) গ্রেপ্তা‌র করে পুলিশ। এর মধ্যে মো. রাসেল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: উপজ ল শ কসভ

এছাড়াও পড়ুন:

গণ-অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া দলও কি স্বৈরাচারী হয়ে উঠতে পারে

১৫ বছর ধরে অনেক ব্যক্তি, রাজনৈতিক দল আর সংগঠন মিলে স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে আসছিল। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নেমে আসেন।

এর ফলে হাসিনা সরকারের পতন হয় ও তিনি এবং তাঁর দলের কর্মীরা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। এ পরিবর্তন শুধু একটা সরকারের পরিবর্তন নয়, বরং দীর্ঘ সময়ের ভয় ও দমনের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের সাহস, আশা ও গণতান্ত্রিক চেতনার একটি বড় জয় ছিল।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যায়, কিছু গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল এই আন্দোলনের সফলতাকে শুধু নিজের নামে দাবি করতে শুরু করে। কেউ কেউ বলতে থাকে, তাদের কারণেই সরকার পতন ঘটেছে। তাই তারাই ভবিষ্যতে ক্ষমতার একমাত্র ভাগীদার।

আবার কিছু ধর্মীয় বা আদর্শিক গোষ্ঠী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, যারা আগে প্রকাশ্যে তেমন সক্রিয় ছিল না। এ ছাড়া কিছু নতুন দল, যারা আগে রাজনীতিতে খুব একটা পরিচিত ছিল না, তারাও হঠাৎ করে সামনে চলে এসেছে। তারা নিজেদের ‘নতুন শক্তি’, ‘ভিন্নধারার দল’ হিসেবে উপস্থাপন করে, কিন্তু তাদের আচরণে কখনো কখনো পুরোনো রাজনীতির কৌশলই দেখা যায়।

আরও পড়ুনশেখ হাসিনা স্বৈরশাসকদের টিকে থাকার দুটি মূলমন্ত্রেই ব্যর্থ২২ আগস্ট ২০২৪

এই আন্দোলনের সময় বিভিন্ন গোষ্ঠী একসঙ্গে থাকলেও আন্দোলনের পর তারা নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে গিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ আবার নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার হিসাব-নিকাশ করছে। এতে আন্দোলনের মূল চেতনা—জনগণের অধিকার, গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা যেন ধীরে ধীরে পেছনের দিকে চলে গেছে।

এ বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে, যাঁরা ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিলেন, তাঁরাই কি আবার ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গিয়ে নতুন একধরনের স্বৈরতন্ত্রের জন্ম দেবেন?

ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। ৫ আগস্ট, ২০২৪

সম্পর্কিত নিবন্ধ