নারীর মেনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি নিয়ে সমাজে অনেক কুসংস্কার ও নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। মেনোপজ মানেই নারীত্বের অবসান হয়েছে, এমন ভুল ধারণা রয়েছে অনেকের। অনেক নারী মেনোপজের সময়ে হওয়া সমস্যা নিয়ে লজ্জায় মুখ খোলেন না। অথচ খোলাখুলি কথা বলা ও চিকিৎসকের সহায়তা নেওয়া এবং পরিবারের পুরুষ সদস্যসহ অন্যদের ইতিবাচক আচরণ নারীর মেনোপজের সময়ের সমস্যার সমাধান করতে পারে।
মেনোপজ নিয়ে একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের অনুষ্ঠানে বক্তাদের আলোচনায় এসব কথা উঠে আসে।
বইটির নাম ‘নারীর জীবনে মেনোপজ’। এর লেখক জাতীয় অধ্যাপক ও গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজের গর্ভনিং বডির চেয়ারপারসন শাহলা খাতুন।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর গ্রিন রোডে অবস্থিত গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজের লেকচার গ্যালারি ৫–এ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ২০১৯ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত সংস্করণ হিসেবে আজ বইটির মোড়ক উন্মোচন হয়। বইটি প্রকাশ করেছে উৎস প্রকাশন।
অনুষ্ঠানে জাতীয় অধ্যাপক শাহলা খাতুন বলেন, ১৯৯৫ সালে জাপানে গিয়ে তিনি দেখেছিলেন, সেখানে মেনোপজ সোসাইটি আছে। ২০০৫ সালে দেশে এক অনুষ্ঠানে তিনি মেনোপজ নিয়ে কথা বললে এক নারী রাষ্ট্রদূত ও সাংবাদিক তাঁর সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করেন। ওই নারীরা জানান, তাঁরা মেনোপজ নিয়ে নানা সমস্যায় ভুগলেও তা গোপন রাখেন। লজ্জায় কারও সঙ্গে কথা বলেন না। ওই বছরই দেশে তিনি ও সহকর্মীরা মিলে গড়ে তোলেন বাংলাদেশ মেনোপজ সোসাইটি।
বইয়ে অধ্যাপক শাহলা খাতুন মেনোপজ নিয়ে বলেছেন, নারীর জীবনচক্রে এম শব্দটি দিয়ে তিনটি পর্যায় রয়েছে। মেনার্কি (রজঃস্বলা হওয়া), মাদারহুড (মাতৃত্ব) ও মেনোপজ (রজঃনিবৃত্তি)। যে নারীরা মেনোপজ সম্পর্কে ও মেনোপজের উপসর্গ ও প্রস্তুতি সর্ম্পকে জানেন, সে নারীরা বরং মেনোপজকে সুযোগ হিসেবে দেখেন, যা তাঁদের নতুন কর্মক্ষমতা ও চ্যালেঞ্জ নেওয়ার দিগন্ত খুলে দেয়। আগে অনেক নারীই প্রজননক্ষম বয়সে মৃত্যুবরণ করতেন। এখন আয়ু বাড়ায় নারীদের মেনোপজ ও প্রবীণ বয়সের সমস্যাগুলো বেশি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন গ্রীন লাইফ মেডিকেল কলেজের এন্ডোক্রিনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম বিভাগের প্রধান অধ্যাপক তানজিনা হোসেন। তিনি বলেন, মেনোপজ নিয়ে সমাজে কুসংস্কার রয়েছে। এ নিয়ে কেউ কথা বলতে চান না। বইটি মেনোপজ নিয়ে কথা বলার প্রয়োজনীয়তা, মেনোপজের সময়ের সমস্যা ও করণীয় তুলে ধরেছে। এই বই পড়ে দেশের নারীরা সুফল পাবেন।
বইটিতে মোট ৩৫টি অধ্যায়ে নারীর মেনোপজ, মেনোপজের সময় মানসিক অবস্থা ও নারীর স্বাস্থ্য নিয়ে অধ্যাপক শাহলা খাতুনের সঙ্গে লিখেছেন দেশের কয়েকজন চিকিৎসক।
বইয়ের বিভিন্ন অধ্যায়ে ওই চিকিৎসকেরা লিখেছেন, কোনো নারীর মাসিক যখন মধ্য বয়সের পর এসে প্রাকৃতিকভাবে বন্ধ হয়ে যায় এবং টানা এক বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ থাকে, তাকে মেনোপজ বলে। উন্নত দেশে প্রাকৃতিকভাবে মেনোপজের বয়স হচ্ছে ৪৯ থেকে ৫২ বছর বয়সের মধ্যে। অনুন্নত দেশে তিন থেকে চার বছর আগেই মেনোপজ শুরু হয়। মেনোপজের আগে–পরে হট ফ্ল্যাশ একটি যন্ত্রণাকর অনুভূতি। হঠাৎ গরম লাগা, কানে ভাপ লাগার মতো অনুভূতি, প্রচুর ঘাম এই হট ফ্ল্যাশের লক্ষণ। মনমেজাজের আকস্মিক পরিবর্তন, খিটখিটে হয়ে পড়া, ঘুমের সমস্যা, যৌন মিলনে অনাগ্রহ ও বারবার প্রস্রাবের সংক্রমণের মতো সমস্যা হতে পারে। তবে মেনোপজ–সংক্রান্ত সমস্যা, বিশেষ করে যৌন অসামঞ্জস্যতা যে সবার হবে, তা নয়। তবে সবার জানতে হবে, কোনটি মেনোপজ–সংক্রান্ত সমস্যা, কীভাবে এটি মোকাবিলা করতে হবে এবং কোথায় কখন চিকিৎসা নিতে হবে। অনেক নারী মেনোপজকে স্বাভাবিক বলে মেনে নেন। অনেকে ভাবেন, নারীত্বের অবসান ঘটে গেছে, বার্ধক্য এসে গ্রাস করে নিয়েছে, বাকি জীবনটি শুধু ধূসর ও বর্ণহীন। এ রকম নেতিবাচক ধারণা থেকে বের হতে হবে। আলোচনা করতে হবে, খোলাখুলি কথা বলতে হবে। পুরুষ সঙ্গীকে সহানুভূতিশীল হতে হবে। প্রতিদিন হাঁটা, হালকা ব্যায়াম করা, সুষম খাবার গ্রহণ, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স গ্রহণের মাধ্যমে জীবনযাপনে পরিবর্তন, যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার মাধ্যমে মেনোপজ নিয়ে সমস্যা সমাধান করা যাবে।
শাহলা খাতুনের লেখা ‘নারীর জীবনে মেনোপজ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয় আজ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ন চ ক ৎসক র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মিশনপাড়া পঞ্চায়েত পরিষদ কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন
নারায়ণগঞ্জ শহরের অন্যতম এলাকা মিশনপাড়া পঞ্চায়েত পরিষদের স্থায়ী কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২২শে সেপ্টেম্বর) বিকেলে আয়োজিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী ও মিশনপাড়া পঞ্চায়েত পরিষদের মহাসচিব আলহাজ্ব আবু জাফর আহমেদ বাবুল। অনুষ্ঠানে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে কার্যালয়ের শুভ উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি।
এ-সময় অনুষ্ঠানে মিশনপাড়া পঞ্চায়েত পরিষদের উদ্দেশ্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরে একটি প্রেরণাদায়ক বক্তব্য প্রদান করেন মিশনপাড়া পঞ্চায়েত পরিষদের মহাসচিব আবু জাফর আহমেদ বাবুল। পরে মিশনপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব ও ইমাম মুফতী মোহাম্মদ জামির হোসেন বিশেষ দোয়া পরিচালনা করেন।
মিশনপাড়া এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা পূরণ করে এ সংগঠনের নতুন কার্যালয় উদ্বোধনের মাধ্যমে সমাজসেবামূলক কার্যক্রম আরও বেগবান হবে বলে আশা প্রকাশ করেন কার্যালয় বিনির্মানে বিশেষ অবদান রাখা বিশিষ্ট সমাজ সেবক জহির আহমেদ সোহেল।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফতেহ রেজা রিপন, মিশনপাড়া পঞ্চায়েত পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ, ভাইস চেয়ারম্যান আল-আমিন, যুগ্ম মহাসচিব জাহিদ আহমেদ, সাংগঠনিক সচিব আতিকা খানম শিউলী, সহ-সাংগঠনিক সচিব মোঃ সায়েম কবীর, অর্থ সচিব মোঃ আরিফ দিপু, দপ্তর সচিব মোঃ জামাল উদ্দিন, ধর্ম বিষয়ক সচিব মোসাদ্দেক আহমেদ, প্ৰচার বিষয়ক সচিব প্রদীপ কুমার ধর চন্দন, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সচিব অহিদুর রহমান আরিফ, মহিলা বিষয়ক সচিব শাহিনা ইসলাম মুক্তি, নির্বাহী সদস্য কাজী আব্দুস সাত্তার, নাসিম আল জাহিদ, আব্দুল হাই মিলন, তানসেন আহমেদ, কাজী রাসেদুল ইসলাম দিপু, ফজলুল হক, খাজা মহিউদ্দিন, কামরুল হাসান চৌধুরী আশিক, মোঃ শরিফুল ইসলাম আরফান, আসাদুজ্জামান প্যারিস ও এড. রফিক আহমেদ সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।