এই প্রজন্মই দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ: তথ্য উপদেষ্টা
Published: 9th, May 2025 GMT
তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, এই প্রজন্মই দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। শুক্রবার তিনি তার ভেরিফাইড ফেসবুকে ‘কয়েকটি কথা’ শিরোনামে একটি পোস্টে এই কথা বলেছেন।
তিনি সেখানে লিখেছেন, ‘একটি দলের এক্টিভিস্টরা বারবার লীগ নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়ার ক্ষেত্রে ছাত্ররা রাজি ছিল না, এটা বলে বেড়াচ্ছেন। মিথ্যা কথা। ক্যাবিনেটে প্রথম মিটিং ছিল আমার। আমি স্পষ্টভাবে এই আইনের অনেকগুলো ধারা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম। নাহিদ-আসিফও আমার পক্ষে ছিল স্বভাবতই। দল হিসেবে বিচারের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হলে একজন উপদেষ্টার জবাব ছিল ন্যুরেমবার্গ ট্রায়ালের মত পশ্চাৎপদ উদাহরণ আমরা আমলে নিতে পারি কি-না। এই যুক্তি যিনি দিয়েছিলেন, একটি দলের এক্টিভিস্টরা আজ সমানে তার পক্ষে স্ট্যাটাস দিয়ে যাচ্ছেন ছাত্রদের কুপোকাত করতে। অথচ, উনার সাথে আমাদের কোনো বিরোধ নেই। মিছে বিরোধ লাগানোর অপচেষ্টা করে কোনো লাভ নেই।
পোস্টে তিনি বলেন- বলে রাখা ভালো, দু’জন আইন ব্যাকগ্রাউন্ডের উপদেষ্টা (একজন ইতোমধ্যে মারা গিয়েছেন) ও আমাদের বক্তব্যের পক্ষে ছিলেন। সংস্কৃতি উপদেষ্টাও পক্ষে ছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে কথা হয়েছে। দল হিসেবে লীগের বিচারের প্রভিশন অচিরেই যুক্ত করার আশ্বাস দিয়েছেন উক্ত উপদেষ্টা। উনাকে ধন্যবাদ।
তথ্য উপদেষ্টা লেখেন, মিথ্যা বলা বন্ধ করুন। ঘোষণাপত্র নিয়ে আপনাদের দুই মাস টালবাহানা নিয়ে আমরা বলব। ছাত্রদের দল ঘোষণার প্রাক্কালে আপনারা দলীয় বয়ানের একটি ঘোষণাপত্র নিয়ে আলোচনা শুরু করেছিলেন। সমস্যা নেই, আমরাও চাই সবাই স্বীকৃত হোক। কিন্তু, এখন সেটাও হতে দিবেন না। দোষ আমাদেরও কম না। আমরা আপনাদের দলীয় প্রধানের আশ্বাসে আস্থা রেখেছিলাম। পুনশ্চ: আমরা নির্বাচন পেছাতে চাইনা। ডিসেম্বর টু জুনের মধ্যে নির্বাচন হবেই।
তিনি উল্লেখ করেন, আপনারা যদি মনে করেন, ছাত্ররা নিজেদের আদর্শ ও পরিকল্পনা নিতে পারে না বরং এখান থেকে ওখান থেকে অহি আসলে আমরা কিছু করি। তাহলে আপনারা হয় ছাত্রদের খাটো করে দেখছেন, নয়তো ছাত্রদের ডিলেজিটিমাইজ করার পরিকল্পনায় আছেন। সেই আগস্ট থেকেই আমরা জাতির জন্য যা ভালো মনে করেছি, সবার পরামর্শ নিয়েই করেছি। বরং, উক্ত দলকেই আমরা বেশি ভরসা করেছি। সবার আগে উনাদের সাথেই পরামর্শ করেছি। ভরসার বিনিময়ে পেয়েছি অশ্বডিম্ব। সব দোষ এখন ছাত্র উপদেষ্টা নন্দঘোষ!
মাহফুজ আলম বলেন, আমরা উক্ত দলকে বিশ্বাস করতে চাই। উক্ত দলের প্রধানকে বিশ্বাস করতে চাই। উনি আমাদের বিশ্বাসের মূল্য দিয়ে লীগ নিষিদ্ধ প্রশ্নে ও ঘোষণাপত্র প্রকাশে দেশপ্রেমিক ও প্রাগমাটিক ভূমিকা রাখবেন বলেই আস্থা রাখি। উক্ত দলকে নিয়ে কে কি বলবে জানি না কিন্তু আমরা চাই উক্ত দল ছাত্রদের সাথে নিয়ে দেশের পক্ষে, অভ্যুত্থানের শত্রুদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ঐকমত্যের নেতৃত্ব দিক। দেশপ্রেমিক ও সার্বভৌমত্বের পক্ষের শক্তি হিসাবে নেতৃত্ব দিলে ছাত্ররা রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় উনাদের সাথে চলবেন। ঐক্যবদ্ধ হোন। নেতৃত্ব দিন। এই প্রজন্মকে হতাশ করবেন না। ‘এই প্রজন্ম দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।’
মাহফুজ আলম ২০২৪ এর জুলাইয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির একজন সমন্বয়ক ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন মাহফুজ আলম।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে মনোনয়ন না পাওয়া, জনতাকে ‘শাস্তি’ ও গণতন্ত্র নিয়ে কয়েকটি কৌতুক
১.
একটি প্রচলিত কৌতুক দিয়ে শুরু করি।
আকাশে উড়ন্ত বিমানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। বিমানে যাত্রী মোট চারজন। একজন পাইলট, একজন রাজনৈতিক নেতা, একজন শিক্ষক, অপরজন ছাত্র। কিন্তু বিমানে প্যারাসুট আছে তিনটি! একটা প্যারাসুট নিয়ে পাইলট বললেন, ‘আমি লাফিয়ে পড়ছি, আমাকে তাড়াতাড়ি রিপোর্ট করতে হবে যে বিমান ক্রাশ করছে।’ রাজনৈতিক নেতা একটি প্যারাসুট নিয়ে বললেন, ‘দেশ ও জাতির জন্য আমার অনেক কিছুই করার এখনো বাকি। তাই আমার বেঁচে থাকা দরকার।’
পাঠক, নিশ্চয়ই ধরতে পারছেন এ রাজনৈতিক নেতা বাংলাদেশি ছাড়া আর কে হবেন। দেশের সব রাজনৈতিক নেতাই যে এমন তা বলছি না। এটিও তো ঠিক, আমাদের অনেক রাজনৈতিক নেতাও আছেন যারা দেশ ও দশের জন্য রাজনীতি করার কথা বলে গলা ফুলিয়ে ফেললেও বিপদে আগেই সরে পড়েন। নিজের দলের কর্মীদেরও বিপদের মুখে ঠেলে দিয়ে পালাতে একমুহূর্ত দেরি করেন না।
তবে কৌতুকটি এখানেই শেষ নয়। বাকি আছেন শিক্ষক ও এক ছাত্র। শিক্ষক বললেন, প্যারাসুট তো আছে আর একটা। এখন কী হবে? ছাত্র বলল, চিন্তা নেই স্যার। প্যারাসুট দুইটিই আছে। ওই নেতা ব্যাটা প্যারাসুট মনে করে আমার স্কুলব্যাগ নিয়ে ঝাঁপ দিয়েছে। এতক্ষণে নির্ঘাত অক্কাও পেয়েছেন। শিক্ষকের প্রাণে পানি এল। তাঁরা শুধু বাঁচার উপায় পেয়েই আনন্দিত হলেন না, নেতার করুণ পরিণতি দেখেও যেন ‘নিষ্ঠুর আনন্দ’ পেলেন। কেনই–বা পাবেন না?
আরও পড়ুন‘আমার তো রাজনীতি নাই, আমার হইল পেটনীতি’২৩ অক্টোবর ২০২৫২.একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনের প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। স্বাভাবিকভাবেই কেউ মনোনয়ন পাবেন, কেউ পাবেন না। এতে কেউ হতাশ হবেন, কেউ উল্লসিত হবেন—এটিই তো স্বাভাবিক। শুধু তা–ই নয়, আরও একটা ‘স্বাভাবিক’ প্রতিক্রিয়াও এখানকার রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ হয়ে পড়েছে। তা হচ্ছে মনোনয়নবঞ্চিত হলে সড়ক অবরোধ করা, ধর্মঘট-হরতাল ডাকা, ভাঙচুর করা, আগুন জ্বালানো ইত্যাদি ইত্যাদি।
হ্যাঁ, আরও একটা ‘স্বাভাবিক’ ঘটনাও আছে। মনোনয়ন পাওয়ার পর বঞ্চিত পক্ষের ওপর হামলে পড়া। এটিই তো দেখলাম গতকাল সোমবার দেশে বর্তমান বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির আনুষ্ঠানিক প্রার্থিতা ঘোষণার পর।
আমরা সংস্কার সংস্কার বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছি ঠিকই, কিন্তু গাছের গোড়াতে পানি ঢালার কথা কেউ বলছি না, বললেও সেটি খুব একটা গুরুত্ব পাচ্ছে না। গাছের গোড়ার পানি ঢালার বিষয়টা কী? যারা রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার সংস্কার আনবে, তাদের ভেতরেই সংস্কারটা আগে হতে হবে। এর জন্য জরুরি হচ্ছে, মন ও মগজে সংস্কার আনা। সেটিই যদি করা না যায়, প্রায় তিন হাজার বছর আগে গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলের বলে যাওয়া সেই উক্তিই সঠিক হয়—গণতন্ত্র হচ্ছে মূর্খ ও অযোগ্যদের শাসন।সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ-আশাশুনি আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্য মনোনয়ন না পাওয়ার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার অর্ধদিবস হরতাল ও সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছেন তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা। অথচ এ দেশে হরতালের রাজনীতি বহু আগেই আবেদন হারিয়ে ফেলেছে, সেটি তাদেরই সবার আগে বোঝার কথা অতীত অভিজ্ঞতা থেকে। ফলে এ হরতাল জন-স্বতঃস্ফূর্তামূলক ছিল না। যার যার ব্যস্ততা নিয়েই মানুষ কাজেকর্মে যোগ দিতে ঘর থেকে বের হয়েছে। কিন্তু মনোনয়নবঞ্চিত নেতার সমর্থকেরা জোরপূর্বক হরতাল পালন করতে গিয়ে সড়ক অবরোধ করে যে চরম যানজট তৈরি করলেন, তাতে হাজার হাজার মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হলো।
গতকাল সন্ধ্যায় প্রার্থিতা ঘোষণার পরপরই দ্রুত প্রতিক্রিয়াটা আসে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড আসন থেকে। সে আসনে বিএনপির এক সাবেক যুগ্ম মহাসচিবকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।
ঢাকা-চট্টগ্রামের যোগাযোগের লাইফলাইনখ্যাত দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক আটকে দেওয়া হয়। এতে দীর্ঘ যানজট ছড়িয়ে মহাসড়কের দুই পাশে, এমনকি এর প্রভাব পড়ে চট্টগ্রাম শহরের ভেতরেও। শুধু তা–ই নয়, মনোনয়নবঞ্চিত নেতার ক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইনও অবরোধ করেন।
চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড আসনে মনোনয়নবঞ্চিত নেতার বিক্ষুব্ধ কর্মী–সমর্থকেরা ঢাকা–চট্টগ্রাম শহর অবরোধ করেন। সোমবার সন্ধ্যায়