রাতে চুরি করে মিটারের জায়গায় চিরকুট লিখে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যাচ্ছে চোর। উল্লেখিত নম্বরে যোগাযোগ করে দাবি করা টাকা পাঠালেই ফেরত দেওয়া হচ্ছে মিটার। এমন ঘটনা ঘটছে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়।

স্থানীয় লোকজন জানান, কয়েক মাস ধরে জেলায় বৈদ্যুতিক মিটার চুরির প্রবণতা বেড়েছে। গত তিন মাসে জেলায় ২৪টি মিটার চুরির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এর চেয়ে বেশি মিটার চুরি গেছে। এসব চুরির ঘটনায় থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ঝামেলা এড়াতে পুলিশকে না জানিয়ে টাকার বিনিময়ে চুরি হওয়া মিটার ফেরত নিচ্ছেন গ্রাহকদের কেউ কেউ।

ভুক্তভোগী পাঁচ গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) প্রতিটি মিটারের দাম ২০-২২ হাজার টাকা। চিরকুটে লেখা মুঠোফোন নম্বরে কাঙ্ক্ষিত অর্থ পাঠালেই চুরি যাওয়া মিটারগুলো ফেরত পাঠানো হচ্ছে। টাকা পেয়ে চক্রটি হারানো মিটার খুঁজে পাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানের কথা জানান। পরে সেখান গিয়ে মিটারটি পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। গত শনিবার রাতেও সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নের দিঘী, কয়ড়া, ডাউটিয়া, শুশুন্ডা, মুলজান গ্রামে সেচযন্ত্রের বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়। এর আগের দিন গত শুক্রবার রাতে জয়রা এলাকায় তিনটি মিটার ‍চুরি হয়।

মানিকগঞ্জের উচুটিয়ায় পবিসের কার্যালয় সূত্রে থেকে জানা যায়, গত তিন মাসে মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩ ফেজের ২৪টি মিটার চুরি যায়। এগুলোর মধ্যে সদর উপজেলা উপজেলায় গত ২৩ মার্চ রাতে চারটি, ২৩ এপ্রিল রাতে দুটি, ২৪ এপ্রিল রাতে তিনটি, ৪ মে রাতে পাঁচটি ও ১২ মে রাতে নয়টি এবং ১২ মে সাটুরিয়া উপজেলায় একটি মিটার চুরি হয়। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে পবিস কর্তৃপক্ষ। এমন ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেচপাম্পের গ্রাহকেরা। এসব চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের লোকসান হচ্ছে।

গত শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার কয়ড়া গ্রামের জাবেদ আলীর সেচপাম্পের মিটার চুরির ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাবেদ আলীর ছেলে শামীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চুরির ঘটনার পরদিন সকালে মিটারের স্থানে চিরকুটে বিকাশ নম্বরে দিয়ে যায় চোরেরা। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ১০ হাজার টাকা বিকাশ করার পর এক ব্যক্তি জানান, সেচপাম্পের অদূরে পুকুরের পাশে একটি ঝোপের ভেতর মিটারটি আছে। পরে সেখানে গিয়ে মিটার দেখতে পান তাঁরা। এ ঘটনায় তিনি আজ দুপুরে সদর থানায় একটি মামলা করেছেন।

জেলা সদরের জয়রা এলাকায় মানিকগঞ্জ-বাংলাদেশ হাট সড়কের পাশে ইজিবাইকের একটি গ্যারেজ আছে মিঠু মিয়ার। গত শুক্রবার সেখান থেকে একটি বাণিজ্যিক বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়। মিঠু মিয়া বলেন, ‘বিকাশ নম্বরে যোগাযোগ করছিলাম। তারা (চোরেরা) ১০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু তাগো টাকা দিলে মিটার যদি না দেয়! আবার ঝামেলার কারণে থানায়ও যাই নাই। ভাবছি টাকা বেশি লাগুক, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে টাকা দিয়াই মিটার নিমু।’

দিন দিন মিটার চুরির প্রবণতা বাড়ায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকেই রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। জেলা সদরের দিঘী দক্ষিণপাড়া গ্রামের সেচযন্ত্র পরিচালনাকারী মোসলেম মিয়া বলেন, ‘কবে যে আমাগো মিটারটাও চুরি হয়? তাই রাত জাইগ্যা পাহারা দিতাছি।’

সার্বিক বিষয়ে মানিকগঞ্জ পবিসের জোনাল কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আজিজুর রহমান বলেন, ২৪টির মতো মিটার চুরি বিষয়ে তাঁরা থানায় জিডি করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আরও কঠোর হওয়ার পাশাপাশি তাদের তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। এ ছাড়া গ্রাহকদের নিজেদের সম্পদ রক্ষায় আরও গুরুত্ব দিতে হবে।

এসব চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা যাবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চ র র ঘটন ম ন কগঞ জ ঘটন য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বিদেশে গিয়েও সুদিন ফেরেনি, কলা চাষে এল সাফল্য

দীর্ঘদিনের পরিত্যক্ত এক একর জমি এখন সবুজে আচ্ছাদিত। সেখানে দেড় বছর আগে রোপণ করা হয় ৩২০টি কলা গাছ। সঠিক পরিচর্যা পেয়ে গাছগুলো সুস্থ ও সবল হয়ে বেড়ে উঠেছে। সারি সারি কলাগাছে ঝুলছে কলার ছড়া। মেহের সাগর জাতের এই কলা চাষে সুদিন ফিরেছে বিদেশ ফেরত আবু সিদ্দিকের।

আবু সিদ্দিক (৫৫) চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা। স্ত্রী ও পাঁচ সন্তানের পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। ২০১৭ সালে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান। সেখানে শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধিকাংশ সময় বেকার থেকেছেন। তাই প্রবাসে গিয়েও সচ্ছলতার মুখ দেখেননি। ২০২৪ সালে দেশে ফিরে আসেন সিদ্দিক। স্থানীয় বাজারগুলোতে সারা বছর চাহিদা থাকায় কলা চাষের উদ্যোগ নেন, তবে তাঁর নিজের কোনো জমি নেই।

লোহাগাড়া উপজেলা সদর থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক হয়ে আট কিলোমিটার দক্ষিণে চুনতি শাহ সাহেব গেট। সেখান থেকে চুনতি ইসহাক মিয়া সড়ক ধরে গেলে হাতের ডানে একটি মাঠের পর চুনতি সুফি নগর বাগানপাড়া এলাকায় আবু সিদ্দিকের কলাবাগানটি চোখে পড়ে।

আবু সিদ্দিক বলেন, খুঁজতে খুঁজতে বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে পরিত্যক্ত এক একর জমি চোখে পড়ে তাঁর। বছরে ছয় হাজার টাকায় ওই জমি ভাড়া নেন। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ নিয়ে গত বছরের জুনে শুরু করেন কলা চাষ। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৪০ টাকা দরে ৩২০টি চারা সংগ্রহ করেন তিনি। এতে তাঁর খরচ হয় ১৩ হাজার টাকা। রোপণের ১০ মাস পর কলা বিক্রির উপযোগী হয়। সাত মাস আগে থেকেই তিনি কলা বিক্রি শুরু করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, সার, কীটনাশক ও নিয়মিত সেচ বাবদ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৮০ হাজার টাকা। প্রতিটি ছড়া গড়ে ৫০০ টাকা দরে গত ৭ মাসে আড়াই লাখ টাকার কলা বিক্রি করেছেন তিনি। এখন খরচ বাদে কলা ও গাছের চারা বিক্রি করে প্রতি মাসে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পান সিদ্দিক।
সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা। আবু সিদ্দিক সেখানে কলাগাছের আগাছা পরিষ্কার করছিলেন।

সম্প্রতি সরেজমিন দেখা যায়, ১ একর আয়তনের জমিতে ৬ ফুট দূরত্বে রোপণ করা হয়েছে ৩২০টি মেহের সাগর জাতের কলাগাছ। একটি গাছ থেকে নতুন চারা গজিয়ে আরও চার থেকে পাঁচটি গাছ হয়েছে। প্রায় প্রতিটি আট ফুট উচ্চতার প্রাপ্তবয়স্ক গাছে ঝুলছে কলার ছড়া। একেকটি ছড়ায় রয়েছে ৮০ থেকে ১৫০টি কলা।

কলা চাষে সফলতার মুখ দেখে উৎসাহিত হয়ে এক মাস আগে আধা কিলোমিটার দূরত্বে নতুন করে ২ বিঘা জমিতে আরও ৬০০টি কলাগাছ লাগিয়েছেন সিদ্দিক। তিনি বলেন, কলা চাষে প্রথমবার চারা কিনতে যে ব্যয় হয়েছিল, পরের বার তা ব্যয় হবে না। খরচ অর্ধেকে নেমে আসবে। প্রতিবছর চারা বিক্রির টাকা দিয়ে খরচ মেটানো সম্ভব হবে। এতে এক একর এই বাগান থেকে খরচ বাদে প্রতিবছর সাড়ে তিন লাখ টাকা আয় হবে তাঁর। স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ীরা বাগানে এসে কলা নিয়ে যান। তাই বাড়তি শ্রম ও পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে নিয়ে যেতে হয় না। জমি পেলে কলা চাষের পরিধি বাড়াবেন বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে লোহাগাড়া উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সরোয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, কঠোর পরিশ্রমের কারণে আবু সিদ্দিক সফল হয়েছেন। তাঁকে প্রণোদনা হিসেবে সার ও অর্থসহায়তা দেওয়া হচ্ছে। লোহাগাড়ার আবহাওয়া ও মাটি কলা চাষের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া এ অঞ্চলে কলার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ