মিটার চুরি করে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যাচ্ছে চোর, টাকা পাঠালে দিচ্ছে ফেরত
Published: 13th, May 2025 GMT
রাতে চুরি করে মিটারের জায়গায় চিরকুট লিখে মুঠোফোন নম্বর দিয়ে যাচ্ছে চোর। উল্লেখিত নম্বরে যোগাযোগ করে দাবি করা টাকা পাঠালেই ফেরত দেওয়া হচ্ছে মিটার। এমন ঘটনা ঘটছে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায়।
স্থানীয় লোকজন জানান, কয়েক মাস ধরে জেলায় বৈদ্যুতিক মিটার চুরির প্রবণতা বেড়েছে। গত তিন মাসে জেলায় ২৪টি মিটার চুরির তথ্য পাওয়া গেছে। তবে প্রকৃতপক্ষে এর চেয়ে বেশি মিটার চুরি গেছে। এসব চুরির ঘটনায় থানায় একাধিক সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ও মামলা হয়েছে। এ ছাড়া ঝামেলা এড়াতে পুলিশকে না জানিয়ে টাকার বিনিময়ে চুরি হওয়া মিটার ফেরত নিচ্ছেন গ্রাহকদের কেউ কেউ।
ভুক্তভোগী পাঁচ গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) প্রতিটি মিটারের দাম ২০-২২ হাজার টাকা। চিরকুটে লেখা মুঠোফোন নম্বরে কাঙ্ক্ষিত অর্থ পাঠালেই চুরি যাওয়া মিটারগুলো ফেরত পাঠানো হচ্ছে। টাকা পেয়ে চক্রটি হারানো মিটার খুঁজে পাওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানের কথা জানান। পরে সেখান গিয়ে মিটারটি পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। গত শনিবার রাতেও সদর উপজেলার দিঘী ইউনিয়নের দিঘী, কয়ড়া, ডাউটিয়া, শুশুন্ডা, মুলজান গ্রামে সেচযন্ত্রের বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়। এর আগের দিন গত শুক্রবার রাতে জয়রা এলাকায় তিনটি মিটার চুরি হয়।
মানিকগঞ্জের উচুটিয়ায় পবিসের কার্যালয় সূত্রে থেকে জানা যায়, গত তিন মাসে মানিকগঞ্জ সদর ও সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩ ফেজের ২৪টি মিটার চুরি যায়। এগুলোর মধ্যে সদর উপজেলা উপজেলায় গত ২৩ মার্চ রাতে চারটি, ২৩ এপ্রিল রাতে দুটি, ২৪ এপ্রিল রাতে তিনটি, ৪ মে রাতে পাঁচটি ও ১২ মে রাতে নয়টি এবং ১২ মে সাটুরিয়া উপজেলায় একটি মিটার চুরি হয়। এসব ঘটনায় সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছে পবিস কর্তৃপক্ষ। এমন ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সেচপাম্পের গ্রাহকেরা। এসব চুরির ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় গ্রাহকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থের লোকসান হচ্ছে।
গত শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার কয়ড়া গ্রামের জাবেদ আলীর সেচপাম্পের মিটার চুরির ঘটনা ঘটে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে জাবেদ আলীর ছেলে শামীম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, চুরির ঘটনার পরদিন সকালে মিটারের স্থানে চিরকুটে বিকাশ নম্বরে দিয়ে যায় চোরেরা। তাদের চাহিদা অনুযায়ী ১০ হাজার টাকা বিকাশ করার পর এক ব্যক্তি জানান, সেচপাম্পের অদূরে পুকুরের পাশে একটি ঝোপের ভেতর মিটারটি আছে। পরে সেখানে গিয়ে মিটার দেখতে পান তাঁরা। এ ঘটনায় তিনি আজ দুপুরে সদর থানায় একটি মামলা করেছেন।
জেলা সদরের জয়রা এলাকায় মানিকগঞ্জ-বাংলাদেশ হাট সড়কের পাশে ইজিবাইকের একটি গ্যারেজ আছে মিঠু মিয়ার। গত শুক্রবার সেখান থেকে একটি বাণিজ্যিক বৈদ্যুতিক মিটার চুরি হয়। মিঠু মিয়া বলেন, ‘বিকাশ নম্বরে যোগাযোগ করছিলাম। তারা (চোরেরা) ১০ হাজার টাকা দাবি করে। কিন্তু তাগো টাকা দিলে মিটার যদি না দেয়! আবার ঝামেলার কারণে থানায়ও যাই নাই। ভাবছি টাকা বেশি লাগুক, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে টাকা দিয়াই মিটার নিমু।’
দিন দিন মিটার চুরির প্রবণতা বাড়ায় আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। অনেকেই রাত জেগে পাহারা দিচ্ছেন। জেলা সদরের দিঘী দক্ষিণপাড়া গ্রামের সেচযন্ত্র পরিচালনাকারী মোসলেম মিয়া বলেন, ‘কবে যে আমাগো মিটারটাও চুরি হয়? তাই রাত জাইগ্যা পাহারা দিতাছি।’
সার্বিক বিষয়ে মানিকগঞ্জ পবিসের জোনাল কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) আজিজুর রহমান বলেন, ২৪টির মতো মিটার চুরি বিষয়ে তাঁরা থানায় জিডি করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে আরও কঠোর হওয়ার পাশাপাশি তাদের তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। এ ছাড়া গ্রাহকদের নিজেদের সম্পদ রক্ষায় আরও গুরুত্ব দিতে হবে।
এসব চুরির ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আমান উল্লাহ। তিনি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে চোর চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তার করা যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ র র ঘটন ম ন কগঞ জ ঘটন য় উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
নান্দাইলে বজ্রপাতে প্রাণ গেল বাবা-ছেলের
ময়মনসিংহের নান্দাইলে বজ্রপাতে বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিকেলে উপজেলার খারুয়া ইউনিয়নের আবদুল্লাহপুর (কান্দিপাড়া) গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
মৃত ব্যক্তিরা হলেন- সৌদি আরব প্রবাসী গোলাম মোস্তফা (৪৫) ও তার ছেলে নাঈম মিয়া (৫)। মোস্তফা আবদুল্লাহপুর গ্রামের মৃত আব্দুছ ছাত্তারের ছেলে। প্রায় চার মাস আগে ছুটিতে বাড়িতে আসেন মোস্তফা।
মোস্তফার পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ির পাশেই ধানের বীজ রোপণ করতে যান মোস্তফা। এ সময় ছেলে নাঈম তার সঙ্গে ছিল। এ সময় হালকা বৃষ্টি শুরু হলে বাবা-ছেলে দুজনেই জমির পাশে একটি গাছের নিচে আশ্রয় নেয়। হঠাৎ বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মোস্তফার মৃত্যু হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া পথে মৃত্যু হয় নাঈমের।
নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, বজ্রপাতে বাবা ও ছেলের মৃত্যুর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।