অনলাইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধের পদক্ষেপ
Published: 14th, May 2025 GMT
অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধের পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে সরকার। সংগঠনগুলোর ওয়েবসাইট এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর অ্যাকাউন্ট, পেইজ ও গ্রুপ ‘ব্লক’ করতে দেশের ইন্টারনেট অপরাটেরগুলোকে চিঠি দিয়েছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনক (বিটিআরসি)। পাশপাশি আওয়ামী লীগ সম্পর্কিত কনটেন্ট সরিয়ে নিতে বলা হয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, টেলিগ্রাম, এক্সসহ (সাবেক টুইটার) বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকেও চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর আগে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে মঙ্গলবার বিটিআরসিকে চিঠি দেয় জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শনিবার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় অন্তর্বতী সরকার। পরদিন রোববার প্রধান উপদেষ্টার তথ্যপ্রযুক্তি-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, প্রজ্ঞাপন জারির পর বিটিআরসির মাধ্যমে তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আওয়ামী লীগের অ্যাকাউন্ট ব্লক করার জন্য প্ল্যাটফর্মগুলোকে চিঠি দেওয়া হবে। গত সোমবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এরপরই সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি বিটিআরসিকে অনলাইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধে উদ্যোগ নিতে চিঠি দেয়।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বৃহম্পতিবার রাতে সমকালকে বলেন, আওয়ামী লীগ সংক্রান্ত অ্যাকাউন্ট, পেইজ গ্রুপ বন্ধ করতে এবং কনটেন্ট সরিয়ে নিতে ইন্টারনেট অপারেটর এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে রাত ৯ টায় এ প্রতিবেদন লেখার সময় ৩৯ লাখ ফলোয়ার সমৃদ্ধ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পেজসহ এর অঙ্গ সংগঠন, নেতাকর্মীর পেজ, গ্রুপ ও অ্যাকাউন্টগুলো সচল ছিল।
জানা গেছে, অনলাইনের সবকিছু বন্ধ করার সক্ষমতা সরকারের নেই। তারা প্রধানত ওয়েবসাইট ব্লক করতে পারে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কনটেন্ট সরানো, পেজ বা অ্যাকাউন্ট বন্ধ এবং এগুলো তথ্য সংগ্রহে প্লাটফর্মগুলোর মূল প্রতিষ্ঠান যেমন মেটা, টিকটক, গুগলকে অনুরোধ করতে হয়। প্ল্যাটফর্মগুলো নিজস্ব নীতিমালা অনুসারে ব্যবস্থা নিয়ে থাকে।
সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুসারে, মেটা ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে বিটিআরসির অনুরোধে বাংলাদেশে ২ হাজার ৯৪০টি কনটেন্টের বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছে। গুগল ২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে ৫ হাজার ৮২৭টি কনটেন্ট সরানোর জন্য ৪৯০টি অনুরোধ পায়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ট আরস ফ সব ক ট কটক অ য ক উন ট ব ট আরস টফর ম আওয় ম সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ঢাকা শহরের লাইফটা তিতা হইয়া গ্যাছে’
যানজটের কারণে রাজধানীতে নিত্য ভোগান্তি লেগেই আছে। তার ওপর নগরজুড়ে বিভিন্ন সংস্থার সড়ক কাটাকুটি। আছে ভাঙা রাস্তাঘাট, একটু বৃষ্টি হলেই তাতে দেখা দেয় জলাবদ্ধতা। এর মধ্যে প্রচণ্ড গরমে চলছে হাঁসফাঁস অবস্থা। এতসব অস্বস্তির মধ্যে নগরবাসীর কপালে মাঝেমধ্যেই যুক্ত হয় সড়ক অবরোধ। বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা প্রধান প্রধান সড়ক অবরোধ করে রাখেন আন্দোলনকারীরা। গতকাল বুধবার এমনই আরেকটি ভয়াবহ যন্ত্রণা ও দুর্ভোগের দিন পার করেছেন রাজধানীবাসী।
সকাল থেকেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী পুরান ঢাকা থেকে লংমার্চ করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন ঘেরাওর উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তখনই সড়কে অচলাবস্থার শুরু। এর পরপরই পুরান ঢাকার বিভিন্ন পাড়ামহল্লা থেকে শত শত মানুষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) নগরভবনের সামনে অবরোধের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। তারা নগরভবনের সামনে মানববন্ধন করে সড়কে যান চলাচল বন্ধর করে দেয়।
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্রদল বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে। ঢাবি ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করলে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার সড়ক যোগাযোগও বন্ধ হয়ে যায়। এর পর দুপুরে সর্বস্তরের ডিপ্লোমা ইন নার্সিং এবং ডিপ্লোমা ইন মিডওয়াইফারি কোর্সকে স্নাতক সমমানের স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে শাহবাগে সড়ক অবরোধ করেন নার্সিং শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিলুপ্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মীরা আন্দোলনে নামেন। ফলে রাজধানী কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। যারা ব্যক্তিগত যানবাহন নিয়ে বেরিয়েছিলেন, তারা কেউ নির্ধারিত সময়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারেননি। পাঁচ মিনিটের পথ চলতে গাড়ির ভেতরেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা পার করতে হয়েছে তাদের। অনেকে গাড়ি ঘুরিয়ে অন্য পথ দিয়ে যেতে চাইলে সেখানেও একই ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়েছে। সব মিলিয়ে গতকাল নগরবাসীর ভোগান্তির অন্ত ছিল না। এ জন্য বাড়তি চাপ পড়েছে মেট্রো রেলে। যাত্রীর চাপ এতই বেশি হয়, অফ পিক আওয়ারেও অনেকে ট্রেনে ওঠার সুযোগ পাননি।
তার ওপর দুপুরে হঠাৎ বজ্রসহ ঝুমবৃষ্টির কারণে অবস্থা নাজুক আকার ধারণ করে। বৃষ্টি থামার পর সড়কগুলোতে ধুন্দুমার অবস্থা তৈরি হয়। অবস্থা এমন বেগতিক আকার ধারণ করে যে, ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের নির্বাকার হয়ে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কোনো উপায় ছিল না। অফিস শেষে ঘরে ফিরতেও নগরবাসীকে পড়তে হয়েছে সীমাহীন যন্ত্রণায়। নারী ও শিশুদের ভোগান্তি ছিল চরমে। তারা অনেক চেষ্টা করেও বাসে উঠতে পারেননি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের রমনা বিভাগের উপকমিশনার শফিকুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যা সোয়া ৭টায় বলেন, ‘ঢাকা শহরে এমনিতেই যানজটের শেষ নেই। তার ওপর পাঁচ-ছয় ঘণ্টা যদি মেইন মেইন সড়ক বন্ধ থাকে, তাহলে অবস্থা কী হয় বুঝুন। ডাইভারশন দিতে দিতে আজ শেষ হয়ে গেছি। এখনও ভিআইপি মুভমেন্ট নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
আর যানজটের কারণে মানুষ কোনো দিকেই ঠিকমতো মুভমেন্ট করতে পারছে না। সকাল থেকে মানুষের গালি খেতে খেতে হয়রান।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গতকাল রাজধানীতে ২৩ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। স্বল্প সময়ের এই বৃষ্টিতে ভোগান্তির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। অবশ্য বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রা অনেকটাই কমেছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির। তিনি বলেন, বুধবার দুপুর পর্যন্ত যথেষ্ট গরম ছিল। বৃষ্টির পর তা কমে গেছে অনেকটাই।