বহুবার শোনা গল্পের মতোই তাদের অতীত। সুরের নেশায় জোট বেঁধেছিল দু’জন মানুষ, বখতিয়ার আর আবিদ। যেখানে আমন্ত্রণ পেতেন সেখানেই যেতেন গান করতে। গানের ভুবনের বাসিন্দারা যাকে খ্যাপ মারা শো বলতেন, ঠিক সেটিই করতেন তারা। যেখানে হরেক রকম মানুষের হরেক রকম গানের চাহিদা পূরণ করতে হতো তাদের। তারপরও শো করে কত টাকা সম্মানী পাবে, তা নিয়েও ছিল না মাথাব্যথা; বরং কোনো কোনো সময় গাঁটের পয়সা খরচ করে হলেও গান শোনাতে যাওয়ার ইচ্ছাটা ছিল প্রবল। এ করতে গিয়ে বিভিন্ন মঞ্চে নানা সময়ে পরিচয় বেশ কয়েকজন মিউজিশিয়ানের সঙ্গে। সমমনা তেমন তিন মিউজিশিয়ান জামিলুর, তানিম আর সামীকে নিয়ে নতুন দিনের স্বপ্ন রচনা শুরু করেছিলেন আবিদ ও বখতিয়ার। কারণ, ততদিনে একের পর এক লোকাল শো করতে করতে তারা ক্লান্ত। চাইছিলেন যা নিজের পছন্দের, ঠিক সে ধরনের গানের মধ্য দিয়ে শিল্পী মনকে তৃপ্ত করা। সে উদ্দেশ্যেই ২০১০ সালে তারা জন্ম দেন নতুন এক ব্যান্ডের।
নাম ‘বে অব বেঙ্গল’। চাটগাঁ সমুদ্র পারে ছুটে বেড়ানো তরুণ বলেই তারা এ নাম বেছে নিয়েছিলেন। এরপর নেমেছিলেন রকবাজির দৌড়ে। এই হলো বে অব বেঙ্গলের জন্মকথা। কী এতে কোনো নতুনত্ব আছে? জানি, এর উত্তরে অনেকে বলবেন ‘না’। কারণ, একুশ শতকে জন্ম নেওয়া বেশির ভাগ ব্যান্ডের জন্মবৃত্তান্ত এমনই। তাহলে এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, বে অব বেঙ্গলকে নিয়ে আলাদা করে এ প্রতিবেদন লেখার কারণ কী? এর উত্তরে বলতে হবে, বে অব বেঙ্গল সেই ব্যান্ড, যারা তাদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে সমকালীন দৃশ্যপট এঁকে চলেছে। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত ‘মুখোশের গল্প’, ‘আঁচড়’, ‘গন্ধ খুঁজে পাই’ গানগুলো তার বড় প্রমাণ। যার সৃষ্টিতে আছে ব্যান্ড সদস্যদের নিজস্বয়তার ছাপ। এ কারণে তাদের ইতিহাসের পৃষ্ঠা উল্টে দেখা। তা হাতড়ে দেখতে গিয়ে জানা গেল, রক গানের চিরচেনা আদলের সঙ্গে বে অব বেঙ্গলের সদস্যদের নিজস্ব ভাবনাজুড়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল ২০১৩ সাল থেকে। শুরুতে শিল্পী ও অ্যালবাম আয়োজক জয় শাহরিয়ারের তত্ত্বাবধানে মিশ্র অ্যালবাম ‘রকহোলিক’-এর জন্য ‘জ্যোস্নার স্নান’ গানটি তৈরি করেছিলেন তারা। এরপর যখন প্রথম অ্যালবাম ‘নীরব দুর্ভিক্ষ’-এর আয়োজন শুরু করে, তখন তারা আবিষ্কার করেন, মনের গহিনে কোন বিষয়গুলো প্রতিনিয়ত আলোড়ন তুলে যাচ্ছে। সেই বিষয়গুলো তারা বেছে নিয়েছেন তাদের সাত সুরের গল্পে; যা নিয়ে সৃষ্টি তাদের ১০ গানের অ্যালবাম ‘নীরব দুর্ভিক্ষ’।
প্রথম অ্যালবাম শ্রোতার মাঝে কতটা সাড়া ফেলবে, তা নিয়ে ভাবনা ছিল না; বরং সংগীতের নেশায় ডুবে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মেতে ওঠাই ছিল তাদের লক্ষ্য। যদিও মাঝে ব্যান্ড লাইনআপ পরিবর্তনে তাদের পথচলা কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। তবে চিরতরে থেমে যায়নি। বরং দিন দিন ক্ষুধা বেড়েছে গান তৈরি আর প্রকাশনার। সে কারণে দিনমান একাকার করে নতুন সুর-সংগীতের আয়োজনে নিবেদিত ছিলেন বে অব বেঙ্গলের সদস্যরা; যার সুবাদে এখন প্রতি মাসে প্রকাশ পাচ্ছে তাদের নতুন গান। যার আয়োজনে স্বাতন্ত্র্য ধরে রেখেছে রক-মেটাল ঘরানার এই ব্যান্ড।
অতীত হাতড়ে যখন এই বিষয়গুলো উঠে এলো, তখন যে প্রশ্নটি সবার আগে চলে আসে, তা হলো রকবাজির দৌড়ে অংশ নেওয়ার আগে ব্যান্ডে সদস্যদের ভাবনাটা কী ছিল? এর জবাবে বে অব বেঙ্গল ব্যান্ডের লিড গিটারিস্ট, গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী বখতিয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের প্রথম চাওয়া ছিল, নিজেদের ভালো লাগা প্রাধান্য দিয়ে গান করে যাওয়া। একান্ত নিজেদের মতো করে কিছু করা। তাই কে আমাদের গান শুনবে, কে শুনবে না এ নিয়ে চিন্তিত ছিলাম না কখনও। খ্যাতির মোহ আমাদের পেয়ে বসেনি কখনও। তাই যখন আমরা শুনি, আমাদের কোনো গান শ্রোতার ভালো লাগছে, তখন তা আমাদের বাড়তি আনন্দ দেয়। আমরা সময়ের যাত্রী, সময়ের হাতেই সবকিছু ছেড়ে দিয়েছি। তাই সময়ই নিশ্চিত করবে আমাদের গন্তব্য কত দূরের।’ সৃষ্টির নেশায় মেতে উঠতে কখনও সস্তা জনপ্রিয়তার স্রোতে গা ভাসাননি।
তারপরও রক মিউজিক নতুন সুর উদ্ভাবন করে চলেছেন। এটি কীভাবে সম্ভব হয়েছে? এর প্রশ্নে বখতিয়ারের সোজাসাপটা জবাব, ‘ভাবনার জগতে যে বিষয়গুলো নাড়া দেয়, সেগুলোই সাত সুরে গেঁথে নেওয়ার চেষ্টা করি। এ চেষ্টা ততক্ষণ পর্যন্ত চলে, যতক্ষণ না বুঝতে পারি; আমাদের সৃষ্টি আত্মার সঙ্গে সংযোগ তৈরি করেছে। একদিন দু’দিন নয়, সেই ২০১০ সালে যখন বে অব বেঙ্গল ব্যান্ডের জন্ম; তখন থেকে এ একই ভাবনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। সৃষ্টির তাড়না থেকে জন্ম দিয়ে চলেছি একের পর এক গান। হতে পারে এটাই কারণ, যা আমাদের গানগুলো অন্য সবার আয়োজন থেকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করছে।’ এ গেল নিজস্বয়তার কথা। এখন প্রশ্ন হলো, বে অব বেঙ্গল যেসব আয়োজন শ্রোতাদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে, সে প্রত্যাশা পূরণের দায়ভার অনুভব করেন কিনা? এ নিয়ে ব্যান্ডের বেইজ গিটারিস্ট এহতেশাম আবিদ বলেন, ‘শ্রোতার ভালোলাগা, ভালোবাসা আমাদের এগিয়ে চলার প্রেরণা। নিজেদের সংগীততৃষ্ণা আর শ্রোতার প্রত্যাশা পূরণের জন্য সৃষ্টির নেশায় মেতে আছি আমরা। ক্রমাগত চেষ্টা করে যাচ্ছি, আগের আয়োজনগুলো ছাপিয়ে আরও ভিন্ন ধাঁচের আয়োজন তুলে ধরার।’
এ কথার পাশাপাশি আবিদ সুখবরও দিলেন, এ বছরেই তাদের ‘দ্বিতীয়’ অ্যালবামের বাকি গানগুলো প্রকাশ পাবে। বছরের তৃতীয় ভাগে আনুষ্ঠানিক আয়োজনের মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা হবে ‘দ্বিতীয়’ অ্যালবামের স্মারক; যার মাধ্যমে আগামী দিনের সফর আরও সুর-মূর্ছনার হবে বলে আশার কথা শুনিয়েছেন ব্যান্ডের বাকি তিন সদস্য লিড গিটারিস্ট রকিবুল নিপু, কি-বোর্ডিস্ট জামিলুর রহমান জিমি ও ড্রামার আবিদ পাশা। v
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ষয়গ ল বখত য় র আম দ র সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
গোল বন্যার ম্যাচে নিষ্প্রভ মেসি, জয়বঞ্চিত মায়ামি
আক্রমণে ঝড় তুলেও কাঙ্ক্ষিত জয় পায়নি লিওনেল মেসির ইন্টার মায়ামি। স্থানীয় সময় বুধবার রাতে গোলের পর গোলের এক রুদ্ধশ্বাস ম্যাচে সান হোসে আর্থকোয়েকসের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে তারা। উভয় দলের রক্ষণভাগ কখনও ভেঙে পড়েছে, আবার কখনও দুর্দান্ত ভাবে সামলে নিয়েছে প্রতিপক্ষের ধাক্কা। তবে এই গোলবন্যা ম্যাচেও নিষ্প্রভ ছিলেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা মেসি।
ম্যাচ শুরু হতেই সান হোসের দর্শকরা চমকে উঠলেন। প্রথম মিনিটেই মায়ামির ডিফেন্ডার ম্যাক্সিমিয়ানো ফ্যালকন গোল করে এগিয়ে দেন দলকে। কিন্তু সান হোসের জবাব আসে দ্রুত, মাত্র দুই মিনিট পরেই গোল করেন আরাঙ্গো। শুরুতেই স্কোরলাইন ১-১।
এরপর ম্যাচে রীতিমতো পাল্টাপাল্টি আক্রমণের প্রদর্শনী চলে। ৩৭ মিনিটে বিউ লেরক্সের গোলে সান হোসে এগিয়ে যায় ২-১ ব্যবধানে। তবে বিরতির আগে ৪৪ মিনিটে তাদিও অ্যালেন্ডে সমতা ফেরান (২-২)। অতিরিক্ত সময়ে ইয়ান হার্কস আবারও সান হোসেকে এগিয়ে দেন, ফলে প্রথমার্ধেই দেখা মেলে পাঁচটি গোলের।
আরো পড়ুন:
মায়ামিতে সবচেয়ে বড় হারের স্বাদ পেলেন মেসি
মেসি গোল করলেই জেতে মায়ামি
বিরতির পর বদলি খেলোয়াড় রদ্রিগেজের পাস থেকে আবারও গোল করেন অ্যালেন্ডে। এটি ছিল তার ব্যক্তিগত দ্বিতীয় গোল। ৫২ মিনিটে গোল করে ম্যাচে আবার সমতা ফেরান (৩-৩)। এরপর উভয় দলই সুযোগ তৈরি করলেও আর বল জালে জড়াতে পারেনি।
লিওনেল মেসির পা থেকে জাদু বের হয়নি এদিন। বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি হলেও একবারও গোলের দেখা পাননি তিনি। ফ্রি-কিক, ওপেন প্লে কিংবা ডান পায়ের শট—সবকিছুতেই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন সান হোসের গোলরক্ষক দানিয়েল। শেষ মিনিটেও মেসির শটে ডাইভ দিয়ে দলকে রক্ষা করেন এই গোলরক্ষক।
এই ড্রয়ের ফলে ১২ ম্যাচে ইন্টার মায়ামির পয়েন্ট দাঁড়ায় ২২, অবস্থান চতুর্থ। অপরদিকে, সান হোসে ১৩ ম্যাচে ১৭ পয়েন্ট নিয়ে রয়েছে ষোলো নম্বরে। শীর্ষে রয়েছে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে সিনসিনাটি। তাদের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছে ফিলাডেলফিয়া ও কলম্বাস যথাক্রমে ২৬ পয়েন্ট নিয়ে।
ঢাকা/আমিনুল