পুলিশ পরিচয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে এক নারীকে বিয়ে ও তার কাছ থেকে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা হলেন সুমি আক্তার (৩৭) ও মেহেদী হাসান (২৪)।

পুলিশ জানায়, আসামিরা প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন। সুমি আক্তার একজন নারীকেই পুরুষ কণ্ঠে ফোন করে ‘পুলিশ সদস্য’ পরিচয়ে প্রেমের অভিনয় করেন। পরে তার সহযোগী মেহেদী হাসান সেই প্রেমিক পরিচয়ে ওই নারীকে বিয়ে করেন।

প্রেম ও বিয়ের ফাঁদে ফেলে তারা ভুক্তভোগীর কাছ থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং প্রায় দেড় লাখ টাকার স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাৎ করেন। 

বিষয়টি বুঝতে পেরে ভুক্তভোগী আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সন্ধ্যায় আশুলিয়ার চারিগ্রাম এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) দুপুরে তাদের ঢাকার আদালতে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারের সময় আসামিদের কাছ থেকে পুলিশের পোশাক, আইডি কার্ড, জুতা এবং ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ লেখা বিভিন্ন সামগ্রী জব্দ করা হয়।

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসান বলেন, “অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা দীর্ঘদিন ধরে পুলিশের ছদ্মবেশে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল।”

পুলিশ আরও জানায়, অভিযুক্তরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পুলিশের ইউনিফর্ম পরে ছবি পোস্ট করতেন, যেন তাদের প্রতি বিশ্বাস জন্মে। তারা জামগড়া এলাকায় একই বাসায় ভাড়া থাকতেন।

ভুক্তভোগী নারীর অভিযোগ, প্রতারক চক্রটি তাকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্বামী ও সন্তান ছেড়ে নতুন জীবনের স্বপ্ন দেখায়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রতারণার শিকার হয়ে এখন বিপাকে পড়েছেন তিনি।

ঢাকা/সাব্বির/এস

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাবি ভিসি-প্রক্টর একটি আদর্শে বিশ্বাসী, তাই ছাত্রদলের কথা শুনতে চান না: রিজভী

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছুরিকাঘাতে নিহত শাহরিয়ার আলম সাম্য ছাত্রদল করতেন বলে সংগঠনটির সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাইতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য তাঁদের কথা শুনতে চাননি—এই অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শুধু তা–ই নয়, ছাত্রদলের রাজনীতিও উপাচার্যের অপছন্দ বলে মন্তব্য করেছেন এই বিএনপি নেতা। ছাত্রদলের নেতাদের ‘তুই’ বলে সম্বোধন করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খানের  কঠোর সমালোচনা করেছেন তিনি। উপাচার্যের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও একই আদর্শে বিশ্বাসী বলে ধারণা রুহুল কবির রিজভীর।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক মানববন্ধনে প্রধান অতিথির বক্তব্য রিজভী এসব কথা বলেন। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখার সাহিত্য এ প্রকাশনা সম্পাদক শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার বিচার দাবিতে এই মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘ভাইস চ্যান্সেলর সাহেব, আপনার কাছে গিয়েছিল ছাত্রদলের নেতারা বিচার চাইতে। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সাম্য মারা গেছে। আপনি ক্ষুব্ধ হয়েছেন, আপনি তুই-তোকারি করেছেন ছাত্রনেতাদের। কেন? আপনি শুনতে চান না। কারণ, সাম্য ছাত্রদল করে। আপনার রাজনৈতিক চিন্তাদর্শন কী, তা আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি। আপনি পছন্দ করেন না, ওখানে জাতীয়তাবাদের পক্ষের রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে যারা ছাত্র সংগঠন করে।’

‘উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরাম’ নামে একটি সংগঠন এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের আহ্বায়ক মোকসেদুল মুমিন এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব মোস্তাকিম বিল্লাহ।

মানববন্ধনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের উদ্দেশে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘আপনি আর আপনার প্রক্টর দুজনই একটি আদর্শে বিশ্বাস করেন। নদীর চর দখলের মতো যদি আপনারা গ্যাংয়ের প্রধান হন, তাহলে তো তাকে বিশ্ববিদ্যালয় বলা যাবে না। আপনাদের মাথায় যে দর্শন, ওইটাই প্রটেক্ট (রক্ষা) করার জন্য কাজ করছেন।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যে আদর্শেই বিশ্বাস করুক, ওটা তাঁর ব্যক্তিগত; কিন্তু উনি যখন একটি প্রশাসনের প্রধান হন, উনি তো শিক্ষক, ওনার কাছে প্রতিটি ছাত্রসংগঠন, প্রতিটি ছাত্র সমান মর্যাদা পাবে। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি রক্ষার জন্য সবার সাথে কথা বলবেন। কিন্তু তিনি যদি তার বিশেষ দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করার কাজে নেমে যান, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কখনোই শান্তিপূর্ণ হবে না।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, ‘আমরা জানি না আপনারা কাদের প্রতিনিধিত্ব করছেন। আপনাদের আমরাও সমর্থন করেছি। এখনো করে যাচ্ছি; কিন্তু এনসিপি যখন যমুনার দিকে যায়, প্রধান উপদেষ্টার বাসার দিকে, তখন তাদের সাদরে বরণ করেন। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেরা তাদের আবাসনের জন্য গেল, তাদেরকে আপনারা উপহার দিলেন লাঠিচার্জ, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড।’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সতর্ক করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘উপমহাদেশে অনেক ষড়যন্ত্র চলছে। সেদিকে না তাকিয়েই কি নিজেদের মতো করে দেশ চালাবেন? ফ্যাসিবাদকে অনেকে শক্তি দিয়ে সহযোগিতা করছে। তাই ডানে-বামে সব দিকে তাকিয়ে যথাযথভাবে দেশ শাসন করুন, নাহলে কেউ রক্ষা পাবেন না। বিশেষ রাজনৈতিক দল বা আদর্শকে প্রতিষ্ঠিত করতে গেলে জনগণ ধরে ফেলবে।’

ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ রয়েছে বলে অভিযোগ করেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘সাম্য হত্যার পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে। পুলিশ তিন ভবঘুরেকে গ্রেপ্তার করেছে। রাজনৈতিক কারণ না থাকলে সাম্যর মতো একজনকে কে হত্যা করবে? ভবঘুরেরা তাকে কেন হত্যা করবে?’

বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, কয়েক দিন আগে সে (সাম্য) ফেসবুকে একটা পোস্ট দিয়েছে। কারণ, শাহবাগে জাতীয় সংগীত বন্ধের জন্য একটা আন্দোলন চলছিল। তার বিরুদ্ধে একটা পোস্ট দিয়েছে যে সে জাতীয় সংগীতের পক্ষে। (তার হত্যার পেছনে) এটাই কী কারণ—সে প্রশ্ন তুলে রিজভী বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ফ্যাসিবাদের আমলে পার্শ্ববর্তী দেশের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে খুন হতে হয় আবরার ফাহাদকে।’

রিজভী বলেন, ‘আজ জাতীয় সংগীত, জাতীয় পতাকা, একাত্তরে আমাদের স্বাধীনতার পক্ষে কথা বললে তার জীবন চলে যায়। এ জন্যই বলেছি, নিশ্চয় এর (সাম্য হত্যা) পেছনে রাজনৈতিক কারণ আছে।’

সরকারের উদ্দেশে কঠোর বার্তা দিয়ে বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘সাম্যের রাজনৈতিক শত্রু কারা, আমরা একটু আভাস পাচ্ছি। তাদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। তা না হলে এর পরিণত ভয়াবহ হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ