চট্টগ্রামে ৯ কোটি টাকার পশুর হাটের দর পড়েছে ৬ কোটি
Published: 17th, May 2025 GMT
চট্টগ্রাম নগরের সবচেয়ে বড় ও দামি পশুর হাট হচ্ছে সাগরিকা গরুর বাজার। নগরের সাগরিকা এলাকায় অবস্থিত এই বাজার ইজারা দিয়ে প্রতিবছর মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। গত বছর হাটবাজার থেকে আয় হওয়া মোট অর্থের ৬৭ শতাংশ এসেছিল সাগরিকা গরুর বাজার থেকে। কিন্তু সবচেয়ে দামি এই হাট নিয়ে বিপাকে আছে সংস্থাটি। প্রথম দুইবার দরপত্র দিয়েও ইজারাদার পাওয়া যায়নি। তৃতীয়বার ইজারাদার পাওয়া গেলেও মিলছে না প্রত্যাশিত দর।
নিয়ম অনুযায়ী বাংলা সনের প্রথম দিন থেকে হাটবাজার ইজারা দেওয়া হয়। বছরের প্রথম এক মাস পার হতে চললেও প্রত্যাশিত দর না পাওয়ায় সাগরিকা গরুর বাজার ইজারা দিতে পারেনি সিটি করপোরেশন।
নগরের সবচেয়ে বড় পশুর হাটটি ইজারা না হওয়ার ব্যাপারে সিটি করপোরেশন ও ইজারাদাররা পাল্টাপাল্টি মত দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের মতে, হাটের দর কমাতে ইজারদাররা এক জোট হয়ে দরপত্র জমা দিচ্ছেন না। দিলেও কম দর দিচ্ছেন। আর ইজারাদারদের মতে, হাটের দর অনেক বেশি। ১০-১১ কোটি টাকায় হাট ইজারা নিলেও অর্ধেকও আয় হয় না। তাই আগ্রহ কমেছে তাঁদের।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, সাগরিকা গরুর বাজারের এবারের ইজারা দর ৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা। গত বছর এই হাট ইজারা দেওয়া হয়েছিল ৯ কোটি ২১ লাখ টাকায়। তবে গতবার প্রথম দুই দফায় কেউ দরপত্র সংগ্রহ করেনি। প্রত্যাশিত দর পেয়েছিল তৃতীয় দফা বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর। নির্ধারিত সময়ের ৬১ দিন পর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছিল।
এবার সিটি করপোরেশনের হাটবাজার ইজারা দেওয়ার জন্য প্রথম দফায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি। সাগরিকা গরুর বাজার প্রথম দফায় কেউ আবেদন না করায় দ্বিতীয় দফা দরপত্র বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় গত ২৭ ফেব্রুয়ারি। এরপরও কেউ দরপত্র ফরম কেনেননি। তৃতীয় দফায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয় ১৫ এপ্রিল। এই দফায় এক ব্যক্তি দরপত্র ফরম সংগ্রহ করেন। ওই ব্যক্তি দর দিয়েছেন ৬ কোটি ২ লাখ টাকা, যা সিটি করপোরেশনর প্রত্যাশিত দরের চেয়ে ৩ কোটি ২১ লাখ টাকা কম।
সরকারি হাটবাজার ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী, বাংলা বছরের বৈশাখ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত হাটবাজারগুলো এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। এ জন্য পূর্ববর্তী তিন বছরের ইজারামূল্যের গড় করে তা নির্ধারণ করা হয়। নির্ধারিত দর পাওয়া না গেলে চারবার পর্যন্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া যায়। তবে তৃতীয় দফার পর যথাযথ ইজারা মূল্য পাওয়া না গেলে তার কারণ উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে হয়।
সিটি করপোরেশনের একটি সূত্র জানায়, তৃতীয় দফার দরপত্র বিজ্ঞপ্তির পর জমা পড়া আবেদন নিয়ে গত ৮ মে সিটি করপোরেশনে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু সাগরিকা হাটের জন্য প্রত্যাশিত দর না পাওয়ায় তা ইজারা দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
নগরের দামি হাটটি নিয়ে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার বিষয়ে গতবারের ইজারাদার শিবু দাশ প্রথম আলোকে বলেন, সিটি করপোরেশনের ইজারা ফি ও কর খাতেই খরচ হয় ১১ কোটি টাকার বেশি। আবার হাসিল আদায়ের জন্য লোক রাখতে হয়েছিল। তাঁদের বেতন-ভাতা আছে। হাটের জন্য যে টাকা খরচ হয়েছিল তার অর্ধেকও আদায় করতে পারেননি। বড় অঙ্কের টাকা ক্ষতি হয়েছে তাঁর। এ জন্য এবার দরপত্রে অংশ নেননি। বারবার ক্ষতির শিকার হওয়ায় ইজারাদাররাও আর হাটটি নিতে আগ্রহ পাচ্ছেন না বলে দাবি করেন তিনি।
এই হাটের দুই সাবেক ইজারাদার বলেন, করোনা মহামারির পর হাটে এসে গরু কেনার প্রবণতা কমে গেছে মানুষের। আবার নগরের বিভিন্ন এলাকায় অবৈধভাবে পশুর হাট বসে। অনেক জায়গায় খামার আছে। অনলাইনে গরু বিক্রি হয়। এসব কারণে মানুষ এখন সহজ উপায়ে গরু কেনার দিকে ঝুঁকছেন। এমন পরিস্থিতির পরও সাগরিকা গরু বাজারের ইজারা দর অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৪৩১ বাংলা সনে হাটবাজার ইজারা দিয়ে সিটি করপোরেশনের আয় হয়েছিল ১৩ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সাগরিকা গরুর বাজার থেকে আয় হয়েছিল ৯ কোটি ২১ লাখ টাকা, যা মোট আয়ের ৬৭ শতাংশ।
জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম সরওয়ার কামাল প্রথম আলোকে বলেন, একটি চক্র হাটের ইজারা দর কমানোর কৌশল নিয়েছে। তারা দর কমানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। প্রথম দুই দফায় কেউ দর দেয়নি। তৃতীয় দফায় একজন দরপত্র জমা দিলেও দর দিয়েছেন মূল দরের চেয়ে অনেক কম। এভাবে দর কমানোর চেষ্টার সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেতা ও ইজারাদাররা আছেন বলে জেনেছেন। তবে মেয়র কোনোভাবেই দর কমানোর পক্ষে নয়। প্রত্যাশিত দর না পেলে হাট ইজারা দেওয়া হবে না। গতবার ৬১ দিন পর হাট ইজারা দেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজনে এবারও অপেক্ষা করবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব জ র ইজ র র র ইজ র ইজ র দ র হ ট ইজ র র প রথম প রথম দ দরপত র র জন য হয় ছ ল নগর র বছর র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কেনাকাটায় অনলাইনে দরপত্র বাধ্যতামূলক
সরকারি কেনাকাটায় সুশাসন ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সরকারি ক্রয়নীতিতে (পিপিএ) বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। নতুন ক্রয়নীতিতে সব ধরনের সরকারি কেনাকাটায় অনলাইনে দরপত্র আবেদন (ই–জিপি) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। গত রোববার নতুন এই বিধিমালা গেজেট হিসেবে প্রকাশ করে কার্যকর করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ বা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৬ সালে প্রকাশিত পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্টে (পিপিএ) আনা সংশোধনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখতে নতুন পিপিআর ২০২৫ তৈরি করা হয়। এখন থেকে সরকারি কেনাকাটায় সংশোধিত পিপিএ ২০০৬ ও নতুন পিপিআর ২০২৫ দুটিই কার্যকর হবে।
আরও কী কী পরিবর্তন এসেছে
নতুন সরকারি ক্রয়নীতিতে ১৫৪টি বিধি ও ২১টি তফসিল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নতুন বিধিমালায় অভ্যন্তরীণ কেনাকাটায় ১০ শতাংশ মূল্যসীমা বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া চুক্তি পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রকৃত উপকারভোগীর (বেনিফিশিয়ারি ওনারশিপ) তথ্য প্রকাশ বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে সরকারি ক্রয়ে টেকসই কেনাকাটা করতে হবে। সরকারি প্রতিটি কেনাকাটায় কৌশলগত পরিকল্পনা প্রস্তুত বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
নতুন বিধিমালায় আরও বলা হয়, ভৌত সেবাকে স্বতন্ত্র প্রকিউরমেন্ট ক্যাটাগরি হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ ছাড়া কাঠামো চুক্তি (ফ্রেমওয়ার্ক অ্যাগ্রিমেন্ট) দর–কষাকষির ক্ষেত্র সম্প্রসারণ করতে হবে। যেকোনো কেনাকাটার পরিকল্পনা বাতিলের জন্য একটি ডেবারমেন্ট বোর্ড (বাতিল করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত বোর্ড) প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এ ছাড়া সম্পদ নিষ্পত্তিসংক্রান্ত স্পষ্ট বিধান তৈরি করতে হবে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নতুন বিধিমালা তৈরি করতে বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটি (বিপিপিএ) এ খাতের অংশীজনদের সঙ্গে পরামর্শ ও আলোচনা করে। আলোচনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বড় ক্রয়কারী সংস্থা, দরদাতা, সাংবাদিক, নারী উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ১২টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় অধিকাংশ অংশগ্রহণকারী পুরোনো বিধিমালায় সংশোধন না এনে সম্পূর্ণ নতুন পিপিআর করার মত দেন।
বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম মঈন উদ্দীন আহম্মেদ সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বলেন, নতুন বিধিমালা দেশের সরকারি কেনাকাটা সংস্কারের ইতিহাসে মাইলফলক।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) সচিব মো. কামাল উদ্দিন বলেন, নতুন এই বিধিমালা সরকারি কেনাকাটার প্রক্রিয়ায় প্রতিযোগিতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।