খালের প্রশস্ত ১৬ ফুট। এর ওপর প্রায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২ ফুট দৈর্ঘ্যের গার্ডার সেতু নির্মাণ করছে এলজিইডি। এতেই দেখা দিয়েছে বিপত্তি। নির্মাণাধীন সেতুটির অবস্থান কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দরাজখোলা গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির দক্ষিণ পাশের খালে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুটি হলে দুই গ্রামের সামাজিক কবরস্থানে যাতায়াতের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। বন্ধ হয়ে যাবে কয়েকটি পরিবারের বের হওয়ার পথও। তাই বিষয়টি গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। বর্তমানে সেতুর কাজ বন্ধ রয়েছে।
জানা গেছে, মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের দরাজখোলা গ্রামে ভূঁইয়া বাড়ির দক্ষিণ পাশে খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ২০২৩ সালে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭২ ফুট দীর্ঘ ও পাকা সড়ক থেকে প্রায় ৭ ফুট উঁচু গার্ডার সেতু নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে। একই বছরের ৩ এপ্রিল কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স হারুন অ্যান্ড সন্স। একই বছরের ২৯ মে কাজ বন্ধ রাখতে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন দরাজখোলা গ্রামের মঞ্জুরুল হাসান ভূঁইয়া। অভিযোগের ভিত্তিতে একই বছরের ১৯ নভেম্বর কাজটি ছোট করে করার জন্য উকিল নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশের ভিত্তিতে ছয় মাস বন্ধ থাকে নির্মাণকাজ। পরে এলজিইডির কর্মকর্তারা সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সেতুটি নতুন ডিজাইনে ছোট করে করবেন বলে স্থানীয়দের আশ্বস্ত করেন। কিন্তু আগের ডিজাইনে আবার কাজ শুরু করলে ২০২৪ সালের ৩০ অক্টোবর এক মাসের স্থিতাবস্থার নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। পুনরায় কাজ শুরু করলে আবার ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর ছয় মাসের জন্য কাজটি স্থগিত করার নির্দেশ দেন আদালত। কিন্তু আদেশ অমান্য করে কাজ শুরু করলে দাউদকান্দি থানায় ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর একটি সাধারণ ডায়েরি করেন মঞ্জুরুল হাসান ভূঁইয়া। পরে পুলিশ গিয়ে কাজ বন্ধ করে দেয়।
এই ঘটনায় দরাজখোলা গ্রামের মুসা কলিমউল্লাহ জানান, সরকার সেতু বানায় জনগণের উপকারের জন্য, কিন্তু এই সেতু খালের তুলনায় অনেক বড় ও উঁচু। এটি নির্মাণ হলে কয়েকটি বাড়ির লোকজনের রাস্তায় উঠতে মই লাগবে। তারা সেতু চান, তবে এত বড় নয়। একই গ্রামের শরিফুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, সেতুটির পশ্চিম পাশে দরাজখোলা, দক্ষিণে মোহাম্মদপুর গ্রামবাসীর সামাজিক কবরস্থান। এই সেতু নির্মাণ হলে কবরস্থানে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে যাবে। এখানে কোনো নদী বা বড় খাল নেই। আগেরটির মতো ছোট একটি সেতু হলেও কোনো সমস্যা নেই।
মঞ্জুরুল হাসান ভূঁইয়া জানান, বিএস জরিপ অনুযায়ী দরাজখোলা খালের প্রশস্ত ১৬ ফুট। আগে এখানে ৪ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি সেতু ছিল। এখানে পৌনে ২ কোটি টাকা ব্যয়ে বড় সেতু নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এতে পাশের জমির মালিকরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনই সরকারি অর্থের অপচয় হবে। যেহেতু ছোট খাল, তাই আগের মাপে কালভার্ট বা সেতু নির্মাণ করলে পাশের কৃষিজমি রক্ষা পাবে এবং সরকারি অর্থও বাঁচবে। তিনি বলেন, কাজ বন্ধ রাখার কথা থাকলেও গত ২০ এপ্রিল হাইকোর্টর আদেশ অমান্য করে কাজ করায় কুমিল্লা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মতিনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন উচ্চ আদালত।
ঠিকাদার হারুনুর রশিদ বলেন, ‘কাজ স্থগিত আছে। উপজেলা প্রকৌশলী কাজ করতে বললে করি, কাজ বন্ধ করতে বললে বন্ধ রাখি।’
এলজিইডির দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী জাহিদ হাসানের ভাষ্য, হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ থাকায় কাজ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া এক ব্যক্তির অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা সহকারী কমিশনার বিষয়টি তদন্ত করছেন। এগুলো সমাধান হলে আবার কাজ শুরু হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক জ বন ধ র উপজ ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
আমিনপুরের কবরস্থান থেকে ২১টি কঙ্কাল উধাও!
পাবনার সুজানগর উপজেলার আমিনপুর থানার একটি কবরস্থানের কবর খুঁড়ে ২১টি কঙ্কাল চুরির অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর ধারণা, বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) মধ্যরাতে বিরাহিমপুর কবরস্থান থেকে চোররা কবর খুঁড়ে কঙ্কালগুলো চুরি করেছে।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শুক্রবার (৪ জুলাই) সকালে বিরাহিমপুর কবরস্থানে কবর জিয়ারত করতে যান মৃত ব্যক্তিদের স্বজনরা। তারা কবরের ওপরের মাটি ও বাঁশের চরাট সরানো অবস্থায় দেখতে পান। ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে তারা দেখতে পান, কবরের ভেতেরে কঙ্কাল নেই। বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দা ফারুক হোসেন ও মনিরুল ইসলাম জানান, তাদের আত্মীয়-স্বজনকে কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তারা প্রতি শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজ পড়ে কবর জিয়ারত করতে যান। আজ সকালে এসে তারা দেখতে পান কবরের মাটি খোঁড়া এবং বাঁশের চরাট সরানো। কবরের ভেতর ভোলো করে তাকিয়ে তারা দেখেন, কঙ্কাল নেই, অধিকাংশের মাথার খুলি নেই। তাদের আশঙ্কা, একটি চক্র মাথার খুলিগুলো চুরি করে নিয়ে গেছে।
আরো পড়ুন:
বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এসিড নিক্ষেপ, দগ্ধ ৩
হোটেলে ২ নারীর ওপর হামলাকারীরা শনাক্ত, গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান
আমিনপুর থানার ওসি গোলাম মোস্তফা বলেন, “পুলিশ কবরস্থানটি পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। চক্রটিকে চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেননি।”
এর আগে, একই উপজেলার খাস আমিনপুর ও সাঁথিয়া উপজেলার রাজাপুর এলাকার দুইটি কবরস্থান থেকে কিছু কঙ্কাল চুরির ঘটনা ঘটে।
ঢাকা/শাহীন/মাসুদ