এক বছরের ব্যবধানে বেকার পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ২০২৩ সালের চেয়ে ২০২৪ সালে বেকারের সংখ্যা বেড়েছে দেড় লাখ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ হিসাবে, ২০২৪ সাল শেষে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৭ লাখ। ২০২৩ সালে এই সংখ্যা সাড়ে ২৫ লাখ। গত বছর বেকারের হার ছিল ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ।
গতকাল রোববার শ্রমশক্তি জরিপের ত্রৈমাসিক (অক্টোবর-ডিসেম্বর, ২০২৪) প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিএস। সেখানে নতুন হিসাবপদ্ধতি অনুসারে বেকার পরিস্থিতি তুলে ধরেছে বিবিএস। বেকারের এই নতুন হিসাবটি ১৯তম আইসিএলএস (পরিসংখ্যানবিদদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন) অনুযায়ী প্রস্তুত করেছে বিবিএস।
এই পদ্ধতি অনুসারে যাঁরা উৎপাদনমূলক কাজে নিয়োজিত থাকেন, কিন্তু বাজারে পণ্য বা সেবা বিক্রি করেন না, তাঁরা কর্মে নিয়োজিত নন হিসেবে ধরা হয়। তাঁরা বেকার জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত হন। আগের প্রান্তিক (জুলাই-অক্টোবর) থেকে প্রথমবারের মতো এভাবে হিসাব করেছে বিবিএস।
তবে ১৩তম আইসিএল অনুসারেও আরেকটি হিসাব দেওয়া হয়েছে। সেখানে ২০২৪ সাল শেষে বেকার জনগোষ্ঠী হলো ২৬ লাখ ২০ হাজার তরুণ-তরুণী।
বিবিএসের জরিপে বলা হয়েছে, সার্বিকভাবে বেকার জনগোষ্ঠী মূলত তারাই, যারা জরিপের আগের সাত দিন সময়ে এক ঘণ্টাও কোনো কাজ করেনি, কিন্তু কাজ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। একই সঙ্গে তারা জরিপের পরের দুই সপ্তাহেও কাজের জন্য প্রস্তুত ছিল। এ ছাড়া বিগত ৩০ দিনে বেতন বা মজুরি অথবা মুনাফার বিনিময়ে করার জন্য কোনো না কোনো কাজ খুঁজেছেন, এমন ব্যক্তিরা বেকার হিসেবে বিবেচিত হন।
বিবিএসের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক জরিপ অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর মাস শেষে দেশের শ্রমশক্তি ছিল ৫ কোটি ৮৯ লাখ নারী-পুরুষ। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৯০ হাজার এবং নারী ১ কোটি ১৪ লাখ ৪০ হাজার।
এবার দেখা যাক, কতজন কর্মে নিয়োজিত আছেন। জরিপের সময় দেশে ৫ কোটি ৬২ লাখ নারী-পুরুষ আগের সাত দিনে এক ঘণ্টা মজুরির বিনিময়ে কাজ করেছেন। অর্থাৎ তাঁরা কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ৪ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার এবং নারী ১ কোটি ৬ লাখ ৩০ হাজার।
যাঁরা কর্মে নিয়োজিত নন কিন্তু বেকার হিসেবেও বিবেচিত নন, তাঁরাই মূলত শ্রমশক্তির বাইরের জনগোষ্ঠী। এই জনগোষ্ঠীতে আছেন শিক্ষার্থী, অসুস্থ ব্যক্তি, বয়স্ক, কাজ করতে অক্ষম, অবসরপ্রাপ্ত এবং কর্মে নিয়োজিত নন বা নিয়োজিত হতে অনিচ্ছুক এমন গৃহিণীরা। গত ডিসেম্বর মাস শেষে দেশে এমন ৬ কোটি ২৮ লাখ ১০ হাজার নারী-পুরুষ ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জনগ ষ ঠ ব ব এস ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
১২ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি
চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১২ দিনে (১ থেকে ১২ আগস্ট) ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই সময়ে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১০৫ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক এই তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আগস্ট মাসের ১২ দিনে দেশে ১০৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে। গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের আগস্টের প্রথম ১২ দিন) দেশে এসেছিল ৭২ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। এই হিসাবে গত বছরের আগস্টের প্রথম ১২ দিনের তুলনায় চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রায় ৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ শতাংশ।
ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয়ের দিক থেকে চলতি অর্থবছরটি ভালোভাবে শুরু হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৯ শতাংশ। গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা ২৪৭ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছিলেন। গত বছরের জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯১ কোটি ডলার।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মুদ্রাবাজারে ডলারের ওপর চাপও কমেছে। অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোকে উৎসাহিত করতে নানা প্রণোদনা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক মাসে বিদেশি সব বকেয়া দেনা পরিশোধ হয়ে গেছে। লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি হওয়ায় ডলারের ওপর চাপও কমে এসেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি ব্যাংকগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।
এদিকে, সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে রেকর্ড প্রায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো এক অর্থবছরে এত বেশি প্রবাসী আয় আর আসেনি। গত অর্থবছরে যে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, তা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার বা ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের বাজারও স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ছাড়ের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বেড়ে গত ১০ আগস্টে ৩০ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ মান অনুযায়ী, ওই দিন রিজার্ভ অবশ্য ২৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার ছিল।