চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় মেঘনা নদীর এখলাশপুর থেকে ষাটনল পর্যন্ত প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় মরে ভেসে ওঠা মাছ ও জলজ প্রাণীর পরিমাণ কমেছে। তীরে জমে থাকা মাছ ও জলজ প্রাণীও বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। নদীর তীরবর্তী দুর্গন্ধময় পরিবেশের উন্নতি হয়েছে। তবে মেঘনার সবুজ ও মিঠাপানির রং এখনো ঘোলাটে ও কালচে রয়ে গেছে।

গতকাল সোমবার বেলা দুইটা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত মেঘনার দশানী, মোহনপুর, এখলাশপুর, ষাটনল ও বাবুরবাজার এলাকায় গিয়ে এবং স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে। এদিকে মেঘনার পানির দূষণমাত্রার পরিমাণ ও সত্যতা তদন্তে গত আগস্টে গঠিত কমিটি পানিতে অক্সিজেন ও পিএইচের মাত্রা হ্রাস এবং অ্যামোনিয়ার মাত্রা বৃদ্ধির প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই তদন্ত কমিটির এক সদস্য।

আরও পড়ুনমেঘনায় ঝাঁকে ঝাঁকে ভেসে উঠছে মরা মাছ ও জলজ প্রাণী১৮ মে ২০২৫

গতকাল দুপুরে কয়েকটি এলাকা ঘুরে সেখানে ভেসে ওঠা মরা মাছ ও জলজ প্রাণী তেমন দেখা যায়নি। পানিতে কিছু ছোট ছোট মরা মাছ রয়েছে। তবে সেগুলো দূর থেকে স্পষ্ট দেখা যায় না। নদীর তীরে স্তূপ হয়ে থাকা মাছও দেখা যায়নি। গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে, জোয়ারের পানি ও ঢেউয়ে এসব মাছ তীর থেকে নদীতে ভেসে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এসব এলাকার নদীর তীর অনেকটাই ছিমছাম ও পরিচ্ছন্ন। তবে মেঘনার পানির রং এখনো ঘোলাটে দেখা গেছে।

মেঘনার তীরবর্তী দশানী এলাকার মো.

রাকিব ও ফারুক ব্যাপারী, এখলাশপুর এলাকার নুরুজ্জামান ও বদিউজ্জমান এবং বাবুরবাজার এলাকার ফুলচাঁন বর্মণসহ আরও কয়েকটি এলাকার অন্তত ১৫ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা হয়। তাঁরা বলেন, গত শুক্রবার থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত তাঁদের এলাকায় প্রচুর পরিমাণ মরা লাল চেউয়া, সাদা চেউয়া, বেলে (বাইলা), সেলেং, চাপিলা, চিংড়ি, কাঁচকি, জাটকা মাছ ও জলজ প্রাণী ভেসে উঠেছে। মরা মাছ ও প্রাণী নদীর তীরে স্তূপ হয়ে ছিল। সেগুলোর দুর্গন্ধে এলাকায় থাকা কষ্টকর ছিল। তবে রোববার সকালের পর থেকে প্রচুর বৃষ্টি হওয়ায় এবং পানির জোয়ার বেড়ে যাওয়ায় মেঘনায় ভেসে ওঠা মরা মাছ ও জলজ প্রাণী তেমন দেখা যাচ্ছে না। পানির তীব্র স্রোত ও ঢেউয়ে তীরে স্তূপ হয়ে থাকা মাছ ভেসে গেছে। তবে পানির রং এখনো ঘোলাটে। সেখানে গোসল ও ধোয়ামোছা করা যাচ্ছে না। গত আগস্টেও এভাবে বিপুল পরিমাণ মরা মাছ মেঘনায় ভেসে উঠেছিল বলে জানান তাঁরা।

গত আগস্টে মাছ ও জলজ প্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনায় পরিবেশ অধিদপ্তরের উদ্যোগে পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালককে আহ্বায়ক করে আট সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। ওই তদন্ত কমিটির অন্যতম সদস্য ও মৎস্য অধিদপ্তরের জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, তাঁরা বিষয়টি তদন্ত এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রতিবেদন পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে জমা দিয়েছেন। পরীক্ষায় ওই এলাকায় মেঘনার পানিতে অধিক মাত্রার অ্যামোনিয়া ও অক্সিজেন ও পিএইচের পরিমাণ অনেক কম থাকার প্রমাণ পেয়েছেন।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিজয় কুমার দাস বলেন, রোববার থেকে টানা বৃষ্টি হওয়ায় বৃষ্টির পানিতে এবং জোয়ারের টানে ভেসে ওঠা মরা মাছ অন্যত্র চলে গেছে। তীরেও জমে থাকা মাছ দেখা যাচ্ছে না। তবে গত শুক্রবার থেকে দুই-তিন দিন মেঘনায় ব্যাপক হারে মরা মাছ ও জলজ প্রাণী ভেসে উঠেছিল।

মৎস্য কর্মকর্তা দাবি করেন, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ এলাকার কলকারখানার বিষাক্ত বর্জ্য বুড়িগঙ্গা ও শীতলক্ষ্যা হয়ে জোয়ারের স্রোতে মেঘনার সবুজ মিঠাপানিতে মিশে যাচ্ছে। এ কারণে মেঘনার পানি পুনরায় দূষিত হচ্ছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, দূষণ বেড়ে যাওয়ায় মেঘনার পানিতে অ্যামোনিয়ার পরিমাণ বেড়ে গেছে এবং অক্সিজেন ও পিএইচের পরিমাণ কমেছে। এ জন্য এত হারে মাছ মরছে।

আরও পড়ুনচাঁদপুরে মেঘনায় মরা মাছ ভেসে ওঠার ঘটনা তদন্তে ৮ সদস্যের কমিটি গঠন৩১ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ছ ও জলজ প র ণ ম ঘন র প ন নদ র ত র র পর ম ণ ম ঘন য় এল ক র এল ক য় র এল ক য় ম ঘন ত কম ট পর ব শ তদন ত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ