যশোরের অভয়নগর উপজেলার ভবানিপুর গ্রামের ভবদহে শ্রী নদীর ওপর ২১ কপাট, ৯ কপাট ও ৬ কপাটের স্লুইসগেট পাকিস্তান আমলে সবচেয়ে বড় প্রকল্প ছিল। সময়ের ব্যবধানে সেই প্রকল্প দেখা দিয়েছে ‘যশোরের দুঃখ’ হয়ে। 

সরেজমিনে নদী ঘুরে দেখা গেছে, ২১ গেটের ওপর ১৩টি এবং ৯ গেটের ওপর পাঁচটি মোটর পাম্প বসানো আছে। সঙ্গে আছে চারটি পাওয়ার পাম্প। 

দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন করে সে মাটি নদীর মধ্যেই রাখা হয়েছে। ফলে, নদী পরিণত হয়েছে নালাতে। ৯ গেটের সামনে দেখা যায়, নদীর তলদেশ উঁচু হয়ে আছে, কোনোরকমে নালা দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

কপালিয়া সেতুর কাছে গিয়ে দেখা গেছে, নদীর প্রস্থ ১০ থেকে ১২ ফুট এবং গভীরতা ৪ থেকে ৫ ফুট। মনে হয়, লাফিয়ে পার হওয়া সম্ভব। 

বরণী শশ্মান ঘাট এলাকায় দেখা যায়, নদীর গভীরতা আছে ৪ থেকে ৫ ফুট। জোয়ারের সময় প্রস্থ হয় ১০ থেকে ১২ ফুট। 

রানায় পালপাড়া ব্রিজের নিচে দেখা যায়, প্রস্থ ২০ থেকে ২৫ ফুট এবং গভীরতা মাত্র ৪ থেকে ৫ ফুট। 

যশোর জেলার মণিরামপুর, কেশবপুর ও অভয়নগর, সদর উপজেলা, খুলনার ফুলতলা, ডুমুরিয়া প্রভৃতি এলাকা মুক্তেশ্বরী-টেকা-শ্রী-হরি এবং আপারভদ্রা-হরিহর- বুড়িভদ্রা নদী দিয়ে বেষ্টিত।

যশোর শহরসহ এ অঞ্চলে বৃষ্টির পানি এসব নদী ও এগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত খালের মাধ্যমে ভাটিতে নিষ্কাশিত হয়। মুক্তেশ্বরী-টেকা-শ্রী-হরি এবং আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদীর জলপ্রবাহ কেশবপুর উপজেলার কাশিমপুরে মিলিত হয়েছে এবং মিলিত প্রবাহ ভদ্রা-তেলিগাতী-গ্যাংরাইল নামে শিপসা নদীতে পতিত হয়েছে। 

মুক্তেশ্বী-টেকা-হরি ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা এবং এগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত খালগুলোর মাধ্যমে অভয়নগর, মণিরামপুর, কেশবপুর ও যশোর সদরের (অংশিক) প্রায় ৫৩টি ছোট-বড় বিলের পানি নিষ্কাশিত হয়। 

সমুদ্রের নোনা পানি প্রতিরোধে এবং কৃষিযোগ্য মিঠাপানি ধরে রাখার জন্য ষাটের দশকে হরি-টেকা-শ্রী নদীর অভয়নগর উপজেলার ভবদহ নামক স্থানে ২১ কপাটের স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়। আশির দশক পর্যন্ত ভবদহ স্লুইসের সুফল ভালোভাবে পাওয়া যায়। সত্তরের দশকের পর থেকে এই অঞ্চলের নদীগুলোর মূল উৎস প্রবাহ পদ্মা থেকে বিছিন্ন হওয়ায় সাগরবাহিত পলি উজানের দিকের নদী ও খালের তলদেশে জমা হতে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে ভদ্রা-তেলিগাতি নদীর মাধ্যমে সাগর থেকে প্রচুর পলি বাহিত হয়ে হরি-টেকা-মুক্তেশ্বরী নদী ও আপারভদ্রা-হরিহর-বুড়িভদ্রা নদী এবং এগুলোর সংযুক্ত খালগুলোর তলদেশে পড়ে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির নেতারা জানিয়েছেন, বছর চারেক আগেও ভবদহ স্লুইসগেট থেকে শিপসা নদী হয়ে বড় বড় মাছ ধরার ট্রলার চলাচল করতে পারত। কিন্তু, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভুল সিদ্ধান্তে ভবদহের স্লুসগেট বন্ধ করে সেখানে মোটর ব্যবহার করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে, জোয়ারের সাথে আসা পলি নদীতেই থেকে যায়। এ সেচ প্রকল্পের ফলেই নদী দ্রুত ভরাট হয়ে যাচ্ছে।

নদীর পাশে পলি জমে থাকা স্থান দখল হতে শুরু করেছে। নদীর পাশ জুড়ে স্থাপন করা হচ্ছে ছোট-বড় মাছের ঘের ও স্থাপনা। এমনকি সরকারি আবাসন প্রকল্পও করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী বলেছেন, নানা ষড়যন্ত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ জনপদকে জিম্মি করে লাভবান হতে চেয়েছে। তবে, তা আর হতে দেওয়া হবে না।

ডুমুরতলা গ্রামের শিবপদ বিশ্বাস বলেছেন, ভবদহের জলাবদ্ধতার সমাধান হলে একটি মহলের আয়ের উৎস বন্দ হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে প্রজেক্ট নিয়ে দুর্নীতি করতে পারবে না।

ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবীর জাহিদ বলেছেন, টিআরএম (নদীতে অবাধ জোয়ার–ভাটার ব্যবস্থা) ছাড়া বিকল্প কোনো উপায়ে ভবদহের জলাবদ্ধতার সমাধান সম্ভব নয়। 

ঢাকা/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র উপজ ল প রকল প প রব হ

এছাড়াও পড়ুন:

‘তৈদুছড়া’ ঝরনা দেয় রোমাঞ্চের হাতছানি

খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলার তৈদুছড়া ঝরনার খবর এখন পৌঁছে গেছে প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে। পাহাড়ের নির্জন স্থানের ঝরনাটি একসময় পর্যটকদের অগোচরে ছিল। প্রায় ৫০ ফুট উঁচু থেকে ঝরে পড়া জলের উচ্ছ্বাস দেখে মুগ্ধ হতে হয়।

আঁকাবাঁকা পথে সবুজে ঘেরা দীঘিনালা-খাগড়াছড়ি সড়কের নয়মাইল এলাকা থেকে তিন কিলোমিটার পূর্ব দিকে সীমানাপাড়া। এরপর পাহাড় ডিঙিয়ে হাঁটতে হবে আধা ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিট। এরপর ঝিরিপথে শুরু হবে রোমাঞ্চকর যাত্রা। ঝিরিপথে আছে বিশাল বিশাল সব পাথর। কোনোটা পিচ্ছিল, আবার কোনোটা মসৃণ। ১০ থেকে ১৫ মিনিট ঝিরিপথে যাওয়ার পর দেখা মিলবে ঝরনার। ঝরনার সৌন্দর্য মুহূর্তেই ভুলিয়ে দেবে পথের ক্লান্তি। পথে পথে দেখা মেলে নানা প্রজাতির পাখি, স্থানীয় লোকদের জুমঘর আর নাম না–জানা পাহাড়ি ফুলের।

তৈদুছড়া ঝরনায় দেখা হয় খাগড়াছড়ি ও ঢাকা থেকে আসা একদল তরুণের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, তৈদুছড়া ঝরনার কথা স্থানীয় বন্ধুদের কাছ থেকে শুনেছেন অনেক দিন আগে। এবার দলবেঁধে এসেছেন একটা রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য। তবে এটি যে এত সুন্দর হবে, সেটা তাদের কল্পনার বাইরে। ট্র্যাকিংয়ের জন্য দেশের অন্যতম সেরা একটি স্থান হতে পারে এই ঝরনা।

সীমানাপাড়া এলাকার বাসিন্দা ও ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য গণেশ ত্রিপুরা বলেন, এ ঝরনায় সারা বছর পানি থাকে। আর লোকজনও সারা বছর আসেন। ঝরনায় যাওয়ার রাস্তাটা যদি ইট বিছানো হতো, তাহলে ঝরনা পর্যন্ত গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেত।

একসময় ঝরনাটির কথা শুধু স্থানীয় লোকজনই জানতেন। স্থানীয় ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী ঝরনাটির নাম দিয়েছে ‘তৈদু’। ত্রিপুরা ভাষায় ‘তৈ’ অর্থ ‘জল বা পানি’ আর ‘দু’ অর্থ ‘ধারা’। অর্থাৎ জলধারা। পাহাড়ের গা ঘেঁষে অঝোর ধারায় নিচে গড়িয়ে পড়ছে স্বচ্ছ জলধারা। সবুজ পাহাড়ের বুনো জঙ্গলের মধ্যে প্রায় ৫০ ফুট উচ্চতার ঝরনাটি যে কাউকে মুগ্ধ করে।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা অথবা চট্টগ্রাম থেকে যেকোনো বাসে চড়ে প্রথমে পৌঁছাতে হবে খাগড়াছড়ি। এরপর সেখান থেকে অটোরিকশা বা চান্দের গাড়িতে করে যেতে হবে সীমানাপাড়ায়। ভাড়া পড়বে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকা। কেউ চাইলে ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলেও যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

খাগড়াছড়ি শহরে পর্যটন মোটেল, হোটেল গাইরিং, অরণ্য বিলাস, মাউন্টেন, শৈল সুবর্ণসহ বিভিন্ন মানের থাকার হোটেল আছে। সেখান থেকে বাজেটের মধ্যে হোটেল বা মোটেল খুঁজে নিতে হবে। ৫০০ থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকার মধ্যে এগুলোর ভাড়া। এ ছাড়া দীঘিনালায় থাকতে চাইলে স্টার, রেস্টহাউস, ডিগনিটি নামে তিনটি মাঝারি মানের হোটেল আছে। এখানকার ভাড়া ৫০০ থেকে ২০০০ টাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘তৈদুছড়া’ ঝরনা দেয় রোমাঞ্চের হাতছানি
  • অভয়নগরে যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার