বৃষ্টি কমে যাওয়া এবং উজান থেকে ঢল না থাকায় শেরপুরের নদীগুলোর পানি মঙ্গলবার (২০ মে) রাত থেকে কমেতে শুরু করেছে। বুধবার (২১ মে) সকাল থেকে চেল্লাখালী নদীর পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। 

এদিকে, মহারশি নদীর বাঁধে ফাটল দেখা দেওয়ায় নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বেড়েছে। তাদের ধারণা, যে কোনো সময় বৃষ্টি  শুরু হলেই ভাঙতে পারে বাঁধ।

বুধবার (২১ মে) সকাল ৯টায় শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোগাই নদীর পানি নালিতাবাড়ী পয়েন্ট বিপৎসীমার ২৪৬ সেন্টিমিটার নিচে, পুরাতন ব্রহ্মপুত্র বিপৎসীমার ৬৩৭ সেন্টিমিটার মিটার নিচে এবং চেল্লাখালী নদীর বাতকুচি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

আরো পড়ুন:

শেরপুরে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি, সতর্কতা জারি

ফেনীতে বন্যায় আশ্রয় হারানো ১১০ পরিবার পেল নতুন ঘর

স্থানীয়রা বলছেন, গতবারের বন্যার ধকল এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি অনেক এলাকার মানুষ। সেটার মূল কারণ ছিল বিভিন্ন পয়েন্টে নদীর বাঁধ ভেঙে যাওয়া। সময়মতো পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ না করে কাজ শুরুই করেছে বর্ষার কিছুদিন আগে। বাঁধের কাজ অর্ধেক শেষ না হতেই আবার চলে এসেছে বন্যা। অধিকাংশ জায়গায় দেখা দিয়েছে ফাটল। ইতোমধ্যে মহারশি নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝিনাইগাতী উপজেলার দীঘিরপাড় এলাকায় নদীর বাঁধে ফাটল সৃষ্টি হয়েছে। ফাটলে দ্রুত মেরামতের প্রয়োজন।

জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এখনো জেলায় আট শতাংশ ধান টাকা বাকি রয়েছে। এছাড়াও কেটে নেওয়া অনেক ধান মারাই হয়নি। অনেক কৃষকের খড় এখনো কাঁচা। টানা বৃষ্টিপাতে অনেকের কেটে নেওয়া ধান ও খড় বৃষ্টির পানিতে পচে যাচ্ছে। ক্ষেতে পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ধান কাটতে সময় বেশি লাগায় শ্রমিকের সংকট তৈরি হয়েছে। কিছু কিছু নিচু এলাকায় পানিতে জোঁকের উপদ্রব বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়ে পানিতে নামতে পারছেন না কৃষক।

দীঘিরপাড় এলাকার বাসিন্দা হুমায়ূন আহমেদ বলেন, “পানি আসলে কিছু কাজ দেখা যায়। পরে সবাই ভুলে যায়। আমরা এখন চিন্তায় আছি, উজানে বৃষ্টি হলে এই বাঁধের ভাঙন কোনোভাবেই ঠেকানো সম্ভব না। আশপাশের সব কিছু ভেসে যাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফিলতির জন্য আমাদের আজ ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হচ্ছে।”

ঝিনাইগাতী উপজেলার স্বেচ্ছাসেবক আতিক বলেন, “আমরা প্রতি বছর এই বাঁধ সংস্কারের জন্য কাজ করি। যখনই পানি আসে, তখনই আমাদের এই বাঁধে মাটি ফেলে কাজ করতে হয়। এই বাঁধের স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন, নয়তো বাঁধের পাশে থাকা দীঘিরপাড় ফাজিল মাদরাসাটিও ভেসে যাবে।”

পাগলা নদীর তীরবর্তী কৃষক আমিন বলেন, “ধান আটিতেই গাছ হয়ে যাচ্ছে। এই ধান সিদ্ধ করার কোনো উপায় নেই। এবার গরুর খাবারেও সংকট হবে, কারণ সব খড় পচে যাচ্ছে।”

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, “ইতোমধ্যে ৯২ শতাংশ ধান কাটা শেষ হয়েছে। কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন ক্ষেতে নামাতে পারলে দ্রুত ধান কাটা সম্ভব হতো। কৃষকদের বড় চ্যালেঞ্জ ধান শুকিয়ে ঘরে তোলা। গতকাল রাত থেকে বৃষ্টি কমে গেছে। আশা করি এক সপ্তাহে এভাবে থাকলেই সব ধান কৃষকরা কেটে নিতে পারবেন।”

শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

আখিনুজ্জামান বলেন, “পানি আজ কমেছে। টানা কয়েকদিন ভারতের দুইটি প্রদেশের বৃষ্টি এবং এই অঞ্চলের বৃষ্টিপাতের ফলেই নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছিল। আমরা বাঁধগুলো নিয়মিত নজরদারিতে রেখেছি।  আমরা জিও ব্যাগ প্রস্তুত রেখেছি।”

ঢাকা/তারিকুল/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বন য নদ ব পৎস ম র নদ র প ন নদ র ব

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’

ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।

এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’

ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।

কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?

কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।

ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।

সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’

ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা

সম্পর্কিত নিবন্ধ