মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু এবং শিশুর প্রতি সহিংসতায় রাষ্ট্রের নির্লিপ্ততা
Published: 21st, May 2025 GMT
মাত্র আট বছরের এক শিশুশিক্ষার্থীকে হেফজখানার শিক্ষক বেদম প্রহার করছেন। কান ধরিয়ে ওঠ–বস করাতে করাতে প্রতি সেকেন্ডে শিশুটির গায়ে একটি করে বেত্রাঘাত করেছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল এই ভিডিও নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে ১৫ মে ‘২৩ সেকেন্ডে মাদ্রাসার শিশুশিক্ষার্থীকে ২১ বার বেত্রাঘাত করলেন শিক্ষক’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়।
ঘটনাটি লক্ষ্মীপুর জেলার এক মাদ্রাসার। এই অমানবিক দৃশ্য যখন সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে, তখনো দেশজুড়ে রেশ কাটেনি লক্ষ্মীপুরে হিফজখানায় আরও এক সাত বছর বয়সী শিশুর মৃত্যুর খবরের। গত মঙ্গলবার প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট সংবাদটির শিরোনাম ছিল, ‘মাদ্রাসার শৌচাগারে গলায় গামছা প্যাঁচানো শিশুর লাশ, শিক্ষক গ্রেপ্তার’।
সেই শিশুর বয়স ছিল মাত্র সাত বছর। যেসব শিশু এখনো মায়ের কোলে থাকার কথা, যারা ঠিকমতো এখনো সবকিছু বুঝতে শেখেনি, সব কথা বলতে জানে না, এমনকি ধর্মও যাদের পাপ ও পুণ্যের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছে, সেই শিশুদের নির্মমভাবে পেটানো হচ্ছে। লক্ষ্মীপুরে শৌচাগারে যে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, সংবাদসূত্রে জানা যাচ্ছে, শিশুটির পরিবার ও সহপাঠীদের দাবি অনুযায়ী পড়া মুখস্থ করতে না পারায় শিশুটিকে মারধর করে সেই মাদ্রাসার শিক্ষক হত্যা করেছেন।
সপ্তাহ দুয়েক আগে ৩০ এপ্রিল প্রথম আলোয় প্রকাশিত আরও একটি খবরের শিরোনাম ছিল, ‘নোয়াখালীতে মাদ্রাসায় শিশুর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা’। জুবায়ের ইবনে জিদান নামের নোয়াখালীর এই শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়েও লক্ষ্মীপুরের নিহত শিক্ষার্থীর মতোই মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি ছিল, শিশুটি মাদ্রাসার একটি শৌচাগারে গিয়ে গলায় ফাঁস দিয়েছে।
অথচ প্রথম আলোকে পরিবার জানিয়েছে, মাদ্রাসার মুহতামিমই শিশুটিকে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন। উপর্যুপরি এই কোমল প্রাণগুলোর চলে যাওয়া একেবারে বিচ্ছিন্ন কিংবা কালেভদ্রে ঘটে যাওয়া ঘটনা নয়। যদি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের এই অবাস্তব দাবিও তর্কের খাতিরে বিবেচনায় নেওয়া হয়, তবু কোন পরিস্থিতিতে একটি শিশু আত্মহত্যা করছে, সেই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর কি তাদের কাছে আছে? কতখানি নির্যাতিত হওয়ার পর একজন শিক্ষার্থী খুন হয়ে যাচ্ছে!
হিফজখানা ও মাদ্রাসাগুলোয় যথাযথ তদারকির ঘাটতি এ ধরনের বহু ঘটনাকে অবাধে ঘটতে দিচ্ছে। উল্টো ছাত্রদের ওপর নির্যাতনকে স্বাভাবিক নিয়ম হিসেবে গ্রহণ করা হয়ে আসছে। বেত দিয়ে পেটানো, শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা নানাভাবে নির্যাতনের নানা ঘটনা প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যম সূত্রে সামনে আসছে। যৌন নির্যাতনের ঘটনাও গণমাধ্যমের শিরোনাম হচ্ছে। কিন্তু এ ব্যাপারে রাষ্ট্রযন্ত্র একধরনের অন্ধদৃষ্টি দিয়ে রেখেছে।
এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য প্রতিকারমূলক কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কোনো সরকারকেই সে অর্থে কখনোই আগ্রহী বলে মনে হয়নি। অথচ শিশুর সুরক্ষা রাষ্ট্রের প্রধানতম কর্তব্যগুলোর একটি। শিশুদের ওপর শারীরিক ও মানসিক সব রকমের নির্যাতন বন্ধে ২০১০ সালের ১৮ জুলাই হাইকোর্টে একটি রিট পিটিশন করে আইন ও সালিশ কেন্দ্র এবং লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)।
এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি এক রায়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক শাস্তিকে অসাংবিধানিক বলে ঘোষণা করে। বলা হয়, শাস্তি প্রদান শিশুর প্রতি ‘নিষ্ঠুর, অমানবিক, অপমানকর আচরণ ও মানবাধিকার পরিপন্থী।’ (রিট পিটিশন নম্বর ৫৬৮৪/২০১০)।
রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ২৫ এপ্রিল ২০১১ তারিখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শারীরিক ও মানসিক শাস্তি প্রদান রহিত করে একটি পরিপত্র জারি করে। এতে স্কুল–কলেজে শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা তুলনামূলকভাবে কমে এলেও পুরোপুরি নির্মূল হয়নি। কিন্তু বেসরকারি মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতন বন্ধে এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। তাই এ–সংক্রান্ত আরও কঠোর আইন প্রণয়ন ও প্রয়োগ জরুরি।
শিশু নির্যাতনের ঘটনাগুলো অন্যান্য আইনে বিচারযোগ্য হলেও এ ব্যাপারেও রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্বিকার দেখা গেছে। কওমি মাদ্রাসাশিক্ষায় সরকারের অর্থায়ন নেই। ঐতিহ্যগতভাবেই এখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। সেই নিয়ন্ত্রণ না থাকার মানে এই নয় যে সরকার সব দায় থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারে।
মনে রাখতে হবে, স্কুলপড়ুয়া প্রতিটি শিশুর মতোই কওমি মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিশুর সুরক্ষা প্রদানের দায়িত্বও রাষ্ট্রের। তেমনি শিক্ষার বাইরে থেকে শিশুর অধিকার নিশ্চিত করাটাও রাষ্ট্রের কর্তব্য। সরকারকে অবশ্যই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও অন্যান্যের সঙ্গে নিয়ে শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে।বাংলাদেশ জাতিসংঘের শিশু অধিকার সনদে অন্যতম স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্র হিসেবে আন্তর্জাতিক আইনে শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করতে আইনগতভাবেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই সনদের ১৯তম অনুচ্ছেদে বলা আছে রাষ্ট্র, পিতা–মাতা বা শিশুর দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য কোনো ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে থাকা অবস্থায় কোনো শিশুকে কোনো প্রকার আঘাত বা নির্মম আচরণের মুখোমুখি করা যাবে না। বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবেই এই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় ব্যর্থ হয়েছে।
মনে রাখতে হবে, স্কুলপড়ুয়া প্রতিটি শিশুর মতোই কওমি মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিশুর সুরক্ষা প্রদানের দায়িত্বও রাষ্ট্রের। তেমনি শিক্ষার বাইরে থেকে শিশুর অধিকার নিশ্চিত করাটাও রাষ্ট্রের কর্তব্য। সরকারকে অবশ্যই এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও অন্যান্যের সঙ্গে নিয়ে শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। অভিভাবকদের সচেতন করতে হবে।
কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থায় নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি এবং বেফাকের মতো শিক্ষা বোর্ডগুলোকে সক্রিয়ভাবে দায়িত্বশীল আচরণ প্রদর্শন করতে হবে। কওমি মাদ্রাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই, ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করতে পারে। যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে শিশুর প্রতি অমানবিক আচরণের অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের জন্য ন্যাশনাল ডেটাবেজ করা প্রয়োজন। যাতে স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা—কোথাও তাঁদের নিয়োগ করা না হয়।
মাদ্রাসায় যে সন্তানকে মা তাঁর কোল থেকে রেখে যান, সে মা তাঁর সন্তান মানুষ হবে, এই আশাতেই রেখে যান; সেই সন্তানের নিথর দেহ কোলে করে নিয়ে যেতে নয়। শিশুর প্রতি যেকোনো প্রকারের সহিংসতা প্রবলভাবেই ধর্মবিরোধী আচরণ।
বর্তমান বিশ্বের খ্যাতিমান ধর্মতাত্ত্বিক জাস্টিস মুফতি ত্বকি উসমানী উপমহাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রখ্যাত আলেম, কওমি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম প্রবাদপুরুষ হজরত থানভি (রহ.
তিনি নিয়ম করেছিলেন, মক্তবে কোনো শিক্ষক শিশুদের আঘাত করতে পারবেন না। কেউ আঘাত করলে তিনি তাঁকে মসজিদের বারান্দায় দাঁড় করিয়ে ওই শিশুর দ্বারা সেই শিক্ষককেই বেত মারাবেন। এর ফলে কেউ কোনো কোমলমতি শিশুকে আঘাতের সাহস করেননি।
রাসুল (সা.) ছিলেন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। অথচ কখনোই তিনি কোনো শিশুর গায়ে হাত দেননি। আনাস (রা.) শৈশবে ১০ বছর তাঁর সাহচর্যে ছিলেন, কখনো তিনি তাঁকে ধমক পর্যন্ত দেননি। বাচ্চাদের প্রসঙ্গে রাসুল (সা.) কতখানি কোমল ছিলেন, এর উদাহরণ হচ্ছে ইমাম বুখারি বর্ণিত এই হাদিস।
উম্মে খালেদ (রা.) নিজেই তাঁর শৈশবের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমার বাবা আমাকে নিয়ে রাসুল (সা.)–এর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। সেদিন আমি একটা হলুদ রঙের জামা পরেছিলাম। আমাকে দেখে তিনি হাসিমাখা মুখে বললেন, “সানাহ সানাহ।” (ইথোপিয়ান ভাষায় সানাহ মানে সুন্দর)। সেই শিশুমেয়েটিকে রাসুল (সা.) এতখানি কাছে টেনে নিলেন যে সে পেছন দিকে থেকে রাসুলের (সা.) কাঁধে ঝাঁপ দিয়ে গলা জড়িয়ে ধরছিল। তার বাবা এটা দেখে তাকে বাধা দিতে গেলে রাসুল (সা.) তাঁর পিতাকে হাতের ইশারায় থামিয়ে দেন। রাসুল (সা.) তখন মদিনা রাষ্ট্রের অধিপতি।
তাই শিশুর প্রতি এই চলমান সহিংসতা অধর্ম ও বেআইনি। শিশুর অধিকার সুরক্ষায় রাষ্ট্রের এই নির্লিপ্ততা দুর্ভাগ্যজনক। অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যে সমাজ ও রাষ্ট্র তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষা প্রদানে ব্যর্থ হয়, সেই রাষ্ট্র কখনো কোনো সূচকেই সফল হতে পারে না।
আরজু আহমাদ লেখক ও এক্টিভিস্ট
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ রহণ করত লক ষ ম প র প রথম আল র স রক ষ ব যবস থ কর ছ ন ঘ ত কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মার্কিন-ইসরায়েলি ত্রাণকেন্দ্রে খাবার নিতে এসে প্রাণ গেছে ৭৪৩ ফিলিস্তিনির
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এবং ইসরায়েল–সমর্থিত সংস্থা গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের আশপাশে ভিড় করা মানুষের ওপর নির্বিচার হামলার অভিযোগ বাড়ছে। সেখানে কয়েক সপ্তাহে ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রায় সাড়ে ৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
মে মাসের শেষ দিক থেকে গাজায় ত্রাণ বিতরণ শুরু করে জিএইচএফ। শনিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, জিএইচএফের কেন্দ্রগুলোতে হামলায় অন্তত ৭৪৩ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪ হাজার ৮৯১ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, যুক্তরাষ্ট্র ও মিসরের দেওয়া যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার জন্য কাতারে প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে আলোচনা চললেও গাজায় ইসরায়েলের হামলা থামেনি। রোববার ভোরেও গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।
জিএইচএফ ইতিমধ্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, সংস্থাটির কর্মীদের পাশাপাশি ইসরায়েলি বাহিনীও ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর গুলি চালিয়েছে।
এই সপ্তাহের শুরুতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে কয়েকজন মার্কিন ভাড়াটে কর্মীর বরাত দিয়ে বলা হয়, জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি ও স্ট্যান গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, সেখানে অস্ত্রে সজ্জিত কর্মীরা যেন যা খুশি তাই করছেন। তাঁদের আচরণে তেমনটাই মনে হয়েছে।আল–জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সংখ্যার বিষয়ে বলেন, মর্মান্তিক বিষয় হলো তাঁরা সবাই ত্রাণ নিতে ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলেন এবং খাবারের প্যাকেটের জন্য অপেক্ষায় করছিলেন।
হানি মাহমুদ গাজা নগরী থেকে সংবাদ সংগ্রহ করছেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের অবরোধে সৃষ্ট চরম সংকটের মধ্যে যখন ফিলিস্তিনিরা পরিবারের সদস্যদের জন্য একটু খাবার সংগ্রহ করতে মরিয়া, ঠিক তখনই ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর হামলা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছে। হিসাব করে খাবার খাচ্ছে। অনেক পরিবারই খাবার খেতে পারছে না। অনেক মা নিজে না খেয়ে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।’
এই সপ্তাহের শুরুতে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের (এপি) এক প্রতিবেদনে কয়েকজন মার্কিন ভাড়াটে কর্মীর বরাত দিয়ে বলা হয়, জিএইচএফের ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোতে সহায়তা নিতে আসা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের ওপর গুলি ও স্ট্যান গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, সেখানে অস্ত্রে সজ্জিত কর্মীরা যেন যা খুশি তাই করছেন। তাঁদের আচরণে তেমনটাই মনে হয়েছে।
আমার সন্তানেরা টানা তিন দিন না খেয়ে ছিল। তাই আমি বাধ্য হয়ে ওই (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলাম।’মজিদ আবু লাবান, জিএইচএফ ত্রাণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত ফিলিস্তিনিজিএইচএফ এপির প্রতিবেদনকে ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছে এবং বলেছে, তাদের কাছে নিজেদের কার্যক্রম স্থলগুলোর নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জুনের শেষ দিকে ট্রাম্প প্রশাসন জিএইচএফের জন্য ৩ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে গিয়ে আহত হওয়া মজিদ আবু লাবান বলেন, ‘আমার সন্তানেরা টানা তিন দিন না খেয়ে ছিল। তাই আমি বাধ্য হয়ে ওই (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গিয়েছিলাম।’
আরও পড়ুনআগামী সপ্তাহেই গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি হতে পারে: ট্রাম্প০৫ জুলাই ২০২৫গাজায় নিহত ২৭গাজায় ২০ মাসের বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে। রোববার ভোরেও গাজাজুড়ে ইসরায়েলের হামলায় ২৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজা নগরীর কাছের এলাকা তুফাতে হামলায় তিন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আল-আহলি আরব হাসপাতাল। দক্ষিণের খান ইউনিসে একটি তাঁবুতে ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় দুজন নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। আগের দিন শনিবার ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৭৮ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে ইসরায়েল।
উত্তরে গাজা সিটির কাছের এলাকা শেখ রাদওয়ানে একটি বাড়িতে ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত এবং বহু মানুষ আহত হয়েছেন। বাস্তুহারা অনেক ফিলিস্তিনি ওই বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুনগাজায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত হামাস০৫ জুলাই ২০২৫