‘১৬ বছর আ. লীগ পিটাইছি, সাহস থাকলে বাইরে বের হ’
Published: 22nd, May 2025 GMT
পছন্দের ব্যক্তিকে সাইকেল গ্যারেজ ইজারা না দেওয়ায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. মোহসীন আলী ফরাজিকে গালিগালাজ ও দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন সোনাডাঙ্গা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হাসপাতালের পরিচালকের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় আসাদের সঙ্গে থাকা নেতাকর্মীরা কক্ষে উপস্থিত অন্য চিকিৎসকদের দিকে তেড়ে যান। এ নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সূত্র জানিয়েছে- এ ঘটনায় শনিবার কলেজ ও হাসপাতাল খুললে কর্মসূচি ঘোষণা দিতে পারেন চিকিৎসকরা।
হাসপাতালে সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা যায়, দুপুর ১২টা ২৯ মিনিটে ৮ থেকে ১০ জন নেতাকর্মীকে নিয়ে পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করেন আসাদুজ্জামান আসাদ। পরিচালকের কক্ষে ডা.
অডিও ক্লিপে আসাদকে বলতে শোনা যায়, এতদিন আওয়ামী লীগের লোকজন কাজ করেছে, এখন আমাদের দিতে হবে। এ সময় পরিচালক কিছু দিন অপেক্ষা করতে বলেন। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন আসাদ। পরিচালককে উদ্দেশ্য করে আসাদ বলেন, ‘আপনার মতো লোক বহু দেখেছি, ১৬ বছর আওয়ামী লীগ পিটাইছি। সাহস থাকলে বাইরে বের হ’ তারপর দেখতেছি’।
এ সময় অন্য চিকিৎসকরা তার কথার প্রতিবাদ করলে আসাদ বলতে থাকেন, ‘সাহস থাকলে বাইরে আয়, এখনই আয়, এরপর দেখাচ্ছি আমি কি করতে পারি না পারি। বাইরে বের হয়ে দেখ, দেখতেছি’।
এ ব্যাপারে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহসীন আলী ফারাজী বলেন, ‘হাসপাতালের সামনে গ্যারেজটি ‘অন্তিকা এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে ভাড়া দেওয়া রয়েছে। জুন মাসে এর মেয়াদ শেষ হবে। কিন্তু এর আগেই তারা আরেকজনকে ভাড়া দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। তাদের বারবার বলা হচ্ছিলো, নির্ধারিত সময়ে দরপত্রে অংশ নেন। কিন্তু তারা কোনো ধরনের কথা শুনতে চাইছিলেন না। এরপরে যা ঘটেছে আমার তিন দশকের চিকিৎসা জীবনে এমন ঘটনার মুখোমুখি হইনি। এসব বলতেও বিব্রত লাগছে।’
তবে আসাদুজ্জামান আসাদ পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘১৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির আহত এক নেতাকে দেখতে গিয়েছিলাম। তখন তত্ত্বাবধায়কের কাছে একটি কথা বলতে গিয়েছিলাম। তার ব্যবহার ভালো ছিল না। তাকে একটু ভালো ব্যবহার করতে বলেছি।’
এর আগে ২ মার্চ আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগের দরপত্রকে কেন্দ্র করে সুন্দরবন গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির জেনারেল ম্যানেজার শাহ আলম মোল্লার কক্ষে ভাঙচুর এবং তাঁকে লাঞ্চিত করেন আসাদুজ্জামান আসাদ। ওইদিনও তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
৭,৫০০ চিকিৎসকের পদোন্নতি হচ্ছে, স্বাচিপ সদস্যরা বাদ
নিয়মিত পদোন্নতি থেকে বেশ কিছু চিকিৎসক বাদ পড়েছেন। পাশাপাশি সুপারনিউমারারি পদেও কয়েক শ চিকিৎসক পদোন্নতি পাননি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, পদোন্নতি না পাওয়া চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। বাস্তবে দলীয় রাজনীতি থেকে মুক্ত হতে পারছে না চিকিৎসা খাত।
আবার পদোন্নতি পেয়ে কাজে যোগ দেওয়ার পর সেই পদোন্নতি বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়। এমন সাতজন চিকিৎসক বুঝতে পারছেন না, তাঁদের পদোন্নতি কেন বাতিল হলো। তাঁরা বলছেন, এটা অন্যায়। মন্ত্রণালয় বলছে, এই পদোন্নতি ভুল ছিল।
রাজনৈতিক বিভাজন দেশের চিকিৎসা খাতকে দুর্বল করেছে। ২০০৯ সাল থেকে গত বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত স্বাস্থ্য খাতে একক প্রাধান্য বিস্তার করেছিল আওয়ামী লীগ–সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)। মহাপরিচালক, অধ্যক্ষ, পরিচালক, তত্ত্বাবধায়ক, প্রকল্প পরিচালকসহ স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন স্বাচিপের সদস্য বা আওয়ামী লীগ–সমর্থিত চিকিৎসকেরা। ছুটি পাওয়া, বিদেশ যাওয়া, গবেষণার ফান্ড পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁরাই এগিয়ে ছিলেন।
ওই ১৫-১৬ বছরে কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন বিএনপি–সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) এবং জামায়াত–সমর্থিত চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরামের (এনডিএফ) সদস্যরা। এ ছাড়া বাম রাজনীতির সমর্থক চিকিৎসকেরা এবং কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন এমন চিকিৎসকেরা ঠিক সময়ে পদোন্নতি, প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা বা স্বীকৃতি পাননি। এটা ছিল অন্যায়। অনেকে মনে করছেন, এখনো একই ধরনের অন্যায় হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে চিকিৎসকদের পদোন্নতি দেওয়া বা বঞ্চিত করা অথবা বৈষম্য করা ঠিক নয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্বাস্থ্যসেবা ও চিকিৎসা শিক্ষা। মূল্য দিতে হয় সাধারণ মানুষকে।
পদোন্নতি পেয়ে কাজে যোগ দেওয়ার পর সেই পদোন্নতি বাতিল করেছে মন্ত্রণালয়। এমন সাতজন চিকিৎসক বুঝতে পারছেন না, তাঁদের পদোন্নতি কেন বাতিল হলো। তাঁরা বলছেন, এটা অন্যায়। মন্ত্রণালয় বলছে, এই পদোন্নতি ভুল ছিল।হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে কিছু ক্ষেত্রে স্থবিরতা দূর করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রায় সাড়ে সাত হাজার চিকিৎসকের সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দিতে শুরু করেছে। যে পদ আছে, তার চেয়ে বেশি পদে পদোন্নতি দেওয়াই সুপারনিউমারারি পদোন্নতি। যেমন মেডিসিন বা সার্জারি বিষয়ে পদ আছে ১০টি। ওই পদে কাজ করছেন ৫ জন। ৫টি পদ খালি। কিন্তু সার্জারি বিষয়ে যোগ্য মানুষ আছেন ১৫ জন। শূন্য ৫ পদসহ বাকি সবাইকে পদোন্নতি দেওয়াই হচ্ছে সুপারনিউমারারি পদোন্নতি।
পদোন্নতি কমিটির সদস্য ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, ৮২টি বিষয়ে সাড়ে সাত হাজার চিকিৎসকে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক পদোন্নতি দেওয়ার নজির নেই।
গত ২৭ অক্টোবর স্বাস্থ্যসচিব মো. সাঈদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পদোন্নতি না পাওয়া কিছু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, অভিযোগগুলো তদন্ত হবে। এ ছাড়া কেউ যদি মনে করেন কাগজপত্র সবকিছু ঠিক থাকার পরও পদোন্নতি হয়নি, তাহলে তিনি আমাদের জানাতে পারেন। এ নিয়ে কাজ এখনো শেষ হয়নি।’
কেন বাদ পড়লেন
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে নতুন কর্মকর্তা বসানো হয়। সরকারি সব মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও সরকারি হাসপাতালের পরিচালক পদ থেকে স্বাচিপের সদস্য বা আওয়ামী লীগ–সমর্থকদের সরিয়ে দেওয়া হয়। সরকারি চাকরিতে থাকা আওয়ামী লীগ–সমর্থিত বা স্বাচিবের সদস্য চিকিৎসকদের বড় বড় শহর থেকে বদলি করে পাঠানো হয় উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে। অনেক চিকিৎসককে ওএসডি করা হয়। কয়েকজনকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলে (বিএমডিসি) নিবন্ধিত চিকিৎসক ১ লাখ ৩৪ হাজার। এর মধ্যে কিছু চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে, কিছু চিকিৎসক বিদেশ থাকেন। সরকারি চাকরিতে আছেন ৩৪ হাজার চিকিৎসক। একটি সূত্র জানিয়েছে, স্বাচিপের সদস্য প্রায় ১৩ হাজার। এঁদের প্রায় ৪০ শতাংশ সরকারি চাকরিতে আছেন। স্বাচিপের সদস্যদের নাম–পরিচয় স্বাচিপের ওয়েবসাইটে ছিল। এখন সেই ওয়েবসাইট বন্ধ।
পদোন্নতি না পাওয়া কিছু চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, অভিযোগগুলো তদন্ত হবে। এ ছাড়া কেউ যদি মনে করেন কাগজপত্র সবকিছু ঠিক থাকার পরও পদোন্নতি হয়নি, তাহলে তিনি আমাদের জানাতে পারেন। এ নিয়ে কাজ এখনো শেষ হয়নি।স্বাস্থ্যসচিব মো. সাঈদুর রহমানওই তালিকায় নাম থাকা একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, সরকার পরিবর্তনের পর তাঁকে ঢাকা থেকে একটি জেলায় বদলি করা হয়। এর মধ্যে সরকার শূন্য পদে পদোন্নতি দেয়। ওই চিকিৎসক অভিযোগ করেছেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত দু-তিন মাসে শূন্য পদে নিয়মিত পদোন্নতি দিয়েছে ৭৬৮ জনকে। এই সময়ে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন ১৩০ জন। তাঁদের প্রায় সবার নাম ছিল স্বাচিপের তালিকায়।
অন্যদিকে মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে প্রায় ৭০টি বিষয়ে সুপারনিউমারারি পদে পদোন্নতি দেওয়া শুরু করেছে। গাইনি সহকারী পদে পদোন্নতি দিয়েছে ৫৯২ জনকে। এ ক্ষেত্রে ২৮৫ জনকে বঞ্চিত করা হয়েছে। অর্থাৎ যোগ্যতা থাকলেও পদোন্নতি হয়নি। এভাবে কলোরেক্টাল সার্জারি, নাক-কান-গলা, নেফ্রোলজি, থোরাসিক সার্জারি, দন্তরোগ বিষয়ে পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েছেন অন্তত ১২ জন চিকিৎসক।
সাড়ে ৭ হাজার চিকিৎসককে পদোন্নতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। একসঙ্গে এত বিপুলসংখ্যক পদোন্নতি দেওয়ার নজির নেইঅধ্যাপক আবু জাফর, মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরড্যাবের সদস্য ৩ হাজার ১৪৯ জন। এনডিএফের সদস্য ৬ হাজার। ড্যাব ও এনডিএফের সদস্যদের পদোন্নতিতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না বলে চিকিৎসকদের সূত্রগুলো জানিয়েছে। তবে একটি অভিযোগ উঠেছে যে ড্যাব ও এনডিএফের নেতা-কর্মীদের কেউ কেউ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে চাপ দিয়ে স্বাচিপের সদস্যদের পদোন্নতিতে বাধা দিয়েছেন। মন্ত্রণালয়ের অন্তত তিনজন কর্মকর্তা বলেছেন, পদোন্নতির তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে ও তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে চিকিৎসক সংগঠনগুলো বিশেষ করে সোসাইটিগুলো (যেমন মেডিসিন সোসাইটি, ওজিএসবি) সক্রিয় ছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দু-একজন কর্মকর্তাও এ বিষয়ে ভূমিকা রাখছেন।
জানতে চাইলে ড্যাবের সভাপতি অধ্যাপক হারুন অর রশিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তালিকা দিয়ে তার ভিত্তিতে পদোন্নতি থেকে কাউকে বাদ দিতে বলিনি। একসঙ্গে অনেক পদোন্নতি হচ্ছে, কিছু ভুল-ত্রুটি থাকলে নিশ্চয়ই মন্ত্রণালয় তা শুধরে নেবে।’
এনডিএফের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জানান, তাঁদের সদস্যদের কারও কারও পদোন্নতি হচ্ছে না এমন অভিযোগও তিনি পাচ্ছেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমার তো মনে হয় মন্ত্রণালয়ের কাজগুলো ঠিক হচ্ছে। আমাদের পক্ষ থেকে পদোন্নতিতে কোনো ধরনের প্রভাব রাখার চেষ্টা করা হয়নি, হচ্ছে না।’
লজ্জায় কোথাও যেতে পারছি না
পদোন্নতি না পাওয়া চিকিৎসকদের কেউ কেউ প্রথম আলোতে ফোন করে অভিযোগ করছেন যে অন্যায় করে পদোন্নতি থেকে তাঁদের বঞ্চিত করা হয়েছে। অনেক চিকিৎসক নিয়মিতভাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আসছেন, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী এবং স্বাস্থ্যসচিবের কার্যালয়ে ভিড় করছেন। তাঁরা মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ ব্যক্তিদের অনুরোধ জানাচ্ছেন পদোন্নতি দিতে। অনেকে সুপারিশ নিয়ে আসছেন, কেউ আসছেন প্রভাবশালী ব্যক্তি সঙ্গে নিয়ে।
গত ২৭ অক্টোবর বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে দুজন এবং সিলেট থেকে একজন নারী চিকিৎসক এসেছিলেন স্বাস্থ্য উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার জন্য। তাঁদের একজন প্রথম আলোকে বলেন, চাকরিজীবনে তিনি ৯ বছর কাজ করেছেন উপজেলা হাসপাতালে। ২০১৯ সালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যোগ দেওয়ার সময় তাঁকে বাধা দেওয়া হয়েছিল এই বলে যে তিনি স্বাচিপের সদস্য নন বা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। এখন তাঁকে পদোন্নতি দেওয়া হয়নি এই অভিযোগে যে তিনি স্বাচিপের সদস্য। ওই নারী চিকিৎসক বলেন, ‘আমার ছাত্রীকে পদোন্নতি দিয়ে আমার ওপরে বসানো হয়েছে। আমি লজ্জায় কলেজে যেতে পারছি না, বাসাতেও মুখ দেখাতে পারছি না।’
স্বাচিপের তালিকায় নাম থাকা ও পদোন্নতি না পাওয়া একজন চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে অনেক চিকিৎসককে জোর করে স্বাচিপের সদস্য করা হয়েছিল। কেউ কেউ হয়তো জানেনই না স্বাচিপের সদস্য তালিকায় বা ওয়েবসাইটে তাঁর নাম আছে বা ছিল।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম প্রথম আলোকে বলেন, স্বাচিপের সদস্য নন এমন দাবি করা চিকিৎসক ৫০ হাজার টাকা চাঁদা হিসেবে স্বাচিপকে দিয়েছেন, এমন প্রমাণও পাওয়া গেছে।
ওই নারী চিকিৎসক বলেন, ‘আমার ছাত্রীকে পদোন্নতি দিয়ে আমার ওপরে বসানো হয়েছে। আমি লজ্জায় কলেজে যেতে পারছি না, বাসাতেও মুখ দেখাতে পারছি না।’বিড়ম্বনায় তাঁরা সাতজন
গত ২২ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গাইনি অ্যান্ড অবস্ বিষয়ে ৫৯৯ জন চিকিৎসককে সুপারনিউমারারি সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর এক দিন পর সাতজনের পদোন্নতি বাতিল করে নতুন প্রজ্ঞাপন দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু কেন এই সাতজনের পদোন্নতি বাতিল করা হলো, তার কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি মন্ত্রণালয়।
পদোন্নতি বাতিল হওয়া একজন চিকিৎসক ও দুজন চিকিৎসকের অভিভাবকের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়েছে। পদোন্নতি বাতিল হওয়ায় এসব চিকিৎসক বিড়ম্বনায় পড়েছেন। তাঁদের একজন বলেন, এই চিকিৎসকেরা নিজেরা পদোন্নতির জন্য আবেদন করেননি। তবে তাঁরা উপযুক্ত। পদোন্নতি দেওয়ার আগে তাঁদের সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কথা হয়নি। কিন্তু পদোন্নতি বাতিল হওয়ায় তাঁরা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছেন। কেউ কেউ তাঁদের নিয়ে হাসাহাসি করছেন।
স্বাস্থ্যসচিব মো. সাঈদুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ওই সাতজনকে ভুল করে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল।