জুলাই মাসে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে ঢাকায় গুলিবিদ্ধ হন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার মুরাদ। তাঁকে সুস্থ করে তুলতে প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ব্যাংককের ভেজথানি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বর্তমানে টুকটাক কথা বললেও শারীরিক সক্ষমতা ফিরে আসেনি মুরাদের। এরজন্য আরও ছয় থেকে আট মাস সময় লাগবে জানিয়েছেন ব্যাংককের ওই চিকিৎসক। 
স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাট্টারা ক্রাসান্টের তত্ত্ববধানে মুরাদের চিকিৎসা চলছে। তিনি স্বাভাবিকভাকে খাবার খেতে পারছেন। অল্পস্বল্প কথাও বলছেন। তবে নিজ পায়ে উঠে দাঁড়াতে আরও বছরখানেক সময় লাগতে পারে। 
মুরাদের বাবা আমিনুল ইসলাম জানান, মুরাদের স্পাইনাল কডে সমস্যা আছে। সেরে উঠতে ৬ থেকে ৮ মাসের বেশি সময় লাগবে। প্রতিদিনই একটু একটু করে তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। নার্সদের সহায়তায় খাবার খাচ্ছেন। 
ঈশ্বরদী পৌর এলাকার পিয়ারাখালি জামতলা এলাকার আমিনুল ইসলামের ছেলে মুরাদ রাজধানীর একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁয় কর্মরত ছিলেন। ১৮ জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে কর্মস্থল থেকে বাসায় ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন। গলা ও স্পাইনাল কড ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাঁকে ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। ৪ মাস অচেতন অবস্থায় থাকার পর হাসপাতালের আইসিইউ থেকে তাঁকে পোস্ট অপারেটিভের বেডে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসা চলাকালে শরীর থেকে দুটি গুলি বের করার পর তিনি প্যারালাইজড হয়ে যান। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবীর কুমার দাশ সমকাল প্রতিবেদককে জানান, সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি আমার নজরে এসেছে। এরপর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়। গত বছর ২০ নভেম্বর সরকারি ব্যবস্থাপনায় তাঁকে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের ভেজথানি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পাট্টারা ক্রাসান্টের তত্ত্ববধানে আছেন মুরাদ।
ঢাকার নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের চিকিৎসক অধ্যাপক রেজাউল করিম জানান, গুলিবিদ্ধ মুরাদের শরীর থেকে দুটি গুলি বের করার পর স্পাইনাল কড অকেজো হয়ে পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়ে যায়। দ্রুত তাঁকে ব্যাংককে নেওয়া হয়। মুরাদকে সুস্থ করে তুলতে আপ্রাণ শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ভেজথানি হাসপাতালের চিকিৎসকরা। 
মুরাদের স্ত্রী মহুয়া মার্জিয়া রানী সমকালকে বলেন, ‘সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলেন মুরাদ। তিনি অসুস্থ হয়ে পড়ায় দুই ছেলেমেয়ের পড়ালেখা আর সংসারের খরচ জোগাতে হিমশিম অবস্থা। মুরাদ যেন দ্রুত প্রাণে বেঁচে ফিরতে পারেন সেই আশাতেই রয়েছি।’

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ল ই অভ য ত থ ন সময় ল

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা চললেও জোরদার হামলা অব্যাহত রেখেছে ইসরায়েল। চিকিৎসা সূত্র ও স্থানীয় প্রতিবেদন অনুসারে, রবিবার (৬ জুলাই) গাজা উপত্যকায় ধারাবাহিক ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ কমপক্ষে ৮১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর আনাদোলু এজেন্সির।

একটি চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, গাজা সিটিতে, শেখ রাদওয়ান এবং আল-নাসর পাড়ায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোকে আশ্রয় দেওয়া দুটি বাড়িতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের বোমা হামলায় ২৫ জন নিহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, গভীর রাতে পরিবারগুলো যখন ঘুমে ছিল, তখন বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। নিহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে রয়েছে বেশ কয়েকজন।

আরো পড়ুন:

গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠালেন জবি শিক্ষার্থীরা

গাজায় যুদ্ধ বিরতির আলোচনায় প্রতিনিধি পাঠাবে ইসরায়েল 

আল-আওদা হাসপাতালের এক বিবৃতি অনুসারে, মধ্য গাজায় একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গুলি চালিয়ে চার ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এ ঘটনায় আরো ২৫ জন আহত হয়েছেন।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গাজা সিটি এবং মধ্য গাজার নুসাইরাত শরণার্থী শিবিরে দুটি বেসামরিক সমাবেশে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমানের হামলায় ছয়জন নিহত এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

উত্তর গাজা সিটির আল-সাফতাউই পাড়ায় একটি বেসামরিক গাড়িতেও একটি ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালিয়ে তিন ভাইকে হত্যা করেছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, শেখ রাদওয়ানে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের আশ্রয়কেন্দ্রে আরেকটি ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিনজন নিহত এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

পশ্চিম গাজা সিটিতে, শাতি শরণার্থী শিবিরের একটি স্কুলে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশুসহ সাতজন নিহত হয়েছেন বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

গাজা সিটির অন্যত্র, আল-তুফাহ পাড়ার একটি আবাসিক বাড়িতে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে দুজন নিহত এবং আরো অনেকে আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিপজ্জনক নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসা দল তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেনি।

উত্তর গাজা সিটিতে একটি গাড়িতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় তিনজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

আল-আহলি ব্যাপটিস্ট হাসপাতালের একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, রাতে গাজা সিটির আল-দারাজ পাড়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় একই পরিবারের তিনজন নিহত এবং আরো কয়েকজন আহত হয়েছেন।

দক্ষিণ গাজায়, খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি এলাকায় বাস্তুচ্যুত বেসামরিক নাগরিকদের জন্য তৈরি অস্থায়ী তাঁবুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় শিশু ও একজন গর্ভবতী নারীসহ কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন, নাসের ও কুয়েত ফিল্ড হাসপাতালের মেডিকেল টিম এ তথ্য জানিয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, খান ইউনিসের আল-আলবানি মসজিদের কাছে তাঁবুতে আরেকটি ড্রোন হামলার পর ধ্বংসস্তূপ থেকে তিন শিশুসহ আরো চার জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

ইসরায়েলি বাহিনী রাতভর পূর্ব গাজা শহর এবং ছিটমহলের উত্তর অংশে আবাসিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোতে বোমাবর্ষণ করেছে, বাসিন্দারা সারা রাত ধরে ক্রমাগত বিস্ফোরণের খবর দিয়েছে।

মধ্য গাজায়, দেইর আল-বালাহ উপকূলে কাজ করার সময় ইসরায়েলি গোলাবর্ষণে একজন ফিলিস্তিনি জেলে আহত হয়েছেন।

মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় একই পরিবারের আটজন নিহত হয়েছেন।

আরেকটি হামলায়, একই শরণার্থী শিবিরে তিনজন নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারের অভিযান এখনও চলছে।

আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরায়েল গাজায় নির্বিচার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান সামরিক অভিযানে ৫৭ হাজার ৪০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরো ৮১ ফিলিস্তিনি নিহত