জনপ্রিয় থ্রিলার লেখক ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ মারা গেছেন
Published: 10th, June 2025 GMT
ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক, গোয়েন্দা থ্রিলার লেখক ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর।
ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের মুখপাত্র জনাথন লয়েড এর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা ও দ্য গর্ডিয়ান জানায়, ফোরসাইথ সোমবার (৯ জুন) বাকিংহামশায়ারের জর্ডানস গ্রামে নিজ বাড়িতে মারা যান।
জনাথন লয়েড বলেন, “আমরা বিশ্বের সেরা থ্রিলার লেখকদের একজনকে হারালাম। ‘দ্য ওডেসা ফাইল’ এবং ‘দ্য ডগস অব ওয়ার’-এর মতো ২৫টিরও বেশি বই (যার অধিকাংশ বই থ্রিলার) লিখেছেন তিনি, যা বিশ্বজুড়ে ৭৫ মিলিয়নেরও বেশি বিক্রি হয়েছে।”
আরো পড়ুন:
আসছে অরুন্ধতী রায়ের নতুন বই ‘মাদার মেরি কামস টু মি’
নোবেলজয়ী লেখক হান ক্যাং এর সাহিত্য নিয়ে কালির বৈঠক
ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ সর্বাধিক বিক্রিত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক। ফোরসাইথ একসময় সংবাদ প্রতিবেদক এবং যুক্তরাজ্যের গোয়েন্দা সংস্থা এমআই সিক্সের তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করেছেন। পরে তিনি ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকেল’-এর মতো বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস রচনা করেন।
ফ্রেডেরিক ফোরসাইথের প্রকাশক বিল স্কট-কের বলেন, “লক্ষাধিক পাঠকের হৃদয়ে আজো অমলিন ফ্রেডির থ্রিলারগুলো। এই ধারাকে তিনি নতুন সংজ্ঞা দিয়েছেন, যা সমকালীন লেখকদের জন্য অনুপ্রেরণা।”
কেন তিনি লিখতেন
ঋণমুক্ত হওয়ার জন্য উপন্যাস লেখা শুরু করেছিলেন ফোরসাইথ। তখন তার বয়স ছিল ত্রিশের কোঠায়। পরে তার লেখা বইয়ের ৭ কোটি ৫০ লাখের বেশি কপি বিক্রি হয়।
২০১৫ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে ফোরসাইথ লিখেছিলেন, ‘দ্রুত অর্থ উপার্জনের অনেক উপায় আছে। কিন্তু সাধারণ তালিকায় উপন্যাস লেখার অবস্থান ব্যাংক ডাকাতির চেয়েও নিচে।’
প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি
তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকাল’ (১৯৭১) লিখেই খ্যাতি অর্জন করেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি অর্থাভাবে, ঋণে ডুবে, বাসহীন, গাড়িহীন-কিছুই ছিল না। ভেবেছিলাম, এই সংকট থেকে কীভাবে বের হবো? তখনই সবচেয়ে পাগলাটে সমাধান মাথায় এলো-একটি উপন্যাস লিখব।”
এই উপন্যাসটি ১৯৬৩ সালের পটভূমিতে লেখা। যেখানে একজন ইংরেজকে ফ্রান্সের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চার্লস দ্য গলকে হত্যার জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়। এটি একটি কাল্পনিক গল্প। ফোরসাইথ মাত্র ৩৫ দিনে দ্য ডে অব দ্য জ্যাকাল’ উপন্যাসটি লিখেছেন।
১৯৭১ সালে উপন্যাসটি প্রকাশের পরপরই ব্যাপক সাফল্য পান তিনি। পরবর্তী সময়ে এ গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়। এর মধ্য দিয়েই ভেনেজুয়েলার বিপ্লবী ইলিচ রামিরেজ সানচেজ ‘কার্লোস দ্য জ্যাকাল’ উপাধি পান।
তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্য ডে অব দ্য জ্যাকাল’ (১৯৭১) লিখেই খ্যাতি অর্জন করেন
এরপর ফোরসাইথ একের পর এক সর্বাধিক বিত্রিত উপন্যাস লিখেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘দ্য ওডেসা ফাইল’, ‘দ্য ডগস অব ওয়ার’। ২০১৮ সালে তার ১৮তম উপন্যাস ‘দ্য ফক্স’ প্রকাশিত হয়।
জন্ম ও কর্মজীবন
১৯৩৮ সালে কেন্টে জন্মগ্রহণ করেন। ফোরসাইথ বিমানবাহিনীর পাইলট হিসেবে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। বিভিন্ন ভাষায় তার অসাধারণ পারদর্শিতা ছিল। তিনি ফরাসি, জার্মান, স্প্যানিশ ও রুশ ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। ভাষার ওপর দক্ষতা থাকার কারণে ১৯৬১ সালে তিনি বার্তা সংস্থা রয়টার্সে যোগ দেন। স্নায়ুযুদ্ধ চলাকালে তিনি রয়টার্সের হয়ে প্যারিস ও বার্লিনে নিয়োজিত ছিলেন।
ফোরসাইথ রয়টার্স ছেড়ে বিবিসিতে যোগ দেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে অল্প সময়ের মধ্যেই হতাশ হয়ে পড়েন। তার দাবি, নাইজেরিয়া নিয়ে সঠিকভাবে সংবাদ পরিবেশন করতে ব্যর্থ হয়েছে বিবিসি। তার মতে, বিবিসির প্রতিবেদনে আফ্রিকা সম্পর্কে ব্রিটিশ সরকারের উপনিবেশ–পরবর্তী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন দেখা গেছে।
জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ রাজনীতিতে মনোনিবেশ করেছিলেন। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নবিরোধী সংবাদপত্র ডেইলি এক্সপ্রেসে কলাম লিখতেন।
১৯৮৮ সালে ক্যারোল কানিংহ্যামের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর ফ্রেডেরিক ফোরসাইথ ১৯৯৪ সালে স্যান্ডি মলয়কে বিয়ে করেন।
সূত্র: আল জাজিরা, গার্ডিয়ান
ঢাকা/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব শ বস হ ত য অব দ য জ য ক ল উপন য স ল খ প রক শ
এছাড়াও পড়ুন:
আসামির কাঠগড়ায় সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের ৪৫ মিনিট
সকালে কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি প্রিজন ভ্যানে করে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে আদালতে আনা হয়। সকাল ৯টার দিকে তাঁকে রাখা হয় ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের হাজতখানায়। এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে নয়টার আগে হাজতখানার ভেতর থেকে এ বি এম খায়রুল হককে বের করা হয়। এ সময় তাঁর মাথায় ছিল পুলিশের হেলমেট, বুকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট।
হাজতখানার ভেতর থেকে হাঁটিয়ে আদালতের ভেতরের একটি সরু রাস্তা দিয়ে খায়রুল হককে নিচতলায় সিঁড়ির সামনে আনা হয়। পরে দুজন পুলিশ কনস্টেবল সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের হাত ধরে রাখেন। তিনি হেঁটে হেঁটে নিচতলা থেকে দোতলায় ওঠেন। পরে দোতলা থেকে আবার হেঁটে হেঁটে তিনতলায় ওঠেন। পরে তাঁকে নেওয়া হয় আসামির কাঠগড়ায়। তখন সময় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট। নিজের দুই হাত পেছনে রেখে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। তখনো বিচারক আদালতকক্ষে আসেননি। তবে রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলিরা আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলেন। তখন দেখা যায়, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মাথা উঁচু করে সামনের দিকে তাকাতে থাকেন। কিছুক্ষণ দেখার পর আবার মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকেন।
সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটের দিকে আদালতকক্ষে আসেন ঢাকার সিএমএম আদালতের অ্যাডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (এসিএমএম) মো. ছানাউল্লাহ। এ সময় একজন পুলিশ কর্মকর্তা এ বি এম খায়রুল হকের নাম ধরে ডাকেন।
তখন রায় জালিয়াতির অভিযোগে করা শাহবাগ থানার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) খালেক মিয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। এসআই খালেক মিয়া আদালতকে বলেন, ‘মাননীয় আদালত, ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায় বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে একটি সংক্ষিপ্ত রায় দেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। সেই সংক্ষিপ্ত রায়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক মতপ্রকাশ করেন যে পরবর্তী ১০ম ও ১১তম সংসদ নির্বাচন দুটি সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া যাবে না বলেও সংবিধান সংশোধনের জন্য মত দেন। ওই সংক্ষিপ্ত আদেশটি সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত আদেশের পক্ষে বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি), সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) ও সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি) মত দেন। তবে আপিল বিভাগের বিচারপতি আব্দুল ওয়াহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন। অর্থাৎ আপিল বিভাগের এই তিন বিচারপতি ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ মর্মে ঘোষণার বিপক্ষে মত দেন।’
প্রিজন ভ্যানে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। আজ বুধবার ঢাকার আদালত এলাকায়