যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ১ হাজার ৩০০ জনের বেশি কর্মীকে ছাঁটাই করা শুরু করেছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন। শনিবার (১২ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, কূটনৈতিক খাতে ‘গঠনমূলক সংস্কার’ আনার অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র দপ্তরে বড় ধরনের ছাঁটাই শুরু করেছে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন। স্থানীয় সময় শুক্রবার (১১ জুলাই) থেকে এই প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে। 

সমালোচকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ বিদেশে মার্কিন স্বার্থ রক্ষা এবং প্রচারের মার্কিন ক্ষমতাকে দুর্বল করবে।

আরো পড়ুন:

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা চলবে

টেক্সাসে বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১২০, নিখোঁজ ১৭১

পররাষ্ট্র দপ্তরের জারি করা এক নোটিশে জানানো হয়, মোট ১ হাজার ৩৫৩ জনকে ছাঁটাই করা হচ্ছে, যার মধ্যে ১ হাজার ১০৭ জন সিভিল সার্ভিস এবং ২৪৬ জন ফরেন সার্ভিস অফিসার।

পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই ছাঁটাই হবে ধাপে ধাপে, যেখানে স্বেচ্ছা অবসানসহ প্রায় ৩ হাজার কর্মীকে বিদায় জানানো হবে। যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে মোট ১৮ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই পদক্ষেপ তারই অংশ।

রয়টার্স বলছে, এই পদক্ষেপ এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন ওয়াশিংটন বিশ্ব মঞ্চে একাধিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে: ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধ, প্রায় দুই বছর ধরে গাজা সংঘাত এবং ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার কারণে মধ্যপ্রাচ্য সংকট।

ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের কাছে ট্রাম্প প্রশাসনের পাঠানো পাঁচ পৃষ্ঠার একটি চিঠিতে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় শুক্রবার বিকেল ৫টা থেকে তারা পররাষ্ট্র ভবন ও তাদের ইমেল ঠিকানায় প্রবেশাধিকার হারাবেন।

 

ছাঁটাই হওয়া কর্মীদের জন্য ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশেষ অফিস খোলা হয়েছে, যেখানে তাদের অফিসিয়াল ব্যাজ, ল্যাপটপ, টেলিফোন ও অন্যান্য দপ্তরের সম্পদ জমা দিতে হচ্ছে। এসময় কর্মীদের অনেককেই সহকর্মীদের জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে বিদায় নিতে দেখা গেছে।

ট্রাম্প তার ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি নিশ্চিত করার জন্য যে পুনর্গঠন চেয়েছেন, তার প্রথম ধাপ হলো এই পদক্ষেপ। তবে কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক কর্মকর্তাদের মতে, এই পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক অবস্থানকে দুর্বল করে তুলতে পারে। বিশেষ করে চীন ও রাশিয়ার মতো প্রতিপক্ষ যখন আগ্রাসী কূটনীতির মাধ্যমে বিশ্বমঞ্চে নিজেদের অবস্থান আরো জোরদার করছে।

ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট সিনেটর টিম কেইন কড়া প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “এটি একটি হাস্যকর সিদ্ধান্ত এবং এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন চীন বিশ্বজুড়ে সামরিক ও পরিবহন ঘাঁটি স্থাপন করছে, রাশিয়া সার্বভৌম রাষ্ট্রের ওপর বর্বর হামলা চালাচ্ছে, আর মধ্যপ্রাচ্য একের পর এক সংকটে জর্জরিত। এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্ত শুধু দুর্ভাগ্যজনকই নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ।”

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই পুনর্গঠন পরিকল্পনার অনুমোদন দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। দপ্তরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, কাজের ধরন ও কূটনৈতিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এতে সরকারি অর্থের কতটা সাশ্রয় হবে, সে সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব দিতে পারেনি প্রশাসন।

ট্রাম্প ফেব্রুয়ারিতে রুবিওকে প্রেসিডেন্টের পররাষ্ট্র নীতি ‘বিশ্বস্ততার সঙ্গে’ বাস্তবায়িত হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য পররাষ্ট্র পরিষেবা পুনর্গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ট্রাম্প জানান, তিনি যেসব আমলাকে বিশ্বাসঘাতক বলে মনে করেন তাদের বরখাস্ত করে ‘রাষ্ট্রকে পরিষ্কার’ করবেন।

এই রদবদল ট্রাম্পের ফেডারেল আমলাতন্ত্রকে সংকুচিত করার এবং করদাতাদের অর্থের অপচয় কমানোর এক অভূতপূর্ব প্রচেষ্টার অংশ। এর আগে ট্রাম্প প্রশাসন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল এইড, যা বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য কাজ করে তা ভেঙে দিয়েছে এবং এটিকে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অধীনে গুটিয়ে এনেছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পুনর্গঠনটি মূলত ১ জুলাইয়ের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল কিন্তু চলমান মামলা-মোকদ্দমার মধ্যে পরিকল্পনা অনুযায়ী এগোতে পারেনি। কারণ, পররাষ্ট্র দপ্তর মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের ট্রাম্প প্রশাসনের ব্যাপক কর্মী ছাঁটাই বন্ধ করার বিচারিক আদেশের বিষয়ে বিবেচনা করার জন্য অপেক্ষা করছিল।

মঙ্গলবার, মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য চাকরি ছাঁটাই ও অসংখ্য সংস্থার আকার পরিবর্তনের পথ পরিষ্কার করে দেয়।

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ম র ক ন পরর ষ ট র য ক তর ষ ট র এই পদক ষ প কর ম দ র র জন য ক টন ত

এছাড়াও পড়ুন:

চব্বিশের বাংলায় চাঁদাবাজ ও খুনিদের ঠাঁই নেই: প্রিন্সিপাল মোসাদ্দে

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়ামের অন্যতম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেছেন, দেশব্যাপী খুন, ধর্ষণ, লুটতরাজ ও চাঁদাবাজি নিয়ে একটি দলের নাম বারবার উঠে আসছে। ধরা খেলে বহিষ্কার ছাড়া অপরাধের বিরুদ্ধে তারা কার্যত সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। বিএনপি দলীয় চাঁদাবাজ ও খুনীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। মিটফোর্ডের নারকীর, পৈশাচিক হামলা আইয়ামে জাহেলিয়াতকেও হার মানিয়েছে। চব্বিশের বাংলায় কোনো চাঁদাবাজ, ধর্ষক ও খুনীর ঠাঁই হবে না।

শনিবার (১২ জুলাই) বিকা‌লে দেশব্যাপী চলমান ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, সহিংসতা ও সোহাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী বলেন, ‘‘সব রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাইলেও বিএনপির বিরোধিতা আমাদের ভাবিয়ে তুলছে। স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করতে চাই- পিআর পদ্ধতিতেই আগামী নির্বাচন দিতে হবে।’’

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা ক্ষমতায় যাননি। আপনাদেরকে ক্ষমতায় পাঠানো হয়েছে। দেশের ১৮ কোটি মানুষ আপনাদের পাশে থাকলেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আপনারা বারবার ব্যর্থতার প্রমাণ দিয়েছেন। কঠোর হস্তে চাঁদাবাজ দমন করুন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড ও প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন দেশের জনগণ বরদাশত করবে না।’’

মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘‘পুরান ঢাকার এক ভাঙারি ব্যবসায়ী সোহাগের কাছে চাঁদা না পেয়ে তাকে যুবদলের সন্ত্রাসীরা পাথর মেরে হত্যা করেছে। আমরা এ জঘন্য ও বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাই।’’

মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ বলেন, ‘‘বিএনপি সারাদেশে যে অরাজকতা শুরু করেছে, তা সহ্য করার মতো নয়। আগামী নির্বাচনে সন্ত্রাসী দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ ইমতিয়াজ আলমের সভাপতিত্বে সমা‌বে‌শে বক্তব্য রাখেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি প্রিন্সিপাল মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহ ইফতেখার তারিক, আতিকুর রহমান মুজাহিদ, মাওলানা রেজাউল করীম আবরার, মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ আবুল কাশেম, মাওলানা আরিফুল ইসলাম, নুরুজ্জামান সরকার, কেএম শরীয়াতুল্লাহ, মুফতি ফরিদুল ইসলাম, হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, হাফেজ শাহাদাত হোসাইন প্রধানীয়া প্রমুখ।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন// 

সম্পর্কিত নিবন্ধ