ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ায় ভৈরব থানায় ওসির জন্য শাড়ি–চুড়ি নিয়ে এলেন জনতা
Published: 2nd, August 2025 GMT
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে থানায় বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় কয়েক শ জনতা। তাঁরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) জন্য শাড়ি ও চুরি নিয়ে আসেন। আজ শনিবার বিকেল পাঁচটার দিকে এ বিক্ষোভ হয়। ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশকে তিন দিনের আলটিমেটাম দেন তাঁরা। এ সময় থানার ওসি খন্দকার ফুয়াদ (রুহানী) ও জ্যেষ্ঠ উপপরিদর্শক (এসআই) এমদাদুর রহমান বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন।
বিক্ষুব্ধ ব্যক্তিরা বলেন, ভৈরব শহরের কোনো সড়ক এখন আর নিরাপদ নেই। কেবল রাতে নয়, দিনেও লোকজন ছিনতাইকারীর কবলে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন।
ছিনতাইকারীরা কেবল মুঠোফোন ও টাকা নিয়ে শান্ত হচ্ছে না, সব দিয়ে দেওয়ার পরও ছুরিকাঘাত করে পথচারীদের রক্তাক্ত জখম করছে। তখন আক্রান্ত ব্যক্তিদের অসহায়ত্ববরণ করতে হয়। শত চেষ্টা করেও ছিনতাই কমানো যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যর্থতা পদে পদে দৃশ্যমান হচ্ছে। এ অবস্থায় ভৈরবে স্বাভাবিক জীবনযাপন প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। পুলিশ সক্রিয় থাকলে পরিস্থিতি এতটা নাজুক হতো না। পুলিশের ক্রমাগত ব্যর্থতার জন্যই উপহার হিসেবে ওসির জন্য শাড়ি ও চুড়ি নিয়ে আসা হয়েছে। ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যর্থ হলে, বিশেষ করে ওসি যেন শাড়ি–চুড়ি পরে অফিস করেন।
তিন দিনের ভেতর ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার ও পুরোপুরি ছিনতাই বন্ধ করতে না পারলে পুলিশের বিরুদ্ধে কঠিন কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকার ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। থানায় বিক্ষোভ করার আগে ঢাকা–সিলেট মহাসড়কের মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভাস্কর্য ‘দুর্জয় ভৈরব’ চত্বরে ছাত্র ও যুবসমাজের ব্যানারে সভা হয়। সভায় বক্তব্য দেন মনিরুজ্জামান, আজহারুল ইসলাম, নূরে আলম, শাহরিয়ার মোস্তুফা, মো.
ওই সভায় বক্তারা বলেন, আগে ভৈরবের ১ নম্বর সমস্যা ছিল মাদক। ভৈরবে মাদক কমেনি, বেড়েছে। তারপরও এখন ছিনতাইকে ভৈরবের ১ নম্বর সমস্যা ধরা হয়। ছিনতাই ইস্যুতে ভৈরবের ঘরে ঘরে আতঙ্ক। সমস্যা সমাধানে নাগরিক সমাজের নানা উদ্যোগেও প্রত্যাশিত ফল আসছে না। এ ক্ষেত্রে পুলিশও ব্যর্থ। ফলে দিন দিন ছিনতাই না কমে, বরং বাড়ছে। আগে রাতে ছিনতাই হতো, এখন দিনেও হচ্ছে। ভৈরবের বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী বাড়ির লোকজনের প্রত্যক্ষ শেল্টারে ছিনতাইকারীর একাধিক চক্র সক্রিয়। প্রতিবছর ছিনতাইকারীদের ছুরিকাঘাতে এক বা একাধিক ব্যক্তির মৃত্যু হচ্ছে। কোনোটির বিচার হচ্ছে না।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সরকার ও ষুধশিল্পে ঝুঁকি বাড়াচ্ছে
ওষুধশিল্পের মালিকেরা মনে করছেন, মালিকদের বাদ দিয়ে সরকার ওষুধের বিষয়ে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। সরকারের এই নীতি ওষুধশিল্পকে ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্পমালিকেরা দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রায় এক হাজার ওষুধের অনুমোদন দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন।
রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির (বাপি) কার্যালয়ে আজ শনিবার দুপুরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সমিতির নেতারা এসব কথা বলেন। ‘ওষুধশিল্প-কারখানা পরিদর্শনের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে স্বাস্থ্য খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম। আর এই আয়োজনে সহযোগিতা করে বাপি।
মতবিনিময় সভার শুরুতে বাপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বাংলাদেশ ওষুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ। দেশের মানুষের প্রয়োজনের ৯৮ শতাংশ ওষুধই এখন দেশে তৈরি হয়। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ দেড় শর মতো দেশে ওষুধ রপ্তানিও করছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন সহজে ওষুধ পাওয়া যায়। ওষুধ নিয়ে সাধারণ মানুষ ও চিকিৎসকদের মধ্যে অসন্তুষ্টি নেই। ওষুধের এই সাফল্যের পেছনে আছে ১৯৮২ সালের ওষুধনীতি।
ওষুধশিল্প খাতের এই সাফল্য এখন হুমকির মুখে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ওষুধশিল্পের মালিকেরা। সমিতির সহসভাপতি ও রেনাটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ কায়সার কবির সাংবাদিকদের বলেন, স্বাস্থ্য খাত সংস্কারবিষয়ক কমিশনের কিছু সুপারিশ এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কিছু নীতি ও পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও আশির দশকের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
মতবিনিময় সভায় ওষুধশিল্পের মালিকেরা অভিযোগ করেন, অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে গঠিত ১৮ সদস্যের টাস্কফোর্সে ওষুধশিল্পের কোনো প্রতিনিধি রাখেনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। ওষুধের মূল্য নির্ধারণ কমিটিসহ আরও তিনটি কমিটিতে শিল্পমালিকদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। যদিও অতীতে এসব কমিটিতে মালিকপক্ষের প্রতিনিধি রাখা হতো।
বাপির কোষাধ্যক্ষ ও হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মুহাম্মদ হালিমুজ্জামান বলেন, ‘ওষুধশিল্পের মালিকেরা স্বাস্থ্য খাতের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন। কিন্তু তাঁদের কথা কেউ শুনছে না। মনে হচ্ছে এই শিল্পটাকে নিশানা করা হয়েছে, শিল্পটাকে কেউ নষ্ট করে দিতে চায়। সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপ ওষুধশিল্পকে আবারও অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে।’
বাপির পক্ষ থেকে সম্প্রতি সাংবাদিকদের ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস ও স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের বিভিন্ন কারখানা ঘুরিয়ে দেখানো হয়। অনুষ্ঠানে সাংবাদিকেরা তাঁদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরার পাশাপাশি মালিকদের নানা বিষয়ে প্রশ্ন করেন। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে সভায় উপস্থিত একাধিক শিল্পমালিক জানান, যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কনীতি ওষুধশিল্পের জন্য ইতিবাচক, নাকি নেতিবাচক হবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
স্বল্পোন্নত দেশ হওয়ায় বাংলাদেশ ওষুধের মেধাস্বত্বের ক্ষেত্রে ছাড় পায়, তাই দেশে ওষুধের দাম কম বা সহনশীল। বাপির মহাসচিব ও ডেল্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে মেধাস্বত্বের সেই ছাড় আর পাবে না বাংলাদেশ। ফলে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে নিবন্ধন না থাকা নতুন ওষুধের দাম অনেক বেশি হবে।
সভায় উপস্থিত একাধিক ওষুধ কোম্পানির মালিক অভিযোগ করেন, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ওষুধ নিবন্ধন প্রদানের ক্ষেত্রে বিলম্ব করছে। সংশ্লিষ্ট কমিটির সভাও ঠিকমতো হচ্ছে না। অধিদপ্তর যদি দ্রুততম সময়ের মধ্যে হাজারখানেক ওষুধের নিবন্ধনপ্রক্রিয়া শেষ করে, তবে তাতে দেশের মানুষ উপকৃত হবেন।
মতবিনিময় সভায় সাংবাদিকেরা জানতে চান ওষুধের কাঁচামালের বিষয়ে শিল্পমালিকেরা কী করছেন। এ সময় তাঁরা জানতে চান, ওষুধ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও ওষুধের ৯০ শতাংশ কাঁচামাল এখনো কেন আমদানি করতে হচ্ছে। জবাবে বাপির মহাসচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, গজারিয়ায় এপিআই শিল্প পার্কের প্লটগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই ছোট ছোট। বর্তমানে এপিআই শিল্প পার্কে ওষুধ কারখানার মালিক আছেন ২৭ জন। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে কয়েকটিকে প্লটকে একত্র করে প্লটের আকার বাড়ানো হবে। তাতে মালিকের সংখ্যাও কমে ১০-১২ জনে দাঁড়াবে। এ ছাড়া এপিআই শিল্প পার্কে গ্যাসের সংযোগ না থাকায় সেখানে কাঁচামালের কারখানা গড়ে উঠছে না।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক শিল্পমালিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বীকার করেন, একদল অসাধু লোক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির ওষুধ নকল করে বাজারে ছাড়ছে। এসব অসাধু লোক এখন শহর ছেড়ে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে।
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য দেন বাপির নির্বাহী কর্মকর্তা মে. জে. (অব.) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান, নিপ্রো জেএমআই ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেল।