পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ কাজে অনিয়মের কথা অস্বীকার করায় ক্ষুব্ধ হয়ে এলজিইডির এক কর্মচারীকে মারধর করেছেন স্থানীয়রা। শনিবার (২ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার ময়দানদীঘি ইউনিয়নের গাইঘাটা এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে রাস্তার নির্মাণকাজ চললেও কাজের মান অত্যন্ত নিম্নমানের।

এলাকাবাসী জানান, সম্প্রতি কার্পেটিং করা হয় সড়কটি। এরই মধ্যে কার্পেটিংয়ের কিছু অংশ উঠে যেতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারা কাজ বন্ধ করে দেন। খবর পেয়ে এলজিইডির কার্য-সহকারী জাহিদুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান। সেখানে তিনি সবার সামনে অনিয়মের অভিযোগ অস্বীকার করলে ক্ষুব্ধ জনতা তাকে ধাওয়া করে এবং মারধর করে। পরে তিনি পাশের একটি ধানক্ষেতে আশ্রয় নিয়ে রক্ষা পান।

আরো পড়ুন:

চিকিৎসককে মারধর, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাসহ গ্রেপ্তার ১০ 

ঋণ খেলাপি মামলা করায় ব্যাংক ম্যানেজারকে মারধরের অভিযোগ যুবদল নেতার বিরুদ্ধে

ময়দানদীঘি ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য বেলাল হোসেন বলেন, “এ সড়কের কাজ নিয়ে বহুদিন ধরেই অভিযোগ আছে। পাশের সড়কটির কাজ আগে শেষ হলেও বারবার অনিয়মের কারণে এ সড়কের কাজ থেমে যায়। আমি গিয়ে নিজ চোখে দেখেছি, কাজের মান খুবই খারাপ।”

স্থানীয় বাসিন্দা ইউসুফ আলী বলেন, “সড়ক দিয়ে হাঁটার সময় দেখি, হালকা চাপেই কার্পেটিং উঠে যাচ্ছে। মিস্ত্রিরা সেটা হাতুড়ি দিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করছিল।”

মাসুদ রানা নামে অপর একজন বলেন, “সড়কের ওপর থাকা কাদা ও ধুলাবালি না সরিয়েই কার্পেটিং করা হয়েছে। প্রতিবাদ করলে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়। এতে স্থানীয়রা আরো ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।”

ভুক্তভোগী জাহিদুল ইসলাম বলেন, “আমি অফিসের নির্দেশে কাজ দেখতে যাই। স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে রেখেছিল। আমি তাদের বলি, অনিয়ম হয়নি, তখনই তারা উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারধর করে।” 

তিনি আরো বলেন, “প্রায় ১০ দিন আগে প্রাইম কোট দেওয়া হয়েছিল। পরে বৃষ্টিতে কিছু জায়গা নষ্ট হয়ে যায়, তা সঠিকভাবে পরিষ্কার না করেই কার্পেটিং করা হয়।”

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমআর ট্রেডার্সের প্রতিনিধি মিজানুর ইসলাম বলেন, “এ প্রকল্পটি ২০২০-২১ অর্থবছরের। আমি সাব-ঠিকাদার হিসেবে কাজ করেছি। বিস্তারিত তথ্য এখন মনে নেই।”

পঞ্চগড় এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান বলেন, “সড়কের কাজের অনিয়মের অভিযোগ পেয়েছি। স্থানীয়রা কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন। কোনো কর্মচারী মারধরের শিকার হয়েছেন, এমন তথ্য এখনো আমাদের কাছে নেই। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।”

ঢাকা/নাঈম/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম রধর অভ য গ সড়ক র ক জ ম রধর

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর

শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক ফেনী শহরের ব্যস্ততম রাস্তা। এই সড়কের পাশেই শহরের প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা। একটু ভারী বৃষ্টিতেই ডুবে যায় সড়কটি। গত বছরের আগস্টের ভয়াবহ বন্যায় সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ কোমরপানিতে তলিয়ে ছিল পাঁচ দিন। এতে সড়কের বিভিন্ন স্থান ভেঙে খানাখন্দ তৈরি হয়। পানি নেমে যাওয়ার পর পাথর ও ইটের সুরকি দিয়ে অস্থায়ী মেরামত করা হলেও স্থায়ী সংস্কার হয়নি। এ বছর বর্ষায় সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় আরও বেহাল হয়েছে সড়কটির দশা। ছোট ছোট গর্তে ভরা এই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলে ধীরগতিতে। ফলে সড়কে যানজট লেগেই থাকে।

পৌর শহরের এই প্রধান সড়কে তা–ও যানবাহন চলে কোনোরকমে। শহরের অলিগলি আর অভ্যন্তরীণ সড়কের দশা এর চেয়ে অনেক বেহাল। শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়ক থেকে একটু এগোলে হাসপাতাল মোড় থেকে সালাহ উদ্দিন মোড় পর্যন্ত যে সড়কটি রয়েছে, তাতে আগাগোড়াই বড় বড় খানাখন্দ। সড়কটির সাহেববাড়ি অংশে বড় গর্ত তৈরি হওয়ায় ইট দিয়ে সাময়িক মেরামত করলেও ছোট-বড় গাড়ির চাকা সেসবকে স্থায়ী হতে দেয়নি। এটিসহ পৌরসভার ছোট-বড় প্রায় ৩০টির বেশি সড়ক এখনো বন্যার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ২০২৪ সালের বন্যার এক বছর পার হলেও ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলোর দৃশ্যমান কোনো সংস্কার হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত সড়কগুলো দ্রুত মেরামতের কাজ অচিরেই শুরু হবে।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

সরেজমিন ঘুরে শহরের পাঠানবাড়ি সড়ক, মাস্টারপাড়া মুন্সিবাড়ি সড়ক, কদল গাজী সড়ক, বিরিঞ্চি প্রাইমারি স্কুল সড়ক, বিরিঞ্চি রতন সড়ক, সুলতানপুর আমির উদ্দিন সড়ক, গাজী ক্রস রোড, সুফি সদর উদ্দিন সড়ক, আবু বক্কর সড়ক, শহীদ ওবায়দুল হক সড়ক, মহিপাল চৌধুরী বাড়ি সড়ক, চাড়িপুর মৌলভী আব্দুস সালাম সড়ক, উত্তর চারিপুর বাইতুশ শরিফ সড়ক, পূর্ব বিজয় সিং ছোট হুদা দিঘি সড়ক, মধুপুর মালেক মিয়া বাজার সড়কের বেহাল দশা দেখা গেছে। সব মিলিয়ে ৩০টি সড়কের সব কটিই এখন বেহাল।

একসময়ের ছিমছাম ও সাজানো ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর। খানাখন্দে ভরা সড়কগুলোতে গাড়ি চলে হেলেদুলে। হালকা বৃষ্টিতেও প্রায় সব সড়কে পানি জমে যায়। পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই সড়কে পানি জমে। অধিকাংশ সড়কের পিচঢালাই উঠে যাচ্ছে। ক্ষতবিক্ষত সড়ক শহরকে যেমন শ্রীহীন করেছে, তেমনি বাড়িয়েছে জনদুর্ভোগ।

ফেনী পৌরসভায় ইজিবাইক চালান সুজাউদ্দিন। ভাঙাচোরা সড়কের কারণে অন্য অনেকের চেয়ে তাঁকে বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হয় বলে জানিয়েছেন। ফেনীর শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কে সম্প্রতি সুজাউদ্দিনের সঙ্গে দেখা হয়। কথায় কথায় তিনি বলেন, ছোট-বড় গর্ত থাকায় অতিরিক্ত ঝাঁকুনিতে প্রতিনিয়ত গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গাড়ি থেকে পড়ে যাওয়ার দশা হয়। রাস্তা খারাপ হওয়ায় ভাড়াও কমেছে তাঁর।

শাহিন একাডেমি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইব্রাহিম শহরের সড়কগুলোর ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা নেই। এ কারণে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে। বাড়ির সামনের সড়কের এই হাল হলে আর কাজকর্ম করতে ইচ্ছা হয় না।

ফেনী পৌরসভার বিসিক–মুক্তার বাড়ি সড়কের মাঝে এমন বড় বড় খানাখন্দ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যে কারণে ফেনী এখন ভাঙাচোরা সড়কের শহর
  • নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে সড়ক সংস্কার, দুদকের অভিযান