বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, “ছাত্রশিবিরকে দীর্ঘদিন ধরে ‘জঙ্গি’, ‘রগকাটা’ বা ‘রাজাকার’ আখ্যা দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করা হয়েছিল। শিবির একটি নৈতিক ও আদর্শিক ছাত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করছে।”

বৃহস্পতিবার (১২ জুন) বিকেলে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার তাকিয়া বাজারের ওসমানিয়া মাদরাসা অডিটোরিয়ামে ফেনী জেলা শিবিরের উদ্যোগে ঈদ প্রীতি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, “যখন পাঁচ-ছয়জন মিলে আলোচনা করতাম, তখন তা ‘জঙ্গি বৈঠক’ বলে প্রচার করা হতো। অথচ আমরা সমাজ ও আত্মশুদ্ধি নিয়ে আলাপ করতাম। এমনকি কোথাও বসতেও দেওয়া হয়নি আমাদের।”

আরো পড়ুন:

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতা হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার ১

লক্ষ্মীপুর জেলা জামায়াতের সেক্রেটারির পদ ছাড়লেন নুরনবী

তিনি বলেন, “আজকের ছাত্রশিবির একটি নেয়ামত। আমাদের এতদিন শত্রু বানিয়ে তোলা হয়েছিল। সত্য বলার সাহস থাকলেই জুলুম নামে। যারা ইসলামী চিন্তাকে ভয় পায়, তারাই আমাদের বিপরীতে ষড়যন্ত্র করেছে।”

শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, “বিগত সময়ে অনেক ঈদ আমরা পরিবার থেকে দূরে কাটিয়েছি। কেউ কেউ বাবার জানাজাতেও যেতে পারেননি। শুধুমাত্র ইসলামী আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে প্রশাসনের নজরদারিতে থাকতে হয়েছে।”

তিনি দাবি করেন, “শুধু ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ২৩৪ জন শহীদ হয়েছেন। গুম হয়েছেন অন্তত এক হাজার। অনেক ভাই আজও নিখোঁজ। আমাদের সাতজন ভাই কোথায় আছেন, আমরা জানি না। কেবল একটি অপরাধ—তারা শিবির করতেন। কারো চোখ উপড়ে ফেলা হয়েছে, কারো হাত-পা থেতলে দেওয়া হয়েছে, কেউ কারাগারে বছরের পর বছর অন্যায়ভাবে আটক ছিলেন।”

তিনি প্রশ্ন রাখেন, “এই রাষ্ট্র কি আমাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দেবে? নিখোঁজ সাত ভাইয়ের মায়েরা আজো ছেলের মুখ দেখার আশায় প্রহর গুনছে। আমরা প্রশাসনের কাছে গেছি, মিডিয়ায় গেছি—তবু কোনো সন্ধান মেলেনি।”

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ফেনী জেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আবু হানিফ হেলাল। সঞ্চালনায় ছিলেন জেলা সেক্রেটারি ইমাম হোসেন আরমান। বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের আমির মুফতি আবদুল হান্নান, উপজেলা আমির মোহাম্মদ মোস্তফা, সহকারী সেক্রেটারি বেলায়েত হোসেন, শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ, সাবেক প্রচার সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ও সাবেক এইচআরডি সম্পাদক শরিফুল ইসলাম।

এদিন ফেনী সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণে মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন শিবিরের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক আজিজুর রহমান আজাদ। উপস্থিত ছিলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রকল্যাণ ও সমাজসেবা সম্পাদক ডা.

রিজওয়ানুল হক, শহর সভাপতি ওমর ফারুক, সেক্রেটারি শফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।

ঢাকা/সাহাব/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ল ইসল ম আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

ফটিকছড়িতে হালদায় ভাঙন, ঝুঁকিতে হাজারো মানুষ

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় হালদা নদীর পুরোনো বেড়িবাঁধের অন্তত ১৭টি স্থানে ফাটল ধরেছে। ভারী বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের কারণে এর মধ্যে চারটি স্থান ভাঙনের শঙ্কায়। এতে দৌলতপুর, সুন্দরপুর, সমিতিরহাট, হারুয়ালছড়ি ও সুয়াবিল ইউনিয়নের ছয়টি গ্রামের বসতঘর, মাছের ঘের ও ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে এসব ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের অন্তত ৪০ হাজার মানুষ।

ফটিকছড়িতে পানি উন্নয়ন বোর্ড বেশকিছু বাঁধ রক্ষা প্রকল্প হাতে নিলেও কাজ এখনো শেষ করতে পারেনি। ফলে হালদা তীরের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কাটছে না।

পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় এক কোটি টাকা ব্যয়ে ২.৯৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সংস্কার, ধুরুং খালের ৫ কিলোমিটার খনন ও স্লুইস গেট নির্মাণের কাজ আগেই শেষ হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে নতুন একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ সোহেল, গোলাম সরোয়ার, আমান উল্লাহ, মরিয়ম বেগমরা জানান- দৌলতপুর, মন্দাকিনী, পূর্ব সুয়াবিল, ছাদেকনগর, পূর্ব ধলই, সমিতিরহাট, আরবানিয়া, হারুয়ালছড়ি, সুন্দরপুর ও আজিমপুরসহ হালদা তীরবর্তী ১০টি গ্রামের অন্তত ৩০ হাজার মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরোনো বেড়িবাঁধে ভাঙনের ফলে দৌলতপুর, সুয়াবিল, হারুয়ালছড়ি ও সুন্দরপুরের অনেক বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। কারও বাড়ির কাঁচা দেয়াল দেবে গেছে। বেড়িবাঁধের ওপর গ্রামীণ মেঠোপথের অনেক স্থান ভেঙে গেছে। সড়কের পাশে লাগানো গাছপালা গোড়াসহ উপড়ে পড়েছে।

সমিতিরহাট ইউনিয়নের আরবানিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ শানেওয়াজ জানান, এনজিও প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে একটি ঘর করেছি। চোখের সামনেই বেড়িবাঁধ ভেঙে প্রবল পানির স্রোতে ঘরটি ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব জানি না।

পাউবো চট্টগ্রাম উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সোহাগ তালুকদার জানান, বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে হালদার দুই তীরে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙন মেরামতে আমরা ৩ কোটি টাকার জরুরি বরাদ্ধ চেয়েছি। সুন্দরপুর, পাঁচপুকুরিয়াসহ কয়েকটি মারাত্মক ঝুকিঁপুর্ণ স্থান স্থায়ীভাবে ব্লকের বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ১২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য দেওয়া হয়েছে। এই ভাঙন পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থায়ী প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ জরুরি।

এদিকে বছর দুয়েক আগে ভাঙনরোধে ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও বাস্তবায়ন হয়নি বললেই চলে।

বিএনপির উত্তর জেলা আহ্বায়ক সরোয়ার আলমগীর হালদা ভাঙন এলাকা পরিদর্শন শেষে বলেন, এই খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ নয়-ছয় করে লোপাট করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ