খামেনির ‘যুদ্ধ শুরু’ ঘোষণার পর ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের
Published: 18th, June 2025 GMT
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মঙ্গলবার রাতে ‘যুদ্ধ শুরু’ ঘোষণার পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতি ‘কোনো দয়া না দেখানোর’ আহ্বান জানানোর পর, ইরান ইসরায়েলে দুই দফা ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১২:৪০ টার কিছু পরেই ইসরায়েলের বিশাল অংশ জুড়ে প্রথম হামলায় সাইরেন বাজতে শুরু করে এবং প্রায় ১৫টি প্রজেক্টাইলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় ৪০ মিনিট পরে প্রায় ১০টি রকেটের পরবর্তী হামলা শুরু হয় এবং মধ্য ইসরায়েলি সম্প্রদায় ও পশ্চিম তীরের বেশ কয়েকটি বসতিতে সতর্কতা জারি করে।
হামলার কয়েক মিনিট আগে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে এবং আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
আরো পড়ুন:
যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন খামেনি
২৪ ঘণ্টায় ২৮টি ‘শত্রু বিমান’ ভূপাতিত করার দাবি ইরানের
ইরানের পরপর হামলায় কোনো আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে মধ্য ইসরায়েলের একটি পার্কিং লটে বিস্ফোরণে অসংখ্য গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিস্ফোরণ সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত ফলে লেগেছে নাকি ইসরায়েলি বাধার ফলে ধ্বংসাবশেষের কারণে লেগেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) পরবর্তীতে ইসরায়েলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার দাবি করেছে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে প্রচারিত এক বিবৃতিতে আইআরজিসি জানিয়েছে, “ফাত্তাহ-১ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে গর্বিত অপারেশন অনেস্ট প্রমিজ ৩-এর ১১তম ঢেউ’ চালানো হয়েছে। আরআরজিসি আরো দাবি করেছে যে, ইরানি বাহিনী ‘অধিকৃত অঞ্চলের আকাশের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে।’
বুধবার ভোরে দ্বিতীয় ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর খামেনি তার ইংরেজি ভাষার এক্স অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, “আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার প্রতি কঠোর প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। আমরা ইহুদিবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না।”
খামেনি ফারসি ভাষায় একটি শিয়া-থিমযুক্ত পোস্টও জারি করেছেন, যেখানে ‘যুদ্ধ শুরু হচ্ছে’ ও খায়বারে ফিরে আসার দাবি করা হয়েছে, যেখানে ৭ম শতাব্দীতে মুসলিম বাহিনী কর্তৃক ইহুদি অধিবাসীদের জয় করা হয়েছিল এমন একটি শহরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পোস্টটিতে একটি ব্যক্তির তরবারি হাতে দুর্গের মতো একটি গেটে প্রবেশের ছবি দেখানো হয়েছে, যার উপরে আকাশে আগুনের রেখা রয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ বুধবার তেহরানের ১৮ নম্বর জেলার বাসিন্দাদের এলাকা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশ জারি করে বলেছে, ইসরায়েল সামরিক অবকাঠামো লক্ষ্য করে এলাকায় পদক্ষেপ নিতে চলেছে।
কিছুক্ষণ পরে, আইডিএফ জানায়, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী ইরানের রাজধানীতে নতুন করে হামলা শুরু করেছে, তবে তাৎক্ষণিকভাবে আরো বিস্তারিত তথ্য প্রদান করা হয়নি।
তেহরানে হামলার পাশাপাশি, ইরানি সংবাদ সংস্থাগুলো রাজধানীর কাছে খোজির ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র এবং কারাজ শহরে বিস্ফোরণের খবর জানিয়েছে।
বুধবার সকাল থেকে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো ইসরায়েল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ক্ষমতা ধ্বংস করার লক্ষ্যে ফের অভিযান শুরু করেছে।
ইসরায়েল বলছে, ইরানের শীর্ষ সামরিক নেতা, পরমাণু বিজ্ঞানী, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির উপর তাদের ব্যাপক আক্রমণ তাদের দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি পৌঁছাতে বাধা দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয়।
ইসরায়েল জানিয়েছে, গত শুক্রবার থেকে তেহরান তার প্রতিশোধমূলক হামলায় ইসরায়েলে ৩৭০টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এতে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে ২৪ জন নিহত এবং ৫০০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে।
ইরানি কর্মকর্তাদের মতে, ইরানে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২২৪ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র ইসর য় ল ইসর য় ল ইসর য
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রে ঘাটতির মুখে ইসরায়েল: ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল
ইসরায়েল বর্তমানে প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ‘অ্যারো ইন্টারসেপ্টর’-এর সংকটে রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন দৈনিক ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ইরান থেকে নিক্ষিপ্ত দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করার সক্ষমতা এতে হুমকির মুখে পড়তে পারে।
পত্রিকাটি যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে জানায়, ওয়াশিংটন বেশ কয়েক মাস ধরেই ইসরায়েলের এই সক্ষমতা সংকট সম্পর্কে অবগত। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে স্থল, সমুদ্র ও আকাশপথে অতিরিক্ত প্রতিরক্ষাপ্রণালী মোতায়েন করছে।
তবে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাদের গোলাবারুদ সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বলে প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এদিকে গত রাতে ইসরায়েলের দিকে ‘হাইপারসনিক’ ক্ষেপণাস্ত্র ফাত্তাহ-১ নিক্ষেপ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরানের ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি)।
এক বিবৃতিতে আইআরজিসি বলেছে, ‘তাদের শক্তিশালী ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ঢাল ভেঙে দেশটির আকাশের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়েছে।’
সিএনএন জানিয়েছে, ইরানের আধা-সরকারি মেহের সংবাদ সংস্থা দাবি করেছে- ইরান ইসরায়েলের দিকে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। তবে এই দাবির সত্যতা যাচাই করা যায়নি।
২০২৩ সালে ফাত্তাহ ক্ষেপণাস্ত্র উন্মোচন করে ইরান। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ক্ষেপণাস্ত্রটির নামকরণ করেন।
আইআরজিসি এই ক্ষেপণাস্ত্রকে ‘ইসরায়েল বিধ্বংসী’ বলে উল্লেখ করেছে। এটি উন্মোচনের সময় ইরানের রাজধানী তেহরানে একটি বিশাল ব্যানার টাঙানো হয়েছিল, যেখানে হিব্রু ভাষায় লেখা ছিল: ‘৪০০ সেকেন্ডে তেল আবিবে।’
অন্যদিকে গত কয়েক ঘণ্টায় দেশটির বিমানবাহিনীর ৫০টিরও বেশি যুদ্ধবিমান ইরানের অভ্যন্তরে হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ— ‘সেন্ট্রিফিউজ উৎপাদন কেন্দ্র’ এবং দেশটির ‘বেশ কয়েকটি অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র’ লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ দিনে ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর গোলাবর্ষণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র-ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫৮৫ জন। এছাড়াও এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৩২৬ জন নাগরিক।
যদিও ইরান সংঘাতের ঘটনায় নিয়মিত মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করেনি। গত সোমবার প্রকাশিত সর্বশেষ হালনাগাদে মৃতের সংখ্যা ২২৪ জন এবং আহতের সংখ্যা ১২৭৭ জন বলে জানানো হয়েছে। সূত্র: আল জাজিরা