মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ, যেখানে বছরের পর বছর ধরে চলমান যুদ্ধ অসংখ্য মানুষকে গৃহহীন করে তুলেছে।

জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার প্রধান ফিলিপ্পো গ্রান্ডি বলেন, “এই অঞ্চল ইতোমধ্যেই অনেক যুদ্ধ, প্রাণহানি ও বাস্তুচ্যুতির যন্ত্রণা ভোগ করেছে; আমরা আরেকটি শরণার্থী সংকটের শিকড় গেড়ে উঠতে দিতে পারি না।”

তিনি আরো বলেন, “উত্তেজনা প্রশমনের সময় এখনই। একবার মানুষ ঘরছাড়া হলে দ্রুত তাদের ফেরানো সম্ভব হয় না এবং প্রায়ই এর পরিণতি প্রজন্মের পর প্রজন্ম টিকে থাকে।”

মধ্যপ্রাচ্যের লাখ লাখ মানুষ যুদ্ধের কারণে শরণার্থীতে পরিণত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ঘরে ফিরতে পারেনি। এসব মানুষের জীবনের যন্ত্রণা লাঘবের তেমন কোনো উদ্যোগও নেই। তবে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করে চলেছে।

মধ্যপ্রাচ্যের আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, ইয়েমেন, সিরিয়া ও ইরাক যুদ্ধের বিভীষিকার মধ্য দিয়ে গেছে। এসব দেশের কয়েকটি মানুষ উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের পরিণত হয়েছে। এখন যদি ইরান ঘিরে পূর্ণমাত্রার একটি যুদ্ধ বাধে, তাহলে শরণার্থী ও উদ্বাস্তুদের সংখ্যাটা এক লাফে কয়েকগুণ বেড়ে যাবে।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত থামাতে বিশ্ব সম্প্রদায় বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে ইসরায়েল কারো কথায় কান দিচ্ছে না। তারা ইরানের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করে হামলা অব্যাহত রেখেছে, যা আন্তর্জাতিক আইনে পুরোপুরি অবৈধ।

১৩ জুন ভোরে ইরানে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। তারপর পাল্টা হামলায় নামে ইরান। উভয় দেশ হামলা ও পাল্টা হামলা চালিয়েছে। 

ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছে পৌঁছে গেছে বলে অভিযোগ তুলে দেশটিতে নজিরবিহীন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল; যেখানে আন্তর্জাতিক আনবিক শক্তি সংস্থা বলছে, ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর কাছাকাছি পৌঁছানোর কোনো প্রমাণ তাদের কাছে নেই।

ইরাকে রাসায়নিক অস্ত্রভাণ্ডার আছে বলে অভিযোগে ২০০৩ সালে হামলা চালিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য। যদিও তেমন কোনো অস্ত্রই ছিল না ইরাকে। এবার যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে ইসরায়েল ইরাক মডেলে ইরানে হামলা চালাচ্ছে, যার কোনো ভিত্তিই নেই।

ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম নিউজ লিখেছে, জায়নবাদী শাসন ১৩ জুন ইরানের বিরুদ্ধে একটি উস্কানিমূলক আগ্রাসী যুদ্ধ শুরু করে। তারা ইরানের পারমাণবিক, সামরিক ও আবাসিক স্থাপনায় বিমান হামলা চালায়, যার ফলে অনেক শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, পারমাণবিক বিজ্ঞানী ও সাধারণ নাগরিক নিহত হন।

ইরানি সামরিক বাহিনী তাত্ক্ষণিকভাবে পাল্টা হামলা শুরু করে। ইরানের বিপ্লবী রক্ষী বাহিনীর মহাকাশ বিভাগ ২১ জুন পর্যন্ত ‘ট্রু প্রমিজ থ্রি’ (সত্য প্রতিশ্রুতি-৩) অভিযানের অংশ হিসেবে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে দফায় দফায় পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল শরণ র থ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন খেলা

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের দৃশ্যত উন্নতি এবং ওয়াশিংটন-নয়াদিল্লি সম্পর্কের অবনতি নিয়ে পাকিস্তানে ব্যাপক উদ্দীপনা দেখা যাচ্ছে। কিন্তু উদ্দীপনার পাটাতন কি যথেষ্ট শক্তিশালী এবং সেটি কত দিন টিকবে? কিছু বিশ্লেষক এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের এই পরিবর্তনকে ‘জোটের পুনর্বিন্যাস’ এবং ‘দিক পরিবর্তন’ বলতে শুরু করেছেন। কিন্তু এই জোটের ‘পুনর্বিন্যাস’ অর্থ যদি হয় চীনের কাছ থেকে পাকিস্তানের সরে আসা, তাহলে আমার মনে হয়, এই বিশ্লেষকেরা সম্ভবত ঠিক বলছেন না।

এর কারণ হলো, চীন পাকিস্তানের জন্য নির্ভরযোগ্য অংশীদার ও মিত্র। পাকিস্তান অনেক জায়গায় অর্থনৈতিক প্রয়োজন ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য ক্রমবর্ধমানভাবে চীনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ পাকিস্তান।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ক্রমে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠা হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার দিল্লিতে ক্ষমতায় রয়েছে। তারা অব্যাহতভাবে তাদের সাম্প্রদায়িক সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে পাকিস্তানবিরোধী মনোভাব উসকে দিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ঠেকাতে হলে পারমাণবিক প্রতিরোধী ব্যবস্থার সঙ্গে সামরিক সরঞ্জামও প্রয়োজন।

এটা বলতেই হবে যে পাকিস্তানের জন্য কিছু সুযোগ এসেছে, যেটা জিরো সাম গেমের বা একজন জিতলে আরেকজন হারবে, এমন খেলার অংশ নয়। যুক্তরাষ্ট্র যেমন পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশের সঙ্গে তার সম্পর্ককে ‘হয় আমার পক্ষে, না হয় আমার বিরুদ্ধে’ এই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখে, চীন এ রকমভাবে দেখে না; বরং চীনের দৃষ্টিভঙ্গি অনেক বেশি সূক্ষ্ম ও বাস্তববাদী। এর কারণ হলো চীন এখন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বাণিজ্যকে মূল মনোযোগের কেন্দ্রে রেখেছে।

পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলো প্রায়ই চীনের রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার ঘাটতি নিয়ে প্রশ্ন তোলে; কিন্তু চীন মাত্র ৪০ বছরের মধ্যে কীভাবে ৮০ কোটি মানুষকে দারিদ্র্য থেকে বের করে আনল, এ বিষয়টিতে তারা নীরব থাকে। আমরা এখন দেখছি যে গাজায় যে জাতিগত নির্মূল যজ্ঞ চলছে, তাতে প্রায় সমগ্র পশ্চিমা ‘গণতন্ত্র’ ইসরায়েলের দুষ্কর্মের দোসর হিসেবে ভূমিকা পালন করছে।

এখনকার বাস্তবতায় দুটি বিষয় পাকিস্তানের পক্ষে গেছে। প্রথমত, ইসলামাবাদ সঠিকভাবে ট্রাম্পের আত্মমুগ্ধতাকে গুরুত্ব দিয়েছে। ট্রাম্পের নাম শান্তিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছে। ২০২১ সালের আগস্টে কাবুল বিমানবন্দরের ‘অ্যাবি গেট’ বোমা হামলার একজন অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেপ্তার ও যুক্তরাষ্ট্রে প্রত্যর্পণ করেছে। এতে ‘কঠোর নেতা’ হিসেবে ট্রাম্পের ভাবমূর্তি শক্তিশালী হয়েছে। ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র যখন তড়িঘড়ি করে কাবুল ত্যাগ করছিল, তখন ওই হামলায় ১৩ জন মার্কিন সেনা এবং ২০০ আফগান নিহত হয়েছিলেন।

চীনকে মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সামনে ঠেলে দিচ্ছে। ভারত এখন কোয়াডেরও সদস্য। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে এই জোটের অন্য দুই সদস্য হলো অস্ট্রেলিয়া ও জাপান। এ কারণেই ব্রিকসে ভারতের সদস্যপদকে এশিয়ায় পশ্চিমা কৌশলগত কাঠামোর সঙ্গে অসাঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ভারত এমন একটি পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ করছে, যেখানে নিজেদের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে; কিন্তু ভারতকে এখন এক পক্ষ বেছে নিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।

এরপর গত বছরের মে মাসে ভারত অধিকৃত কাশ্মীরে একটি সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত যখন পাকিস্তানি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্র উভয় পক্ষকে উত্তেজনা প্রশমনের আহ্বান জানায়। মার্কিন সূত্র জানায়, ইসলামাবাদ দ্রুত ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানায় এবং আত্মমুগ্ধ নেতা ট্রাম্পকে একটি ‘জয়’ উপহার দেয়। ট্রাম্প নিজেকে শান্তির দূত হিসেবে উপস্থাপন করতে কখনো ক্লান্ত হন না। এ ঘটনায় তাঁর অহং ব্যাপকভাবে তৃপ্ত করেছিল।

অন্যদিকে মনে করা হয় যে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এমন দুটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন যা ট্রাম্পকে রাগিয়ে তোলে। প্রথমটি হলো, ট্রাম্প যখন প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনী প্রচারে ছিলেন, তখন মোদি তাঁর যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বৈঠক বাতিল করেছিলেন। এটা যদি সত্যি হয়, তাহলে ট্রাম্পের যে বিশাল অহংবোধ তাতে নিশ্চিতভাবেই আঘাত করবে।

ভারতের জন্য আরেকটি অস্বস্তিকর ঘটনা ঘটে মে মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের সময়। সংঘাত যাতে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় তার জন্য মার্কিন নেতারা টেলিফোনে যোগাযোগ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার এই দুই দেশ হোয়াইট হাউসকে জানায়, তারা উত্তেজনা প্রশমন করবে; কিন্তু ভারত থামেনি।

পাকিস্তান শুধু যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধেই সংযম দেখিয়েছে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারত ও পাকিস্তান নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন খেলা