সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে আগামী মাসেই যুক্ত হচ্ছে নতুন একটি জাহাজ। ডিসেম্বরের মধ্যে আসবে আরেকটি জাহাজ। জাহাজ দুটি ক্রয়ের বিষয়ে সংস্থাটি আজ রোববার চুক্তি করেছে।

বিএসসির বহরে বর্তমানে পাঁচটি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকার এবং দুটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের বাল্ক জাহাজ। নতুন দুটি বাল্ক জাহাজ যুক্ত হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে সাতটিতে উন্নীত হবে। তাতে দেশের পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১০২।

আজ ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেকসহ জাহাজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিযোগিতামূলক দরে জাহাজ কেনার এই প্রক্রিয়া শুরু হয় গত জুনে। ৩ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর কারিগরিভাবে দুটি প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। সে অনুযায়ী, গত আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৩৬ কোটি টাকায় জাহাজ দুটি কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

বিএসসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হচ্ছে। জাহাজ দুটির প্রতিটির পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টন। জাহাজ দুটি থেকে বছরে বাড়তি ১৫০ কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে তাঁরা আশা করেন। দুই জাহাজে পালাক্রমে বছরে ১৫০ নাবিকের কর্মসংস্থান হবে।

জানা গেছে, বিএসসি সরকারি অর্থায়নে আরও তিনটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ জন্য এখন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সংস্থাটি।

জানতে চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমোডর মাহমুদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন থাকা জাহাজই কেনা হবে সামনে। এতে খুব দ্রুত বিএসসির বহর সমৃদ্ধ হবে।

কার হাতে কত জাহাজ

১৯৭২ সালের জুনে ‘এমভি বাংলার দূত’ জাহাজ চালুর মাধ্যমে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ব্যবসা শুরু করে বিএসসি। ১৯৮২ সাল নাগাদ জাহাজ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭, যা পরে ৩৮টিতে উন্নীত হয়। তবে ১৯৯১ সালের পর এই সংস্থার বহরে নতুন কোনো জাহাজ যুক্ত হয়নি।

অন্যদিকে বেসরকারি মালিকানায় রয়েছে ৯৫টি জাহাজ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮টি জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপ। মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ২৫টি ও আকিজ শিপিংয়ের ১০টি জাহাজ আছে। সংখ্যায় বিএসসির অবস্থান ষষ্ঠ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বহরে কনটেইনার থেকে শুরু করে সাধারণ পণ্যবাহী ও তেল-গ্যাস পরিবহনকারী জাহাজ রয়েছে।

জাহাজে বিনিয়োগে সুফল অনেক

বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের বড় অংশই সমুদ্রপথে আনা-নেওয়া করা হয়, যা প্রতিবছরই বাড়ছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৩ কোটি টন পণ্য পরিবহন হয়। কনটেইনার, তেল পরিবহনকারী ও সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজে এসব পণ্য পরিবহন হয়। যদিও পণ্যের বড় অংশই পরিবহন হচ্ছে বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে। কারণ, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা কম।

সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পে যুক্ত উদ্যোক্তারা জানান, জাহাজে বিনিয়োগে তিনটি সুফল পাওয়া যায়। ১.

দেশি পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, ২. বিদেশি পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং ৩. দেশি নাবিকদের কর্মসংস্থান।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এসস র ব সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নিজেদের টাকায় কেনা নতুন দুই জাহাজ যুক্ত হচ্ছে বিএসসির বহরে

সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে আগামী মাসেই যুক্ত হচ্ছে নতুন একটি জাহাজ। ডিসেম্বরের মধ্যে আসবে আরেকটি জাহাজ। জাহাজ দুটি ক্রয়ের বিষয়ে সংস্থাটি আজ রোববার চুক্তি করেছে।

বিএসসির বহরে বর্তমানে পাঁচটি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকার এবং দুটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের বাল্ক জাহাজ। নতুন দুটি বাল্ক জাহাজ যুক্ত হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে সাতটিতে উন্নীত হবে। তাতে দেশের পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১০২।

আজ ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেকসহ জাহাজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিযোগিতামূলক দরে জাহাজ কেনার এই প্রক্রিয়া শুরু হয় গত জুনে। ৩ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর কারিগরিভাবে দুটি প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। সে অনুযায়ী, গত আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৩৬ কোটি টাকায় জাহাজ দুটি কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।

বিএসসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হচ্ছে। জাহাজ দুটির প্রতিটির পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টন। জাহাজ দুটি থেকে বছরে বাড়তি ১৫০ কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে তাঁরা আশা করেন। দুই জাহাজে পালাক্রমে বছরে ১৫০ নাবিকের কর্মসংস্থান হবে।

জানা গেছে, বিএসসি সরকারি অর্থায়নে আরও তিনটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ জন্য এখন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সংস্থাটি।

জানতে চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমোডর মাহমুদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন থাকা জাহাজই কেনা হবে সামনে। এতে খুব দ্রুত বিএসসির বহর সমৃদ্ধ হবে।

কার হাতে কত জাহাজ

১৯৭২ সালের জুনে ‘এমভি বাংলার দূত’ জাহাজ চালুর মাধ্যমে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ব্যবসা শুরু করে বিএসসি। ১৯৮২ সাল নাগাদ জাহাজ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭, যা পরে ৩৮টিতে উন্নীত হয়। তবে ১৯৯১ সালের পর এই সংস্থার বহরে নতুন কোনো জাহাজ যুক্ত হয়নি।

অন্যদিকে বেসরকারি মালিকানায় রয়েছে ৯৫টি জাহাজ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮টি জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপ। মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ২৫টি ও আকিজ শিপিংয়ের ১০টি জাহাজ আছে। সংখ্যায় বিএসসির অবস্থান ষষ্ঠ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বহরে কনটেইনার থেকে শুরু করে সাধারণ পণ্যবাহী ও তেল-গ্যাস পরিবহনকারী জাহাজ রয়েছে।

জাহাজে বিনিয়োগে সুফল অনেক

বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের বড় অংশই সমুদ্রপথে আনা-নেওয়া করা হয়, যা প্রতিবছরই বাড়ছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৩ কোটি টন পণ্য পরিবহন হয়। কনটেইনার, তেল পরিবহনকারী ও সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজে এসব পণ্য পরিবহন হয়। যদিও পণ্যের বড় অংশই পরিবহন হচ্ছে বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে। কারণ, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা কম।

সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পে যুক্ত উদ্যোক্তারা জানান, জাহাজে বিনিয়োগে তিনটি সুফল পাওয়া যায়। ১. দেশি পণ্য পরিবহনের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়, ২. বিদেশি পণ্য পরিবহন করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং ৩. দেশি নাবিকদের কর্মসংস্থান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ