নিজেদের টাকায় কেনা নতুন দুই জাহাজ যুক্ত হচ্ছে বিএসসির বহরে
Published: 21st, September 2025 GMT
সরকারি কোম্পানি বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) বহরে আগামী মাসেই যুক্ত হচ্ছে নতুন একটি জাহাজ। ডিসেম্বরের মধ্যে আসবে আরেকটি জাহাজ। জাহাজ দুটি ক্রয়ের বিষয়ে সংস্থাটি আজ রোববার চুক্তি করেছে।
বিএসসির বহরে বর্তমানে পাঁচটি জাহাজ রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি তেল পরিবহনকারী ট্যাংকার এবং দুটি সাধারণ পণ্য পরিবহনের বাল্ক জাহাজ। নতুন দুটি বাল্ক জাহাজ যুক্ত হলে বিএসসির বহরে জাহাজের সংখ্যা বেড়ে সাতটিতে উন্নীত হবে। তাতে দেশের পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১০২।
আজ ঢাকার ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন। এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ, বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক কমোডর মাহমুদুল মালেকসহ জাহাজ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বিএসসি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিযোগিতামূলক দরে জাহাজ কেনার এই প্রক্রিয়া শুরু হয় গত জুনে। ৩ জুন আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর কারিগরিভাবে দুটি প্রস্তাব গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয়। সে অনুযায়ী, গত আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের হেলেনিক ড্রাই বাল্ক ভেঞ্চারস এলএলসি নামক প্রতিষ্ঠান থেকে ৯৩৬ কোটি টাকায় জাহাজ দুটি কেনার প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
বিএসসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, দেশের ইতিহাসে এই প্রথম নিজস্ব অর্থায়নে জাহাজ কেনা হচ্ছে। জাহাজ দুটির প্রতিটির পণ্য পরিবহনের ক্ষমতা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার টন। জাহাজ দুটি থেকে বছরে বাড়তি ১৫০ কোটি টাকা আয় হতে পারে বলে তাঁরা আশা করেন। দুই জাহাজে পালাক্রমে বছরে ১৫০ নাবিকের কর্মসংস্থান হবে।
জানা গেছে, বিএসসি সরকারি অর্থায়নে আরও তিনটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ জন্য এখন প্রকল্প প্রস্তাব প্রণয়ন করা হচ্ছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তিনটি জাহাজ কেনার প্রক্রিয়া শেষ করতে চায় সংস্থাটি।
জানতে চাইলে বিএসসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কমোডর মাহমুদুল মালেক প্রথম আলোকে বলেন, শিপইয়ার্ডে নির্মাণাধীন থাকা জাহাজই কেনা হবে সামনে। এতে খুব দ্রুত বিএসসির বহর সমৃদ্ধ হবে।
কার হাতে কত জাহাজ
১৯৭২ সালের জুনে ‘এমভি বাংলার দূত’ জাহাজ চালুর মাধ্যমে সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন ব্যবসা শুরু করে বিএসসি। ১৯৮২ সাল নাগাদ জাহাজ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭, যা পরে ৩৮টিতে উন্নীত হয়। তবে ১৯৯১ সালের পর এই সংস্থার বহরে নতুন কোনো জাহাজ যুক্ত হয়নি।
অন্যদিকে বেসরকারি মালিকানায় রয়েছে ৯৫টি জাহাজ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৮টি জাহাজের মালিক কেএসআরএম গ্রুপ। মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের (এমজিআই) ২৫টি ও আকিজ শিপিংয়ের ১০টি জাহাজ আছে। সংখ্যায় বিএসসির অবস্থান ষষ্ঠ। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বহরে কনটেইনার থেকে শুরু করে সাধারণ পণ্যবাহী ও তেল-গ্যাস পরিবহনকারী জাহাজ রয়েছে।
জাহাজে বিনিয়োগে সুফল অনেক
বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যের বড় অংশই সমুদ্রপথে আনা-নেওয়া করা হয়, যা প্রতিবছরই বাড়ছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ১৩ কোটি টন পণ্য পরিবহন হয়। কনটেইনার, তেল পরিবহনকারী ও সাধারণ পণ্যবাহী জাহাজে এসব পণ্য পরিবহন হয়। যদিও পণ্যের বড় অংশই পরিবহন হচ্ছে বিদেশি পতাকাবাহী জাহাজে। কারণ, বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজের সংখ্যা কম।
সমুদ্রগামী জাহাজশিল্পে যুক্ত উদ্যোক্তারা জানান, জাহাজে বিনিয়োগে তিনটি সুফল পাওয়া যায়। ১.
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জুমার দিনের করণীয় ও বর্জনীয়
জুমার দিন—মুসলমানদের জন্য এক বিশেষ বরকতময় দিন।
এটি শুধু সাপ্তাহিক নামাজের দিন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, সামাজিক সংহতি ও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের মহান সুযোগ।
নবীজি (সা.) বলেছেন—“জুমার দিনই দিনসমূহের মধ্যে শ্রেষ্ঠ দিন। এ দিনেই আদম (আ.) সৃষ্টি হয়েছেন, এ দিনেই জান্নাতে প্রবেশ করেছেন, এবং এ দিনেই পৃথিবীতে প্রেরিত হয়েছেন।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৪)
অতএব, জুমা শুধু ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি ইসলামি সভ্যতার একটি কেন্দ্রবিন্দু।
এই দিনে কিছু কাজকে বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে, আবার কিছু কাজ থেকে কঠোরভাবে বারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনইসলামোফোবিয়া মোকাবিলায় মুসলিম নারীর করণীয়২৬ আগস্ট ২০২৫জুমার দিনের করণীয়১. গোসল করা
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করে, উত্তমভাবে পবিত্রতা অর্জন করে, তারপর মসজিদে আসে, নীরবে খুতবা শোনে ও নামাজ পড়ে, তার এক জুমা থেকে পরের জুমা পর্যন্ত গুনাহ মাফ করা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮৩)
জুমার দিনের এই গোসল বিশেষ ইবাদত হিসেবে গণ্য হয়।
২. পরিচ্ছন্ন পোশাক ও সুগন্ধি ব্যবহার
জুমার নামাজে যাওয়ার আগে মুসলমানকে সুন্দর পোশাক পরা ও সুগন্ধি ব্যবহার করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে তোমাদের জন্য সুন্দর পোশাক পরা এবং সুগন্ধি ব্যবহার করা উত্তম।” (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ১৫২৪৮)
এটি সামাজিক মর্যাদা ও আধ্যাত্মিক পবিত্রতার প্রতীক।
৩. তাড়াতাড়ি মসজিদে যাওয়া
জুমার নামাজে আগে পৌঁছানোর জন্য বড় ফজিলত রয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি প্রথম ঘণ্টায় জুমার জন্য যায়, সে যেন উট কোরবানি করল; দ্বিতীয় ঘণ্টায় গেলে গরু কোরবানি করল; তৃতীয় ঘণ্টায় গেলে ভেড়া কোরবানি করল; চতুর্থ ঘণ্টায় গেলে মুরগি কোরবানি করল; আর পঞ্চম ঘণ্টায় গেলে ডিম দান করল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮৮১)
অর্থাৎ, যত আগে যাবে, তত বেশি সওয়াব।
৪. খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি খুতবা চলাকালীন তার সঙ্গীকে বলে ‘চুপ করো’, সে-ও অনর্থক কথা বলল।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৪)
খুতবা চলাকালীন কথা বলা, ফোন ব্যবহার করা বা অমনোযোগ হওয়া নিষিদ্ধ।
৫. সুরা কাহফ তেলাওয়াত করা
জুমার দিনে সূরা কাহফ পড়ার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সূরা কাহফ তেলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমার মধ্যবর্তী সময় আলোকিত হয়ে যাবে।” (মুসতাদরাকে হাকিম, হাদিস: ৩৩৯২)
৬. দোয়া করা ও দরুদ পাঠ করা
জুমার দিনে এমন একটি সময় আছে, যখন দোয়া কবুল হয়।
নবীজি (সা.) বলেন, “জুমার দিনে এমন একটি মুহূর্ত আছে, যেখানে কোনো মুসলমান নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ তা অবশ্যই কবুল করেন।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৯৩৫)
অনেক আলেমের মতে, এই সময়টি আসরের পর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত।
এছাড়া, জুমার দিনে বেশি বেশি দরুদ পাঠ করার নির্দেশও এসেছে, “তোমরা জুমার দিনে আমার প্রতি বেশি দরুদ পাঠ করো, কারণ তোমাদের দরুদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১৫৩১)
আরও পড়ুনপ্রাকৃতিক দুর্যোগে করণীয় আমল২২ আগস্ট ২০২৪জুমার দিনের বর্জনীয়১. জুমার নামাজ ত্যাগ করা
নবীজি (সা.) কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন, “যে ব্যক্তি অলসতা বা উদাসীনতার কারণে তিনটি জুমা ত্যাগ করে, আল্লাহ তার হৃদয় সিল করে দেন।” (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ১০৫২)
অর্থাৎ, ইচ্ছাকৃতভাবে জুমা বাদ দেওয়া ইমানের জন্য ভয়ংকর বিপদ।
২. জুমা বাদ দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকা
কোরআনে আল্লাহ বলেন, “হে মুমিনগণ! যখন জুমার আহ্বান দেওয়া হয়, তখন আল্লাহর স্মরণে ছুটে যাও এবং ক্রয়-বিক্রয় বন্ধ করো।” (সুরা আল-জুমা, আয়াত: ৯)
জুমার সময় ব্যবসা-বাণিজ্য, অনলাইন কেনাকাটা বা অন্য ব্যস্ততা বড় গোনাহ।
৩. উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা
মসজিদে অন্যদের বিরক্ত করা, ফোনে কথা বলা, এমনকি নামাজের আগে অপ্রয়োজনে গল্প করা জুমার আদববিরোধী কাজ।
৪. খুতবার সময় চলাফেরা করা
খুতবা চলাকালে যেকোনো অযথা নড়াচড়া বা সামনে যাওয়া, নবীজি (সা.) বলেছেন, এতে “সওয়াব নষ্ট হয়।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৭)
৫. নামাজ শেষে গাফেল থাকা
জুমার পরপরই নামাজ বা দোয়া না করে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। আল্লাহ বলেন, “যখন নামাজ শেষ হবে, তখন পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ অন্বেষণ করো, কিন্তু আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।” (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)
অর্থাৎ, কাজ করবে ঠিকই, কিন্তু মনে যেন আল্লাহর স্মরণ থাকে।
জুমার দিনের তাৎপর্য
জুমা মুসলমানদের জন্য সামাজিক ঐক্যের প্রতীক। এদিনে মসজিদগুলোতে ধনী-গরিব, নেতা-জনতা, শিক্ষিত-অশিক্ষিত সবাই এক কাতারে দাঁড়ায়।
নবীজি (সা.) বলেছেন, “জুমার দিনে একবার নামাজ আদায় করা সাত দিনের গোনাহ মাফের সমান।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৮৫৬)
জুমার দিন আমাদের আত্মার পরিশুদ্ধি, সমাজের ঐক্য এবং আল্লাহর রহমত লাভের সোনালি সুযোগ।
এই দিনে গোসল, পরিষ্কার পোশাক, সময়মতো নামাজে যাওয়া, খুতবা শোনা, সূরা কাহফ পাঠ ও দোয়া করা—সবই মুসলিম জীবনের সৌন্দর্য বাড়ায়।
অন্যদিকে অলসতা, ব্যবসা, ও অমনোযোগিতা আমাদের ইমানকে দুর্বল করে।
অতএব, প্রতিটি মুসলমানের উচিত জুমাকে কেবল ছুটির দিন নয়, বরং “আত্মার নবজাগরণের দিন” হিসেবে পালন করা।
আরও পড়ুনসাহাবিদের প্রতি মহানবী (সা.)-এর শেষ উপদেশ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫