সাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক অধিকার সংকোচন ও জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা গুরুতর হুমকি
Published: 21st, September 2025 GMT
সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্রের ফ্যাসিস্ট প্রবণতা, গণতান্ত্রিক অধিকার সংকুচিত করা ও জাতীয় স্বার্থ ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টাকে গুরুতর হুমকি হিসেবে দেখছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটির চলমান ত্রয়োদশ সম্মেলনে উত্থাপিত রাজনৈতিক প্রস্তাবে এসবের বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করেছে দলটি।
সিপিবির রাজনৈতিক প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, পুঁজিবাদের শোষণ, মাফিয়া শাসন, সাম্প্রদায়িকতা ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে দেশপ্রেমিক জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কমিউনিস্ট ঐক্য ও বৃহত্তর বাম-গণতান্ত্রিক শক্তির সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।
সিপিবির সম্মেলন চলার মধ্যে আজ রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা এসব তথ্য জানান। সংবাদ সম্মেলনে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন ও সহসাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ বক্তব্য দেন। সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সিপিবির মিডিয়া উপপরিষদের আহ্বায়ক লাকী আক্তার।
লিখিত বক্তব্যে সিপিবির সহসাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ বলেন, সমাজ বদলের লক্ষ্যে শোষণ-বৈষম্যবিরোধী বাম গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা কর—এই স্লোগান ধারণ করে কংগ্রেসের তৃতীয় দিনের কাউন্সিল অধিবেশন চলে। ইতিমধ্যেই সিপিবির ঘোষণা ও কর্মসূচি কংগ্রেসে অনুমোদন হয়েছে। রাজনৈতিক প্রস্তাব কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে উত্থাপন করেন সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো.
‘গণতন্ত্র কায়েম করো, বাম গণতান্ত্রিক সরকার গড়ো, শোষণ-বৈষম্য উচ্ছেদ করো’ স্লোগান সামনে রেখে কংগ্রেসে রাজনৈতিক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা চলছে বলে জানান রুহিন হোসেন। তিনি বলেন, ২০২৪ সালের গণ–অভ্যুত্থানের পর মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, তা বাস্তবায়িত হয়নি। বরং উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তির উত্থান পরিস্থিতিকে অন্যদিকে সরিয়ে নিতে চাচ্ছে।
সিপিবির রাজনৈতিক প্রস্তাবে দেশে লুটেরা বুর্জোয়া ধারার মেরুকরণের বাইরে বিকল্প ক্ষমতা কেন্দ্র গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। ক্ষমতার ভারসাম্যকে মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার অনূকূলে নিয়ে আসার ঐতিহাসিক প্রয়োজন ও সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে শোষণ বৈষম্যবিরোধী গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা নির্মাণের লক্ষ্যের কথা বলা হয়েছে।
দলের রাজনৈতিক লক্ষ্য তুলে ধরে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা পুঁজিবাদী লুটপাটতন্ত্রকে প্রশ্ন করব, সাম্রাজ্যবাদ-আধিপত্যবাদকে প্রশ্ন করব এবং গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার লড়াই চালিয়ে যাব। আঁকাবাঁকা পথে চলতে হলেও আমাদের মূল লক্ষ্য গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা।’
তিনি জানান, দেশের ৬৪ জেলা থেকে আসা ৫২৫ জন প্রতিনিধি ও ২৬ জন পর্যবেক্ষক কংগ্রেসে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিনিধি তালিকায় শ্রমজীবী মানুষ, কৃষক, চা-শ্রমিক, নারী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের উপস্থিতি সিপিবির গণমুখী চরিত্রকে প্রতিফলিত করছে।
কংগ্রেসে সারা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের মধ্যে ৪৫ জন রাজনৈতিক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করেন। আগামীকাল রাজনৈতিক প্রস্তাব অনুমোদনের পাশাপাশি গঠনতন্ত্র সংশোধন, ক্রেডেনশিয়াল রিপোর্ট, অডিট কমিটির রিপোর্ট, কন্ট্রোল কমিশনের রিপোর্ট এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ও জাতীয় পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সমাপনী অধিবেশনে একসঙ্গে গাওয়া হবে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট সংগীত, যার মধ্য দিয়ে সিপিবির ত্রয়োদশ কংগ্রেসের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক লক ষ য
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের ১ শতাংশ ধনকুবেরের সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বেড়েছে
ভারতের সবচেয়ে ধনী মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তির সম্পত্তি গত প্রায় আড়াই দশকে দেড় গুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আন্তর্জাতিক গোষ্ঠী ‘জি২০’র সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে এমনটাই দেখা গিয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশ ব্যক্তির সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর আনন্দবাজার অনলাইন।
স্বতন্ত্র অর্থনীতিবিদদের নিয়ে তৈরি জি২০ গোষ্ঠীর ‘এক্সট্রাঅর্ডিনারি কমিটি অব ইনডিপেনডেন্ট এক্সপার্টস অন গ্লোবাল ইনইকুয়ালিটি’ এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। ওই কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন নোবেলজয়ী মার্কিন অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগ্লিট্জ়। এ ছাড়া কমিটিতে রয়েছেন জয়তী ঘোষ, উইনি ব্যানয়িমা, ইমরান ভালোদিয়াসহ অন্যেরা। তাদের প্রতিবেদনে বিশ্বের সার্বিক পরিস্থিতির কথাও উল্লেখ রয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, গত আড়াই দশকে (২০০০-২০২৪) বিশ্বে যত নতুন সম্পত্তি তৈরি হয়েছে, তার ৪১ শতাংশই রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের কব্জায়।
কমিটির নেতৃত্বে থাকা স্টিগ্লিট্জ় এই বিশ্বব্যাপী বৈষম্য নিয়ে সতর্ক করে করে দিয়েছেন। তার মতে, এই বৈষম্য ‘জরুরি’ পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, যা গণতন্ত্র, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং জলবায়ুগত দিক থেকে উদ্বেগজনক।
জি২০ গোষ্ঠীর ওই প্রতিবেদন অনুসারে, ২০০০-২০২৩ সালের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের সম্পত্তি ৬২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই একই সময়ে চীনেও সবচেয়ে ধনী ১ শতাংশের সম্পত্তি প্রায় ৫৪ শতাংশ বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সম্পত্তির ক্ষেত্রে চরম বৈষম্য কখনো কাম্য নয়। এটি ঠেকানো যায় এবং রাজনৈতিক ভাবে এটিকে বদলানো যেতে পারে।”
এতে জানানো হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী দারিদ্র দূরীকরণ মন্থর হয়ে গেছে। কিছু কিছু এলাকায় প্রায় থেমে গিয়েছে দারিদ্র দূরীকরণ। কোথাও কোথাও দারিদ্র বৃদ্ধি পেতেও শুরু করেছে। যে দেশগুলোতে আর্থিক বৈষম্য বেশি, সেখানে গণতন্ত্রের অবক্ষয়ের আশঙ্কাও তুলনামূলকভাবে বেশি।
ঢাকা/শাহেদ