Prothomalo:
2025-09-21@17:44:25 GMT

বইয়ের মহামেলায়, ফ্রাঙ্কফুর্টে

Published: 21st, September 2025 GMT

প্রস্তাবটা এল একেবারে আকস্মিকভাবে। আমাদের পুরোনো বন্ধু—কথাসাহিত্যিক ও আইনের অধ্যাপক—আসিফ নজরুল ফোন করে বললেন, আমাকে জার্মানিতে যেতে হবে, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে। মাসখানেকও হয়নি, বাংলাদেশের রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে বিরাট উথাল–পাথাল ঘটে গেছে। বাংলাদেশের মানুষের উত্তাল আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিক ও নিপীড়নমূলক সরকারের লজ্জাজনক পতন ঘটে গেছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের রাজপথ থেকে আসিফ নজরুল নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সদস্য হয়েছেন। তাঁর কাঁধে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের ভার। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়েরও।

আসিফ নজরুলকে বললাম, যোগ্যতর আর কাউকে এই প্রস্তাব দেওয়া যায় কি না, সেটা যেন তাঁরা ভেবে দেখেন। আসিফ বললেন, না, তাঁরা বুঝেশুনেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নিয়ে আর কোনো কথা নেই। বললেন, প্রতিবছর অনেকে মিলে জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় যান। আমলাদের সংখ্যাও কম থাকে না। এবার তাঁরা সরকারের টাকা অপচয় করতে চান না। এবার বাংলাদেশকে একজনই প্রতিনিধিত্ব করবেন। যাব কেবলই আমি।

প্রস্তাব পেয়েছি আগস্টের শেষ দিকে। বইমেলা বসবে অক্টোবরে। সময় বলতে গেলে একদমই নেই। তাড়াহুড়া করে সব করতে হবে। আসিফ বললেন, বইমেলায় এবার যেন বাংলাদেশের সেরা বইয়ের উপস্থিতি থাকে। কী কী বই যাবে, দিন দুয়েকের মধ্যে তিনি এর একটি তালিকা করে দিতে অনুরোধ করলেন। না হলে বই সংগ্রহ করে বইমেলায় সময়মতো সেগুলো পাঠানো কঠিন হবে।

বই সংগ্রহ আর পাঠানোর ব্যবস্থাপনা করবে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর অন্য বহু প্রতিষ্ঠানের মতো গ্রন্থকেন্দ্রের শীর্ষ পদও তখন শূন্য পড়ে আছে। আমার সঙ্গে যোগাযোগ হলো গ্রন্থকেন্দ্রের উপপরিচালক ফরিদউদ্দীন সরকারের সঙ্গে। বাংলাদেশের প্রায় সব প্রকাশনীর ক্যাটালগ নিয়ে আমার অফিসে এসে হাজির হলেন তিনি। দারুণ অমায়িক ও সহযোগিতাপ্রবণ নিপাট এক ভদ্রলোক। সাহিত্যজগতের কেউ নন, কিন্তু কথা বলে বিন্দুমাত্রও তা মনে হওয়ার উপায় নেই। বইয়ের জগতের সঙ্গে একাকার হয়ে আছেন। কথা বলে খুব আরাম হলো।

আমাদের পুরোনো বন্ধু—কথাসাহিত্যিক ও আইনের অধ্যাপক—আসিফ নজরুল ফোন করে বললেন, আমাকে জার্মানিতে যেতে হবে, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে। বললাম, যোগ্যতর আর কাউকে এই প্রস্তাব দেওয়া যায় কি না, সেটা যেন তাঁরা ভেবে দেখেন। আসিফ বললেন, এবার তাঁরা সরকারের টাকা অপচয় করতে চান না। এবার বাংলাদেশকে একজনই প্রতিনিধিত্ব করবেন।

রাত জেগে বাংলা আর ইংরেজি মিলিয়ে ৩০০টির মতো বইয়ের একটি তালিকা তৈরি করলাম।

ভিসার প্রক্রিয়া শুরুর দিন কয়েক আগে জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক পদে নিয়োগ হলো। নতুন কথাসাহিত্যিক আফসানা বেগম। জানতে পারলাম, ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলার সফরে তিনিও যুক্ত হচ্ছেন। সেটাই হওয়ার কথা। জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের কেউ না গেলে এই মেলায় যোগ দেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। বাংলাদেশে গ্রন্থজগতের উন্নয়ন ও বিকাশে এই প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা ধাত্রীর, যদিও দুঃখজনকভাবে অতীতের কোনো সরকারই এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বোঝেনি। জাতীয় সমাজে বইয়ের প্রসারের অর্থপূর্ণ ও বৃহত্তর ভূমিকায় কাজে না লাগিয়ে আগের সব সরকার ও আমলারা প্রতিষ্ঠানটিকে ঠুঁটো জগন্নাথ বানিয়ে রেখেছেন। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর যদি সরকার এই প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব বোঝে এবং এর মধ্যে কিছু বনিয়াদি পরিবর্তন নিয়ে আসে।

বইয়ের মহাযজ্ঞে

আমরা ফ্রাঙ্কফুর্ট গিয়ে পৌঁছালাম ১৫ অক্টোবর। ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বিশ্বের সবচেয়ে বড় বইমেলা। সারা পৃথিবী–বিস্তর লোক এই সময়ে এসে এখানে জড়ো হন—প্রকাশক, লেখক, সম্পাদক, এজেন্ট, অনুবাদক, সমালোচক, গ্রন্থাগারিক, বইয়ের বিক্রেতা ও সরবরাহকারী। কে নয়? এ কারণে সব হোটেলের দাম আকাশে চড়ে যায়। হোটেল খালি পাওয়াও দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। আমরা শেষ সময়ে যুক্ত হয়েছি। ফলে ভালো কোনো হোটেল আমাদের ভাগ্যে জোটেনি। দরিদ্র ধরনের একটা হোটেলে গিয়ে আমরা উঠেছি। এই হোটেলের একটাই ভালো দিক, রেলস্টেশনটা একেবারে লাগোয়া।

এই মেলা হয় ফ্রাঙ্কফুর্টের মেজে নামে একটা স্থানে বিশাল জায়গাজুড়ে গড়ে তোলা এক ভবনে। ভবনটি গড়ে তোলা হয়েছে নানা ধরনের মেলা আয়োজন করারই উদ্দেশ্যে। সেখানে ঢুকে চোখ ছানাবড়া হয়ে যাওয়ার জোগাড়। বাংলাদেশের স্টলে যাওয়ার জন্য করিডরের পর করিডর ধরে আমরা হেঁটে চলেছি, কিন্তু কত দূর? করিডরের কোথাও কোথাও লেখক ও পাঠকের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ছোট ছোট বিক্রয়কেন্দ্র—কলম, নোটবই, মার্কার ইত্যাদি। আর সেসব ছাপিয়ে দুই পাশে রাশি রাশি স্টলের পর স্টল চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। নানা দেশ এখানে স্টল দিয়েছে। কেউ দিয়েছে ছোট স্টল। কোনো কোনো দেশ বিরাট জায়গা নিয়ে নিজের মতো করে আঙিনা তৈরি করে নিয়েছে। সেই আঙিনার ভেতরে দেশটির প্রকাশকেরা যাঁর যাঁর সাধ্যমতো ছোট–বড় নানা আকারের স্টল বসিয়েছেন। নিজেদের প্রকাশকদের নিয়ে বিভিন্ন দেশ যেমন এসেছে, কিছু কিছু প্রকাশকও স্টল দিয়েছেন নিজ উদ্যোগে।

ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় বাংলাদেশের স্টল.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রস ত ব সরক র র গ রন থ র একট বইয় র বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

৪৬ জিম্মির ছবি প্রকাশ হামাসের, সবগুলোয় লেখা ‘রন আরাদ’

ফিলিস্তিনের গাজায় এখনো বন্দী থাকা জিম্মিদের ছবি প্রকাশ করেছে হামাস। এগুলোকে ‘বিদায়কালীন’ ছবি বলে উল্লেখ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠনটির সামরিক শাখা। হামাসের ভাষ্যমতে, ইসরায়েল যদি গাজা নগরীতে স্থল অভিযান চালিয়ে যায়, তাহলে এই জিম্মিরা বিপদের মধ্যে পড়বেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন। ইসরায়েল থেকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয় ২৫১ জনকে। ইসরায়েলি বাহিনীর তথ্যমতে, তাঁদের মধ্যে ৪৭ জন এখনো গাজায় রয়েছেন। এর মধ্যে ২৫ জন মারা গেছেন। ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় নৃশংস হামলা শুরু করে ইসরায়েল। এতে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

গতকাল শনিবার বার্তা আদান–প্রদানের অ্যাপ টেলিগ্রামে ৪৬ জিম্মির ছবি প্রকাশ করে হামাস। প্রতিটি ছবিতে রন আরাদের নাম লেখা ছিল। রন ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর একজন পাইলট। ১৯৮৬ সালে লেবাননে গৃহযুদ্ধের সময় তাঁর যুদ্ধবিমান দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ভূপাতিত হয়। তাঁকে লেবাননের শিয়া গোষ্ঠীগুলো আটক করেছিল বলে ধারণা করা হয়। পরে তাঁর আর কোনো খোঁজ মেলেনি। মরদেহও পায়নি ইসরায়েল।

টেলিগ্রামে ওই পোস্টে ছবিগুলোর পাশে হামাসের সামরিক শাখা আল–কাসেম ব্রিগেড লিখেছে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একগুঁয়েমি এবং সেনাপ্রধান ইয়াল জমিরের নতি স্বীকার করার কারণে গাজা নগরীতে অভিযান শুরুর সময় এই বিদায়ী ছবিগুলো তোলা হয়েছিল। তবে এই জিম্মিদের কতজন মারা গেছেন বা জীবিত আছেন, তা পোস্টে উল্লেখ করা হয়নি।

আরও পড়ুনফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিল যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া৩ ঘণ্টা আগে

গাজায় চলমান নৃশংসতার মধ্যেই গত মঙ্গলবার থেকে গাজা নগরীতে স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর পর থেকে সেখানে তীব্র হামলা চালানো হচ্ছে। শহর এলাকাটি থেকে পালিয়েছেন সাড়ে ৪ লাখ ফিলিস্তিনি। এই স্থল অভিযানের বিরোধিতা করে আসছেন জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের মতে, এতে জিম্মিদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়বে। একই কথা সেনাপ্রধান ইয়াল জমিরেরও।

এদিকে আজ রোববারও গাজা নগরীর বেশ কয়েকটি আবাসিক ভবনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এদিন সেখানে অন্তত ৩১ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অন্তঃসত্ত্বা এক নারী ও তাঁর দুই শিশুসন্তান। ওই নারীর শ্বশুর মোসাল্লাম আল–হাদাদ রয়টার্সকে বলেন, ‘আমার পুত্রবধূ, তার ছেলে, মেয়ে ও গর্ভে থাকা সন্তান, সবাইকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। আর আমার ছেলের অবস্থা গুরুতর।’

আরও পড়ুনগাজায় জাতিসংঘ কেন এত অক্ষম, এত অসহায়৮ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ