এনসিপির কমিটিতে আ.লীগ নেতাকর্মী, সমালোচনার ঝড়
Published: 21st, June 2025 GMT
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজলায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ১৯ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পদ দেওয়ার অভিযোগ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।
তিন মাসের জন্য গঠিত এই কমিটিতে প্রধান সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন মাহমুদুল হাসান, যুগ্ম সমন্বয়কারী হিসেবে আছেন আশিক পাঠান। বাকি ১৭ জন আছেন সদস্য পদে। গত ১৮ জুন এনসিপি’র মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম ও সদস্য সচিব আখতার হোসেন স্বাক্ষরিত এই সমন্বয় কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
জানা গেছে, সদ্য ঘোষিত এনসিপি’র গৌরীপুর উপজেলা কমিটির সদস্য হয়েছেন গিয়াস উদ্দিন। তিনি উপজেলার ভাংনামারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি।
আওয়ামী লীগ ছেড়ে কেন এনসিপিতে এলেন? এই প্রশ্নের জবাবে গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘এখন দেশে আর আওয়ামী লীগ নেই। তাদের রাজনীতি করে আর লাভ নেই। শেখ হাসিনা আর ফিরতে পারবে কিনা তার গ্যারান্টি নেই। তাই এখন নতুন দল এনসিপিতে আছি।’
অভিযোগ আছে, কমিটির অপর সদস্য সেলিম মিয়া ছিলেন ভাংনামারী ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতা। গত বছরের ৫ আগস্টের পর ভোল পাল্টে এখন এনসিপির কমিটিতে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। এছাড়া তার বাবা আব্দুস সাত্তার বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। তার ছোট ভাই শামীম আহমেদ আকাশ ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবকলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
সেলিম মিয়ার ভাষ্য, তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন। মামলা হামলা থেকে নিজে ও পরিবারকে বাঁচাতে আওয়ামী লীগ ছেড়ে এনসিপিতে পদ নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সাক্ষাতে কথা বলবেন বলেই ফোন কল কেটে দেন।
এনসিপির আরেক সদস্য সুরুজ আলীও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্টের আগে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে তার অবস্থান ছিল দাবি স্থানীদের।
এছাড়া ভাংনামারী ইউনিয়নের লক্ষীপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফুল আলম লিটনের স্ত্রী দিনা আক্তার পেয়েছেন এনসিপির সদস্য পদ। এ বিষয়ে দিনা আক্তারের মন্তব্য জানতে চাইলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
প্রধান সমন্বয়কারী মাহমুদুল হাসান সমকালকে বলেন, নতুন কমিটি হয়েছে। আমি সবাইকে ভালোভাবে চিনি না। জেলার নেতারা অনেককেই পদায়ন করেছেন। তবে আমরা এখন এগুলো যাচাই-বাছাই করবো। কারও বিরুদ্ধে আওয়ামী সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হবে।
ময়মনসিংহ জেলা সমন্বয় কমিটির সদস্য ও গৌরীপুর উপজেলার বাসিন্দা তারিক হোসেনের ভাষ্য, যারা কমিটিতে এসেছেন তারা যদি জুলাই-আগস্টে আন্দোলনের বিরোধীতা করে থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কেও যদি আওয়ামী লীগ করে থাকে তাহলে তো আর দেশের নাগরিকিত্ব চলে যাবে না। তারা কখনোই চান না একজন নিরপরাধ ব্যাক্তি শাস্তি পাক। তিনি বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি কোনো প্রোগ্রাম উপলক্ষে চাদাবাজি করে না। এখানে যারা রাজনীতি করে তারা সবাই নিজেদের পকেট থেকে টাকা খরচ করে দল চালায়।
ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আজিজুল হাকিম আজিজ বলেন, ‘দীর্ঘ ১৭ বছর আমরা হাসিনা বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে হামলা মামলার শিকার হয়েছি। এখন ফ্যাসিস্টদের পতন হলে যখন তাদের বিচারের সময় এসেছে তখন তারা এনসিপির আশ্রয়-প্রশ্রয়ে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এনস প আওয় ম ল গ কম ট র সদস য এনস প র ন এনস প কম ট ত র কম ট আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
বীর মুক্তিযোদ্ধাকে নানা সাজিয়ে পুলিশে চাকরি
নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হককে নানা সাজিয়ে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় পুলিশে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সম্রাট হাসান তুহিন নামে এক যুবকের বিরুদ্ধে। তিনি বর্তমানে রাঙামাটির কাউখালী থানায় কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত। তার বিপি নম্বর ৯৪১৪১৭১২০৯।
অভিযুক্ত তুহিন সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার শেখেরগাঁও গ্রামের মৃত গিয়াস উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় তুহিনের স্ত্রী হোসনা বেগম গত ১৬ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন।
আরো পড়ুন:
৭১-এর মতো ২৪-এ বুক পেতে দিয়েছেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী: হাফিজ
মুজিবনগর সরকারের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের খবর ‘মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালে হোসনা বেগমের সঙ্গে পারিবারিকভাবে তুহিনের বিয়ে হয়। ২০১৪ সালে পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগদানের সময় তিনি মোহনগঞ্জ উপজেলার শেখপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হককে নানা সাজিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুনামগঞ্জ নোটারি পাবলিকে হলফনামা তৈরি করেন। এতে নিজেকে ওই মুক্তিযোদ্ধার দৌহিত্র পরিচয় দেন। পরে সেই নকল হলফনামা ব্যবহার করে মুক্তিযোদ্ধা কোটার সুবিধায় পুলিশে চাকরি নেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হক বলেন, ‘‘তুহিন নামে আমার কোনো নাতি নেই। হলফনামায় দেওয়া স্বাক্ষরও আমার নয়। কে বা কারা প্রতারণা করেছেন, তাদের শাস্তি চাই।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘আমার দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে মোহনগঞ্জেই, সুনামগঞ্জে নয়।’’
অভিযোগকারী হোসনা বেগম বলেন, ‘‘তুহিন প্রতারণা করে আমার অজান্তে বীর মুক্তিযোদ্ধা মনজুরুল হকের সনদ ব্যবহার করে চাকরি নেন। তিনি আমার নানা নন।’’
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে তুহিন দাবি করেন, ‘‘স্ত্রীর সঙ্গে পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এমন অভিযোগ করা হয়েছে। মনজুরুল হক আমার নানা, তার সনদেই চাকরি নিয়েছি। প্রতারণা করে থাকলে এতদিন চাকরিতে থাকা সম্ভব হতো না।’’
ময়মনসিংহ দুদক সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক তাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘অভিযোগটি ঢাকায় পাঠানো হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিধিসম্মত হলে তদন্ত করে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/ইবাদ/বকুল