বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকা ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয়ের সদস্যভুক্ত সরকারি ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনের দায়ে দুই পরীক্ষার্থীর তিন দিন করে জেল হয়েছে। গত শুক্রবার ৮টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র অফিসারের ৯৭৪টি শূন্য পদে নিয়োগের জন্য এ লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি সচিবালয় (বিএসসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০২২ সালভিত্তিক সিনিয়র অফিসারের লিখিত পরীক্ষায় সিদ্ধেশ্বরী কলেজ কেন্দ্রের ১৯৬৬৫৩ রোল নম্বরধারী প্রকৃত পরীক্ষার্থী ছিলেন মো.

রাসেল রানা। তিনি ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈলের মো. রুহুল আমিনের ছেলে। তার পরিবর্তে পরীক্ষায় অংশ নিতে আসেন ভুয়া পরীক্ষার্থী ঢাকার মোহাম্মদপুরের শাহরিয়ার আলম। সিদ্ধেশ্বরী কলেজ কেন্দ্রের দায়িত্বরত পরিদর্শক বিষয়টি বুঝতে পেরে কয়েকটি কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার শামসুন নাহার শিলাকে অবহিত করেন। কাগজপত্র যাচাই ও তার স্বীকারোক্তি শেষে তিনি ওই প্রার্থীকে তাৎক্ষণিক তিন দিনের কারাদণ্ড দেন।

অন্যদিকে খিলগাঁও গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রে ১০৬২০৯ রোল নম্বরধারী রেজুয়ান তাউফিক। তিনি রাজশাহীর মতিহারের বিনোদপুর বাজারের আব্দুল খালেকের ছেলে। তিনি ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যশবহার করে বাইরে থেকে প্রশ্নের উত্তর জেনে নিচ্ছিলেন। ওই কক্ষে দায়িত্বরত পরিদর্শকের কাছে বিষয়টি ধরা পড়লে তিনি নির্বাহী ম্যা জিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনারকে অবহিত করেন। ওই প্রার্থীকেও তাৎক্ষণিক ৩ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

বিএসসির একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, স্বচ্ছতার সঙ্গে প্রতিটি নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে। যে কোনো ধরনের অসুদপায় অবলম্বনের খবর পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন য় গ পর ক ষ পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

গণ–অভ্যুত্থানে বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল না: নাহিদ ইসলাম

জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে বিদেশি ‘শক্তির’ ইন্ধন থাকার যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা অসত্য বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। গতকাল রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র নিযুক্ত আসামিপক্ষের আইনজীবী আমির হোসেন জেরা করেন তাঁকে।

জেরার এক পর্যায়ে নাহিদকে আসামিপক্ষের আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘দেশি-বিদেশি শক্তির ইন্ধন ছিল বিধায় আপনারা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।’

জবাবে নাহিদ বলেন, এ কথা সত্য নয়।

এরপর নাহিদকে আইনজীবী প্রশ্ন করেন, ‘৩ আগস্ট (২০২৪ সাল) সরকার পতনের এক দফা কর্মসূচি ছিল আপনাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনার ফলশ্রুতি।’

জবাবে নাহিদ বলেন, এ কথাও সত্য নয়।

তখন আইনজীবী বলেন, জুলাই আন্দোলনের পেছনে দেশি-বিদেশি শক্তির হাত ছিল।

নাহিদের জবাব ছিল আগের মতোই—এ কথাও সত্য নয়।

এ সময় প্রসিকিউশনের (রাষ্ট্রপক্ষ) পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম বলেন, এখানে সরকার পরিবর্তনের বিচার হচ্ছে না। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের বিষয়টিকে কোনো চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। তখন ট্রাইব্যুনাল বলেন, এর সঙ্গে এটা প্রাসঙ্গিক।

এরপর নাহিদের উদ্দেশে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট পদত্যাগ করেননি। তখন নাহিদ বলেন, এ কথা সত্য নয়।

পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী আবার বলেন, পালিয়ে নয়, বাধ্য হয়ে ভারতে যান শেখ হাসিনা। তখন নাহিদ বলেন, এটাও সত্য নয়। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছেন।

যে মামলায় নাহিদকে আসামিপক্ষের আইনজীবী জেরা করেছেন, সেই মামলায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনও আসামি। এর মধ্যে মামুন দোষ স্বীকার করে ‘অ্যাপ্রুভার’ (রাজসাক্ষী) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল তাঁকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

ষড়যন্ত্রের কিছু নেই

জেরার মাধ্যমে নাহিদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। জেরা শেষে গতকাল দুপুরে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সে সময় নাহিদকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। কিন্তু পতনের আগে ৪ আগস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সরকারপ্রধান হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এ জায়গাটা ধরেই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, তাহলে ষড়যন্ত্র বা পরিকল্পনা আগে থেকেই হয়েছে কি না?

জবাবে নাহিদ বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সে সময় জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। ১৬ বছর ধরে ভোটাধিকার হরণ করে, নাগরিক অধিকার হরণ করে তারা ক্ষমতায় ছিল। শান্তিপূর্ণ জুলাই–আগস্টের আন্দোলনে গুলি চালিয়েছে, হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে এক দফা ঘোষণা করা, সরকার উৎখাত করার প্রস্তুতি নেওয়াটা বৈধ। এখানে ষড়যন্ত্রের কিছু নেই। এটা জনগণের পক্ষ থেকে বৈধ ছিল। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাজপথে নেমে এসেছিল, জীবন দিয়ে প্রতিরোধ করে এই সফলতা নিয়ে এসেছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার এ মামলার জবানবন্দিতে নাহিদ বলেছেন, পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে তাঁরা নতুন সরকার গঠনের জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগেই তাঁকে নতুন সরকারের প্রধানের দায়িত্ব নিতে প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

‘আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত’

সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নে নাহিদ ইসলাম বলেন, ব্যক্তি হিসেবে শেখ হাসিনাকে আসামি করে এই মামলা চলমান। তাঁরা মনে করেন, এটা শুধু ব্যক্তিগত সংঘটিত অপরাধ নয়; বরং এটা রাজনৈতিক অপরাধ। ফলে দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিচারের আওতায় আনা উচিত। ট্রাইব্যুনালের সে সুযোগ আছে। এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের কাছে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ এসেছে।

নাহিদ বলেন, শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান এবং রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করতে, ক্ষমতায় টিকে থাকতে জনগণের বিরুদ্ধে গিয়ে জনগণকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। জনগণ প্রতিরোধ করে তাঁকে উৎখাত করেছে। ফলে এটা আওয়ামী লীগের সংঘটিত অপরাধ। আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বিচারের আওতায় দ্রুত সময়ের মধ্যে আনা উচিত।

পরে এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং ১৪–দলীয় জোটের সম্পৃক্ততার অকাট্য প্রমাণ ট্রাইব্যুনালে আসছে। সুতরাং এই সিদ্ধান্ত (দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচার) নেওয়ার সুযোগ আছে। প্রসিকিউশন এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। এটা নিয়ে প্রসিকিউশন ভাববে।

‘মার্চ টু ঢাকা’

নাহিদ ইসলামের পর এই মামলার ৪৮তম সাক্ষী হিসেবে গতকাল ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দেন ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময়ে প্রায় ১৩৪ জনের লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হয়।

গত বছরের ৩০ জুলাই সরকার পক্ষ থেকে ‘শোক দিবস’ ঘোষণা করা হলে আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করেন—এ বিষয়টি জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন আলী আহসান। তিনি বলেন, শোক দিবস পালন কর্মসূচি প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলনকারীরা চোখেমুখে লাল কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ কর্মসূচি নেন এবং ফেসবুক প্রোফাইল লাল করার আহ্বান জানানো হয়। এই কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে সাড়া পড়ে এবং ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের ফেসবুক প্রোফাইল লাল হয়ে যায়।

জবানবন্দিতে আলী আহসান উল্লেখ করেন, ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে আনার পরামর্শ সমন্বয়ক আসিফ (স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া) ও সাদিক কায়েমকে (এখন ডাকসুর ভিপি) তিনি দিয়েছিলেন। পরে ৪ আগস্ট রাতে মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি এক দিন এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট করার ঘোষণা দেওয়া হয়।

দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান আবু সাঈদ

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ষষ্ঠ সাক্ষী হিসেবে গতকাল আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ জবানবন্দি দেন শিক্ষার্থী মো. সিয়াম আহসান। তিনি বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপের প্রতিবাদে আবু সাঈদ দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়িয়ে যান। পুলিশ তাঁকে গুলি করে। আহত আবু সাঈদকে উদ্ধার করে আনতে গিয়ে নিজেও গুলিবিদ্ধ হন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন সিয়াম।

সম্পর্কিত নিবন্ধ