যুক্তরাষ্ট্র গত দুই দশকে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন আটকাতে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, নাশকতা, সাইবার হামলা, কূটনৈতিক আলোচনাসহ নানা কৌশল ব্যবহার করেছে। কিন্তু কখনো সরাসরি সামরিক শক্তি প্রদর্শনে জড়ায়নি।

অন্তত চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট অত্যন্ত সচেতনভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রেখেছিলেন, গত শনিবার মধ্যরাতের পর সরাসরি সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে সেই যুদ্ধেই ঢুকে পড়েছেন ট্রাম্প।

১৩ জুন ইরানে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করে ইসরায়েলে। এর পর থেকে দুই দেশ আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুননেতানিয়াহুর ফাঁদে পা দিলেন ট্রাম্প১১ ঘণ্টা আগে

ইসরায়েলের হামলা থেকে তেহরানের যেসব নেতা ও জেনারেল বেঁচে গেছেন, তাঁরা দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন—কয়েক দিন ধরে এ আশঙ্কার কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলে আসছিলেন, তিনি সেই ঝুঁকি নিতে পারেন না।

এ নিয়ে নানা কথার মধ্যেই ট্রাম্প আচমকা পৃথিবীর আরেক প্রান্ত থেকে বি-২ বোমারু বিমান পাঠিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা হামলা চালিয়েছেন।

ট্রাম্পের হামলার মূল লক্ষ্য ছিল, ভূগর্ভের গভীরে অবস্থিত ইরানের ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যেখানে ইসরায়েলের পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না।

কোনো শত্রুরাষ্ট্রের পারমাণবিক অবকাঠামোর ওপর হামলার এ সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের এখন পর্যন্ত নেওয়া সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপ নিয়ে সম্ভবত তিনি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক জুয়া খেলেছেন।

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ঘাঁটিতে ৪০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ইরানের নেতৃত্বে যে ধরনের হামলাই হোক, এসব ঘাঁটি তার মূল লক্ষ্যবস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।

আরও পড়ুনসংঘাতের গতিপথ বদলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এখন কী করবে১৮ ঘণ্টা আগে

ট্রাম্পের বাজি, যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলা প্রতিহত করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের এসব ঘাঁটির সবই তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র বহরের নাগালের মধ্যে।

ইসরায়েল প্রায় ১০ দিন ধরে ইরানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প হয়তো ধরে নিয়েছেন, এতে ইরান ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।

সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করে সম্ভবত ট্রাম্প এ বাজি ধরেছেন যে সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ ও সাইবার হামলার মতো আক্রমণ চালিয়ে পরোক্ষভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিচিত কৌশল অবলম্বন করা থেকে ইরানকে তিনি বিরত রাখতে পারবেন।

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্যদের একজন সিনেটর জ্যাক রিড বলেন, এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছেন। এখনো কেউ জানেন না, তিনি এ বাজিতে জিতবেন কি না।

যুদ্ধ শেষ করার চেয়ে শুরু করা সহজ বলেও মন্তব্য করেন রিড।

আরও পড়ুনইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা: ট্রাম্পের ‘দুই সপ্তাহ’ সময় কি তবে ফাঁকি দেওয়ার ছল ছিল২২ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বকাপ খেলাই অনিশ্চিত ইরানের, নিষেধাজ্ঞার শঙ্কা

২০২৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের মূল আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র, সাথে আছে কানাডা ও মেক্সিকো। টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ ম্যাচ এমনকি ফাইনালও অনুষ্ঠিত হবে যুক্তরাষ্ট্রে। এতে অংশগ্রহণই অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এরইমধ্যে কোয়ালিফাই করা ইরানের। সাম্প্রতিক বিমান হামলা ও যুদ্ধাবস্থার প্রেক্ষাপটে বিশ্বকাপ থেকে নিষিদ্ধ করা হতে পারে ইরানকে। এমন শঙ্কাই তৈরি হয়েছে কূটনৈতিক ও ক্রীড়া মহলে। চলতি বছরের মার্চে উজবেকিস্তানের বিপক্ষে ড্র করে বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছিল ইরান। 

ইতোমধ্যেই নানা আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে যুদ্ধরত দেশগুলোকে নিষিদ্ধ করার নজির রয়েছে। যেমন, ইউক্রেনে হামলার পর রাশিয়াকে আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নিষিদ্ধ করেছে ফিফা ও উয়েফা। ৯০ দশকে বলকান সংঘাতের সময় নিষিদ্ধ হয়েছিল যুগোস্লাভিয়া। সে হিসেবে ইরানের ওপরও এমন নিষেধাজ্ঞা আরোপের আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না ক্রীড়া বিশ্লেষকরা।

এদিকে চলতি মাসের শুরুতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১২টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, যার মধ্যে ইরানও রয়েছে। যদিও খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফদের ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় দেওয়া হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বর্তমানে বিশ্বকাপের সূচি অনুযায়ী, গ্রুপ এ-তে থাকলে ইরান তাদের সব ম্যাচ মেক্সিকোতে খেলতে পারে। তবে গ্রুপ পর্ব পেরুলেই খেলতে হবে যুক্তরাষ্ট্রে, যা টুর্নামেন্ট আয়োজকদের জন্য বাড়তি মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।

এদিকে, যুদ্ধাবস্থায় নিজ দেশেই আটকা পড়েছেন ইরানি তারকা মেহদি তারেমি। ইন্টার মিলান তাকে ক্লাব বিশ্বকাপের দলে রেখেছে, কিন্তু তেহরান ছাড়তে না পারায় যুক্তরাষ্ট্রে দলের সঙ্গে যোগ দিতে পারেননি। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে, ইতালির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত তারোমিকে উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে।

ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু বলেননি। তবে যুদ্ধ পরিস্থিতির অবনতি হলে বিশ্বকাপে ইরানের অংশগ্রহণ একপ্রকার অনিশ্চিত বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ