মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোকে ঝুঁকিতে ফেললেন ট্রাম্প
Published: 23rd, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র গত দুই দশকে ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন আটকাতে দেশটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, নাশকতা, সাইবার হামলা, কূটনৈতিক আলোচনাসহ নানা কৌশল ব্যবহার করেছে। কিন্তু কখনো সরাসরি সামরিক শক্তি প্রদর্শনে জড়ায়নি।
অন্তত চারজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট অত্যন্ত সচেতনভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যে যে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া থেকে বিরত রেখেছিলেন, গত শনিবার মধ্যরাতের পর সরাসরি সামরিক শক্তি প্রদর্শন করে সেই যুদ্ধেই ঢুকে পড়েছেন ট্রাম্প।
১৩ জুন ইরানে হামলা চালিয়ে দেশটির কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও পরমাণুবিজ্ঞানীকে হত্যা করে ইসরায়েলে। এর পর থেকে দুই দেশ আকাশপথে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
আরও পড়ুননেতানিয়াহুর ফাঁদে পা দিলেন ট্রাম্প১১ ঘণ্টা আগেইসরায়েলের হামলা থেকে তেহরানের যেসব নেতা ও জেনারেল বেঁচে গেছেন, তাঁরা দেশটির পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতে পারেন—কয়েক দিন ধরে এ আশঙ্কার কথা জানিয়ে ট্রাম্প বলে আসছিলেন, তিনি সেই ঝুঁকি নিতে পারেন না।
এ নিয়ে নানা কথার মধ্যেই ট্রাম্প আচমকা পৃথিবীর আরেক প্রান্ত থেকে বি-২ বোমারু বিমান পাঠিয়ে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে সবচেয়ে শক্তিশালী বোমা হামলা চালিয়েছেন।
ট্রাম্পের হামলার মূল লক্ষ্য ছিল, ভূগর্ভের গভীরে অবস্থিত ইরানের ফর্দো ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র, যেখানে ইসরায়েলের পক্ষে পৌঁছানো সম্ভব ছিল না।
কোনো শত্রুরাষ্ট্রের পারমাণবিক অবকাঠামোর ওপর হামলার এ সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্পের এখন পর্যন্ত নেওয়া সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। এ পদক্ষেপ নিয়ে সম্ভবত তিনি এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বিপজ্জনক জুয়া খেলেছেন।
মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ছড়িয়ে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ঘাঁটিতে ৪০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিতে ইরানের নেতৃত্বে যে ধরনের হামলাই হোক, এসব ঘাঁটি তার মূল লক্ষ্যবস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।
আরও পড়ুনসংঘাতের গতিপথ বদলে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এখন কী করবে১৮ ঘণ্টা আগেট্রাম্পের বাজি, যুক্তরাষ্ট্র এসব হামলা প্রতিহত করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের এসব ঘাঁটির সবই তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র বহরের নাগালের মধ্যে।
ইসরায়েল প্রায় ১০ দিন ধরে ইরানে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প হয়তো ধরে নিয়েছেন, এতে ইরান ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে।
সেই ধারণার ওপর ভিত্তি করে সম্ভবত ট্রাম্প এ বাজি ধরেছেন যে সন্ত্রাসবাদ, অপহরণ ও সাইবার হামলার মতো আক্রমণ চালিয়ে পরোক্ষভাবে প্রতিশোধ নেওয়ার পরিচিত কৌশল অবলম্বন করা থেকে ইরানকে তিনি বিরত রাখতে পারবেন।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্যদের একজন সিনেটর জ্যাক রিড বলেন, এর মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছেন। এখনো কেউ জানেন না, তিনি এ বাজিতে জিতবেন কি না।
যুদ্ধ শেষ করার চেয়ে শুরু করা সহজ বলেও মন্তব্য করেন রিড।
আরও পড়ুনইরানে যুক্তরাষ্ট্রের হামলা: ট্রাম্পের ‘দুই সপ্তাহ’ সময় কি তবে ফাঁকি দেওয়ার ছল ছিল২২ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ইসর য় ল সবচ য়
এছাড়াও পড়ুন:
যেটা ৮ মাসে হয়নি, সেটা ৮ দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে
সরকার সর্বশেষ জানিয়েছে এক সপ্তাহের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করে একটা সমঝোতা করে সরকারকে জানাতে, না হলে তারা সিদ্ধান্ত দিয়ে দেবে। এটা নিঃসন্দেহে সুবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নয়। কারণ, এই দলগুলো গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রায় আট মাসে অনেকবার আলোচনায় বসলেও ঐকমত্য হয়নি। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, অর্থাৎ ওখানে সমঝোতাকারীও ছিল ঐকমত্য কমিশন। সেই আলোচনায় যখন অনেকগুলো বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি, এখন রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা নিজেরা বসে ঐকমত্যে আসবে; যেটা আট মাসেও হয়নি, সেটা আট দিনের কম সময়ে কীভাবে হবে? এটা মোটেও সুবিবেচনাপ্রসূত পদক্ষেপ নয়।
ঐকমত্য কমিশন যে সুপারিশ করেছে গণভোট হবে, সংবিধানের আদেশ জারি হবে—এ পরামর্শগুলো বাস্তবসম্মত নয়। আইনের ইতিহাসে এ রকম প্রস্তাব কখনো চোখে পড়েনি। গণভোট হয় আগের প্রতিনিধিত্বমূলক একটা প্রতিষ্ঠান, যেমন সংসদ; সংসদ কোনো একটা প্রস্তাব পাস করল, সেটা যদি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন সেটার ব্যাপারে জনগণের প্রতিক্রিয়া জানার জন্য গণভোট হয়। সাধারণত আগে গণভোটের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়। তারপর সেটা জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এখানে হচ্ছে উল্টো। এটা আমার দৃষ্টিতে অবাস্তব।
এখানে গণভোটের জন্য ৪৮টি প্রস্তাব আছে, এত বড় দলিল পড়ে, বুঝে জনগণের ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ বলা বা সিদ্ধান্তে আসা প্রায় অসম্ভব। তা ছাড়া এসব প্রস্তাবের মধ্যে কেউ ৭টি বিষয়ে একমত হলো, ২৪টি বিষয়ে একমত হলো না, তখন কী হবে? প্রথমত, এই ৪৮টি বিষয় পড়ে বোঝা একটা ব্যাপার। সেটা আমার মনে হয় না যে ১০ ভাগ লোক এটার জন্য প্রস্তুত আছে। প্রায় সবাই কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে একমত হবে, কিছু প্রস্তাবের সঙ্গে দ্বিমত করবে।
সংবিধান–সংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো যদি পস করতে হয়, তাহলে বর্তমান সংবিধানকে বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া আগামী সংসদ কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা গণভোটের মাধ্যমে বেঁধে দেওয়া এবং ২৭০ দিনের মধ্যে পাস না করলে অটো পাস হয়ে যাবে, এটা আইনের ইতিহাসে নেই। সংসদ হলো সার্বভৌম। ত্রয়োদশ সংসদ যদি কোনো আইন পাস করে বলে পরবর্তী চতুর্দশ বা পঞ্চদশ সংসদ এই আইন বাতিল করতে পারবে না বা পরিবর্তন করতে পারবে না, এটা কখনো হয় না। কারণ, একটা সংসদ আরেকটা সংসদের হাত-পা বেঁধে দিতে পারে না। এটা আইনের মৌলিক ধারণার সম্পূর্ণ পরিপন্থী। এখন ২৭০ দিনের মাথায় যদি এটা পাস বলে গণ্য ধরেই নেওয়া হয়, তাহলে ২৭০ দিন আলোচনার মূল্য কী? তাহলে এই আলোচনাও সম্পূর্ণ অর্থহীন, কোনো যৌক্তিকতা নেই।
‘আমাদের সংবিধান খারাপ, সংবিধানের কিছু মৌলিক সংস্কার করতে হবে’—এসব আলোচনা থেকে সংবিধান সংস্কারের ধারণাটি এসেছে। সংবিধান সংস্কার করলে ভবিষ্যতে কখনো স্বৈরাচারী সরকার আসবে না, গণতন্ত্র থাকবে, জবাবদিহি থাকবে, আইনের শাসন থাকবে—এই বিষয়গুলো যদি সংবিধানের ধারার ওপর নির্ভর করত, তাহলে দুনিয়ার সব দেশেই গণতন্ত্র থাকত, ন্যায়বিচার থাকত, স্বৈরশাসন থাকত না। অনেক দেশ আছে—যুক্তরাজ্য, কানাডা, ওদের সংবিধানই নেই, কিন্তু ওদের দেশে গণতন্ত্র আছে, স্বৈরাচার নেই।
অন্যদিকে আমাদের মতো বহু দেশে অনেক ভালো ভালো সংবিধান আছে। রাশিয়ার সংবিধানে অনেক ভালো কথা লেখা আছে। কিন্তু রাশিয়ায় কি কোনো গণতন্ত্র আছে?
অতএব, সংবিধান ভালো হলে দেশ ভালো হয়ে যাবে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। দেশে গণতন্ত্র থাকবে, স্বৈরাচার থাকবে না, ন্যায়বিচার থাকবে—এগুলোর জন্য সংবিধানের গুরুত্ব কম। এটা রাজনৈতিক চর্চার বিষয়।
দেশে ন্যূনতম আইনের শাসন থাকলে এবং বিচার বিভাগ যদি স্বাধীন হয়, তাহলে গণভোটের পর সাংবিধানিক আদেশ জারি আদালতের মুখোমুখি হতে পারে। এর থেকে বের হওয়ার উপায় হলো দ্রুত সংসদ নির্বাচন দেওয়া। একটা রাজনৈতিক দল নিশ্চয়ই বলবে, আমরা সংসদে গেলে এই সংবিধানে যেসব গলদ আছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার করব। এটি পরবর্তী সংসদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত।