১৩ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত, দু’জন হাসপাতালে ভর্তি
Published: 25th, June 2025 GMT
শেরপুর শহরের গোপালবাড়ি মহল্লার ট্রাক টার্মিনাল এলাকায় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের ১৩ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাতে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। আহত দুই শিক্ষার্থীকে গত সোমবার মধ্যরাতে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
তারা হলো– গোপালবাড়ি মহল্লার মাইনুল ইসলামের মেয়ে মারিয়া আক্তার জুঁই ও জজ মিয়ার মেয়ে ফাতেমা আক্তার ঝুমা। দু’জনেই পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী। অন্যদের স্থানীয় হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শিশুদের সঙ্গে এমন সহিংস আচরণের বিচার দাবি করেছেন আহত শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও স্থানীয়রা।
জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে ইউনাইটেড স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা চলছিল। আহত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর খাতা জমা দিতে দেরি করায় শিক্ষক পঙ্কজ চক্রবর্তী ১৩ শিক্ষার্থীকে বেত্রাঘাত করেন। এ সময় অজ্ঞান হয়ে যায় তিন শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থী জুঁইয়ের মা স্বপ্না আক্তারের ভাষ্য, জুঁইয়ের দুই সহপাঠী বাড়িতে এসে তাঁকে খবর দেয় তাঁর মেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখতে পান শিক্ষক পঙ্কজ মাথায় পানি ঢালছেন আর একজন নারী শিক্ষক মেয়েকে ধরে আছেন।
আহত ঝুমার মা রিনা বেগম জানান, তাঁর মেয়ের শরীরের পেছনের অংশে এবং পায়ে বেত্রাঘাতে লাল লাল দাগ পড়ে গেছে। আঘাত এতটাই মারাত্মক যে, মেয়ে উঠে দাঁড়াতে পারছে না। পা অবশ হয়ে যায়। রাত ১২টার দিকে জ্বর ও অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে মেয়েকে হাসপাতালে ভর্তি করেন তারা।
তবে অভিযুক্ত শিক্ষক পঙ্কজ চক্রবর্তী বলেন, ‘১৩ শিক্ষার্থীকে প্রশ্ন লিখতে দিয়েছি। কিন্তু তারা শ্রেণিকক্ষে সবসময় ঝামেলা করে। কথা শুনতে চায় না। দেখাদেখি করে লিখে। টেবিলের নিচে বই রেখে লিখে। এর আগেও এমন করেছে। এ জন্য তাদের শাসন করতে দুইবার করে বেত্রাঘাত করেছি। দুই অভিভাবক আপত্তি করেছেন। তারা ঘটনা অতিরঞ্জিত করার জন্য শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে নিয়ে গেছেন।’
কথা হয় সদর হাসপাতালের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাহেরাতুল আশরাফির সঙ্গে। তিনি বলেন, দুই শিক্ষার্থীর শরীরে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল।
সদর থানার ওসি জুবায়দুল আলম জানান, অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ১৩ শ ক ষ র থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চুক্তি হতে পারে আগামী মাসে
বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কহার ২০ শতাংশ। দেশটি গত ২ আগস্ট এই ঘোষণা দেওয়ার পর তিন মাস হতে চলল। অথচ দেশটির সঙ্গে এখনো বাংলাদেশের কোনো চুক্তি হয়নি। চুক্তি হতে আরও এক মাস সময় লাগতে পারে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্কের হার ঘোষণার পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, চুক্তির খসড়া তৈরির কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর)। আর চুক্তি হতে দুই-তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ইউএসটিআর খসড়া শেষ করে বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে আগেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তা দেখে ও মতামত দিয়ে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এতে শুল্কহার ২০ শতাংশ থেকে আরও কমানোর কথা বলা হয়েছে, তবে একটি অনুচ্ছেদের (প্যারাগ্রাফ) সমাধান হয়নি। তাই চুক্তির দিনও ঠিক হয়নি।
এ নিয়ে সম্প্রতি জানতে চাইলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের উপকরণ ব্যবহার করে যদি রপ্তানি পণ্য তৈরি করা হয়, তাহলে যেন শুল্ক না থাকে, এটা আমরা চেয়েছি। ইউএসটিআর এ ব্যাপারে নেতিবাচক নয়। আশা করছি, চলতি মাসের শেষে না হলেও আগামী মাসে চুক্তি হয়ে যাবে।’ এর আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতি সাপেক্ষে এ চুক্তি প্রকাশ করা হবে।
চুক্তি না হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ৭ আগস্ট থেকে ২০ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একটি যৌথ বিবৃতি আসার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের উপকরণ ব্যবহার করে যদি রপ্তানি পণ্য তৈরি করা হয়, তাহলে যেন শুল্ক না থাকে, এটা আমরা চেয়েছি। ইউএসটিআর এ ব্যাপারে নেতিবাচক নয়। আশা করছি, চলতি মাসের শেষে না হলেও আগামী মাসে চুক্তি হয়ে যাবেমাহবুবুর রহমান, বাণিজ্যসচিবযুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি বোয়িং থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার কথা বাংলাদেশের, তবে ২০৩৭ সালে প্রথম উড়োজাহাজ সরবরাহ করতে পারবে কোম্পানিটি। বাংলাদেশ বছরে ১ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ২ হাজার কোটি মার্কিন ডলারের খাদ্যপণ্য আমদানি করে। যুক্তরাষ্ট্রও যেহেতু কৃষিপণ্যের বৃহৎ উৎপাদক, তাই তারা বাংলাদেশের বাজার ধরতে চায়।
বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি ৬০০ কোটি ডলারের মতো। জ্বালানি ও কৃষিপণ্য আমদানির মাধ্যমেই বাণিজ্যঘাটতি কমানো হবে। এখন তুলা, সয়াবিন, ভুট্টা, গমজাতীয় পণ্য আমদানি বাড়িয়ে ২০০ কোটি ডলার ঘাটতি কমানোর চেষ্টা চলছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, চীন থেকে বাংলাদেশ কম পণ্য আমদানি করুক, এটা যুক্তরাষ্ট্র চায়। যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য অবাধে যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে ও দেশটির বিভিন্ন মানসনদ যেন বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়া হয়, সে দাবিও রয়েছে তাদের। এ ছাড়া দেশটি থেকে জ্বালানি তেল ও ভোজ্যতেল আমদানি বৃদ্ধি, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানিতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পাদন এবং গম আমদানি বাড়ানোর চাওয়া রয়েছে।
বাংলাদেশ নিট পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম এ নিয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যা হওয়ার, তা হয়েই গেছে। চুক্তি যখনই হোক, বাড়তি শুল্ক দিয়ে পণ্য রপ্তানি করতে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে। চুক্তি স্বাক্ষরের আগে শুল্কহার আরও কমিয়ে আনা যায় কি না, সেই চেষ্টা চলছে বলে জানি।’
সরকারি পর্যায়ে গম আসছে
সূত্রগুলো জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইউএসটিআরের আনুষ্ঠানিক চুক্তি না হলেও যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাড়তি দামে গম, তুলা ইত্যাদি পণ্য আমদানি করছে বাংলাদেশ। তুলা আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। আর গম আমদানি হচ্ছে সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে। উভয় দেশের মধ্যে সমঝোতা অনুযায়ী ৪ লাখ ৪০ হাজার টন গম আমদানি হবে প্রথম দফায়, যার মধ্যে ৫৬ হাজার ৯৫৯ টন গম এসেছে গত ২৫ অক্টোবর। খাদ্য মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইতিমধ্যে আরও ৬০ হাজার ৮০২ টন গম এসেছে।
বাংলাদেশ এত দিন রাশিয়া থেকেই বেশি গম আমদানি করে আসছিল। কারণ, রাশিয়ার গমের দাম যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অনেক কম। তবে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি, রাশিয়ার গমে গড়ে ১১ শতাংশ আমিষ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমে তা ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ। এদিকে খোদ খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মধ্যেই আলোচনা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার গমে আমিষের হার নিয়ে যে তুলনা, সেটি মুখে মুখেই রচিত। এটি পরীক্ষায় প্রমাণিত তথ্য নয়।