জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৪২তম বার্ষিক অধিবেশনে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেট এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট পাস করা হয়েছে।
মূল বাজেট ও সংশোধিত বাজেটের পরিমাণ যথাক্রমে ৩২৩ কোটি ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৩৩৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। বছর শেষে ক্রমপুঞ্জিত ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ প্রায় ১০০ কোটি টাকা দাঁড়াবে জানা গেছে।
শনিবার (২৮ জুন) বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে নিয়মানুযায়ী কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বাজেট উপস্থাপন করেন। সিনেটরদের আলোচনার পর তা পাস করা হয়।
আরো পড়ুন:
জাবিতে সিনেট অধিবেশন: জুলাইয়ের সহযোগী শিক্ষকদের ফুলেল শুভেচ্ছা
জাবিতে সিনেট অধিবেশন: তোপের মুখে ৩ আওয়ামীপন্থি শিক্ষকের সভা ত্যাগ
২০২৪-২৫ অর্থবছরের মূল বাজেট ও ২০২৫ সালের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেতন-ভাতা বাবদ সর্বোচ্চ ব্যয় রাখা হয়েছে। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৮১ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা মোট বাজেটের ৫৬.
বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে সেবা খাতে, যার পরিমাণ ৭২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এ খাতে মোট বাজেটের ২৩.৩১ শতাংশ খরচ হবে। চলতি অর্থবছরে মূল বরাদ্দে ছিল ৬৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা, যা শতকরা হিসাবে ২২.৬০ শতাংশ। তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে পেনশন ও অবসর সুবিধা খাতে। এতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ, যা মোট বরাদ্দের ১১.৯৯ শতাংশ। চলতি বছর এ খাতে ৩১ কোটি ৯০ লাখ টাকা বরাদ্দ ছিল, যা শতকরা হিসাবে ১০.০২ শতাংশ।
গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতে প্রস্তাবিত বরাদ্দ রয়েছে ৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ২.৮৫ শতাংশ। চলতি বছর এটি ছিল ৭ কোটি ২২ লাখ টাকা, যা শতকরা হিসাবে ২.২৬ শতাংশ। প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা সহায়তা খাতে এ ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট বরাদ্দের ০.১৪ শতাংশ। এটি এ বছর ছিল ৪৫ লাখ টাকা, যা শতকরা হিসাবে ০.১৫ শতাংশ। যানবাহন ক্রয় বাবদ প্রস্তাবিত বাজেটে ২ কোটি ২৮ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা শতকরা হিসাবে ০.৭১ শতাংশ।
২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের আয়ের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বা সরকারি মঞ্জুরি ২৭৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ছাত্রছাত্রীদের নিকট থেকে প্রাপ্ত ফি বাবদ ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ভর্তি ফর্ম বিক্রি থেকে আয় ২৩ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন চার্জ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ২১ হাজার টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি থেকে আয় ৩৩ লাখ টাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উৎস থেকে আয় ১০ কোটি ১৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। ইউজিসির বরাদ্দ বাদে সব মিলিয়ে মোট নিজস্ব আয় ৪৪ কোটি টাকা।
বাজেট পর্যালোচনায় আরো দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতের বরাদ্দ ৭ লাখ ২২ হাজার টাকা থেকে ৯ লাখ ২৩ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। বাজেটে যানবাহন ক্রয় খাত থেকে একটি মাইক্রোবাস ও একটি এ্যম্বুলেন্স, একটি এসি কোস্টার ও একটি বড় বাস ক্রয় করা হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের জন্য ১ কোটি টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন বৈদ্যুতিক লাইনসমূহ পুনঃস্থাপনের জন্য বাজেটে ২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি আইডেন্টিটি (আরএফআইডি) স্থাপন বাবদ সংশোধিত বাজেটে ১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
বাজেট উপস্থাপনকালে কোষাধ্যক্ষ জানান, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে ঘাটতির পরিমাণ ৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে (২০২৪-২৫) আনুমানিক ঘাটতির পরিমাণ ২০ কোটি টাকা হওয়ায় বছর শেষে ক্রমপুঞ্জিত ঘাটতি বাজেটের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা।
বাজেট ঘাটতির কারণ হিসেবে তিনি জানান, সরকারী বিধি বহির্ভূতভাবে কিছু কিছু খাতে যেমন- জাবি স্কুল ও কলেজের ব্যয়, গবেষণা ভাতা, নৈশ ভাতা, গার্ড বোনাস, স্বাস্থ্য বীমা/গোষ্ঠী বীমা খাতের ভর্তুকী, ডাইনিং হল অস্থায়ী কর্মচারীদের বেতন ইত্যাদি খাতগুলো ব্যয় করাই বাজেট ঘাটতির প্রধান কারণ। এসব খাতগুলো চলতি অর্থবছর এবং আগামী অর্থবছরের জন্য ইউজিসি থেকে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া যায়নি।
উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের হিসাব অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ব্যতীত গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ, জ্বালানি, গাড়ি ভাড়া, রোড ট্যাক্স ইত্যাদি বাবদ প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এছাড়াও জাবি স্কুল ও কলেজের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ পাওয়া না গেলেও এই প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রতি অর্থবছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। এই দুটি খাত আমাদের বাজেট ঘাটতি ক্রমাগত বাড়িয়ে তুলেছে। এর বিপরীতে আমাদের অভ্যন্তরীণ আয়ের তেমন কোনো খাত নেই।”
ঢাকা/আহসান/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বছর র ম ল ব জ ট ২০২৪ ২৫ বর দ দ র র পর ম ণ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
পাম তেলের দাম কমল ১৯ টাকা, নতুন দাম ১৫০ টাকা
পাম তেলের দাম ১৯ টাকা কমিয়ে ১৫০ টাকা নির্ধারণ করেছে সরকার। এত দিন পাম তেলের দাম ছিল লিটারে ১৬৯ টাকা, তবে সয়াবিন তেলের দাম অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পাম তেলের দাম কমানোর তথ্য জানান বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান।
বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আপনারা শুধু তেলের মূল্যবৃদ্ধি হতে দেখেন; এবার আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় পাম তেলের দাম কমানো হয়েছে। কিন্তু কাঁচামালের দাম না কমায় সয়াবিন তেলের দাম কমেনি। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের লিটার ১৮৯ টাকা অপরিবর্তিত রয়েছে।
এর আগে গত ১৩ এপ্রিল সয়াবিন তেলের দাম ১৮৯ টাকা আর পাম তেলের দাম ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এদিকে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকায় সরকার পেঁয়াজ আমদানির চিন্তাভাবনা করছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ভারত থেকে নয়, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে যেখান থেকে সস্তায় পাওয়া যাবে, সেখান থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে। কী পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হবে, সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, চাহিদা ও জোগানের সমন্বয়ে আমদানি করা হবে। পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকলে পেঁয়াজ আমদানি করা হবে বলে জানান বাণিজ্য উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার। এর মধ্যে পণ্য খাতে ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার আর সেবা খাতে ৮৫০ কোটি ডলার। গত অর্থবছরে রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫ হাজার ৫৭৮ কোটি ডলার।