‘সংক্রমণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ’ জোন হিসেবে পরিচিত পর্যটন শহর কক্সবাজারে গত ২২ দিনে (৪ থেকে ২৫ জুন) ১৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এরপরও স্থানীয়দের পাশাপাশি বেড়াতে আসা পর্যটকরা স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। গত শুক্র ও শনিবার সমুদ্র সৈকত  ছিল পর্যটকে ঠাসা। তবে সিংহভাগ মানুষ মুখে মাস্ক পরেননি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো চেষ্টাও নেই কারও মধ্যে। আবার অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মচারীরাও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। এমনকি মালিকদের পক্ষ থেকেও তাদের মাস্ক সরবরাহ করা হচ্ছে না। তাতে করোনার সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এদিকে কক্সবাজারে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে বলে জানা গেছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের মধ্যে কেউ মারা না গেলেও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৬ মাসে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত রমজানের ঈদের পর কক্সবাজারে বেড়াতে এসেছেন অন্তত ১০ লাখ পর্যটক। বিশেষ করে ছুটির দিনগুলোয় সৈকতের কলাতলী থেকে লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে পর্যটকের ভিড় থাকে সবচেয়ে বেশি। কিন্তু মুখে মাস্ক পরছেন না পর্যটকরা। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। 
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্যমতে, গত ৪ থেকে ২৫ জুন– এই ২২ দিনে নমুনা পরীক্ষা করে ১৬ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে পাঁচজন স্থানীয়, ১১ জন আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গা শরণার্থী। 
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেড় বছরে কক্সবাজার জেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২৮৯ জন। এর মধ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থী ৩৪ জন।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে দেখা গেছে, হাজারো পর্যটক বিচরণ করছেন। কারও মুখে মাস্ক নেই। কারণ জানতে চাইলে ঢাকার মোহাম্মদপুরের ব্যবসায়ী কায়সার হামিদ বলেন, ‘দোকানে মাস্ক পাওয়া যাচ্ছে না। সৈকতে জনসমাগম এড়িয়ে চলারও কোনো সুযোগ নেই।’ সৈকতের হকার, আলোকচিত্রী, ঘোড়ার কর্মচারী– কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি। পথচারী থেকে শুরু করে যাত্রীবাহী বাসে চলাচলকারী লোকজনের মুখেও মাস্ক ছিল না।
কক্সবাজার হোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম শিকদার বলেন, ‘অতিথিদের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হলেও পর্যাপ্ত মাস্ক কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে অধিকাংশ হোটেল-রেস্তোরাঁর কর্মচারীদেরও মাস্ক সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না।’
করোনায় আক্রান্ত সবাই নিজ বাড়িতে রয়েছেন জানিয়ে জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদুল হক বলেন, ‘সংক্রমণের জন্য কক্সবাজার এমনিতে ঝুঁকিপূর্ণ জায়গা। এখানকার সৈকতে লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে। আবার উখিয়া-টেকনাফের আশ্রয়শিবিরে ১৪ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীর বসবাস। ঘনবসতির কারণে সেখানে করোনার সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিকভাবে তিন শয্যার আইসোলেশন সেন্টার খোলা হয়েছে। অচল যন্ত্রপাতিগুলোও ঠিকঠাক করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ঘোষিত বিধিনিষেধ মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে।’
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘আশ্রয়শিবিরে কয়েকজন রোহিঙ্গা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য বিভাগের নির্দেশনা কার্যকর করতে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আশ্রয়শিবিরে বন্ধ থাকা আইসোলেশন সেন্টারগুলো চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’ 
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গাসহ ১ জানুয়ারি থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন ২ হাজার ৫০৮ জন। এর মধ্যে স্থানীয় আক্রান্তের সংখ্যা ৩০৩ জন। রোহিঙ্গা আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ২০৫ জন। চলতি জুনের প্রথম ২৫ দিনে ৮৫৬ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১৩০ জন স্থানীয় ও ৭২৬ জন রোহিঙ্গা। 
অপরদিকে ছয় মাসে কক্সবাজার জেলায় ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৩১ জন। জুনের প্রথম ২৫ দিনে আক্রান্তের সংখ্যা ২১৬ জন। এর মধ্যে স্থানীয় ১৪২ জন এবং রোহিঙ্গা ৭৬ জন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর যটক স ক রমণ শরণ র থ

এছাড়াও পড়ুন:

গাজা দখল করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়তে চান নেতানিয়াহু

নিজের জনগণকে ৬৭০ দিনের বেশি সময় ধরে ধ্বংস হতে দেখার বেদনা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এত কষ্ট, এত অপরাধের সাক্ষী হওয়ার পরও গাজায় ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে আরেক দফা ইসরায়েলি হামলার কথা ভাবা পর্যন্ত কল্পনার বাইরে। অথচ বিশ্বের চোখের সামনেই এটি হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিশ্ব কি শুধু দাঁড়িয়ে দেখে যাবে?

ইসরায়েলের নিরাপত্তাবিষয়ক মন্ত্রিসভা গাজায় এই নতুন হামলার ঘোষণা দিয়েছে। গাজা উপত্যকাকে ‘সম্পূর্ণ দখল’ করার জন্যই তারা সেখানকার জনবসতিগুলোয় হামলা চালানোর পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এ হামলা শুরু হবে গাজা সিটি থেকেই। এর ফলাফল অনুমান করা কঠিন নয়।

২০২৪ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক সতর্কবার্তা ও আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (আইসিজে) নির্দেশ অমান্য করে ইসরায়েল রাফা এলাকায় হামলা চালায়। আজ রাফার কোনো অস্তিত্ব নেই। এরপর ২০২৪ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বরে তারা উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া, বেইত হনুন ও জাবালিয়া শহরে হামলা চালিয়ে সেগুলো ধ্বংস করে দেয়। 

আরও পড়ুনমুখ ফিরিয়েছে বিশ্ব, গাজা কি নিভে আসছে ০৯ জুন ২০২৫

সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোশে ইয়ালন এ অভিযানকে বলেছেন ‘জাতিগত নিধন’। এরপর ইসরায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফেলে, ২০ লাখ বেঁচে থাকা মানুষকে অনাহারে রাখে এবং দক্ষিণের খান ইউনিস শহর ধ্বংস করে দেয়। এসব কাজ ২০২৪ সালের জানুয়ারি, মার্চ ও মে মাসে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের দেওয়া তিনটি গণহত্যাবিরোধী রায়ের সরাসরি লঙ্ঘন।

জানুয়ারিতে আদালত গাজায় গণহত্যার ঝুঁকি আছে বলে জানান এবং তা ঠেকাতে কিছু ব্যবস্থা নিতে বলেন। এর মধ্যে ছিল গাজায় মানবিক সাহায্য পৌঁছে দেওয়া। কিন্তু দেখা গেল, ইসরায়েল এই নির্দেশ মানছে না। গাজা সিটিতে হামলা হলে তা এই গণহত্যা অভিযানের শেষ ধাপ হবে।

যুক্তরাজ্যের মতো পশ্চিমা দেশগুলো গত দুই বছরে ইসরায়েলের গণ–অত্যাচারের সহযোগিতার দায় থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবে না। ইসরায়েলকে জবাবদিহি থেকে মুক্তি দিয়ে এবং এই দুষ্ট রাষ্ট্রকে অস্ত্র সরবরাহ করে পশ্চিমারা এই অপরাধগুলোকে সম্ভব করেছে। সম্প্রতি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে ঘোষণাগুলো এসেছে, তা কেবল প্রচারমূলক চাল ও মনোযোগ সরানোর কৌশল।

৭ অক্টোবরের পরপরই ইসরায়েলের নেতা, রাজনীতিক, সামরিক কমান্ডার ও সেনারা প্রকাশ্যে বলেছিলেন, তাঁরা গাজাকে ধ্বংস করে দেবেন, পুড়িয়ে দেবেন এবং সমতল করে দেবেন। তাঁরা ঠিক সেটাই করেছেন। তাঁরা গাজার ৯০ শতাংশ এলাকা কার্যত ধ্বংস করে এটিকে জনমানবহীন মরুভূমিতে পরিণত করেছেন। বাকি জনসংখ্যাকে ঠাসা অবস্থায় মাত্র ১২ শতাংশ এলাকায় গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। সেখানে মানুষের বেঁচে থাকার মতো কোনো পরিবেশ নেই। অবরোধ আর বোমাবর্ষণের মাধ্যমে ইসরায়েল গাজায় কোনো নিরাপদ জায়গা রাখেনি। বাইরে যাওয়ারও কোনো পথ রাখেনি।

এখন গাজা সিটি, দেইর আল-বালাহ বা আল-মাওয়াসির বাকি জনবসতিতে হামলার মানে হবে নতুন গণহত্যা, আরও ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং অবশিষ্ট অনাহারগ্রস্ত মানুষকে সরাসরি নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া। এর মানে ইসরায়েল আসলে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়ার মেসিয়ানি কল্পনা ও অপরাধমূলক প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে—ইসরায়েলের লক্ষ্য ‘সর্বোচ্চ পরিমাণ জমি, সর্বনিম্নসংখ্যক আরব’।

গাজায় দাতব্য রান্নাঘরের সরবরাহ করা খাবার সংগ্রহ করতে ফিলিস্তিনিদের ভিড়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইসরায়েলের সঙ্গে ৩৫ বিলিয়ন ডলারের গ্যাস চুক্তি মিশরের
  • গাজা দখল করে ‘বৃহত্তর ইসরায়েল’ গড়তে চান নেতানিয়াহু
  • দাম বাড়ছে পেঁয়াজের, কী বলছেন ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা
  • শোধনাগার ছাড়াই বড় প্রকল্প
  • চীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চার গুণ সয়াবিন কেনার আহ্বান ট্রাম্পের
  • পাবনায় গ্রামীণ দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে ভেজাল দুধ পাওয়ার ঘটনা পরিকল্পিত: প্রাণ– আরএফএল
  • হঠাৎ কেন বাড়ছে পেঁয়াজের দাম
  • নিলামে ৮৩ মিলিয়ন ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক