এই সময় শিশুর জ্বর ডেঙ্গু নাকি চিকুনগুনিয়া, কীভাবে বুঝবেন
Published: 6th, July 2025 GMT
সময়টা জ্বরজারির। ঘরে ঘরে জ্বরের প্রকোপ। এ সময় শিশুর জ্বর হলেই অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন—ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া হলো না তো? নাকি সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বর?
মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়াও ভাইরাসজনিত রোগ। অন্য ভাইরাসজনিত জ্বরের সঙ্গে এর তেমন তফাত নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ বিবেচনা করে ও শারীরিক পরীক্ষা করেই চিকিৎসকেরা এসব জ্বর শনাক্ত করতে পারেন।
যেভাবে বুঝবেন
ডেঙ্গু হলে জ্বরের সঙ্গে মাথা ও পেশিতে ব্যথা হয়ে থাকে। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কখনো জয়েন্ট ফুলেও যায়। চিকুনগুনিয়ায় শুরুতেই ত্বকে র্যাশ (লাল লাল দানা) দেখা দেয়। ডেঙ্গুর র্যাশ সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন পর আসে। জটিলতা হিসেবে নাক দিয়ে বা চোখের কনজাংটিভায় (চোখের একটি পাতলা ও স্বচ্ছ আবরণ) রক্তক্ষরণের মতো বিষয় ডেঙ্গুতে দেখা যায়। তবে চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে এটা দেখা যায় না।
সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় চিকুনগুনিয়ায় লিম্ফোসাইটের (শ্বেতরক্তকণিকা) সংখ্যা হ্রাস দেখা যেতে পারে। ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট (অণুচক্রিকা) কমতে পারে। হিমোডাইনামিক জটিলতা, যেমন প্লাজমা লিকেজের লক্ষণ, হিমাটোক্রিটের পরিবর্তন, রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা ডেঙ্গুতে হতে পারে। ডেঙ্গু হলে প্রথম দিকে অ্যান্টিজেন টেস্ট ও কয়েক দিন দেরিতে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়। কিন্তু টেস্ট নেগেটিভ হলেই নিশ্চিত হওয়ার কিছু নেই। বস্তুত লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতার দিকেই মনোযোগ দিতে হবে বেশি।
চিকিৎসা ও করণীয়
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসাপদ্ধতি প্রায় একই। চিকিৎসার মূল ভিত্তিগুলো হলো প্রচুর পানি পান ও পুষ্টি রক্ষা; বিশ্রাম; জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া ও পর্যবেক্ষণ।
ছোট শিশু মায়ের দুধ পান করলে তা চালিয়ে যেতে হবে। সারা দিনে পানিসহ প্রচুর তরল খাওয়াতে হবে। যথেষ্ট পুষ্টিমানসম্পন্ন সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে। শিশু না খেতে চাইলে বারবার অল্প করে কিছু পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। শিশুর জটিলতার দিকে ও হিমোডাইনামিক অবস্থার দিকে লক্ষ রাখতে হবে।
রক্তচাপ ও পালস ভলিউম কমে যাওয়া, নিস্তেজ হয়ে পড়া, পানিশূন্য হয়ে পড়া, রক্তক্ষরণ হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিতে হবে। শরীর স্পঞ্জ করা ও অস্থিসন্ধি ব্যথা বেশি হলে সেঁক দেওয়া যেতে পারে। কোনো ব্যথানাশক দেওয়া যাবে না। ভাইরাসজনিত রোগ বলে অ্যান্টিবায়োটিকেরও কোনো ভূমিকা নেই। এসব চিকিৎসায় অধিকাংশ শিশুই সেরে উঠবে। তবে জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে নিতে হবে।
মনে রাখবেন
এই সময় শিশুদের ফ্লুসহ অন্যান্য ভাইরাসজনিত জ্বরও হচ্ছে। জ্বরের সঙ্গে নাক বন্ধ, সর্দি–কাশি, গলাব্যথা থাকলে তা ফ্লু–জাতীয় জ্বর বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।
তাই শিশুর জ্বর হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফ্লু যা–ই হোক না কেন, শিশুর পরিচর্যার পদ্ধতি প্রায় একই। জটিলতা না হলে বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব। তবে রক্তচাপ মাপা ও জটিলতার লক্ষণগুলোর দিকে নজর রাখা উচিত।
ড.
আবিদ হোসেন মোল্লা, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুরোগ বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অতিরিক্ত মোটা হওয়ায় যাত্রীকে তুলতে অস্বীকৃতি উবার চালকের
চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার জন্য সম্প্রতি রাইড শেয়ারিং প্রতিষ্ঠান উবারের একটি গাড়ি ডেকেছিলেন মাইকেল। গাড়িটি আসার পর দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতে যেতেই বাধল বিপত্তি। ‘অতিরিক্ত মোটা’ হওয়ায় চালক তাঁকে গাড়িতে তুলতে অস্বীকৃতি জানান। যুক্তরাষ্ট্রে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
গেমিং প্ল্যাটফর্ম টুইচের জনপ্রিয় স্ট্রিমার মাইকেল। ওই প্ল্যাটফর্মে তাঁর ৬০ হাজারের বেশি সাবস্ক্রাইবার রয়েছে। তিনি তাঁর কল অব ডিউটি গেমপ্লের জন্য পরিচিত।
মাইকেল সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। ভিডিওর শিরোনামে তিনি লিখেছেন, ‘আমি মজা করছি না। আমার উবার চালক বলেছেন, আমি নাকি অনেক বেশি মোটা। তাই তাঁর গাড়িতে আমাকে নেওয়া সম্ভব নয়। এমনকি তিনি আমার দিকে বন্দুক তাক করার হুমকিও দিয়েছেন।’ মাইকেলের ওই ভিডিও পাঁচ কোটিবারের বেশি দেখা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, মাইকেল উবারের গাড়িচালককে বলছেন, ‘আপনি এইমাত্র বললেন, আমি নাকি অনেক বেশি মোটা। আমি কিন্তু আপনার ভিডিও করছি।’ উত্তরে উবার চালক নারী বলেন, ‘এটা যুক্তি আর বাস্তবতার ব্যাপার। আর আমি এটা বলার অধিকার রাখি।’ কিন্তু বাক্যটি শেষ করার আগেই মাইকেল তাঁকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘না, আপনি এটা বলতে পারেন না।’ তখন ওই নারী হাত উঁচিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ, আমি পারি। এটা আমার গাড়ি। আপনি এখান থেকে চলে যান।’
বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে ওই উবার চালক বলেন, ‘আপনি কি চান, আমি আমার বন্দুকটা বের করি?’ এ কথা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মাইকেল গাড়ির দরজা বন্ধ করে সেখান থেকে চলে যান। এক্সে দেওয়া অন্য একটি পোস্টে মাইকেল বলেন, এ ঘটনার কারণে তিনি সেদিন চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেননি।
উবারের নীতি অনুযায়ী, চালকেরা বৈধ কারণ ছাড়া কোনো যাত্রীকে গাড়িতে তুলতে অস্বীকৃতি জানাতে পারবেন না। ওজন, লিঙ্গ, বর্ণ কিংবা ধর্মের ভিত্তিতে কোনো যাত্রীর সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা সম্পূর্ণ নিষেধ।
এই ঘটনা ভাইরাল হওয়ার পর উবার চালকের আচরণের তীব্র সমালোচনা করেছেন অনেকে।