সময়টা জ্বরজারির। ঘরে ঘরে জ্বরের প্রকোপ। এ সময় শিশুর জ্বর হলেই অভিভাবকেরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন—ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়া হলো না তো? নাকি সাধারণ ভাইরাসজনিত জ্বর?

মনে রাখতে হবে, ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়াও ভাইরাসজনিত রোগ। অন্য ভাইরাসজনিত জ্বরের সঙ্গে এর তেমন তফাত নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে লক্ষণ বিবেচনা করে ও শারীরিক পরীক্ষা করেই চিকিৎসকেরা এসব জ্বর শনাক্ত করতে পারেন।

যেভাবে বুঝবেন

ডেঙ্গু হলে জ্বরের সঙ্গে মাথা ও পেশিতে ব্যথা হয়ে থাকে। চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে জ্বরের সঙ্গে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে প্রচণ্ড ব্যথা হয়। কখনো জয়েন্ট ফুলেও যায়। চিকুনগুনিয়ায় শুরুতেই ত্বকে র‌্যাশ (লাল লাল দানা) দেখা দেয়। ডেঙ্গুর র‌্যাশ সাধারণত তিন থেকে পাঁচ দিন পর আসে। জটিলতা হিসেবে নাক দিয়ে বা চোখের কনজাংটিভায় (চোখের একটি পাতলা ও স্বচ্ছ আবরণ) রক্তক্ষরণের মতো বিষয় ডেঙ্গুতে দেখা যায়। তবে চিকুনগুনিয়ার ক্ষেত্রে এটা দেখা যায় না।

সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় চিকুনগুনিয়ায় লিম্ফোসাইটের (শ্বেতরক্তকণিকা) সংখ্যা হ্রাস দেখা যেতে পারে। ডেঙ্গুতে প্লাটিলেট (অণুচক্রিকা) কমতে পারে। হিমোডাইনামিক জটিলতা, যেমন প্লাজমা লিকেজের লক্ষণ, হিমাটোক্রিটের পরিবর্তন, রক্তচাপ কমে যাওয়ার মতো সমস্যা ডেঙ্গুতে হতে পারে। ডেঙ্গু হলে প্রথম দিকে অ্যান্টিজেন টেস্ট ও কয়েক দিন দেরিতে অ্যান্টিবডি টেস্ট করা হয়। কিন্তু টেস্ট নেগেটিভ হলেই নিশ্চিত হওয়ার কিছু নেই। বস্তুত লক্ষণ, উপসর্গ, জটিলতার দিকেই মনোযোগ দিতে হবে বেশি।

চিকিৎসা ও করণীয়

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার চিকিৎসাপদ্ধতি প্রায় একই। চিকিৎসার মূল ভিত্তিগুলো হলো প্রচুর পানি পান ও পুষ্টি রক্ষা; বিশ্রাম; জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল খাওয়া ও পর্যবেক্ষণ।

ছোট শিশু মায়ের দুধ পান করলে তা চালিয়ে যেতে হবে। সারা দিনে পানিসহ প্রচুর তরল খাওয়াতে হবে। যথেষ্ট পুষ্টিমানসম্পন্ন সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে। শিশু না খেতে চাইলে বারবার অল্প করে কিছু পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। শিশুর জটিলতার দিকে ও হিমোডাইনামিক অবস্থার দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

রক্তচাপ ও পালস ভলিউম কমে যাওয়া, নিস্তেজ হয়ে পড়া, পানিশূন্য হয়ে পড়া, রক্তক্ষরণ হলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিতে হবে। শরীর স্পঞ্জ করা ও অস্থিসন্ধি ব্যথা বেশি হলে সেঁক দেওয়া যেতে পারে। কোনো ব্যথানাশক দেওয়া যাবে না। ভাইরাসজনিত রোগ বলে অ্যান্টিবায়োটিকেরও কোনো ভূমিকা নেই। এসব চিকিৎসায় অধিকাংশ শিশুই সেরে উঠবে। তবে জটিলতা দেখা দিলে হাসপাতালে নিতে হবে।

মনে রাখবেন

এই সময় শিশুদের ফ্লুসহ অন্যান্য ভাইরাসজনিত জ্বরও হচ্ছে। জ্বরের সঙ্গে নাক বন্ধ, সর্দি–কাশি, গলাব্যথা থাকলে তা ফ্লু–জাতীয় জ্বর বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে।

তাই শিশুর জ্বর হলে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, ফ্লু যা–ই হোক না কেন, শিশুর পরিচর্যার পদ্ধতি প্রায় একই। জটিলতা না হলে বাড়িতেই চিকিৎসা সম্ভব। তবে রক্তচাপ মাপা ও জটিলতার লক্ষণগুলোর দিকে নজর রাখা উচিত। 

ড.

আবিদ হোসেন মোল্লা, সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুরোগ বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল, ঢাকা

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

নরসিংদীতে নির্মাণাধীন কারখানায় হামলার ঘটনায় যুবদল নেতা গ্রেপ্তার

ছবি: সংগৃহীত

সম্পর্কিত নিবন্ধ