স্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা
Published: 5th, July 2025 GMT
কুমিল্লার মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে একই পরিবারের তিনজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাঁদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও ঘটনার অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য বাচ্চু মিয়ার পরিকল্পনায় নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
এই হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী ও মামলার বাদী রিক্তা আক্তারও তাঁর মা, ভাই ও বোনকে হত্যার জন্য বাচ্চু মিয়া (৫৫) ও তাঁর সহযোগীদের দায়ী করেছেন। গত বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে আটটা থেকে নয়টার মধ্যে মুরাদনগরের বাঙ্গরা বাজার থানার কড়ইবাড়ী গ্রামে রোকসানা বেগম ওরফে রুবি (৫৩), তাঁর ছেলে মো.
কুপিয়ে হত্যা করেন হামলাকারীরা। এ ছাড়া সেখানে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা আক্তার (২৭) বর্তমানে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় নিহত রোকসানার মেয়ে রিক্তা আক্তার বাদী হয়ে গতকাল শনিবার বাঙ্গরা বাজার থানায় বাচ্চু মিয়াসহ ৩৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
আলোচিত এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করার পর গতকাল বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করেন র্যাব-১১–এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন। তিনি জানান, মামলার এজাহারনামীয় আসামি বাচ্চু মিয়া, রবিউল আওয়াল (৫৫) ও দুলাল (৪৫) ছাড়াও আতিকুর রহমান (৪২), বয়েজ মাস্টার (৪৩) ও আকাশকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রাজধানী ও কুমিল্লায় একাধিক অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
ঘটনার সূত্রপাত যেখান থেকের্যাব–১১–এর অধিনায়কের দেওয়া সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য এবং মামলার এজাহারের তথ্য বলছে, গত ১ জুন রবিউল আওয়ালের একটি মুঠোফোন চুরি হয়। এর জন্য বোরহান নামের এক ব্যক্তিকে আটক করে মারধর করেন বাচ্চু মিয়া ও তাঁর সহযোগীরা। তখন ছেলেকে ছাড়িয়ে আনতে বোরহানের বাবা জসীম উদ্দিন স্থানীয় মাতবরদের কাছে যান। এরপরও ছেলেকে ফিরে না পেয়ে একপর্যায়ে তিনি রোকসানা বেগমের কাছে যান। পরে বোরহানের বাবা ছেলের সন্ধান চেয়ে বাঙ্গরা বাজার থানায় একটি মামলা করেন।
র্যাব–১১–এর অধিনায়ক এইচ এম সাজ্জাদ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তখন বাচ্চু মিয়াসহ অন্যদের ধারণা হয়, রোকসানা বেগমের পরামর্শে জসীম উদ্দিন থানায় মামলা করেছেন। তখন মব সৃষ্টি করে বাচ্চু মিয়াসহ অন্য আসামিরা সেদিন রোকসানার বাড়িতে হামলা করে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করেন।
মামলার এজাহারে রোকসানার মেয়ে রিক্তা আক্তার উল্লেখ করেন, গত বৃহস্পতিবার সকাল সাতটার সময় রোকসানাদের পরিবারকে ঘেরাও করেন বাচ্চু মিয়াসহ অন্য আসামিরা। বাড়ির সামনে এসে তাঁরা রোকসানার নাম ধরে ডাকতে থাকেন। রোকসানা ঘর থেকে বের হয়ে এলে বাচ্চু মিয়া তাঁর মাথায় একটি কোপ দেন। বাচ্চু মিয়ার পূর্বপরিচিত স্থানীয় চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহ ও বাছির মিয়াও রোকসানার মাথায় কোপ দেন। এ সময় মাকে বাঁচাতে ঘর থেকে ছুটে আসেন তাঁর ছোট মেয়ে জোনাকী। তখন জোনাকীর মাথায় কোপাতে থাকেন শিমুল বিল্লাহ, রফিকসহ কয়েকজন। জোনাকি ও রোকসানাকে কোপানোর খবর পেয়ে মোটরসাইকেলে করে তখন বাড়িতে আসেন রোকসানার ছেলে রাসেল। তখন শিমুল বিল্লাহসহ অন্যরা রাসেলকে কুপিয়ে ঘটনাস্থলে হত্যা করেন। এ সময় রোকসানার আরেক মেয়ে রুমা
এগিয়ে এলে বাচ্চু মিয়া তাঁর হাতে থাকা রামদা দিয়ে মাথায় কোপ দেন। তখন রুমা পড়ে যান। এ সময় অন্যরাও তাঁর মাথায় কোপাতে থাকেন। পরে মামলার বাদী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর
৯৯৯–এ ফোন দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও ততক্ষেণ তিনজন খুন হয়ে সেখানেই পড়ে ছিলেন। পরে পুলিশ তাঁদের মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ম য় সহ
এছাড়াও পড়ুন:
সমকামীতার জেরে রূপগঞ্জে পারভেজকে হত্যা , গ্রেপ্তার ২
রূপগঞ্জে পারভেজ হাসান (৩৫) নামের এক যুবককে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলার ১ দিন পরই রহস্য উৎঘাটন করেছে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশ আরমান হোসেন (৩৮) ও মেহেদী হাসান ইমন (২৬) নামের দুই জনকে গ্রেপ্তার করেছেন। রোববার মধ্যরাতে কুমিল্লার মুরাদনগর ও তারাবো এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করে রূপগঞ্জ থানা পুলিশ।
গ্রেপ্তারকৃতদের তথ্য অনুযায়ী, নিহত পারভেজকে সমাকামিতার গোঁপন সম্পর্কের জেরে একটি সংঘবদ্ধ চক্রের বিরোধের জেরে হত্যার উদ্দেশ্যে ছুরিকাঘাত করে আমলাবোর ভাড়া বাসার ছাঁদে ফেলে যায়। পরে রক্তক্ষরণের মাধ্যমে মারা যায়। গ্রেপ্তারকৃতরা হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃত আরমান হোসেন রূপগঞ্জ উপজেলার বরাবর এলাকার আলাউদ্দিন মিয়ার ছেলে এবং মেহেদী হাসান ইমন কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার মুচাগড়া এলাকার আবুল কালামের ছেলে।
নিহত পারভেজ হাসান পাবনা জেলার সদর উপজেলার মৃত মজিদ সরকারের ছেলে। গত ৩ জুলাই ঘটে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা
সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে রূপগঞ্জ থানা কার্যালয়ে রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, নিহত পারভেজ হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতারকৃত মেহেদী হাসান ইমন কুমিল্লা মুরাদনগর থানার একটি ব্যাংকের কোষাধ্যক্ষ ছিলেন, অপর অভিযুক্ত ডাক্তার আরমান হোসেন একটি বেসরকারি কলেজ হাসপাতালের সহযোগি অধ্যাপক।
তদন্তে জানা যায়, উপজেলার আমলাব এলাকায় অবস্থিত গিয়াস উদ্দিন মোল্লার বাড়িতে ভাড়া বসবাস করতেন নিহত পারভেজ হাসান। ওই বাসায় গ্রেফতারকৃত আরমান হোসেন ও মেহেদী হাসান ইমন সহ তার সহকর্মীরা আসা-যাওয়া করতেন।
এছাড়া পারভেজ হাসানের সমকামী সঙ্গী হিসেবে প্রায় সময় মেহেদী হাসান ইমন বসবাস করতেন। পাশাপাশি ডাক্তার আরমানেরও সমকামিতার সম্পর্ক ছিলো। অভিযুক্তদের সমাকামিতা সম্পর্ক নিয়ে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিলো।
এ নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে গত ৩ জুলাই আমলাবোস্থ গিয়াসউদ্দিন মোল্লার ৫ম তলার ছাঁদে অভিযুক্তরা পারভেজকে কুপিয়ে আহত করে চলে যায়। পরবর্তীতে রক্তাক্ত অবস্থায় রাতভর রক্তক্ষরণে মারা যায়।
খবর পেয়ে পরের দিন ৪ জুলাই বাসার ছাঁদ থেকে নিহত পারভেজকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় মামলা হলে পুলিশ তদন্তে নামে। পরে ওই দুজনকে গ্রেপ্তার করে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেন। অভিযুক্তদের অধিকতর তদন্তের স্বার্থে রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এ ঘটনার জড়িত আরো কেউ থাকলে তাদেরকেও গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য যে, গত ৩ জুলাই সন্ধ্যায় রূপগঞ্জ উপজেলার গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের আমলাবো এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় পারভেজকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।