সাংবাদিক হত্যা: তাকিয়ে দেখেছে শতশত মানুষ
Published: 8th, August 2025 GMT
পেশাদারিত্বই যেন কাল হয়ে দাঁড়ালো সাংবাদিক তুহিনের জীবনে। সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ভিডিও ধারণ করায় গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় জনসম্মুখে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তরুণ এই সাংবাদিককে। তাকে যখন কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছিলো শতশত মানুষ তাকিয়ে ছিলেন, কেউ এগিয়ে আসেননি।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামানকে কুপিয়ে হত্যার আগ মুহূর্তের সিসিটিভির দৃশ্য দেখে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে। পিছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এই দৃশ্য ভিডিও করায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসীরা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চৌরাস্তা এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করে থাকে।
নিহত মো.
ঘটনার কিছু সময় আগে একইসঙ্গে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি দোকানে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান ও তার সহকর্মী মো. শামীম হোসেন।
ওই সময়কার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিক মো. শামীম হোসেন বলেন, “চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন একদিক থেকে অন্য পাশে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এমন সময় এক মহিলা আরেক পুরুষ আমাদের অতিক্রম করে যায়। ঠিক এমন সময় কয়েকজন লোক দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে, ‘এই পাইছি, তোরা আয়’ । এসময় তারা রামদা বের করলে ঐ লোকটা (যার উপর ওদের টার্গেট ছিল) দৌড় দেয়। ঠিক ওই সময় ওরাও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে দৌড় দেয়।
‘তখন আমার পাশ থেকে তুহিন (সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন) সেও মোবাইল নিয়ে ওদের পিছনে দৌড় দিছে। তখন আমি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। সে কারণে আমি আর তাকে খুঁজে পাইনি। পরে আমি তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। তখন দেখি যারা রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তারা হঠাৎ থেমে গিয়ে পিছন দিকে তাকাচ্ছে। পিছনদিকে তাকিয়ে দেখে তুহিন ওদের দিকে মোবাইল ধরে রেখেছে।
সাংবাদিক তুহিনের দুই সন্তান ফাহিম (২) ও তৈকি (৫)।
‘ওই সময় ওদের সঙ্গে তুহিনের হয়তো কিছু একটা হয়েছে। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে যায়। ঠিক ওই মুহূর্তে ওরাও চায়ের দোকানে ঢুকে তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তখন আমি চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোন গাড়ি দেখতে না পেয়ে আমি বাসন থানার ওসিকে ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ আসে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি গ্রুপ রয়েছে যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। সিসিটিভির ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে, তারা সকলেই ছিনতাইকারী দলের সদস্য। ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে, সেও তাদের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের একজন হলো- মিজান ওরফে কেটু মিজান, শাহ জামাল, বুলেট, অপর একজনের নাম সুজন। তারা সকলেই ছিনতাইকারী দলের সদস্য।
সাংবাদিক তুহিনের বড়ভাই মো. সেলিম মর্গের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রয়েছেন। ছোটভাইকে হারিয়ে শোকে কাতর। তিনি বলেন, “আমার নিরপরাধ ভাইকে কেন হত্যা করলো? আমরা বিচার চাই। সাংবাদিকদের আমার ভাইয়ের পরিবারকে দেখতে হবে।”
নিহত সাংবাদিক তুহিনের চাচাতো ভাই রুবেল বলেন, “তুহিনের দুটি সন্তান রয়েছে, তৈকি (৫) ও ফাহিম (২)। ওদের ভবিষ্যৎ কী? ওদের ভরনপোষণ কে করবে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে হবে সাংবাদিককের পরিবারের।”
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল হাসান জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব দ ক আস দ জ জ ম ন র সদস য ছ নত ই এল ক য
এছাড়াও পড়ুন:
সাংবাদিক হত্যা: তাকিয়ে দেখেছে শতশত মানুষ
পেশাদারিত্বই যেন কাল হয়ে দাঁড়ালো সাংবাদিক তুহিনের জীবনে। সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবের ভিডিও ধারণ করায় গতকাল বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় জনসম্মুখে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তরুণ এই সাংবাদিককে। তাকে যখন কুপিয়ে হত্যা করা হচ্ছিলো শতশত মানুষ তাকিয়ে ছিলেন, কেউ এগিয়ে আসেননি।
সাংবাদিক আসাদুজ্জামানকে কুপিয়ে হত্যার আগ মুহূর্তের সিসিটিভির দৃশ্য দেখে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ত্রাসী ও ছিনতাইকারী দলের সদস্যরা ধারালো দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে। পিছন থেকে সেই দৃশ্য ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে এই দৃশ্য ভিডিও করায় তাকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসব সন্ত্রাসীরা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় চৌরাস্তা এলাকায় চাঁদাবাজি ও ছিনতাই করে থাকে।
নিহত মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮) দৈনিক প্রতিদিনের কাগজের গাজীপুরের স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে কাজ করতেন। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে।
ঘটনার কিছু সময় আগে একইসঙ্গে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি দোকানে বসে সময় কাটাচ্ছিলেন সাংবাদিক আসাদুজ্জামান ও তার সহকর্মী মো. শামীম হোসেন।
ওই সময়কার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সাংবাদিক মো. শামীম হোসেন বলেন, “চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় আমরা দুজন একদিক থেকে অন্য পাশে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এমন সময় এক মহিলা আরেক পুরুষ আমাদের অতিক্রম করে যায়। ঠিক এমন সময় কয়েকজন লোক দেশীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে বলতে থাকে, ‘এই পাইছি, তোরা আয়’ । এসময় তারা রামদা বের করলে ঐ লোকটা (যার উপর ওদের টার্গেট ছিল) দৌড় দেয়। ঠিক ওই সময় ওরাও ধারালো অস্ত্র নিয়ে আমাদের পাশ দিয়ে দৌড় দেয়।
‘তখন আমার পাশ থেকে তুহিন (সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন) সেও মোবাইল নিয়ে ওদের পিছনে দৌড় দিছে। তখন আমি ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ি। সে কারণে আমি আর তাকে খুঁজে পাইনি। পরে আমি তুহিনকে খুঁজতে এগিয়ে যাই। তখন দেখি যারা রামদা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তারা হঠাৎ থেমে গিয়ে পিছন দিকে তাকাচ্ছে। পিছনদিকে তাকিয়ে দেখে তুহিন ওদের দিকে মোবাইল ধরে রেখেছে।
সাংবাদিক তুহিনের দুই সন্তান ফাহিম (২) ও তৈকি (৫)।
‘ওই সময় ওদের সঙ্গে তুহিনের হয়তো কিছু একটা হয়েছে। তুহিন তখন দৌড়ে চায়ের দোকানে ঢুকে যায়। ঠিক ওই মুহূর্তে ওরাও চায়ের দোকানে ঢুকে তুহিনকে কুপিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। তখন আমি চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশের গাড়ি খুঁজতে থাকি। কোন গাড়ি দেখতে না পেয়ে আমি বাসন থানার ওসিকে ফোন করি। কিছু সময় পর পুলিশ আসে।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি গ্রুপ রয়েছে যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। সিসিটিভির ভিডিওতে যাদের দেখা গেছে, তারা সকলেই ছিনতাইকারী দলের সদস্য। ভিডিওতে যে নারীকে দেখা গেছে, সেও তাদের সদস্য বলে ধারণা করা হচ্ছে। এদের একজন হলো- মিজান ওরফে কেটু মিজান, শাহ জামাল, বুলেট, অপর একজনের নাম সুজন। তারা সকলেই ছিনতাইকারী দলের সদস্য।
সাংবাদিক তুহিনের বড়ভাই মো. সেলিম মর্গের সামনে বাকরুদ্ধ হয়ে বসে রয়েছেন। ছোটভাইকে হারিয়ে শোকে কাতর। তিনি বলেন, “আমার নিরপরাধ ভাইকে কেন হত্যা করলো? আমরা বিচার চাই। সাংবাদিকদের আমার ভাইয়ের পরিবারকে দেখতে হবে।”
নিহত সাংবাদিক তুহিনের চাচাতো ভাই রুবেল বলেন, “তুহিনের দুটি সন্তান রয়েছে, তৈকি (৫) ও ফাহিম (২)। ওদের ভবিষ্যৎ কী? ওদের ভরনপোষণ কে করবে? রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিতে হবে সাংবাদিককের পরিবারের।”
গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার রবিউল হাসান জানান, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে চিহ্নিত করা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলমান রয়েছে।
ঢাকা/এস