রাজনীতিতে পরিবর্তন ও ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে
Published: 8th, August 2025 GMT
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা এবং পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হলে সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন¬— কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো.
অধ্যাপক আলী রীয়াজ জানিয়েছেন, ক্ষমতার ভারসাম্য নিশ্চিত করার জন্য সংবিধান সংস্কার কমিশন থেকে সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এসবের মধ্যে কিছু বিষয়ে ইতোমধ্যে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার ভারসাম্যকে সরাসরি বিবেচনা করলেই হবে না, বরং জাতীয় সংসদের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিগুলোর নেতৃত্বে বিরোধী দলীয় প্রতিনিধিদের রাখা হলে তা নির্বাহী বিভাগের ওপর একটি কার্যকর ‘চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স’ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি জানান, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ১০ বছরে সীমিত করার বিষয়ে দেশব্যাপী ঐকমত্য গড়ে উঠেছে। পাশাপাশি, অধিকাংশ রাজনৈতিক দল প্রধানমন্ত্রীর একই সঙ্গে দলীয় প্রধান না হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে, যা ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অধ্যাপক আলী রীয়াজ আরো উল্লেখ করেন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় জাতীয় সংসদ সদস্যদের অযথা প্রভাব আইনগত দিক থেকে বৈধ নয়। এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টেরও একটি রায় আছে। স্থানীয় পর্যায়ে জাতীয় সংসদের সদস্যদের অবৈধ সংযুক্তি বন্ধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংসদ সদস্যদের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য সুস্পষ্ট প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনার প্রথম পর্যায়ে ৬২টি বিষয়ে ব্যাপক ঐকমত্য গড়ে ওঠেছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ২০টি বিষয়ের মধ্যে ১১টিতে কোনো নোট অব ডিসেন্ট (বিভিন্ন মতামত) ছিল না, বাকি ৯টিতে কিছু ভিন্নমত ছিল।
ভিন্নমতের বিষয়গুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, এসব বিষয়ে বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে এবং কী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে, তা জানতে বিশেষজ্ঞদের মতামত নেওয়া হবে। পাশাপাশি, যে রাজনৈতিক দলগুলো ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছেছে, তাদের গুরুত্বও বিবেচনায় রাখা হবে।
কিছু রাজনৈতিক দল জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের কথা বলছে। এ বিষয়ে অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়ায় ঐকমত্য কমিশন সংশ্লিষ্ট নয়। কমিশনের কাজ হলো রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের মাধ্যমে একটি জাতীয় সনদ প্রণয়ন করা এবং তা বাস্তবায়নের জন্য পরবর্তী সময়ে বিশেষজ্ঞ ও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা। এই আলাপ-আলোচনা দীর্ঘমেয়াদী হবে না। সরকারের পক্ষ থেকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এই জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় মোট ৬২টি বিষয়ের ওপর ঐকমত্য হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের আলোচনায় ২০টি বিষয়ের মধ্যে ১১টির ওপর কোনো ধরনের ভিন্নমত বা নোট অব ডিসেন্ট ছিল না, বাকি ৯টির ওপর ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্টসহ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ঢাকা/এএএম/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ভ ন নমত পর য য় র ওপর সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ভিন্নমত থাকা সত্ত্বেও মোটাদাগে যে ঐক্য সৃষ্টি হয়েছিল, সরকারের ভুল পদক্ষেপ এবং নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা সেই ঐক্যে ফাটল ধরিয়েছে বলে দাবি করেছে গণতন্ত্র মঞ্চ। তারা বলছে, এর মধ্য দিয়ে চব্বিশের অভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তর ও সংস্কারপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গণতন্ত্র মঞ্চের এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক বাংলাদেশ রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ূম, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী জনশক্তি পার্টির মহাসচিব আবু ইউসূফ সেলিমসহ গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, জুলাই সনদ এবং সনদের আইনি ভিত্তি হিসেবে গণভোটকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অচলাবস্থার জন্য অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন এবং অন্তর্বর্তী সরকারের দায় রয়েছে। এ অচলাবস্থার মধ্যে ঐকমত্য সৃষ্টির দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর চাপিয়ে দিয়ে সরকার দায়মুক্তির চেষ্টা করছে।
সরকারকেই অচলাবস্থা নিরসনের দায়িত্ব নিতে হবে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বলেন, গণভোটের তারিখ নির্ধারণের দায়িত্ব সরকারের। অথচ তারা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর হাতে এই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে সৃষ্ট সংকটকে আরও ঘনীভূত করেছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। একই সঙ্গে নিজেদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার মানসিকতা থেকে সরে এসে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসন করে সরকারকে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অনুসরণ করতে হবে।
যথাসময়ে নির্বাচন না হলে নিরাপত্তা-সংকটের মুখে পড়বে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, নির্বাচন যাতে কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেই ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারকে মনে রাখতে হবে ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বশীল সরকারের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করা না গেলে দেশ ভয়াবহ নিরাপত্তাঝুঁকিতে পড়বে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, জুলাই সনদ প্রণয়নের ক্ষেত্রে ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলোকে যেভাবে লিপিবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই ঐকমত্য কমিশন সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর স্বাক্ষরিত সনদ এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়ার মধ্যে নীতিগত পার্থক্য রয়েছে। এ বিষয়গুলো উদ্ভূত পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলেছে। যদিও ঐকমত্য কমিশন এবং সরকারের পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে আশ্বস্ত করা হয়েছিল, যে তারা কোনো বিষয় চাপিয়ে দেবে না। অথচ জুলাই সনদ স্বাক্ষর-পরবর্তী সময়ে তারা সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। এটা একদিকে যেমন প্রতারণার শামিল, অন্যদিকে সরকারের স্বৈরাচারী মানসিকতার প্রকাশ।