বারবার বাস্তুচ্যুত। তাঁবু শিবিরে অথবা তাদের ঘরের ধ্বংসস্তূপের মধ্যে তারা বসবাস করতে বাধ্য। তারা ক্ষুধার্ত এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম থেকে বঞ্চিত।

যুদ্ধের ২২ মাস পর ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার গাজা শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সিদ্ধান্তের পর প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি আরেকটি বিপর্যয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এই ধরনের আক্রমণ তাদের ভূখণ্ডের দক্ষিণে সরে যেতে এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে যাত্রা করতে বাধ্য করবে।

 ৫৫ বছর বয়সী মা উম্মে ইব্রাহিম বানাত মূলত উত্তর গাজার বাসিন্দা। তিনি ইতিমধ্যে চারবার বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। 

বানাত বলেন, “আজ সকালে গাজা শহর থেকে সরিয়ে নেওয়ার খবর শোনার পর আমি উদ্বিগ্ন এবং ভীত বোধ করছি। আমরা শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে কোথায় যাব? আমি কসম দিয়ে বলছি, আমরা বাস্তুচ্যুতি, অনাহার এবং এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় তাড়িয়ে দেওয়ায় ক্লান্ত। এখন আমরা জীবন্ত লাশ।”

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় শুক্রবার জানিয়েছে, নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা গাজা শহর দখলের পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। ইসরায়েলি চ্যানেল ১২ অনুসারে, এই পরিকল্পনার অর্থ হবে ভূখণ্ডে স্থল সেনা পাঠানো, হাজার হাজার মানুষকে বাস্তুচ্যুত করা, ভূখণ্ডে খাদ্য সরবরাহের প্রচেষ্টাকে আরো ব্যাহত করা এবং গাজা শহর ও অন্যান্য অঞ্চলের প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে উপত্যকার দক্ষিণ অংশে সরে যেতে বাধ্য করা।

বানাতের মেয়ে মরিয়ম তার স্বামী এবং সন্তানদের সাথে নিহত হয়েছেন।

তিনি বলেন, “গাজা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে - তারা আর কী করতে পারে? আমরা আমাদের যৌবনের সেরাটা হারিয়েছি; আমাদের অঞ্চল স্থল, সমুদ্র এবং আকাশ দিয়ে ঘেরা একটি বিশাল কারাগার; ধ্বংস অসহনীয় হয়ে উঠেছে; রোগ ছড়িয়ে পড়ছে, যতদূর চোখ যায় ততদূর তাঁবু ছড়িয়ে আছে, পানি দূষিত, পাগলের মতো দাম, হাসপাতাল ধ্বংসস্তূপ, আমাদের জীবন একেবারে করুণ! তারা আর কী চায়?”

যদিও গাজা শহরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা এখনো কোনো উচ্ছেদের আদেশ পাননি, তবুও অনেকেই ইতিমধ্যেই আবারো চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার ছুটছেন দক্ষিণে বসবাসের জন্য একটি নিরাপদ জায়গা খুঁজে পাওয়ার আশায়।

চার সন্তানের জনক এবং গাজার রিমাল পাড়ার বাসিন্দা ৩৫ বছর বয়সী আবু নাসের মুশতাহা বলেন, “যদি আমাদের উচ্ছেদের নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহলে আমি সবকিছু ছেড়ে চলে যাব এবং আমার পরিবার ও সন্তানদের জন্য ভয়ে চলে যাব। থাকার খরচ অনেক বেশি হবে। আমি ইতিমধ্যেই অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেছি; যুদ্ধের শুরুতে ইসরায়েলি দখলদাররা প্রতিবেশী একটি বাড়িতে বোমা হামলা চালালে আমার মা নিহত হন।”

তবে ৪৭ বছর বয়সী ইব্রাহিম আবু আল-হুসনি বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি যুদ্ধের সময় তার ২৩ বছর বয়সী বড় ছেলেকে হারিয়েছিলেন।

ইবাহিম বলেন, “এটা আমাদের ভূমি যেখানে আমরা শৈশব থেকে বেড়ে উঠেছি এবং আমরা এটা সহজে ছেড়ে দেব না।আমি এই শহর ছেড়ে যাব না। আমি এখানেই থাকব এবং আমি এখানেই মরব।”

ঢাকা/শাহেদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর আম দ র ইসর য

এছাড়াও পড়ুন:

ছাত্রসংগঠনগুলোর বোঝাপড়ায় আসা উচিত ছিল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে সৃষ্ট উত্তেজনাকর পরিস্থিতি এড়ানো যেত বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া। তিনি মনে করেন, ছাত্রসংগঠনগুলোর একটি রূপরেখা প্রণয়ন করে নিজেদের মধ্যে চুক্তি বা বোঝাপড়ায় আসা উচিত ছিল।

আজ শনিবার বিকেলে রাজশাহীর তেরখাদিয়া এলাকায় বিভাগীয় স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এ মন্তব্য করেন।

প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ-২০২৫–এর সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার খোন্দকার আজিম আহমেদ। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসক আফিয়া আখতার, পুলিশ সুপার ফারজানা ইসলাম প্রমুখ।

সম্প্রতি ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে গতকাল রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক বিক্ষোভের পর প্রশাসন সব ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘আমার মনে হয় যে এটা এই পর্যায়ে আসত না, যদি ছাত্রসংগঠনগুলো নিজেরা বসে একটা সোশ্যাল কন্ট্র্যাক্ট বা নিজেরা একটা বোঝাপড়ায় আসতে পারত। যেহেতু ৫ আগস্টের পর সব জায়গায় সংস্কার হচ্ছে, ছাত্ররাজনীতির বিষয়েও ছাত্রসংগঠনগুলোর একটা নতুন রূপরেখায় একমত হওয়া উচিত ছিল।’

উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘হল ও একাডেমিক এরিয়াতে সাংগঠনিক ছাত্ররাজনীতি কীভাবে চলবে বা চলবে কি না, এটা যদি আগেই ছাত্রসংগঠনগুলো বসে একটা চুক্তিতে আসত, এ ক্ষেত্রে আমার মনে হয়, ছাত্ররাজনীতির প্রতি যে বিদ্বেষমূলক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, সেটা হতো না। আমাদের ছাত্রসংগঠনগুলোর এখানে আরেকটু ম্যাচিউর (পরিপক্ব) হওয়ার সুযোগ ছিল।’

বিশ্ববিদ্যালয় হলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের ব্যাপারে উপদেষ্টাকে প্রশ্ন করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত নিয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য করতে উপদেষ্টা রাজি হননি।

রাজশাহীতে বিপিএল খেলার আয়োজনের ব্যাপারে আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘তিনটি স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ম্যাচ ও বিপিএলের ম্যাচগুলো হয়ে থাকে। আমরা একটু ডিসেন্ট্রালাইজ করার জন্য উত্তরবঙ্গের দিকে রাজশাহী স্টেডিয়াম, দক্ষিণবঙ্গের দিকে খুলনা কিংবা বরিশাল স্টেডিয়াম নিয়েছি। আর সামনের বছর থেকেই বিপিএল আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছি। আশা করি, সংস্কার শেষে রাজশাহী স্টেডিয়ামে বিপিএলের কিছু ম্যাচ আয়োজন করতে পারব।’

এর আগে সকালে উপদেষ্টা রাজশাহী সার্কিট হাউসে ভার্চ্যুয়ালি স্থানীয় সরকার বিভাগের ১২টি প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। দিনব্যাপী সফরে তিনি নাটোরেও বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ