৩৩টি অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের দাম কমিয়েছে সরকার
Published: 13th, August 2025 GMT
অত্যাবশ্যকীয় ৩৩টি ওষুধের দাম কমানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আ. সামাদ মৃধা। এ ছাড়া ইডিসিএল তৃতীয় প্রজন্মের জন্মনিরোধক পিল উৎপাদন ও আইভি ফ্লুইড প্ল্যান্ট চালু করেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
আজ বুধবার বিকেলে ইডিসিএল কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির এমডি মো.
ইডিসিএল দেশের একমাত্র ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, যারা সাধারণত সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করে। সংবাদ সম্মেলনে ইডিসিএলের এমডি মো. আ. সামাদ মৃধা বলেন, আগে এপিআই (ওষুধের মূল উপাদান) প্রকিউরমেন্ট নীতি অস্বচ্ছ ছিল। বর্তমানে সেগুলোকে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ন্যায়সংগত মূল্যে কেনা হচ্ছে। পাশাপাশি কোম্পানির অদক্ষ ও অপ্রয়োজনীয় জনবল কমিয়ে উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এতে উৎপাদন খরচ কমে এসেছে এবং ৩৩টি ওষুধের দাম আগের তুলনায় শতকরা ৫০ ভাগ পর্যন্ত কমানো হয়েছে। দিকনির্দেশনাগুলো অটুট থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে অধিকাংশ ওষুধের দাম কমিয়ে ফেলা সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি।
ইডিসিএলের এমডি বলেন, তাঁরা তৃতীয় প্রজন্মের জন্মনিরোধক পিল উৎপাদন শুরু করেছেন। প্রশাসনিক আনুষ্ঠানিকতা পূরণ করা হলে, তা সরকারকে সরবরাহ করা শুরু হবে। আইভি ফ্লুইড প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ট্রায়াল রান করা হয়েছে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণ স্যালাইন, কলেরা স্যালাইন উৎপাদন করে সরকারের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে।
এমডি বলেন, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশিকা ও সরকারি চাহিদা অনুযায়ী পণ্যের ধরন (প্রোডাক্ট লাইন) সাজানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে সত্যিকারের অতিপ্রয়োজনীয় ওষুধগুলো দ্রুত উৎপাদন করে পর্যায়ক্রমে সরকারের সম্পূর্ণ চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। ইডিসিএলের নতুন দুটি প্ল্যান্ট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্ল্যান্ট দুটি শুধু ওষুধ নয়, টিকা সরবরাহ এবং জীব-প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য উৎপাদন করতেও সক্ষম হবে। ইডিসিএল শুধু সনাতনি ওষুধ নয়, ভবিষ্যতে সব ধরনের ওষুধ তৈরির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আরও পড়ুনঅত্যাবশ্যকীয় ওষুধের তালিকা হালনাগাদ করবে সরকার ১৩ জানুয়ারি ২০২৫ছয় মাসে অর্জনগত ছয় মাসে ইডিসিএলের উল্লেখযোগ্য অর্জন নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির এমডি বলেন, ৩৩টি ওষুধের দাম কমানো হয়েছে। বাকি ওষুধের দাম কমানোর কাজ চলছে। টোল ম্যানুফ্যাকচারিং (চুক্তিভিত্তিক উৎপাদন) অনেকাংশে কমিয়ে আনা হয়েছে এবং শিগগির কিছু মেশিন সংযোজনের মাধ্যমে সম্পূর্ণরূপে টোল বন্ধ করা হবে।
মো. আ. সামাদ মৃধা আরও বলেন, আইভি ফ্লুইডের প্ল্যান্ট চালু করা হয়েছে। সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে তুলনামূলকভাবে কম দামে ওষুধের মূল উপাদান নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত অযোগ্য ও অদক্ষ জনবল কমানো হয়েছে। ল্যাগ টাইম কমিয়ে কর্মঘণ্টা বাড়ানো হয়েছে। এতে উৎপাদনশীলতা বেড়েছে। ওভারটাইম কমিয়ে আনা হয়েছে, এতে কোম্পানির সাশ্রয় হচ্ছে। জনবলকে মোটিভেশনের মাধ্যমে কর্মমুখী করা হয়েছে। শ্রমিক কর্মচারী ও ইউনিয়নের সঙ্গে সুসম্পর্ক করে কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। ওষুধের গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। সরকারি সাপ্লাই চেইনে উন্নতি হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।