মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন, অটিজমে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে শৈশবে টিকা নেওয়ার সম্পর্ক আছে। গর্ভাবস্থায় নারীদের ব্যথানাশক টাইলেনল ওষুধ খাওয়া নিয়েও সতর্ক করেছেন তিনি। গতকাল সোমবার কোনো ধরনের বিজ্ঞানসম্মত প্রমাণ ছাড়াই ট্রাম্প স্বাস্থ্যবিষয়ক এসব পরামর্শ দেন।

গতকাল হোয়াইট হাউসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট অন্তঃসত্ত্বা নারী ও ছোট শিশুদের অভিভাবকদের উদ্দেশ করে চিকিৎসা-সংক্রান্ত এসব পরামর্শ দেন। তিনি বারবার তাঁদের বলছিলেন, ব্যথানাশক ওষুধটি ব্যবহার করা উচিত নয়। জীবনের খুব শুরুর দিকে বা একবারে একসঙ্গে শিশুকে প্রচলিত টিকাগুলো দেওয়াও ঠিক নয়।

ট্রাম্পের দেওয়া পরামর্শগুলো চিকিৎসাবিষয়ক সংগঠনগুলোর পরামর্শের বিপরীত। কারণ, বহু গবেষণার তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসক সমাজ দাবি করেছে, টাইলেনলে ব্যবহৃত অ্যাসিটামিনোফেন নামক উপাদানটি অন্তঃসত্ত্বা নারীদের স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ।

অথচ গতকাল ট্রাম্প বলেন, ‘আমি যেমনটা ভাবছি ঠিক সেভাবেই বলতে চাই—টাইলেনল খাবেন না। একেবারেই খাবেন না।’

অভিভাবকদের তাঁদের শিশু সন্তানের শরীরে একবারে একসঙ্গে কয়েক প্রকারের টিকা প্রয়োগ না করারও পরামর্শ দেন তিনি।

ট্রাম্প প্রশাসন অটিজমের লক্ষণগুলোর চিকিৎসায় লিউকোভরিন প্রয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। লিউকোভরিন হলো ফলিক অ্যাসিডের একটি ধরন।

আমেরিকান একাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস এবং আমেরিকান কলেজ অব অবস্টেট্রিশিয়ানস অ্যান্ড গাইনোকলজিস্টসসহ চিকিৎসা, গবেষণা ও অটিজমবিষয়ক বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ট্রাম্পের বক্তব্যের সমালোচনা করেছে।

কোয়ালিশন অব অটিজম সায়েন্টিস্টস নামক একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘উল্লিখিত তথ্যগুলোতে প্রমাণ হয় না যে টাইলেনল অটিজমের কারণ এবং লিউকোভরিন এর প্রতিষেধক। এ ধরনের কর্মকাণ্ড কেবল ভীতি তৈরি করে এবং মিথ্যা আশার সঞ্চার করে, অথচ এর কোনো সরল সমাধান নেই।’

আরও পড়ুনকরোনা টিকাকে প্রাণঘাতী বলা কেনেডিকেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প১৫ নভেম্বর ২০২৪

গতকাল ট্রাম্প যখন কথাগুলো বলছিলেন তখন স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র তাঁর পাশে ছিলেন। তিনিও টিকাবিরোধী কথা বলে থাকেন। তিনিও বলে থাকেন, কোনো টিকাই নিরাপদ নয়।

ট্রাম্প টিকা ও অটিজমের মধ্যে সম্ভাব্য সম্পর্ক খুঁজে বের করতে আবারও পরীক্ষা-নিরীক্ষার আহ্বান জানান। অথচ এ তত্ত্বটি বারবারই ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

টাইলেনলের নির্মাতা কোম্পানি কেনভু ট্রাম্পের বক্তব্যের পর প্রতিক্রিয়া জানিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমরা স্বতন্ত্র ও নির্ভরযোগ্য বৈজ্ঞানিক গবেষণায় বিশ্বাসী। আর তাতে স্পষ্টভাবে দেখা গেছে, অ্যাসিটামিনোফেন গ্রহণের কারণে অটিজম হয় না। আমরা এর বিপরীতে কোনো দাবির সঙ্গে একমত নই। এ ধরনের দাবি যে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও অভিভাবকদের জন্য যে স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে, তা নিয়ে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’

ট্রাম্প বলে থাকেন, তিনি টিকার বড় সমর্থক। তাঁর দাবি, প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম মেয়াদে করোনা মহামারি চলাকালে তাঁর নেতৃত্বেই কোভিড-১৯ টিকা দ্রুত তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এরপরও তিনি টিকা থেকে পারদ (মারকারি) অপসারণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং বলেছেন, ১২ বছর বয়সের আগে শিশুদের হেপাটাইটিস বি টিকা পাওয়া উচিত নয়।

ট্রাম্প বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে সাধারণত এই ভ্যাকসিন জন্মের প্রথম ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দেওয়া হয়। হাম, মাম্পস ও রুবেলার টিকাটি একসঙ্গে না দিয়ে তিনটি আলাদা শটে দেওয়া উচিত।

টাইলেনল-অটিজম নিয়ে ট্রাম্পের বলা কথাগুলো করোনা মহামারির প্রথম মাসগুলোতে তাঁর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের কথা মনে করিয়ে দেয়। তখন তিনি প্রায়ই এমন পরামর্শ দিতেন, যা ছিল বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন। যেমন তিনি তখন মানুষকে ইনজেকশন হিসেবে ব্লিচ গ্রহণ করার পরামর্শ দেন। যদিও তাঁর সমর্থকেরা পরে বলেছিলেন, কথাটি অতটা গুরুত্ব সহকারে বলা হয়নি।

ইউনিসেফ ইউএসএর প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাইকেল জে নায়েনহুইস বলেন, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, টিকা নেওয়া নিরাপদ। এতে যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের পোলিও এবং হামের মতো রোগ নির্মূল করতে সাহায্য করেছে।

ধারণা করা হয়, গত ৫০ বছরে অতি জরুরি টিকাগুলো নেওয়ার কারণে অন্তত ১ কোটি ৫৪ লাখ মানুষের জীবন বেঁচেছে।

আরও পড়ুনআমি প্রেসিডেন্ট না থাকলে টিকা আসত না: ট্রাম্প১২ মার্চ ২০২১

গবেষকেরা বলছেন, টাইলেনল ব্যবহারের সঙ্গে অটিজমের সম্পর্ক থাকার দৃঢ় কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ২০২৪ সালে সুইডেনে প্রায় ২৫ লাখ শিশুর ওপর চালানো এক গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় অ্যাসিটামিনোফেনের সংস্পর্শে থাকা এবং স্নায়বিক বিকাশজনিত সমস্যার মধ্যে কোনো কার্যকারণ সম্পর্ক নেই।

২০২৫ সালে ৪৬টি পূর্ববর্তী গবেষণা নিয়ে করা এক পর্যালোচনায় বলা হয়, গর্ভাবস্থায় অ্যাসিটামিনোফেনের সংস্পর্শ এবং এসব সমস্যার বাড়তি ঝুঁকির মধ্যে সম্ভাব্য সম্পর্ক পাওয়া গিয়েছিল।

তবে আইকান স্কুল অব মেডিসিন, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি এবং অন্যান্য গবেষকেরা বলছেন, এই গবেষণা এটা প্রমাণ করে না যে এই ওষুধটির কারণেই এমন হয়েছে।

তাঁরা পরামর্শ দিয়েছেন, গর্ভবতী নারীরা প্রয়োজনে অ্যাসিটামিনোফেন ব্যবহার করতে পারেন। তবে এ ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন মাত্রা ও যতটা সম্ভব কম সময়ের জন্য ব্যবহার করতে হবে।

ট্রাম্পের কর্মকর্তারা সেই পর্যালোচনাকে উল্লেখ করছেন এবং টাইলেনল কতটা নেওয়া উচিত, তা নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার সময় একই ধরনের ভাষা ব্যবহার করছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসলামে ভিন্ন ধর্মের মানুষের সঙ্গে সহাবস্থানের সংস্কৃতি

ইসলামে “সহাবস্থান” বা “তাআয়ুশ” হল এক বিশাল সমুদ্রের শান্ত স্রোতের মতো, যা বিভিন্ন ধর্ম, জাতি, সংস্কৃতির মানুষকে একসঙ্গে বয়ে নিয়ে যায়। প্রাচীন ইসলামি গ্রন্থগুলো “সহাবস্থান” শব্দটা সচরাচর পাওয়া যায় না, কারণ তখন ভিন্নতা নিয়ে উদ্বেগ ছিল না। ধর্মে জোর খাটানোর কোনো প্রশ্নই ওঠেনি।

কোরআনের স্পষ্ট নির্দেশনা, “ধর্মে কোনো জোরজবরদস্তি নেই” (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৬); “যে চায় ইমান আনুক, যে চায় কুফর করুক” (সুরা কাহফ, আয়াত: ২৯)। এই স্বাধীনতা ইসলামের মূল ভিত্তি। তবে জুলম বা নিপীড়ন যেই ধর্মের মানুষই করুক, ইসলাম সেখানে ছাড় দিতে রাজি নয়।

ভিন্নতা তো আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ম। কোরআন বলে, “তাঁর নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে আসমান-জমিনের সৃষ্টি, তোমাদের ভাষা ও রঙের ভিন্নতা—এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।” (সুরা রূম, আয়াত: ২২)

এই আয়াতটা যেন একটা জানালা খুলে দেয় বিশ্বের সৌন্দর্যের দিকে। খ্যাতিমান তাফসিরকার তাহের ইবনে আশুর এর ব্যাখ্যায় বলেন, মানুষ একই প্রজাতি হয়েও ভাষার ভিন্নতা একটা মহান নিদর্শন। এটি দেখায় আল্লাহ মানুষের স্বভাবে কত রকমের চিন্তা, অভিব্যক্তি দিয়েছেন—লেহাজ, সংক্ষেপণ, যোগ-বিয়োগ করে একই মূল থেকে হাজারো ভাষা গড়ে উঠেছে। (আত-তাহরির ওয়াত তানভির, ২১/১৪৫-১৪৭, দার আল-মাআরিফ, তিউনিস, ১৯৮৪)

তাঁর নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে আসমান-জমিনের সৃষ্টি, তোমাদের ভাষা ও রঙের ভিন্নতা—এতে জ্ঞানীদের জন্য নিদর্শন রয়েছে।কোরআন, সুরা রূম, আয়াত: ২২

এই ভিন্নতা কোনো অভিশাপ নয়, বরং আল্লাহর রহমত—যা মানুষকে একে অপরের কাছাকাছি নিয়ে আসে, শেখায় সহনশীলতা।

সহাবস্থানের সংজ্ঞা খুব সহজ: মুসলিম ও অমুসলিমের মধ্যে সব ধরনের ভালো সম্পর্ক—সহযোগিতা, সমন্বয়, দয়া, যত্ন, পরিচর্যা। এটি ব্যক্তি থেকে সমাজ পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। আজকের বিশ্বে এর জন্য দরকার পারস্পরিক সম্মানের সংস্কৃতি। বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, মত, রাজনৈতিক ধারার মধ্যে এই সম্মান না থাকলে সহাবস্থান অসম্ভব। কোরআনের নির্দেশ, “তিনি তোমাদের মনোনীত করেছেন, ধর্মের ব্যাপারে তিনি তোমাদের উপর কোন কঠোরতা আরোপ করেননি... যাতে রাসুল তোমাদের সাক্ষী হন, তোমরা মানুষের সাক্ষী হও।” (সুরা হজ, আয়াত: ৭৮)

এই আয়াতটা একটা দায়িত্ব বাতলে দেয়—মুসলিমরা হবেন সারা বিশ্বের জন্য সাক্ষী, ন্যায়ের প্রতীক।

আরও পড়ুনধর্ম ও বিজ্ঞানের সম্পর্ক: পশ্চিমা অনুকরণ থেকে মুক্তির পথ২২ আগস্ট ২০২৫

ইসলাম আকিদা (বিশ্বাস) ও সহাবস্থান (সামাজিক জীবন) আলাদা করে দেখে। আকিদা শরিয়াহর ভিত্তি এবং সহাবস্থান সমাজের বাস্তবতা। রাসুল (সা.)-এর হাদিস, “যে কোনো অঙ্গীকারভুক্ত লোককে জুলুম করে, তার অধিকার কমায়, তার সাধ্যের বাইরে কাজ চাপায় বা তার সম্মতি ছাড়া কিছু নেয়—কিয়ামতে আমি তার বিরুদ্ধে দাঁড়াব।” (সুনান আবু দাউদ, হাদিস: ৩০৫২)

এই হাদিস অমুসলিমদের অধিকার রক্ষার জন্য একটি ঢালস্বরূপ। অনেক ভুল বোঝাবুঝি আসে ধর্মীয় নির্দেশের ভুল ব্যাখ্যা থেকে। যা অকাট্য বিধান নয়, তাতে ইজতিহাদের জায়গা থাকে, দ্বিমত থাকে। ভিন্নতা গ্রহণ করা হলে অতিরিক্ত কঠোরতা এড়ানো যায়।

ইসলামি ঐতিহ্যে সহাবস্থানের বহু উদাহরণ রয়েছে। ফিকহ, কালামের গ্রন্থগুলো অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের আলোচনায় ভরপুর। এই চিন্তা ইতিহাসে প্রতিফলিত হয়েছে। প্রথম দিকের ফিকহে এই বিষয় “সিয়ার” নামে পরিচিত—যা মুসলিমদের সঙ্গে অন্যদের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করে থাকে।

যারা ধর্মে তোমাদের সঙ্গে লড়েনি, তোমাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করেনি—তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে, ন্যায় করতে আল্লাহ বারণ করেন না। আল্লাহ ন্যায়কারীদের ভালোবাসেন।কোরআন, সুরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৮

সারাখসি (মৃ. ৪৯০ হি.) শাইবানির (মৃ. ১৮৯ হি.) আস-সিয়ার আস-সাগির বইয়ের ব্যাখ্যায় বলেন, এটা মুসলিমদের সঙ্গে যুদ্ধরত মুশরিক, চুক্তিবদ্ধ, জিম্মি, বিদ্রোহীদের সম্পর্ক তুলে ধরেছে। এমনকি বিদ্রোহীরা মুসলিম হলেও তাদের সঙ্গে আচরণ করা হবে মুশরিকদের মতো, কারণ তারা ভুল তাফসির করছে। (শারহ কিতাব আস-সিয়ার আল-কাবির, ১/৫-১০, দার আল-কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ, বৈরুত, ১৯৯৩)

এই সম্পর্কের মূল কথা “আদল” বা ন্যায়। কোরআনের নির্দেশ, “যখন কথা বলো, ন্যায় বলো—যদি আত্মীয়ও হয়... এটা আমার সরল পথ, এটি অনুসরণ করো, অন্য পথে যেও না।” (সুরা আনআম, আয়াত: ১৫২-১৫৩)

ন্যায় মানে অন্যের বিশ্বাস নিয়ে ঠাট্টা নয়, জুলুম নয়। একই সঙ্গে যত্রতত্র কোনো মুসলিমকে কাফির বলে জাহান্নামের ফয়সালা করাও নয়। মুসলিমের কাজ সবার প্রতি ইহসান—রঙ, জাতি, বিশ্বাস যাই হোক না কেন। কোরআন বলে, “যারা দ্বীনের ব্যাপারে তোমাদের সঙ্গে লড়েনি, তোমাদের দেশ থেকে বিতাড়িত করেনি—তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে, ন্যায় করতে আল্লাহ বারণ করেন না। আল্লাহ ন্যায়কারীদের ভালোবাসেন।” (সুরা মুমতাহিনা, আয়াত: ৮)

হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “ন্যায়নুগ আচরণকারীরা কিয়ামতে আলোর অধিষ্ঠানে (নুরের মিম্বরে) থাকবে, আল্লাহর আরশের ডানে। এরা হল তারা, যারা বিধানের ক্ষেত্রে এবং পরিবার ও দায়িত্ব পালনে ন্যায় বজায় রাখে।” (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৮২)

আরও পড়ুনইসলাম কি কোনো ধর্ম নাকি জীবনবিধান?১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইসলামের সহাবস্থান সংস্কৃতির চারটি মূল বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

প্রথম, মানবিকতা: সহাবস্থান সকল মানুষের জন্য—শুধু মুসলিমদের জন্য নয়। কোরআন বলে, “তোমার প্রতিপালক চাইলে সবাইকে এক উম্মত বানাতেন, কিন্তু তারা ভিন্ন থাকবে—যাদের প্রতি রহমত করা হয়েছে, তারা ছাড়া। এজন্যই তাদের সৃষ্টি।” (সুরা হুদ, আয়াত: ১১৮-১১৯)

এই আয়াত বলছে, ভিন্নতা আল্লাহর ইচ্ছা—যা মানুষকে শেখায় সহনশীলতা, একতা।

দ্বিতীয়, পারস্পরিকতা: সহাবস্থান একতরফা নয়, দুই পক্ষের আদান-প্রদান। কোরআন বলে, “হে মানুষ, আমরা তোমাদের পুরুষ-নারী থেকে সৃষ্টি করেছি, জাতি-উপজাতি বানিয়েছি যাতে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারে। আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত সে, যে সবচেয়ে খোদাভীরু।” (সুরা হুজুরাত, আয়াত: ১৩)

এখানে “তাআরুফ” বা পরিচয়ের কথা বলা হয়েছে—যা সম্মান, সহযোগিতার ভিত্তি।

তৃতীয়, বাস্তব অভিজ্ঞতা: সহাবস্থান কেবল কথায় নয়, কাজে প্রমাণিত। কোরআন বলে, “মহান তিনি, যার হাতে রাজত্ব, তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে পরীক্ষা করেন কে সবচেয়ে ভালো কাজ করে।” (সুরা মুলক, আয়াত: ১-২)

জীবন একটা পরীক্ষা—যেখানে ভালো কাজ দিয়ে সহাবস্থানের পরিবেশ গড়তে হয়।

চতুর্থ, সর্বজনীনতা: একই দেশে, একই সমাজে সবার জন্য সমান সুযোগ। যতক্ষণ মানুষ একসঙ্গে থাকে, সহাবস্থান তাদের সকলের দায়িত্ব। এটি কোনো সীমানায় বাঁধা থাকতে পারে না।

ইতিহাসে এই নীতি কত সুন্দরভাবে প্রয়োগ হয়েছে দেখুন। মদিনায় গিয়েই রাসুল (সা.) ইহুদিসহ সকলের সঙ্গে চুক্তি করেন, তাদের যার যা ধর্ম তা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেন। ওমর (রা.) জেরুজালেম জয়ের পর গির্জায় নামাজ পড়তে অস্বীকার করেন, যাতে পরে মুসলিমরা তা দখল না করে। এই ঘটনাগুলো দেখায়, সহাবস্থান কেবল কথায় নয়, কাজের প্রমাণিত হয়েছে মুসলিম সভ্যতায়।

আজকের বিশ্বে বিভেদ, ঘৃণা বাড়ছে। ফলে আমাদের ইসলামের শিক্ষার দিকেই ফিরতে হবে। ভিন্নতা মানেই বিভেদ নয়, সৌন্দর্য। ন্যায়, দয়া, সম্মান দিয়ে গড়ে তুলতে পারি আমরা একটি শান্তির সমাজ।

সূত্র: ইসলাম অনলাইন ডটনেট

আরও পড়ুনইসলাম বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল ধর্ম২৪ জুলাই ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইউনিভার্সিটি অব কলম্বিয়ার গবেষণা: পরিবারের সঙ্গে বসে খাবার খেলে শিশু–কিশোরদের পরীক্ষার ফলাফল ভালো হয়
  • ‘সিন্ডিকেট’ ছেড়ে আফসোস করি: তাসনুভা তিশা
  • বান্দরবানের বিএনপির ঐক্য কেবল মুখে মুখে
  • একসঙ্গে জন্মানো পাঁচ সন্তান লালন–পালনের খরচ নিয়ে দুশ্চিন্তায় মা–বাবা
  • বিএনপির মুখে আগের রেজিমের সুর: জামায়াত নেতা হামিদুর
  • একসঙ্গে খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নতুন ইতিহাস গড়লেন বাবা–ছেলে
  • ইসলামে ভিন্ন ধর্মের মানুষের সঙ্গে সহাবস্থানের সংস্কৃতি