রাজশাহী খাদ্য বিভাগের একজন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদমর্যাদার কর্মকর্তা দুই ধাপ ওপরে এসে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দুই বছর আট মাস আগে তিনি ওই পদে বহাল হন। মাস দুয়েক আগে তিনি ওই পদের সবেমাত্র ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এখনো তিনি ওই পদেই বহাল রয়েছেন।

একইভাবে খাদ্য বিভাগের নিচের পদেও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি খাদ্যগুদামে বিপুল পরিমাণ খাওয়ার অনুপযোগী চাল ধরা পড়ার পর এসব বিষয় আলোচনায় এসেছে। ইতিমধ্যে স্থানীয় খাদ্যগুদামের একজন কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। আরেকজনকে বদলি করা হয়েছে। এই কর্মকর্তাকেও বরখাস্তের আদেশ অনুমোদনের জন্য আবেদন করা হয়েছে।

সম্প্রতি জেলার দুটি খাদ্যগুদামে বিপুল পরিমাণ খাওয়ার অনুপযোগী চাল পাওয়া গেছে। এরপর নড়েচড়ে বসেছে খাদ্য বিভাগ। এসব ঘটনার জন্য আটটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। তবে এই কমিটি যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।

এদিকে বিধিবহির্ভূতভাবে গুদামে ভালো চাল ঢুকিয়ে খারাপ চাল সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নিয়ম অনুযায়ী, অভিযুক্ত মিলারদেরই নিজ দায়িত্বে ওই খারাপ চাল পাল্টে দেওয়ার কথা এবং তাদের বিধি মোতাবেক শাস্তি পাওয়ার কথা। কিন্তু খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা নিজেরাই এই চাল পরিবর্তনের কাজ করছেন। অভিযোগ রয়েছে, এই কারসাজির সঙ্গে নিচ থেকে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ের কর্মকর্তারা জড়িত আছেন। এসব ঘটনা অনুসন্ধান করতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিধিবহির্ভূত দায়িত্ব গ্রহণের বিষয়টি।

আরও পড়ুনরাজশাহীর খাদ্যগুদামে চাল নিয়ে ‘চালবাজি’, কোটি টাকার কারসাজি২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্বে আছেন ওমর ফারুক। তিনি দুই বছর আট মাস আগে এই পদে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। তখন তিনি উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মর্যাদার একজন কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর দুই গ্রেড ওপরে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পদ। এই দুই পদ টপকে তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের পদে আসেন। অভিযোগ রয়েছে, বাড়ি নওগাঁ হওয়ার সুবাদে তৎকালীন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদারের আশীর্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। যদিও এই কর্মকর্তা সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেছেন, মন্ত্রীর আশীর্বাদ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। যাঁরা আশীর্বাদ নিয়ে পদ পেয়েছিলেন, তাঁরা সরকার পরিবর্তনের পর সেই পদে থাকতে পারেননি। তিনি দুই আমলেই বহাল তবিয়তে রয়েছেন। কর্তৃপক্ষের ইচ্ছায় নিজের যোগ্যতায় নিয়োগ পেয়েছেন এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করেছেন বলেই টিকে আছেন

ওমর ফারুক দাবি করেন, রাজশাহী জেলা খাদ্য কর্মকর্তার পদটি বড় চ্যালেঞ্জিং। এ জন্য কেউ এখানে আসতে চান না। তিনিও থাকতে চান না। কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাঁকে ছাড়ে না। তিনি তাঁর ‘অনার বোর্ডটি’ দেখিয়ে বলেন, ৩৭ নম্বর থেকে সর্বশেষ ৫০ নম্বর পর্যন্ত সবাই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অথবা শুধু রুটিন দায়িত্ব পালন করেছেন। কেউ আসতে চান না বলেই এভাবে চালাতে হয়েছে। অনার বোর্ডের হিসাব অনুযায়ী, ১৪ জন কর্মকর্তার কেউ জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন না। ২০১৪ সালের পর থেকে এভাবে ভারপ্রাপ্ত দিয়ে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওমর ফারুকের আগে যাঁরা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা সবাই জেলা সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছিলেন। বিধি অনুযায়ী এক গ্রেড নিচের কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। ব্যতিক্রম শুধু ওমর ফারুক। তিনিই শুধু উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পদমর্যাদার হয়েও জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের চেয়ারে বসেছেন। গত ২ জুলাই তিনি সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেছেন। এর আগ পর্যন্ত তিনি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দুই ধাপ নিচের পদে থেকে জেলার দায়িত্ব পালন করেছেন। আবার নিয়ম অনুযায়ী পদোন্নতি পেলে তাঁর কর্মস্থল পরিবর্তন হওয়ার কথা। ওমর ফারুকের বেলায় তা–ও হয়নি। এ ব্যাপারে ওমর ফারুক বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কোনো হাত নেই। সচিব স্যার মনে করেছেন যে রাজশাহীর জন্য এটা করার দরকার।’

এদিকে ওমর ফারুক দায়িত্বে থাকার সময় জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আসাদুজ্জামান খানকে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে পদোন্নতি দিয়ে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়। তিনি এই আদেশবলে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি রাজশাহীর ভারপ্রাপ্ত জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে যোগদান করেন। তবে একদিন পরই ওই আদেশ বাতিল করা হয়। একই সঙ্গে চারজন কর্মকর্তার এই পদোন্নতি হয়েছিল। এর মধ্যে শুধু আসাদুজ্জামানের বদলির আদেশটি বাতিল করা হয়। ফলে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক হিসেবে ওমর ফারুকই বহাল থেকে যান।

আরও পড়ুনগুদামে খাওয়ার অনুপযোগী চাল নিয়ে রাজশাহী খাদ্য বিভাগে তোলপাড়, ৮ তদন্ত কমিটি১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামের সদ্য বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া একজন উপপরিদর্শক। নিয়ম অনুযায়ী পরিদর্শক থাকলে কোনো উপপরিদর্শক খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন না।

এদিকে বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামের সদ্য বরখাস্ত হওয়া ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বাচ্চু মিয়া একজন উপপরিদর্শক। নিয়ম অনুযায়ী পরিদর্শক থাকলে কোনো উপপরিদর্শক খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পেতে পারেন না। সূত্র জানায়, একই সময়ে ভবানীগঞ্জ খাদ্যগুদামের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য দুজন পরিদর্শক আবেদন করেছিলেন। তাঁদের বাদ দিয়ে উপপরিদর্শক বাচ্চু মিয়াকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়। অথচ মোহনপুর উপজেলা খাদ্যগুদামে থাকা অবস্থায় বাচ্চু মিয়ার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল। তারপরও গত বছরের ২৪ নভেম্বর তাঁকেই ভবানীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পরিদর্শক না পাওয়ার কারণে বাচ্চু মিয়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। দক্ষ হলেই একজন উপপরিদর্শককে পরিদর্শকের কাজে দায়িত্ব দেওয়া হয়। বাচ্চু মিয়া আগেও খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আরও জায়গায় উপপরিদর্শকেরা খাদ্যগুদামের ভাপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন। ওই পদে দুজন পরিদর্শকের আবেদন করার বিষয়ে মাইন উদ্দিন বলেন, বিষয়টি তিনি জানেন না। বিষয়টি নির্দিষ্ট করে বলা হলে তিনি খতিয়ে দেখবেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র প ত কর মকর ত কর মকর ত র র কর মকর ত ওমর ফ র ক বরখ স ত র জন য উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আমি শালিনিকে অনেক কষ্ট দিয়েছি: অজিত

ভারতের দক্ষিণী সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেতা অজিত কুমার। অভিনয় গুণে যশ-খ্যাতি সবই কুড়িয়েছেন। কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ চলতি বছরে ‘পদ্মভূষণ’ পুরস্কার পেয়েছেন। গত ২৮ এপ্রিল ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে এ সম্মাননা গ্রহণ করেন ৫৩ বছরের অজিত।

এদিকে, সিনেমার পাশাপাশি মোটরসাইকেলের ব্যাপারে শখ রয়েছে অজিতের। তিনি একজন পেশাদার রেসারও। মোটরসাইকেল নিয়ে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়েছিলেন। দ্য হলিউড রিপোর্টার ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ক্যারিয়ার, সংগ্রাম ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন অজিত।

আরো পড়ুন:

‘কেজিএফ’ অভিনেতা মারা গেছেন

উদয়পুরে বসবে বিজয়-রাশমিকার বিয়ের আসর?

সিনেমা ও মোটরস্পোর্ট—দুই ক্ষেত্রেই অজিতের পথচলা চ্যালেঞ্জে ভরা ছিল। তা জানিয়ে এই অভিনেতা বলেন, “আমি যা করি, তাতে মনপ্রাণ ঢেলে দিয়েই করি। অনেক বাধা এসেছে। কিন্তু আমি সবকিছু অতিক্রম করেছি। রেসিংয়ের ক্ষেত্রেও আমি হয়তো এমনই কঠোর পরিশ্রম করি, যেমন ১৯ বছরের একজন তরুণ করে থাকে; যে রেসিংকে পেশা হিসেবে নিতে চায়।”

অজিতের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি ভালো টিম ও তাদের সহযোগিতা। এ তথ্য স্মরণ করে অজিত বলেন, “আপনার ভালো একটি টিম থাকা দরকার। আমি খুব ভাগ্যবান। কারণ যেসব পরিচালক, প্রযোজক, টেকনিশিয়ানদের সঙ্গে কাজ করেছি, তাদের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি।”

অভিনেত্রী শালিনির সঙ্গে ঘর বেঁধেছেন অজিত। তার জীবনের কেন্দ্রবিন্দু তার স্ত্রী শালিনি। জীবনের উত্থান-পতনের প্রতিটি মুহূর্তে পাশে থেকেছেন। অভিনেতার সরল স্বীকারোক্তি, “আমি মনে করি না, আমার সঙ্গে বসবাস করা খুব সহজ বিষয়। আমি ওকে অনেক কষ্ট দিয়েছি, তবু ও সবসময় আমাকে সমর্থন করেছে। সন্তানদের জন্ম হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ও আমার সঙ্গে রেসে যেত। ওর সহায়তা না থাকলে কিছুই সম্ভব হতো না।”

খ্যাতির বিড়ম্বনায় পড়েছেন অজিত। তা ব্যাখ্যা করে এই অভিনেতা বলেন, “আমি প্রায় সব সময়ই বাড়ির ভেতরে থাকি। ভক্তদের ভালোবাসার জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেই ভালোবাসার কারণেই পরিবারের সঙ্গে স্বাভাবিক সময় কাটানো প্রায় অসম্ভব। আমি ছেলেকে স্কুলে নামিয়ে দিতে পারি না।”  

খ্যাতি জীবন থেকে অনেক কিছু কেড়ে নেয়। এ বিষয়ে অজিত বলেন, “খ্যাতি আপনাকে আরামদায়ক জীবন দেয়। কিন্তু জীবনের আসল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোই কেড়ে নেয়।”

১৯৯৯ সালে মুক্তি পায় অজিত অভিনীত ‘অমরকালাম’ সিনেমা। এর শুটিং করতে গিয়ে অভিনেত্রী শালিনির রূপে চোখ আটকে যায় তার। পরে এ অভিনেত্রীকে প্রেমের প্রস্তাব দেন অজিত। ২০০০ সালের ২৪ এপ্রিল সাতপাকে বাঁধা পড়েন এই তারকা যুগল। কয়েক মাস আগে বিবাহিত জীবনের ২৫ বছর পূর্ণ করেছেন এই জুটি।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলব্যের কামুর দর্শন, চরিত্র ও পাঠক
  • প্রসূনের কাছে পরীমণির দুঃখ প্রকাশ
  • অকৃতজ্ঞ মানুষদের সাহায্য করা বন্ধ করুন: ভাবনা
  • গোঁফওয়ালা শাকিবকে দেখে ভক্তদের উল্লাস
  • নতুন বিশ্বের সন্ধিক্ষণে একজন মুসলিমের ১০ অপরিহার্য অঙ্গীকার
  • এ গ্যাদা, এবার আমার সিরিয়াল
  • যে রানিকে ‘জীবন্ত দেবী’ হিসেবে গণ্য করা হতো
  • আমি শালিনিকে অনেক কষ্ট দিয়েছি: অজিত
  • এস কে সুরের বিরুদ্ধে দুদকের মামলায় অভিযোগ গঠন, সাক্ষ্য শুরু ২০ জানুয়ারি
  • সেই মুনতাসিরকে এবার এনসিপি থেকেই বাদ