Samakal:
2025-11-07@18:02:54 GMT

বৈষ্ণব কবিতা

Published: 13th, April 2025 GMT

বৈষ্ণব কবিতা

বঁধু তুমি সে আমার প্রাণ
দেহ মন আদি        তোঁহারে সঁপেছি
কুলশীল জাতি মান॥
অখিলের নাথ        তুমি হে কালিয়া
যোগীর আরাধ্য ধন।
গোপ গোয়ালিনী     হাম অতি হীনা
না জানি ভজন পূজন
পিরীতি-রসেতে    ঢালি তনু মন
দিয়াছি তোমার পায়।
তুমি মোর পতি        তুমি মোর গতি
মনে নাহি আন ভায়।
কলঙ্কী বলিয়া        ডাকে সব লোকে
তাহাতে নাহিক দুখ।
তোমার লাগিয়া        কলঙ্কের হার
গলায় পরিতে সুখ॥
সতী বা অসতী        তোমাতে বিদিত
ভালো মন্দ নাহি জানি
কহে চণ্ডীদাস        পাপপুণ্য সম
তোহারি চরণ খানি॥

রূপ লাগি আঁখি ঝুরে গুণে মন ভোর। 
প্রতি অঙ্গ লাগি কান্দে প্রতি অঙ্গ মোর॥
হিয়ার পরশ লাগি হিয়া মোর কান্দে। 
পরাণ-পিরীতি লাগি থির নাহি বান্ধে॥ 
সই কি আর বলিব।
যে পণ করাছি মনে সেই সে করিব। 
রূপ দেখি হিয়ার আরতি নাহি টুটে। 
বল কি বলিতে পারি যত মনে উঠে॥
দেখিতে যে সুখ উঠে কি বলিব তা। 
দরশ পরশ লাগি আউলাইছে গা॥
হাসিতে খসিয়া পড়ে কত মধু-ধার। 
লহু লহু হাসে পহুঁ পিরীতির সার॥ 
গুরু গরবিত মাঝে রহি সখী সঙ্গে।
পুলকে পুরয়ে তনু শ্যাম পরসঙ্গে॥
পুলক ঢাকিতে করি কত পরকার। 
নয়নের ধারা মোর বহে অনিবার॥
ঘরের যতেক সবে করে কানাকানি। 
জ্ঞান কহে লাজ ঘরে ভেজাই আগুনি॥
 

আজু রজনী হাম      ভাগে পোহায়লুঁ
পেখলু পিয়া মুখ চন্দা।
জীবন যৌবন        সফল করি মানলু
দশদিশ ভেল নিরদন্দা॥
আজু মঝু গেহ        গেহ করি মানলুঁ
আজু মজু দেহ ভেল দেহা।
আজু বিহি মোহে    অনুকূল হোয়ল
টুটল সবহুঁ সন্দেহা॥
সোই কোকিল অব    লাখ লাখ ডাকউ
লাখ উদয় করু চন্দা।
পাঁচবাণ অব        লাখ বাণ হোউ
মলয় পবন বহু মন্দা॥
অব মঝু যব        পিয়া সঙ্গ হোয়ত
তবহি মানব নিজ দেহা।
বিদ্যাপতি কহ        অল্প ভাগি নহ
ধনি ধনি তুয়া নব নেহা॥
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

বন্দী কৃষি নয়, চিত্রকর্মে সার্বভৌম কৃষির কথা বলতে চেয়েছেন সুলতান

বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রণের ফলে কৃষি ও কৃষকের যে দুর্দশা তৈরি হয়েছে, সুলতান সেটাকে ভাঙতে চেয়েছেন। ষাটের দশকে সবুজবিপ্লবের নামে কৃষিকে ও কৃষককে বন্দী করে ফেলা হয়েছে। সুলতান তাঁর চিত্রকর্মের মাধ্যমে সে বন্দিত্ব ভেঙে সার্বভৌম কৃষির কথা বলতে চেয়েছেন। শিল্পকলার সঙ্গে কৃষিচিন্তা যুক্ত করা একটি কঠিন কাজ। সুলতান সেটি করতে পেরেছিলেন।

শুক্রবার রাজধানীতে প্রকাশনা সংস্থা দ্য ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেডের (ইউপিএল) কার্যালয়ে চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের চিত্রকর্ম নিয়ে ‘সুলতানের কৃষি জিজ্ঞাসা’ শীর্ষক এক বইয়ের পাণ্ডুলিপি পাঠ পর্যালোচনা অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন বক্তারা। ইউপিএল ও দুনিয়াদারি আর্কাইভ যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সুলতানের চিত্রকর্মে কৃষির নানা দিক নিয়ে বইটি লিখছেন গবেষক পাভেল পার্থ।

পাঠ পর্যালোচনায় অংশ নিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ফিরদৌস আজিম বলেন, ‘সুলতানের বোহেমিয়ান জীবনযাপনের সঙ্গে তাঁর চিত্রকলার একটা যোগসূত্র আছে। আজকের এই নিওলিবারাল (নয়া উদারবাদী অর্থনীতির) যুগে আমাদের সমসাময়িক চিত্রশিল্পীদের খুব বেশি বাজার এক্সিবিশন নিয়ে চিন্তা করতে হয়। কিন্তু সুলতানের ওসব চিন্তাধারা ছিলই না।’

সে জন্যই সুলতানের পক্ষে এমন চিত্রকর্ম সৃজন করা সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে ফিরদৌস আজিম বলেন, শিল্পকর্মের সঙ্গে কৃষিচিন্তার মেলবন্ধন ঘটানো কঠিন কাজ। সুলতান সেটি পেরেছিলেন। তাঁর বোহেমিয়ান জীবনযাপন ছিল তাঁর সৃষ্টিশীলতার উৎস। কৃষিকে সব সময় সুলতান উর্বর জায়গা থেকে দেখতে চেয়েছেন। সেটাই তাঁর তুলি ও ক্যানভাসে তুলে ধরেছেন।

লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ‘সুলতানের যে কৃষিভাষ্য তৈরি হচ্ছে, সেটি খুব গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, আমাদের এই অঞ্চলের কৃষি বর্তমানে একটি বন্দী কৃষি। এখানে কৃষকদের বন্দী করে ফেলা হয়েছে ষাটের দশকে সবুজবিপ্লবের নামে। আমরা দেখতে পাই, কৃষকেরা আসলে কখনো স্বাধীন ছিলেন না। সুলতান বন্দী কৃষি নয়, সার্বভৌম কৃষির কথা বলতে চেয়েছেন তাঁর চিত্রকর্মে।’

১৮২২ সালের সমাচার চন্দ্রিকা পত্রিকায় এ অঞ্চলের কৃষকের দুর্দশার কথা তুলে ধরা হয়েছিল জানিয়ে পাভেল পার্থ বলেন, ‘পরবর্তী সময়ে ভাসানী বা মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা বা এস এম সুলতান ঠিক একই কথা বলছেন, কৃষকদের আসলে শোষণ করা হয়েছে বা কৃষকেরা আসলে একটি প্রান্তিক অবস্থায় আছেন। সুলতানের ছবিতে সে বিষয়গুলো বোঝার চেষ্টা করেছি। সুলতান একধরনের কৃষিনির্ভর শিল্পচেতনা তৈরি করেছেন।’

এস এম সুলতানের ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৪ সাল—এই ২০ বছরের কৃষি চিত্রকর্ম বিশ্লেষণ করে ‘সুলতানের কৃষি জিজ্ঞাসা’ শীর্ষক বইয়ের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করেছেন পাভেল পার্থ। বইটি বাজারে আনছে ইউপিএল।

শিল্পী ও শিল্প সমালোচক মোস্তফা জামান বলেন, ‘পাণ্ডুলিপিতে সুলতানের কৃষকেরা কী ধানের ভাত খায়, এটি আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও আলোচনা মনে হয়েছে। তাঁর চিত্রে কৃষিজমিতে কোনো আইল (সীমারেখা) নেই, তা বিশেষ চিন্তাভাবনা থেকে ফুটে উঠেছে। তাঁর শিল্পকর্মে নারীদের মাথায় ঘোমটা নেই। কারণ, কর্মী নারীদের চিত্রে আঁকতে গেলে তাঁর মাথায় ঘোমটা থাকা বাস্তবসম্মত নয়। এভাবে সুলতানের শিল্প দেখার দৃষ্টিভঙ্গি জরুরি।’

সুলতানের চিত্রে পেশির চিত্রায়ণ নিয়ে আলাপ করা হয়। এগুলো বৃহৎ পরিমণ্ডল থেকে দেখা দরকার জানিয়ে মোস্তফা জামান বলেন, সুলতানের কৃষকের পেশি পেশিশক্তির দৃষ্টিতে নয়, বরং সমগ্রতার জায়গায় দেখিয়েছেন। সুলতানের কাজে কোনো দ্ব্যর্থকতা ছিল না। সুলতান যে জীবনটি দেখেছেন, তা–ই তিনি এঁকেছেন, তা–ই মাস্টারপিস। সুলতানের কাজে চিত্রটি নয়, মানুষ-প্রকৃতি হলো আদি–অন্ত।

সুলতানের চিত্রকর্মে কৃষিজিজ্ঞাসাকে তাঁর চিত্রকর্মের আরেকটি দিক উল্লেখ করে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের শিক্ষক সৈয়দ নিজার বলেন, সুলতানকে বাংলাদেশের অন্যতম সৌভাগ্যবান শিল্পী বলতে হয়। কারণ, তাঁর চিত্রকর্মের নানা ডাইমেনশন নিয়ে কাজ হচ্ছে।

পাণ্ডুলিপি নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে সৈয়দ নিজার বলেন, ‘পাণ্ডুলিপির একটা জায়গায় আছে যে সুলতানের রাতের ছবি নেই। আমার একটা জিজ্ঞাসা, কেন নেই। এটার একটা কারণ হতে পারে, রাতে গ্রামীণ জীবনে কর্মময়তা কম।’

শিল্পী ও শিক্ষক ঢালী আল মামুন বলেন, ‘সুলতান যখন তাঁর শিল্পের বিষয় নির্বাচন করেছেন, তা ছিল তাঁর ভেতরকার একটি বয়ান। তিনি কৃষিজীবী মানুষকে উপজীব্য করেছেন তাঁর শিল্পের বিষয় হিসেবে। তা দিয়ে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তাকাঠামো বোঝা যায়। একই সঙ্গে এই বইয়ে যেসব বিষয় বলা হয়েছে, সেগুলো বর্তমানের নয়া উদারবাদী অর্থনীতির বাস্তবতায় কেবল আমাদের কৃষিব্যবস্থা নয়, গোটা পৃথিবীর একটি বাস্তবতা।’

পরিবেশ আন্দোলন সংগঠক আমিরুল রাজিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ইউপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহরুখ মহিউদ্দিন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ