এমন একটা অবস্থা ছিল, ঢাকা লিগ শুরুর আগেই আবাহনীকে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে ধরা হতো। দল চালানো থেকে বাইশ গজে নানা সুযোগ-সুবিধা পেতো ক্রিকেটাঙ্গনে এমন আলোচনা ছিল ওপেন সিক্রেট।

এবার দেশের পট পরিবর্তনের সঙ্গে বদলে যায় ক্রীড়াঙ্গনের দৃশ্যও। ঢাকা লিগে এবার আর্থিক কারণে দল গড়তে হিমশিম খেয়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত ছিল ক্লাবটি। এক ক্রিকেটার স্বাক্ষর করেও টাকা কম দেখে চলে যান অন্য দলে।

সব মিলিয়ে আবাহনীর জন্য মাঠে নামাও চ্যালেঞ্জিং ছিল। সব ছাপিয়ে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, দাপুটে ক্রিকেটে বিগ বাজেটের দলগুলোকে হারিয়ে শেষপর্যন্ত চব্বিশতম ট্রফি ঘরে তোলে ক্লাবটি।

আরো পড়ুন:

টিম গড়া থেকে সবকিছুতেই চ্যালেঞ্জ ছিল, এ বছরের ট্রফি স্পেশাল: মোসাদ্দেক

দর্শককে মারতে গেলেন মাহমুদউল্লাহ

আবাহনীর কোচিংয়েও এসেছিল বদল। নির্বাচক পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে কোচিং বেছে নেন হান্নান সরকার। আবাহনীর হয়ে প্রথম অ্যাসাইনমেন্টেই সফল এই কোচ।

ম্যাচ শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন হান্নান, “আমার কাছে মনে হয় ঢাকা ক্রিকেট লিগে আবাহনী বা মোহামেডানের জার্সি পড়লে বাড়তি মোটিভেশন চলে আসে।’’

আবাহনী কি এবার কলঙ্কমুক্ত হয়েছে? উত্তরে হান্নান বলেন, “এর আগে আবাহনীর চ্যাম্পিয়নশিপকে অনেকেই নানা বিতর্কে জড়িয়ে আলোচনায় এনেছে। এবার দেশের প্রেক্ষাপট বদলানোর পর সব দলকে নিউট্রাল জায়গা থেকে চিন্তা করতে পারেন। অনেক দিক থেকে বিতর্ক হয়েছে, আম্পায়ারিং নিয়ে কথা হয়েছে। তবে দিন শেষে সবাই যার যার জায়গায় ফেয়ার থাকার চেষ্টা করেছে।”

“ঠিক একইভাবে মাঠের ক্রিকেটে সবাই সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মাঠের ক্রিকেটে যদি ভালো খেলে যদি চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায় তাতে আলাদা তৃপ্তি কাজ করে। আমার মনে হয় এবার আবাহনীর সেভাবেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। এবার অনেকে মন থেকেই আবাহনীর জন্য দোয়া করেছে। এটা নিশ্চয়ই অন্যরকম ফিলিংস, বিতর্ক ছাড়া চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আলাদা ভালো লাগা থাকে।’’

এবার বাইরের কোনো বিষয় নিয়ে আলোচনা ছিল না। দলটির প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে অবদান রেখেছে। সেই প্রসঙ্গ তুলে এনেছেন হান্নান।

“আগে আবাহনী অনেক টাকা খরচ করে দল বানাতো চ্যাম্পিয়ন মোটামুটি ধরে নেওয়াই যেতো। সেজন্য মাঠের ক্রিকেটকে আপনি ছোট করে দেখতে পারবেন না। এবার ভারি নাম ছিল না, মাঠের ক্রিকেটে ভিন্ন স্ট্রাটেজি সাজিয়ে জিততে হয়েছে, এটার তৃপ্তি অন্যরকম।’’

ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ